শনিবার, ২৩ নভেম্বর ২০২৪ ।। ৮ অগ্রহায়ণ ১৪৩১ ।। ২১ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

শিরোনাম :
কাল যাত্রাবাড়ী মাদরাসায় মজলিসে দাওয়াতুল হকের ইজতেমা শেখ হাসিনা ভারতে বসে দেশের বিরুদ্ধে চক্রান্ত করছেন: মজলিস মহাসচিব ডেঙ্গুতে এক সপ্তাহে ৩১ জনের মৃত্যু, আক্রান্ত ৬২৩০ মসজিদে নববীর আদলে হবে আন্দরকিল্লা শাহী জামে মসজিদ: ধর্ম উপদেষ্টা খাগড়াছড়ি প্রেস ক্লাবের সাধারণ সভা অনুষ্ঠিত নতুন নির্বাচন কমিশনকে বিগত কমিশন থেকে শিক্ষা নিতে হবে: মুফতী ফয়জুল করীম লালপুরে যুবলীগ নেতার বিরুদ্ধে জমি দখল ও বাড়ি ভাংচুরের অভিযোগ জনতার চেয়ারম্যান সৈয়দ তালহাকে সুনামগঞ্জ ৩ আসনে জমিয়তের প্রার্থী ঘোষণা কুরআন-হাদিসের ভিত্তিতেই হতে হবে সংস্কার: বায়তুল মোকাররমের খতিব ইসলামী সঙ্গীত সম্রাট আইনুদ্দীন আল আজাদ রহ.-এর বাবার ইন্তেকাল

শিক্ষামন্ত্রী কি আদৌ সরে দাঁড়াবেন?

নিউজ ডেস্ক
নিউজ ডেস্ক
শেয়ার

সৈয়দ ফয়জুল আল আমীন

সরকার চলমান এসএসসি পরীক্ষার প্রশ্নপত্র ফাঁস ঠেকাতে সর্বশেষ কিছু সময়ের জন্য ইন্টারনেটের গতি কমিয়ে রাখার সিদ্ধান্ত নিয়েছে। সিদ্ধান্ত মোতাবেক প্রতিদিন পরীক্ষার শুরুর দুই ঘণ্টা আগে থেকে পরের আড়াই ঘণ্টা ইন্টারনেটের গতি নিয়ন্ত্রণ করা হবে।

অবশ্য ইন্টারনেটের গতি কমানোর সিদ্ধান্ত নেয়ার একদিন পর আজ সোমবার সেই সিদ্ধান্ত প্রত্যাহার করে নেয় বাংলাদেশ টেলিযোগাযোগ নিয়ন্ত্রণ কমিশন (বিটিআরসি)।

এর আগে ১১ ফেব্রুয়ারি রাতে বাংলাদেশ টেলিযোগাযোগ নিয়ন্ত্রণ কমিশন (বিটিআরসি) এ-সংক্রান্ত একটি আদেশ জারি করে। যে আদেশ বাস্তবায়নের জন্য পরীক্ষামূলকভাবে ১১ ফেব্রুয়ারি রাত ১০টা থেকে সাড়ে ১০টা পর্যন্ত আধা ঘণ্টা ইন্টারনেট গতি কমিয়ে রাখা হয়েছিল।

আদেশে বলা হয়েছিল, কাল (১২ ফেব্রুয়ারি) সোমবারসহ আগামী ১৩, ১৫, ১৭, ১৯, ২০, ২২, ২৪ ফেব্রুয়ারি সকাল ৮টা থেকে সাড়ে ১০টা পর্যন্ত ইন্টারনেটের গতি কমিয়ে রাখতে হবে।

আর ১৮ ফেব্রুয়ারি দুই বেলা পরীক্ষা থাকায় একবার সকাল ৮টা থেকে সাড়ে ১০টা এবং পরে দুপুর ১২টা থেকে আড়াইটা পর্যন্ত কম থাকবে ইন্টারনেটের গতি।

একুশে বইমেলার যে কোনো বই ঘরে বসে পেতে অর্ডার করুন

প্রসঙ্গত, নানা নজরদারির পরও চলমান এসএসসি পরীক্ষার প্রশ্ন ফাঁস ঠেকাতে পারছে না কর্তৃপক্ষ। প্রতিটি পরীক্ষার আগে ফেসবুকে ঘোষণা দিয়ে ফাঁস করা হচ্ছে প্রশ্ন, যার সঙ্গে পরে মিল পাওয়া যাচ্ছে পরীক্ষার মূল প্রশ্নপত্রের।

অবশ্য গত দু-তিন দিনে রাজধানী ঢাকাসহ দেশের বিভিন্ন স্থান থেকে পুলিশ ফাঁস হওয়া প্রশ্নসহ বেশ কয়েকজনকে আটক করেছে। কিন্তু তাতে কি আর ‘সার্কাস’ বন্ধ হয়?

এবারের এসএসসি পরীক্ষার শুরুর আগে শিক্ষা মন্ত্রণালয় সিদ্ধান্ত নিয়েছিল পরীক্ষা চলাকালে ফেসবুক বন্ধ রাখার। এ নিয়ে বিভিন্ন মাধ্যমে সমালোচনা হলে পরে শিক্ষামন্ত্রী জানান, ফেসবুক বন্ধ নয়, অনলাইন নজরদারির জন্য বিটিআরসির সহযোগিতা চেয়েছে মন্ত্রণালয়।

শিক্ষামন্ত্রী নুরুল ইসলাম নাহিদ তখন বলেছিলেন, এ পরীক্ষা নিরাপদ রাখতে মানুষের পক্ষে যা যা করা সম্ভব, এবার তাই করা হয়েছে। প্রশ্নপত্র ফাঁস করলে কেউ রেহাই পাবে না। কী হবে আমি নিজেও বলতে পারি না। তবে চরম ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

এসএসসি ও সমমানের ২০ লাখেরও বেশি শিক্ষার্থীর পরীক্ষা চলছে। কিন্তু বাস্তবতা হচ্ছে-পরীক্ষা শেষ করে শিক্ষার্থীরা জানতে পারছে, পরীক্ষা শুরু হওয়ার আগেই অনেকের হাতে প্রশ্ন চলে গেছে।

পরীক্ষার আগে এখন ফেসবুকের মেসেঞ্জার, ভাইবার ও ইমোতে প্রশ্ন ‘ঘোরাফেরা’ করে। মাত্র ৩০০ টাকা কিংবা ১৫০ টাকার বিনিময়ে প্রশ্ন পাওয়া যাচ্ছে। আবার কোনো কোনো প্রশ্ন বিক্রেতা কি-না প্রথম পরীক্ষার প্রশ্ন ফ্রি দিয়ে বলছেন, টাকা দিলে পরের পরীক্ষার প্রশ্ন দেওয়া হবে!

শিক্ষামন্ত্রী পরীক্ষার আগে বলেছিলেন, প্রশ্ন ফাঁস হলে নতুন করে পরীক্ষা নেওয়া হবে। পরবর্তী সময়ে জরুরি বৈঠক করে তিনি জানান, চলমান এসএসসি পরীক্ষার প্রশ্নপত্র ফাঁস হয়েছে কি না, তা যাচাই-বাছাই করতে ১১ সদস্যের একটি কমিটি গঠন করা হয়েছে। একই সাথে, প্রশ্নপত্র ফাঁসের সাথে জড়িতদের ধরিয়ে দিতে পাঁচ লাখ টাকা পুরস্কার ঘোষণা করা হলো।

প্রশ্নপত্র ফাঁসের সাথে জড়িত কিংবা যারা প্রশ্নপত্র ফাঁসের গুজব ছড়ায় তাদের ধরিয়ে দিতে এই পুরস্কার ঘোষণা করা হয়।

এক্ষেত্রে উদ্বেগের বিষয় হলো, যারা গুজব ছড়াবে তাদের ধরিয়ে দেওয়ার কথা বলা হয়েছে। এখন প্রশ্নফাঁসের খবর প্রকাশ কিংবা ফাঁস হওয়া প্রশ্ন প্রকাশ করার কারণে কাউকে আবার হেনস্তা হতে হয় কি না তা দেখার বিষয়।

ভবিষ্যতে ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনের ৩২ ধারা তাদের ওপর প্রয়োগ করা হবে না তো! বলা হয়েছে, পুরো পরীক্ষার সময় এ কমিটি বিশেষ তদারকি করবে। একই সাথে প্রশ্নপত্র আদৌ ফাঁস হয়েছে কি না, এ কমিটি প্রতিবেদনে তা উল্লেখ করে পরীক্ষা বাতিলের বিষয়ে সুপারিশ করবে।

বলতে হয়, প্রশ্নফাঁসের সাথে বড় ধরনের আর্থিক সংযোগ রয়েছে। সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে যারা প্রশ্নফাঁস করছে, তারা বলে দিচ্ছে প্রশ্ন পাওয়ার বিনিময়ে শিক্ষার্থী-অভিভাবকেরা কীভাবে টাকা পাঠাবেন।

আর এই দুর্নীতির সাথে শিক্ষা মন্ত্রণালয় বা শিক্ষা বিভাগের উচ্চপর্যায়ের কর্মকর্তাদের জড়িত থাকার সম্ভাবনা একেবারে উড়িয়ে দেওয়া যায় কি? কারণ অনেকেই মনে করেন, দেশের সবচেয়ে দুর্নীতিগ্রস্ত মন্ত্রণালয়গুলোর একটি হচ্ছে শিক্ষা মন্ত্রণালয়। শিক্ষামন্ত্রী নিজে শিক্ষা বিভাগের কর্মকর্তাদের এর আগে ‘সহনীয়’ মাত্রায় ঘুষ গ্রহণের পরামর্শ দিয়েছিলেন।

শুধু তাই নয়, তিনি বলেছিলেন- শুধু কর্মকর্তারাই ঘুষ খান না, মন্ত্রীরাও দুর্নীতি করেন। মন্ত্রীরা চোর, আমিও চোর।

মন্ত্রী নিজে যেখানে ঘুষ-দুর্নীতি করার এমন স্বীকৃতি দিতে পারেন, সেই মন্ত্রণালয়ে প্রশ্নফাঁসের বিনিময়ে টাকা আদায় করা মামুলি অপরাধ হিসেবে বিবেচনা করা যেতেই পারে!

অবশ্য এর মধ্যে জাতীয় সংসদে ক্ষমতাসীন বিরোধী দলের এমপি জিয়াউদ্দিন বাবলু শিক্ষামন্ত্রীর পদত্যাগ দাবি করেছেন। তিনি বলেছেন, শিক্ষামন্ত্রী যদি পদত্যাগ না করেন তা হলে তাকে বরখাস্ত করা হোক।

ডেপুটি স্পিকার ফজলে রাব্বী মিয়া জিয়াউদ্দিন বাবলুর দাবি প্রসঙ্গে বলেন, নিশ্চয়ই প্রধানমন্ত্রী বিষয়টি শুনেছেন। তিনি তার বিবেক বিবেচনায় জাতির স্বার্থে যতটুকু করার প্রয়োজন অবশ্যই তিনি করবেন। এখন দেখার বিষয় শিক্ষা খাতে নৈরাজ্য দূর করতে বিবেক জাগ্রত হয় কি-না।

বহুদিন থেকে বর্তমান শিক্ষামন্ত্রীর পদত্যাগের দাবি ওঠছে। ছাত্রলীগের সাবেক-বর্তমান অনেক নেতা, আওয়ামী লীগের বড় বড় নেতারা পর্যন্ত পদত্যাগের দাবির যৌক্তিকতাকে ইঙ্গিত করে মাঝে মাঝেই মন্তব্য করছেন।

শিক্ষামন্ত্রীকে নিয়ে জনসাধারণের মনেও ক্ষোভের শেষ নেই। বলা যায়, একসময়ের বামপন্থী রাজনীতিবিদ নুরুল ইসলাম নাহিদের পদত্যাগের মধ্যেই অনেকে শিক্ষা ক্ষেত্রে নৈরাজ্যের অবসান খুঁজছেন।

তবে আমার মনে হয়, শিক্ষামন্ত্রী পদত্যাগ করলেই প্রশ্ন ফাঁস এবং অন্যান্য অরাজকতা বন্ধ হবে না। কারণ, প্রশ্ন ফাঁসকারীরা শুধু টাকার জন্য এই অপরাধ করছে বলে মনে হয় না। আরও উদ্দেশ্য থাকতে পারে।

আর এক্ষেত্রে সরকার যদি মনে করে এর পেছনে গভীর রাজনৈতিক ষড়যন্ত্র আছে-তাহলে সে ষড়যন্ত্র মোকাবেলায় ব্যর্থ হচ্ছেন শিক্ষামন্ত্রী। অন্তত এ কারণে হলেও সহজ সরল এই মানুষটির বর্তমান পদ থেকে সরে দাঁড়ানো উচিত বলে মনে করি।

লেখক : কবি, কলামিস্ট ও সাংবাদিক
সহযোগী সম্পাদক, আওয়ার ইসলাম টোয়েন্টিফোর ডটকম


সম্পর্কিত খবর


সর্বশেষ সংবাদ