মঙ্গলবার, ১৯ মার্চ ২০২৪ ।। ৫ চৈত্র ১৪৩০ ।। ৯ রমজান ১৪৪৫

শিরোনাম :

জেনে নিন টমেটোর ২৩ উপকারিতা

নিউজ ডেস্ক
নিউজ ডেস্ক
শেয়ার

আওয়ার ইসলাম: যদিও টমেটো একটি ফল, তবুও সারা বিশ্বে সবজি হিসেবেই পরিচিত টমেটো। টমেটো বাংলাদেশে বিলাতী বেগুন নামে পরিচিত। বাংলাদেশের বাজারে টমেটো সবজি হিসাবে বহুল প্রচলিত। সবজি হলেও টমোটোর মধ্যে ফলের অনেক পুষ্টিগুণ বিদ্যমান এবং ফলের ন্যায় এটি রান্না না করেও খাওয়া যায়।

টমেটো আমাদের দেশের একটি প্রধান শীতকালীন সবজি, তবে গ্রীষ্মকালেও টমেটো সাফল্যের সাথে চাষ করা যায় এবং পাওয়া যায়। সবজি এবং সালাদ হিসেবে ভিটামিন এবং খনিজ সমৃদ্ধ টমেটোর বেশ চাহিদা সারাদেশে। ক্ষুদ্র ও মাঝারি চাষীদের জন্য এটি একটি বিশেষ অর্থকরী সবজি হিসেবে চলে আসছে।

সবজি হিসাবে এর ব্যবহার ছাড়াও খাদ্য প্রক্রিয়াকরণ শিল্পেও এর ব্যবহার সুপরিচিত। দেশের বাজারের চাহিদা মিটিয়ে টমেটো রপ্তানিরও প্রচুর অর্থ উপার্জন করে আসছে। রান্নার উপকরণ হিসেবে এবং খাবারের সাথে টমেটো সসও বেশ পরিচিত হয়ে আসছে।

সর্বত্রই এটি জনপ্রিয় কারন এর আকর্ষণীয়তা, ভাল স্বাদ, উচ্চ পুষ্টিমান এবং বহুবিধ উপায়ে ব্যবহারযোগ্যতার ফলে। এ জনপ্রিয় সবজিতে প্রচুর পরিমাণে আমিষ, ক্যালসিয়াম, ভিটামিন-এ এবং ভিটামিন-সি রয়েছে। আর এই টমেটোতে লাইকোপেন নামে বিশেষ উপাদান রয়েছে, যা ফুসফুস, পাকস্থলী, অগ্ন্যাশয়, কোলন, স্তন, মূত্রাশয়, প্রোস্টেট ইত্যাদি দেহের ক্যান্সার প্রতিরোধে সাহায্য করতে পারে।

গবেষণায় দেখা গেছে, প্রতি সপ্তাহে ৭-১০ কাপ টমেটো খেলে অনেকটা হৃদরোগ প্রতিরোধ করা যায়। আর যদি পরিমিত তেল দিয়ে রান্না করে টমেটো খাওয়া হয় তাহলে উপকার বেশি পাওয়া যায়। থ্রম্বোসিসের পরিমাণও কমায় এই টমেটো। চলুন জেনে নেই টমেটোর গুনাগুন সম্পর্কে।

পুষ্টিতে ভরপুর টমেটো
মাত্র এক কাপ তরতাজা পাকা টমেটোতে আছে প্রচুর পরিমাণে ভিটামিন এ, সি, কে, ফলেট এবং পটাসিয়াম। টমেটার মাঝে কম পরিমাণে থাকে সোডিয়াম, স্যাচুরেটেড ফ্যাট, কোলেস্টেরল এবং ক্যালোরি। টমেটা থেকে আরও পাওয়া যায় থায়ামিন, নায়াসিন, ভিটামিন বি৬, ম্যাগনেসিয়াম, ফসফরাস এবং কপার।

এছাড়াও এই এক কাপের টমেটার মাঝেই থাকে দুই গ্রামের মত ফাইবার। অনেকটা পানিও রয়েছে এর মধ্যে। এই সবকিছু মিলিয়ে শরীরের পুষ্টি চাহিদার পূরণের ক্ষেত্রে টমেটার গুনাগুন অসাধারন।

চর্মরোগ নিরাময়ে টমেটো
চর্মরোগের জন্য টমেটো অত্যন্ত কার্যকারি উপাদান। আপনার ত্বকে যদি কোনো সমস্যা হয়ে থাকে, তবে টমেটোর ব্যবহার করে দেখতে পারেন। আশা করি উপকার পাবেন। চর্মরোগ নিরাময়ে টমেটোর রস একটি গুরুত্বপূর্ণ উপাদান হিসেবে কাজ করে থাকে। একটি টাটকা টমেটো নিয়ে তার রস করে। তারপর সে রস ত্বকের যে স্থানটি রোগাক্রান্ত সেখানে মাখিয়ে রাখুন। এভাবে দিনে দুই থেকে তিনবার মাখিয়ে রাখলে। দেখবেন আপনার সমস্যার সমাধান হয়ে যাবে।

মুখের সৌন্দর্য ধরে রাখতে এবং বয়সের ছাপ দুর করতে
টাটকা টমেটো কেটে টুকরো টুকরো করার পর সেগুলো থেকে রস করে নেন। তারপর এই রসের সাথে খানিকটা চিনি মেশান। এই চিনিমিশ্রিত রস প্রতিদিন মুখে মাস্ক হিসেবে ব্যবহার করতে হবে। এতে মুখের ত্বক মসৃণ ও কোমল হবে। বয়স বাড়তে থাকলে মানুষের মুখে যে বয়সের ছাপ পড়ে, এই টমেটো দেওয়ার ফলে সেই ছাপ লুকিয়ে যেতেও টমেটা সাহায্য করবে।

উচ্চ রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণে
উচ্চ রক্তচাপের সমস্যা যে কোন রোগীর জন্য অনেক কঠিন একটা সমস্যা। তাই এখন থেকে প্রতিদিন সকালে খালি পেটে একটি বা দুটি টমেটো খাবেন। সাথে কিছু চিনিও মিশিয়ে নিতে পারেন। এটি উচ্চ রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণে অনেক ইতিবাচক ভূমিকা রাখতে সাহায্য করবে।

৫। রক্ত স্বল্পতা দূরীকরণে
যারা রক্ত স্বল্পতা বা এনিমিয়ায় ভুগছেন, তাদের জন্য টমেটো বেশ উপকারী একটি সবজি বা ফল। একটি আপেল, একটি টমেটো এবং ১৫ গ্রাম তিল একসাথে খাবেন। প্রতিদিন এক বা দুইবার খেতে পারেন। এতে রক্ত স্বল্পতার সমস্যা অনেকটাই দূর হতে পারে।

ক্ষত রোগ নিরাময়ে
আমাদের অনেকের মুখগহ্বরে মাঝে মাঝে ক্ষতের সৃষ্টি হয়। এই সমস্যা অনেকের হয়ে থাকে। আমি মনে করি এখন থেকে আর চিন্তা করার প্রয়োজন নেই। টমেটো রস আমাদের সাহায্য করতে পারে। প্রতিদিন সকাল ও সন্ধ্যায় একবার করে টমেটোর রস খান। দেখবেন, দিন কয়েকের মধ্যে মাথার ক্ষত দূর হয়ে যাবে।

হেপাটাইটিসের নিরাময়ে
টমেটোর এই গুণের কথা বলার মাঝে আমি আপনাদের একটি মজাদার খাবার রান্না শিখিয়ে দেব। এ খাবারের নাম ‘সবজি চাল স্যুপ’। এমন নাম শুনছেন, এই ডিশের প্রধান উপাদান হচ্ছে, টমেটো, সেলারি, গাজর এবং চাল। এ ছাড়া, পরিমাণমতো লবণ দিতে পারেন। এই ডিশ হেপাটাইটিসের নিরাময়ে খুব কার্যকর ভূমিকা পালন করে।

সর্দি-কাশি প্রতিরোধে
সর্দি-কাশি গ্রীষ্মকালে বেশি দেখা যায়। গ্রীষ্মকালে সর্দি-কাশি লাগাটা স্বাভাবিক। টমেটো আপনাকে এ থেকে রক্ষা করতে পারে। এক বা দুটি টমেটো নিয়ে স্লাইস করে অল্প চিনি বা অল্প লবণ দিয়ে পাত্রে গরম করে স্যুপ তৈরি করুন। তারপর গরম গরম খেয়ে নিন। সর্দি-কাশিতে উপকার পাবেন।

জ্বরের নিরাময়ে সহায়ক
গায়ের তাপমাত্রা নানান কারণে বাড়তে পারে। কিন্তু কারণ যা-ই হোক, তাপমাত্রা বাড়লেই আমরা বলি ‘জ্বর হয়েছে’। শরীরে ইনফেকশন হলে গায়ের তাপমাত্রা বাড়তে পারে। তখন অ্যান্টিবায়োটিক খেতে হতে পারে। কিন্তু সামান্য জ্বর হলে অনেক সময় স্রেফ টমেটো খেলেই আরাম পেতে পারেন। এক্ষেত্রে টমেটোর রসের সাথে তরমুজের রস মিশিয়ে খাবেন। ঘন্টায় ঘন্টায় একটু একটু করে খেতে থাকুন। উপকার পাবেন জ্বর থেকে।

মাড়ি থেকে রক্তপাত নিয়ন্ত্রণে
আপনার মাড়ি থেকে যদি রক্তপাত হয়, তবে আপনার ভিটামিন সি-এর অভাব আছে। যাদের মাড়ি দিয়ে রক্তপাত হয়, তাদের অবশ্যই চিকিত্সকের পরামর্শ নেওয়া উচিত। তবে, প্রতিদিন একটি করে টমেটো খেলে দিন পনের পর দেখবেন রক্তপাত আপনা-আপনি বন্ধ হয়ে গেছে।

স্ট্রোক প্রতিরোধে
টমেটার গুন অনেক। এই টমেটোর পুষ্টিগুণ মস্তিষ্কে রক্ত চলাচল বাড়ায়, যা স্ট্রোক প্রতিরোধ করে। যখন মস্তিষ্কে রক্ত সঞ্চালন বাধাগ্রস্ত হয়, তখন স্ট্রোক হওয়ার আশঙ্কা থাকে। যদি বংশে এই ধরনের রোগের প্রবণতা থাকে, তবে নিয়মিত টমেটো খাওয়া উচিত।

ত্বক সুস্থ রাখতে
নিয়মিত টমেটো খেলে ত্বক সুস্থ রাখতে আপনার চিন্তা করতে হবে না। আর ত্বক হয়ে উঠবে প্রাণবন্ত। টমেটোর বেটা ক্যারোটিন সূর্যের ক্ষতি থেকে ত্বককে রক্ষা করতেও সাহায্য করে। আর এতে থাকা লাইকোপিন অতিবেগুনী রশ্মির ক্ষতি কমাতে ভূমিকা পালন করে। ফলে ত্বকে বলিরেখা পড়ার পরিমাণ কমে যায়।

অ্যাজমা নিয়ন্ত্রণে
আমরা তো জানি টমেটার কত গুন। আর এই টমেটোর মধ্যে রয়েছে লাইকোপেন এবং ভিটামিন-এ, যা অ্যাজমা নিয়ন্ত্রণে সাহায্য করে। এই রোগকে নিয়ন্ত্রণে রাখতে তাই নিয়মিত টমেটো খাওয়ার পরামর্শ দেন বিশেষজ্ঞরা। সুতরাং অ্যাজমা নিয়ন্তনে টমেটার গুরুত্ব অপরিসীম।

হাড় শক্ত করতে
অনেকে বিশ্বাস নাও করতে পারেন, কিন্তু এটা সত্য যে টমেটোর মধ্যে রয়েছে ক্যালসিয়াম যা হাড়ের জন্য অনেক উপকার এবং অস্টিওপরোসিস রোগ প্রতিরোধে সাহায্য করে থাকে। আপনার যদি হাড় দুর্বল থাকে, তবে অবশ্যই টমেটো খান। আর এর মধ্যে থাকা লাইকোপিন যা হাড়ের ঘনত্ব বাড়াতেও সাহায্য করে।

ক্যানসার রোধ করতে
টমেটোর মধ্যে রয়েছে উচ্চ পরিমাণ অ্যান্টি-অক্সিডেন্ট, যেমন- লাইকোপিন। তাই এই অ্যান্টি-অক্সিডেন্ট দেহের ফ্রি রেডিকেলস দূর করে এবং ক্যানসার হওয়ার ঝুঁকি কমাতে সাহায্য করে। আর ডিএনএ ক্ষতিগ্রস্ত হলে ক্যানসারের ঝুঁকি বাড়ে। টমেটোর কারণে ডিএনএ সহজে ক্ষতিগ্রস্ত হয় না।

প্রদাহ দূর করে
প্রদাহের একটি কারণ টিএনএফ-আলফা। টমেটোর কারণে শরীরে টিএনএফ-আলফার মাত্রা কমিয়ে রাখে। এতে শরীরে প্রদাহ কমে যায়। কাজেই টমেটোর জুস পান করে শরীরের জ্বালাপোড়া দূর করতে পারেন।

স্বাস্থ্যকর চোখ ও ত্বক
ত্বক এবং চোখের জন্য টমেটো বেশ উপকারী। টমেটোর মধ্যে থাকা ভিটামিন এ- চোখ, ত্বক এবং হাড়কে সুস্থ রাখে। আপনি যদি কুচি করে কাটা এক কাপ কাঁচা টমেটো প্রতিদিন খান তাহলে দেহে ভিটামিন এ-র অর্ধেক চাহিদা পূরণ করা সম্ভাব।

ডায়াবেটিস
ডায়াবেটিস রোগীদের জন্য টমেটা খুবই উপকারি। ডায়াবেটিস রোগীদের ক্ষেত্রে টমেটো দেহের শর্করার মাত্রা বজায় রাখতে সাহায্য করে। সুতরাং ডায়াবেটিস রোগীদের প্রতিদিন টমেটা খেতে দেওয়া উচিত।

রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়াতে
টমেটোর মধ্যে রয়েছে উচ্চ পরিমাণ ভিটামিন সি। যেটা শরীরের রোগ নিরাময়ে সাহায্য করে এবং রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়ায়। ফলে রোগ প্রতিরোধে টমেটা অনেক উপকারি। তাই অসুস্থ দেহ থেকে আরোগ্য পেতে টমেটো খেতে পারেন, এটা রোগ নিরাময়ে সাহায্য করবে।

ক্ষতিগ্রস্ত ত্বকের যত্নে
টমেটায় প্রচুর পরিমাণে ভিটামিন-সি থাকে। ভিটামিন সি ত্বকে কলাজেন তৈরিতে কাজ করে এবং ক্ষতিগ্রস্ত ত্বক রক্ষায়ও সাহায্য করে। যার ফলে ত্বকের বিভিন্ন ক্ষত দূর করতে টমেটার ভূমিকা অনেক।

রক্ত জমাট বাঁধা প্রতিরোধে
রক্ত জমাট বাঁধা মৃত্যু ঝুঁকির কারণ হতে পারে। এ ধরনের সমস্যায় রক্তের সঞ্চালন বাধাগ্রস্ত হয়, যা হার্ট অ্যাটাক এবং স্ট্রোকের কারণও হতে পারে। টমেটো এই ক্লোট বা রক্ত জমাট বাঁধা প্রতিরোধে সাহায্য করে।

ব্লাড সুগার নিয়ন্ত্রণ করতে
টমেটা ব্লাড সুগার নিয়ন্তনে অনেক বড় ভূমিকা রাখে। টমেটার মধ্যে নানান ধরনের পুষ্টিগুণ বিদ্যমান থাকে। আর এই গুনাগুনের ফলে প্রতিদিন নিয়ম করে টমেটা খাওয়া উচিত। তাহলে দেহের ব্লাড সুগার নিয়ন্তনে থাকবে।

ডিএনএ এর ক্ষতি রোধ করে
টমেটায় প্রচুর অ্যান্টি- অক্সিডেন্ট বিদ্যমান থাকে। তাই এই অ্যান্টি- অক্সিডেন্ট দেহের যে কোন ধরনের ক্ষতিকর রোগকে নিরাময় করে। ফলে দেহের মধ্যে থাকা ডিএনএ কে রক্ষা করতে টমেটার অনেক ভূমিকা। আর ডিএনএ ভাল থাকলে দেহের কোন ক্যানসার আক্রান্ত করতে পারে না।

টুকটুকে লাল পাকা টমেটো, অথবা কচকচে কাঁচা টমেটো। একই সাথে ফল এবং সবজি। আর এই টমেটোর খাবারটা পছন্দ করে না এমন মানুষ কমই খুজে পাওয়া যাবে। রান্না করে বা কাঁচা অবস্থাতেই খাওয়া যায় এই টমেটো।

নিয়মিত টমেটো খান এবং অনেক রোগ-প্রতিরোধ করুন। তবে যেকোনো খাবার নিয়মিত খাওয়ার আগে অবশ্যই আপনার চিকিৎসক এবং পুষ্টিবিদের পরামর্শ নিন।

সূত্র: ইন্টারনেট/ এইচজে


সম্পর্কিত খবর


সর্বশেষ সংবাদ