মঙ্গলবার, ১৯ মার্চ ২০২৪ ।। ৫ চৈত্র ১৪৩০ ।। ৯ রমজান ১৪৪৫

শিরোনাম :

ফিলিস্তিনিদের প্রতিরোধের প্রতীক ১৬ বছরের এক কিশোরী

নিউজ ডেস্ক
নিউজ ডেস্ক
শেয়ার

সাখাওয়াত উল্লাহ
আন্তর্জাতিক ডেস্ক

আহেদ তামিমি। গত বছরে ইসরায়েলি সৈন্যকে থাপ্পর মারার জন্য বেশ আলোচিত ছিলেন তিনি। মাত্র ১৬ বছর বয়সী এই মেয়েটি ফিলিস্তিনিদের প্রতিরোধে এক বীর প্রতীক হিসেবে আখ্যায়িত হয়েছেন।

ইসরায়েল-ফিলিস্তিনের মধ্যে জেরুজালেম নিয়ে দ্বন্দ্ব বহু বছর ধরেই চলে আসছে, তবে সাম্প্রতিক সময়ে এই সমস্যাটি আরও বৃদ্ধি পেয়েছে। ইসরায়েলি সৈন্যদের ফিলিস্তিনি ভূমি দখল থেকে শুরু করে মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের জেরুজালেমকে ইসরায়েলের রাজধানী ঘোষণা করা- সব কিছুই ফিলিস্তিনিদের বিপক্ষে এক ষড়যন্ত্র।

একুশে বইমেলায় প্রকাশিত সব বই দেখতে ও কিনতে ক্লিক করু

এ জন্যই ক্ষুব্ধ ফিলিস্তিনিরা।  নিজেদের অধিকার আদায়ের জন্য তারা প্রতিরোধ কর্মসূচিতে নামে, যার অন্যতম সদস্য ছিল এই আহেদ তামিমি।

আহেদ তামিমির জন্ম ২০০১ সালে ফিলিস্তিনের নাবিহ সালেহ গ্রামে। গ্রামটিকে নিয়ন্ত্রণ করছে ইসরায়েলি সেনারা। এ গ্রামের বাসিন্দারা নিজেদের সব জমি ইসরায়েলিদের হাতে তুলে দিতে বাধ্য হয়, এবং তাদের ওপর কড়া শাসন করে ইসরায়েল।

জন্মের পড় থেকেই নিজেদের অস্তিত্ব সংকটের মধ্যে থাকতে দেখেছে তামিমি।

তামিমির মামা আইডিএফের গুলিতে শহীদ হন। তার মা বিগত বছরগুলোতে তিনবার গ্রেফতার হয়েছেন, সেনাদের গুলিতে জখমও হয়েছেন একবার। তার বাবা দুবার গ্রেফতার হয়েছেন, যার মধ্যে প্রায় ১৮ মাসই তাকে জেলে কাটাতে হয়। এখান থেকেই মূলত তামিমির সংগ্রামী চেতনার জন্ম।

তার বেশকিছু সাহসী গল্প রয়েছে। ২০১৪ সালে তার ভাইকে গ্রেফতার করেছিল ইসরায়েলি সেনারা। তবে আহেদ এই গ্রেফতারের বিরুদ্ধে গিয়ে প্রতিবাদ করে। এজন্য তিনি বেশ আলোচিত ছিলেন।

এ ঘটনার পর তখনকার তুরস্কের প্রধানমন্ত্রী (বর্তমানে প্রেসিডেন্ট) রজব তায়্যিব এরদোগান তামিমির সাহসিকতার অনেক প্রশংসা করেছিলেন। তাকে ‘হানজালা কারেজ অ্যাওয়ার্ড’ও প্রদান করেছিল তুরস্ক।

গত বছর ৮ ডিসেম্বর তিনি ঘটান আরেক কাহিনী। সেদিন ছিল শুক্রবার। জেরুসালেমকে ইসরায়েলের রাজধানী ঘোষণার প্রতিবাদে জুমার নামাজের পর জেরুসালেমের আল-আকসা মসজিদের বাইরে এবং গাজা উপত্যকায় বিক্ষোভে অংশ নেন হাজার হাজার মুসলমান।

বিক্ষোভে ইসরায়েলি বাহিনী বাধা দিলে উভয় পক্ষের মধ্যে সংঘর্ষের সূত্রপাত হয়। ইসরায়েলি বাহিনীর কাঁদানে গ্যাস ও রাবার বুলেটের জবাবে পাল্টা পাথর নিক্ষেপ করে বিক্ষোভকারীরা।

ফিলিস্তিনিদের প্রতিরোধ বিক্ষোভ ঠেকাতে পশ্চিম তীরে অতিরিক্ত সেনা মোতায়ন করে ইসরায়েল। কিন্তু রাস্তায় টায়ারে আগুন জ্বালিয়ে যুক্তরাষ্ট্র ও ইসরায়েলবিরোধী বিক্ষোভ চালাতে থাকে বিপুলসংখ্যক মানুষ।

এ সময় ১৬ বছরের ফিলিস্তিনি কিশোরী আহেদ তামিমি ও তার পরিবারের সদস্যরা উপস্থিত ছিলেন। বিক্ষোভের সময় তামিমির পরিবারের এক সদস্যকে মাথায় গুলি করে ইসরায়েলি সেনারা।

এতে ক্ষোভে ফেটে পড়ে কিশোরী তামিমি। এই ক্ষোভ নিয়েই তিনি সেই ইসরায়েলি সৈন্যের সামনে যান এবং তাকে একটি থাপ্পর মারেন। তিনি চিৎকার করে সৈন্যদের সেখান থেকে চলে যাওয়ার জন্য বলেন।

তবে সৈন্যরা কোন প্রতিক্রিয়া না জানালে তামিমি সৈন্যটিকে আরও দুএকটা কিল এবং লাথিও মারেন।

এই ঘটনার ভিডিও করে সোশ্যাল মিডিয়াতে ছেড়ে দেন তামিমির ২১ বছর বয়সী চাচাতো বোন নূর তামিমি। এতে ভাইরাল হয়ে যায় এই ভিডিওটি এবং বিশ্বের বহু মানুষ ইসরায়েলি সৈন্যদের বর্বরতার নিন্দা করতে থাকে। এতেই বেশ পরিচিতি পায় ১৬ বছর বয়সী তামিমি।

তবে তার এই পরিচিতি তার জন্য ক্ষতিই ডেকে এনেছে। এর মূল কারণ হচ্ছে, এই ঘটনার পর তাকে গ্রেফতার করা হয়েছিল এবং তাকে কারাবন্দী করে রাখা হয়।

এর মধ্যে তামিমির মুক্তির দাবি জানিয়েছেলেন যুক্তরাজ্যের লেবার পার্টি নেতা জেরেমি করবিন। সামাজিক মাধ্যমে মুক্তির দাবিতে শুরু হয়েছিল দুটি হ্যাশট্যাগ।

এই ঘটনার জেরেই তার সাহসিকতার জন্য তাকে ফিলিস্তিনিদের প্রতিরোধের প্রতীক হিসেবে আখ্যা দেওয়া হয় তামিমিকে। সে আজ কোনো কিছুতেই ভয় পায় না।

বর্তমানে ফিলিস্তিন তরুণীদের কাছে তামিমি ‘ইয়াং ফিমেল লিডার অফ টিনেজারস’ নামে পরিচিত হয়ে উঠছেন। ইসরায়েলি কাপুরুষদের সঙ্গে অকুতোভয়ে লড়ে যাওয়া বীরের নাম তামিমি। তাকে ডাকা হচ্ছে ‘ফেস অব দ্য রেসিসটেন্স’।

সূত্র: http://mvslim.com/ahed-tamimi-is-the-young-female-teenager-leading-the-palestinian-resistance-movement/

https://en.wikipedia.org/wiki/Ahed_Tamimi

আইয়ুব বিন মঈনের প্রিয় ১০ বই

https://www.facebook.com/weeklyLikhoni/videos/1886734544700986/?t=4


সম্পর্কিত খবর


সর্বশেষ সংবাদ