শনিবার, ০৪ মে ২০২৪ ।। ২১ বৈশাখ ১৪৩১ ।। ২৫ শাওয়াল ১৪৪৫

শিরোনাম :
ফোনের বিরক্তিকর বিজ্ঞাপন বন্ধ করবেন যেভাবে   ১০ বছরের মধ্যেই বিলুপ্ত হবে স্মার্টফোন, কিন্তু কিভাবে? এখন থেকে মক্কায় প্রবেশে অনুমতি লাগবে সৌদির বাসিন্দাদের গণমাধ্যমের স্বাধীনতা নিশ্চিত করার ক্ষেত্রে সরকারের অঙ্গীকার আছে : তথ্য প্রতিমন্ত্রী পাখিদের পিপাসা নিবারণে গাছে গাছে পানির পাত্র ঝুলাচ্ছে তারা গাম্বিয়ার সঙ্গে বাণিজ্য ও কৃষিতে সহযোগিতা বৃদ্ধির আশাবাদ আফতাবনগরে মাদরাসাতুন নূর আল আরাবিয়ার কিতাব বিভাগের সবক উদ্বোধন সম্পন্ন গরমে ত্বকের যত্ন নেবেন যেভাবে বনানীতে দুই ঘণ্টা পর সড়ক ছাড়লেন শ্রমিকরা, যান চলাচল স্বাভাবিক যুক্তরাষ্ট্রে বহিস্কার হওয়ার শিক্ষার্থীদের যে সুবিধা দেয়ার ঘোষণা দিল ইয়েমেনি যোদ্ধারা 

আবুল ফাতাহ'র ‘দ্য এন্ড’, মুগ্ধতায় ভরপুর এক অনন্য কারিশমা

নিউজ ডেস্ক
নিউজ ডেস্ক
শেয়ার

যিয়াদ বিন সাঈদ: আবুল ফাতাহ। তারুণ্যের দ্বীপ্তিমান হৃদয়ে মম রবে দুলতে থাকা একটি নাম। সাবলীল ভঙ্গিমায়, খানিকটা হুমায়ূনীয় আদলে তড়তড়ে গদ্যের রিনিঝিনি অভিনব সৃষ্টিকারী এক স্রষ্টাই যেন তিনি।

অমর একুশে গ্রন্থমেলা ২০১৮ তে তার হাত ধরে এসেছে হিস্টোরিক্যাল থ্রিলার ‘দ্য এন্ড’। হ্যাঁ, প্রতীক্ষায় কাতর পাঠকের কাছে সে ‘দ্য এন্ড’র গল্প করতেই এসেছি। জানাতে এসেছি হৃদয়ের ভেতর জমে থাকা সেসব কালাম।

‘দ্য এন্ড’। ঝকঝকে প্রচ্ছদ। প্রচ্ছদ করেছেন লেখক নিজেই। আর ভেতরে খচিত সোনা ঝরানো অক্ষর। লেখক আবুল ফাতাহ’র দক্ষ হাতে নির্মিত একটি থ্রিলার। হিস্টোরিক্যাল থ্রিলার।

২০১৩ সালের রমজান মাসে কোনো এক আর্টিক্যাল পড়তে পড়তে হঠাতই তার দৃষ্টি নিবদ্ধ হলো ইতিহাসযাপিত এক দুর্দান্ত ঘটনা। যেটা নিশ্চিত কোনো থ্রিলার গল্পকে হার মানাবে। তিনি নড়েচড়ে বসলেন। ভাবিত হৃদয়ে তার চিন্তা হতে থাকলো প্রসন্ন। আরও বিস্তর।

মনস্থির করলেন পাঠকের কাছে এমনই এক অজানা লুকিয়ে থাকা ইতিহাস হাজির করবেন খুব শীগগির। কিন্তু ইতিহাস বলবার জন্যেই কি তিনি আবুল ফাতাহ? না না। তিনি সবার চাইতে ভিন্ন।

ভিন্ন সুরে ফিকশনের ভেতর দিয়েই তিনি এ হিস্টোরি লোকমা তুলে খাইয়ে দিতে তিনি হাত দিলেন ‘দ্য এন্ড’এ। কিন্তু মুকদ্দমায় যখন আমাদের গোচর হয়, মাত্র চারদিনে ‘এই নগরীর পথে’ এবং খুবই সামান্য সময়ে ‘অভ্রত্ব’র মত গ্রন্থের রচয়িতা এ আবুল ফাতাহকে ‘দ্য এন্ড’ নির্মাণ করতে হয়েছে চার চারটি বছর সময় নিয়ে, তখন আমাদের ভ্রূকুটি কুঞ্চিত হলেও আমরা নিশ্চিত ভেবে বসতে পারি এখানে আছে শতকোটি সুরাইয়া এবং অনেক অনেক শি’রা।

‘দ্য এন্ড’ পুরোটাই একটা ঘোর। কেসসার পিঠে ভর করে আরেক রহস্য সৃষ্টি হতে না হতেই জেঁকে ধরে অন্যদিক থেকে ভিন্ন সুরে ভিন্ন ভিন্ন রহস্য। মজাটা এখানেই। তাহলে একটু খুলেই বলি।

সময়টা ১৯৪৮ সালের নভেম্বর মাস। সাউথ অস্ট্রেলিয়ার সমরটন বিচে কোনো এক নির্জন সন্ধ্যায় গাছের সঙ্গে হেলান দিয়ে সমুদ্রের দিকে অনেকটা জীবিত’র মত পা দুটো প্রসারিত করে বসে থাকতে দেখা গেল পঞ্চাশোর্ধ একজন মানুষকে। স্পষ্ট হলো এরপর, মানুষটি মৃত।

তিনি কি আত্মহত্যা করেছেন? নাকি খুন? অস্ট্রেলিয়ার উদরে জন্ম নিলো এক ঘোরের। এক রহস্যের। রহস্য আরও প্রখর হলো কালক্রমে। সমরটনম্যানের গোপন পকেট থেকে বেরিয়ে এলো ছোট এক টুকরো কাগজ। গুটি গুটি অক্ষরে এখানে লিখা আছে ‘তামাম শুদ’। সে থেকেই অঙ্কুরিত হলো ‘তামাম শুদ কেইস’। স্পষ্ট করে বললে ‘দ্য এন্ড’। বিচে পড়ে থাকা

সমরটনম্যান ‘দ্য এন্ড’ হলেও ঘটনার কেবল সূচনাই হলো। পৃথিবীর ইতিহাসে জন্ম নিলো নতুন এক রহস্য।

আবুল ফাতাহ এমনই এক দুর্দান্ত ইতিহাসকে উপজীব্য করে লিখেছেন ‘দ্য এন্ড’। আকৃতি দিয়েছেন থ্রিলারের ভেতর দিয়ে। যেহেতু ইতিহাস বলবার দায় লেখকের ছিলোনা, তাই তিনি একমুঠো ইতিহাসের সাথে কিঞ্চিৎ ফিকশন জুড়ে দিয়ে তৈরি করেছেন হিস্টোরিক্যাল ফিকশন ‘দ্য এন্ড’।

আর এ ফিকশন তৈরি করতে গিয়ে ব্যাপারটা এমন দাড়ায়নি যে, তিনি সত্যের খুব দূরে থেকে এর স্রষ্টা হয়েছেন। সত্যের খুব কাছাকাছি থেকেই ইতিহাসের নিরস অংশগুলো এড়িয়ে পাঠকের জন্যে আকর্ষণীয় করে তুলতে চেয়েছেন ‘দ্য এন্ড’ কে। আনন্দ দিতে চেয়েছেন অপেক্ষমাণ অন্তরগুলোকে।

আবুল ফাতাহ যেভাবে এ ইতিহাসকে রূপ দিয়েছেন গল্পের ভেতর দিয়ে আনন্দ দিতে দিতে, তা নিয়ে বলা প্রয়োজন। সত্তর বছর আগের অমীমাংসিত সে রহস্যের মতই পর্যটন নগরী কক্সবাজারের বিচে পাওয়া গেল একটা লাশ। আর দশটা লাশের মতই শীতল, নিষ্ঠুর মৃত্যু তাকে ছুঁয়ে গেছে।

স্পর্শ করে গেছে অতীত মুহূর্তের দোলায়মান অবগাহন। কিন্তু সবগুলো মৃত্যুর চাইতে এ মৃত্যুকে মনে হল সে সবার মতই না। একটু ব্যতিক্রম, একটু অন্যরকম। লাশের গোপন পকেট থেকে মিলল অচেনা ভাষায় লেখা দুটো শব্দ। ‘তামাম শুদ’।

রোজ সকালের ঝাড়ুদার তারা মিয়া থেকে ঘটনাচক্র গিয়ে ঠেকলো ডিবির দ্বারে। মিস্টার জাহিদ হাসান। প্রাণপণে এ অদ্ভুত মৃত্যুটির রহস্যভেদ করতে উদ্যত হলেন। খুন নাকি আত্মহত্যা?

কিন্তু এ রহস্যের সমাধান হবার আগেই জাহিদ হাসানকে কক্সবাজারের কোনো এক পাঁচ তারকা হোটেলের সম্মুখভাগে মৃত্যুর কাছে পরাজিত হয়ে পড়ে থাকতে দেখা গেলো। যে মানুষটা মৃত্যুর আগে সাহায্য চেয়েছিল প্রাইভেট ইনভেস্টিগেশন এজেন্সি 'সিক্রেট শ্যাডো'র চিফ অফ অপারেশন্স মেজর সাইফ হাসানের। রহস্যের প্রচণ্ড ঘূর্ণয়নের ভেতর দিয়েই মঞ্চে আবির্ভূত হলেন মেজর সাইফ।

বিচে পড়ে পাওয়া মানুষটির মৃত্যুর পাশাপাশি জাহিদ হাসানের এমন হত্যার মুখোমুখি হয়ে তিনি একধরণের চ্যালেঞ্জের মোকাবেলা করতেই যেন আবির্ভূত হলেন এখানে। সঙ্গে জুটে গেল এনএসআই'র লাস্যময়ী এক এজেন্ট। আযীন খান। তদন্ত শুরু হতেই রোলার কোস্টার গতিতে ঘটতে লাগল একের পর এক পিলে চমকানো ঘটনা।

শিঘ্রই সাইফ বুঝতে পারল, সাম্প্রতিক সময়ের মৃত্যুটার সাথে আশ্চর্য রকমের মিল আছে আজ থেকে সত্তর বছর আগে পৃথিবীর অন্য এক প্রান্তে ঘটে যাওয়া আরেক মৃত্যুর। যে মৃত্যু আজও পৃথিবীর ইতিহাসে অন্যতম এক অমীমাংসিত রহস্য হয়ে ঠায় দাঁড়িয়ে আছে।

সবকিছু মিলে যাচ্ছে, একই ঢেউয়ে ভাসছে এত যুগ আগে-পরে ঘটমান দুটি ঘটনাচক্র, মেজর সাইফ হাসান হুট করেই বুঝে উঠতে পারলেন না সব।

এত সব কিছুর সাথে এক কুখ্যাত 'এসাসিন', পর্দার আড়ালে থাকা অসম্ভব ক্ষমতাধর কিছু মানুষ আর পৃথিবীখ্যাত কবি ওমর খৈয়ামের অমর কাব্যগ্রন্থ রুবাইয়াতের যোগাযোগটা ঠিক কোথায়?

কী পেতে হন্যে হয়ে আছে একদল মানুষ?রহস্যের জট খুলতে মেজর সাইফ হাসান পাড়ি জমাল, যেখানে সত্তর বছর আগে জন্ম নিয়েছিল এ রহস্য। আসলেই কি তাই? নাকি এর উৎপত্তি হাজার বছর আগে? ইতিহাস, রহস্য আর শিহরণের এ যেন এক অগস্ত্যযাত্রা।

‘দ্য এন্ড’ নিয়ে এখানে খুব সামান্য জ্ঞান করতে চেয়েছি আমি। লেখক আবুল ফাতাহ এ গ্রন্থটির রচয়িতা হিসেবে অনেক দিক থেকেই সফল। তাবৎ পৃথিবীর যতসব ইতিহাসবিদ কুতুব আছেন, আমার মনে হয় তারা এর কাছ থেকে শিক্ষা নিতে পারবে। পাঠকের কাছে ইতিহাসের সেসব সোনা কীভাবে ঝরাতে হয় তার একটি ফর্মুলা এখানেই পাওয়া যাবে।

‘দ্য এন্ড’ এর ভেতর দিয়ে স্পষ্ট হয়েছে মুসলিম সভ্যতার নির্মাতা সেসব মনীষীদের অমরকীর্তিগাঁথা। তাদের হাত ধরেই পৃথিবী দেখতে পারতো আলো। আর তাদের যে ইতিহাস, এগুলো তো আমাদের অজানাই। আবুল ফাতাহ মন্ত্রমুগ্ধের মত করেই সেসব ইতিহাস গিলে গিলে খাইয়ে দিলেন যেন। এবং পাশাপাশি তিনি এ মুসলিমদের এসব কীর্তির কথাকে স্পষ্ট করতেই এ প্রয়াস হাতে নিয়েছিলেন, এবং পেরেছেনও।

আমি প্রতিটি শব্দ, প্রতিটি অক্ষরে মুগ্ধ হয়ে পড়েছি। এবং মাঝে মাঝে গর্বে আমার বুক হু হু করে উঠেছে। আমি অকপটে স্বীকার করে নিচ্ছি, ‘দ্য এন্ড’র সামান্যতম ইঙ্গিতবহতা আমার লেখা থেকে আসবেনা। তবুও স্পষ্ট বাক্যে এ তো অন্তত বলা যাবে ‘আমার খুবই ভালো লেগেছে’।

আবুল ফাতাহ ভাই যেদিন বইটি দিচ্ছিলেন, আমাকে স্পষ্ট করেই বলেছেন, গৎবাঁধা প্রশংসার দরকার নেই যিয়াদ। কিন্তু এখন আমি ঠিক যে জায়গাটিতে দাঁড়িয়ে লিখতে বসেছি এখানে প্রসংসার ঊর্ধে আর কিছুইই নেই।

মাঝে মাঝে যখন মেজর সাইফের হাতে মধ্যযুগের প্রবল যুদ্ধের সৃষ্টি হচ্ছিলো, আমার মনে হলো সরাসরি থেকে আমি যেন এ যুদ্ধের প্রত্যক্ষদর্শী হয়েই দেখছি। আবুল ফাতাহের বর্ণনাশৈলী এতটাই স্পষ্ট এবং চমকপ্রদ। সবচাইতে অবাক হয়ে গেছি কী করে এত অদ্ভুত এক গল্পের সৃষ্টি তিনি করলেন। কী থেকে কী মিলিয়ে এর সমাধানে গেলেন। লা জাওয়াব।

আর সবচাইতে গর্ববোধ করেছি, যখন বারেবারে বাংলাদেশ কে বিশ্বের দরবারে এক অনন্য শীর্ষে তুলে আবুল ফাতাহ আমাদেরকে দিতে চেয়েছেন শ্রেষ্ঠত্ব। মাঝেমাঝে ভালোবাসা অনুভব করেছি। সূক্ষ্ম ভাবে মনে হয়েছে মেজর সাইফ আযীন খানের প্রেমে পড়ে গিয়েছেন। আবুল ফাতাহ কি তাই বোঝাতে চেয়েছেন মাঝে মাঝে? জানিনা আমি।

কিন্তু এটা অবাক হবার মতই বিষয়। একটি সামান্য থ্রিলার উপন্যাস। এখানে একত্রিত হয়েছে রহস্য, রহস্যভেদ, ইতিহাস, মুসলিম সভ্যতা, দেশপ্রেম, এবং সুরভিত উদ্যানে মানবের প্রেম। এতকিছুর সংমিশ্রণে নির্মিত এ ‘দ্য এন্ড’র সফলতার আর কী-ইবা বাকি থাকলো। ‘দ্য এন্ড’ দ্য এন্ড হলো সফলতার সবকটি সিঁড়ি পেরিয়ে শেকড় থেকে শিখরে পৌঁছে। মোহিত করলো আমাদের কে। প্রশান্তি দিলো পাঠকের অতৃপ্ত হৃদয়কে।

সর্বশ্রেণীর পাঠক এ বইটি পড়ুক। এমনই কামনা আমার থাকবে। পাশাপাশি আবুল ফাতাহ যেন দীর্ঘজীবি হন, সে কামনাটাই সবচাইতে বেশী করবো আমরা।

বইঃ দ্য এন্ড। লেখকঃ আবুল ফাতাহ
প্রকাশকঃ রোদেলা প্রকাশনী
মুদ্রিত মূল্যঃ ৩৮০


সম্পর্কিত খবর


সর্বশেষ সংবাদ