শনিবার, ১১ অক্টোবর ২০২৫ ।। ২৫ আশ্বিন ১৪৩২ ।। ১৯ রবিউস সানি ১৪৪৭

শিরোনাম :
গণভোটের মাধ্যমেই জুলাই সনদের আইনী ভিত্তি দিতে হবে: ড. আহমদ আবদুল কাদের শ্রমিক মজলিসের সেমিনার অনুষ্ঠিত কুমিল্লাকে বিভাগ ঘোষণার দাবি মুরাদনগর উপজেলা জমিয়তের নামাজ চলাকালীন গান-বাজনার মাধ্যমে মুসলমানদের ধর্মীয় অনুভূতিতে আঘাত করা হয়েছে: মাওলানা আবদুর রব ইউসুফী  পিআরসহ ৫ দফা দাবীতে ঢাকাসহ সকল বিভাগীয় শহরে গণমিছিল পিআর পদ্ধতিতেই আগামী জাতীয় নির্বাচন দিতে হবে: পীর সাহেব চরমোনাই ‘পিআর পদ্ধতির নির্বাচন আদায়ে শেষ দিন পর্যন্ত লড়াই করবে ইসলামী আন্দোলন’ জুলাই সনদ বাস্তবায়নে নির্বাচনী তফসিলের পূর্বেই গণভোট দিতে হবে: নেজামে ইসলাম পার্টি লালবাগ কেল্লায় বিশ্ব মানসিক স্বাস্থ্য দিবসে গ্রুপ মেডিটেশন ও ইয়োগা অনুষ্ঠান ইসরায়েলি সেনারা সরছে, নিজ ভূমিতে ফিরছে ফিলিস্তিনিরা

মাওলানা সাদের বক্তব্যের নতুন ব্যাখ্যা, দেওবন্দ ও সাহারানপুরের বিশ্লেষণ!

নিউজ ডেস্ক
নিউজ ডেস্ক
শেয়ার

হাওলাদার জহিরুল ইসলাম: তাবলিগ জামাতের কেন্দ্রীয় মারকাজ দিল্লি নিজামুদ্দিনের জিম্মাদার মাওলানা সাদ কান্ধলভির কিছু বক্তব্য নিয়ে দীর্ঘদিন পক্ষে-বিপেক্ষ মতামত দেখা দিয়েছে৷

মাওলানা সাদ কান্ধলভির একাধিক বক্তব্যে আপত্তি জানিয়ে আসছেন আলেমরা। আপত্তিকর বলে চিহ্নিত করেছে ভারতের দারুল উলুম দেওবন্দসহ এ দেশের আলেমরা।

এ বিষয়ে গত বছরের শুরুতে ভারতের দারুল উলুম দেওবন্দ মাওলানা সাদ কান্ধলভির বক্তব্যের বিষয়ে ভিন্নমত দিয়ে চার পৃষ্ঠার একটি ফতোয়া প্রকাশ করে৷ এ ছাড়াও দেওবন্দ একাধিকবার চিঠি ও মতামত প্রকাশ করেছে।

মাওলানা সাদ কান্ধলভিও একাধিকবার তার বক্তব্য লিখিত ও মৌখিকভাবে প্রত্যাহারের ঘোষণা দেন। যদিও তার ব্যাপারে বক্তব্য আছে তিনি বক্তব্য প্রত্যাহার করে ফের সে বক্তব্য দেন।

এসবের মধ্যেই সম্প্রতি ভারতের সাহারানপুরের মাজাহিরে উলুমের শিক্ষাসচিব ও মাওলানা সাদ কান্ধলভির শ্বশুর, ফাজায়েলে আমলগ্রন্থসহ শতগ্রন্থের লেখক, শাইখুল হাদিস শায়খ যাকারিয়া রহ. এর মেয়ের জামাই মাওলানা সালমান ২১ পৃষ্ঠার একটি উর্দু গ্রন্থ প্রকাশ করেছেন। বইয়ের বিষয় মাওলানা সাদ কান্ধলভির ওপর আরোপিত প্রশ্নের জবাব!

গ্রন্থটি ভারত বাংলাদেশসহ অনেক আলেম ও তাবলিগি জিম্মাদারদের কাছে পৌঁছেছে। আওয়ার ইসলাম টোয়েন্টিফোর ডটকমের কাছেও সেই গ্রন্থের একটি কপি পৌঁছেছে।

মাওলানা সাদ কান্ধলভির আপত্তিকর বয়ানের মোট ১৮ টি বিষয় তুলে এনেছেন গ্রন্থে। জবাব দিয়েছেন বিভিন্ন তাফসির, হাদিসের ব্যখ্যাগ্রন্থ, বিভিন্ন কিতাব ও পূর্ববর্তী বিশেজ্ঞ আলেমের বক্তব্য ও যুক্তির আলোকে।

মাওলানা সাদ কান্ধলভির ওপর আরোপিত যেসব কথা তিনি ওই রেসালায় উল্লেখ করেছেন তার উল্লেখযোগ্য কয়েকটি হলো!

এক. ‘সুরা ত্ব-হার ৮৫ নং আয়াতে উল্লিখিত হজরত মুসা আ. বিষয়ে আলোচনায় সাদ কান্ধলভির ভুল ব্যাখ্যা প্রদান ও হজরত মুসা আ.এর শানে বেআদবি!'

এখানে মাওলানা সালমান বেশ কিছু তাফসির গ্রন্থের উদ্ধৃতি দিয়ে বলেছেন, মাওলানা সাদ যা বলেছেন তা তাফসিরগুলো সরাসরি উল্লেখ না থাকলেও ইশারা ইঙ্গিত থেকে ওই কথাই বুঝা যায়৷ সুতরাং মাওলানা সাদ কান্ধলভি এখানে নিজের থেকে ভুল করেছেন এ কথা বলার সুযোগ নেই৷

অবশ্য মাওলানা সাদ কান্ধলভি হজরত মুসা আ. বিষয়ের এই আপত্তিকর বয়ান থেকে রুজু করেছেন। দারিুল উলুম দেওবন্দের ফতোয়া প্রকাশের ১ বছর পর, দিল্লির নিজামুদ্দীন মারকাজ ও ঢাকার কাকরাইল মারকাজে রুজুর ঘোষণা করেছেন।

দুই. হজরত ইউসুফ আ. আল্লাহর স্মরণ ভুলে যাওয়ার ফলে তাকে অতিরিক্ত কয়েক বছর জেলে থাকতে হয়েছিলো ৷ (সুরা ইউসুফ আয়াত ২৪)

তিন. সুরা বাকারার ১৯৫ নং আয়াতে ‘ফী সাবিল্লাহ’র ব্যাখ্যা প্রাদন৷

চার. সুরা জুমার ১০ নং আয়াতে ‘ফাযলুল্লাহ’র ব্যাখ্যা প্রদান৷

পাঁচ. সুরা আনকাবুতের ৪৫ নং আয়াতের ব্যাখ্যা প্রদান।

ছয়. কুরআন শিক্ষা দিয়ে বেতন গ্রহণকারীদের আগে ব্যভিচারীরা জান্নাতে যাবে ইত্যাদি অঅপত্তিকর মতামত দিয়ে আসছেন মাওলানা সাদ কান্ধলভি!

উল্লেখিত এসব আপত্তির জবাব দিয়ে তিনি মাওলানা সাদকে নির্দোষ প্রমাণ করেছেন।

গ্রন্থটি দারুল উলুম দেওবন্দে পৌঁছলে তার উপর মতামত দেন দারুল উলুমের সদরুল মুদার্রিসীন ও শায়খুল হাদিস হজরত আল্লামা সাঈদ আহমদ পালনপুরী৷

তিনি দেওবন্দের দাওরায়ে হাদিসের দরসে বলেন, মাওলানা সাদ কান্ধলভির আপত্তিকর বিষয়ে মাওলানা সালমান সাহেব যেসব দলিল দিয়েছেন, এগুলো অমুক অমুক তাফসিরে আছে। তার কোনো গ্রহণযোগ্যতা নেই। যখন থেকে দেওবন্দিয়ত শুরু হয়েছে তারপর থেকে কোনো আকাবির কি হজরত মুসা আ. এর শানে এমন কথা লিখেছেন?

তিনি বলেন, মাজাহিরে উলুমের শিক্ষাসচিব মাওলানা সালমান সাহেব তার গ্রন্থে যেসব সূত্র উল্লেখ করেছেন এর কোন ভিত্তি নেই।

মাওলানা সালমান ‘কুরুনে মুতাওসসেতা’য় রচিত তাফসিরের হাওলা দিয়েছেন৷ সে সময়ে তো বহু কিছুই লেখা হয়েছে৷

মাওলানা সালমানের কাছে দেওবন্দি আকাবিরদের কোনো তাফসিরের দলিল নেই৷ যে কোন জায়গা থেকে যে কোন দলিল পেলেই হলো? তাহলে আহমদ রেজা খানের কথা মেনে নাও! সেও তো এতো এতো হাওলা পেশ করে থাকে। তার কাছে তো ‘রাসুল গায়েব জানেন’ বিষয়ে বহু দলিল আছে! কিন্তু তাই বলে কি তার বক্তব্য সঠিক হয়ে গেছে?

এ জন্য বিষয়গুলো খুব ভালোভাবে বুঝতে হবে। কুরুনে ছালাছাহ বা তিন উত্তম যুগের নির্ভরযোগ্য ব্যক্তিদের মাধ্যমে কুরআন ও হাদিসের যে পুরোপুরি বিশুদ্ধ ব্যাখ্যা এসেছে কেবল তাই দেওবন্দি উলামা গ্রহণ করে থাকেন। এর বাইরে কোন বড় ব্যক্তির কথাই দেওবন্দী উলামা গ্রহণ করেন না।

উল্লেখ্য মাওলানা সাদ কান্ধলভি দেশ-বিদেশে বয়ান করেন। বয়ানের বিভিন্ন অংশে আপত্তি জানান ওলামায়ে কেরাম। এ অবস্থায় ভারতের সাহারানপুরের মাজাহিরে উলুমের শিক্ষাসচিব ও মাওলানা সাদ কান্ধলভির শ্বশুর, ফাজায়েলের আমলগ্রন্থসহ অনেক গ্রন্থের লেখক মাওলানা সালমান সাহেবের এই গ্রন্থ প্রকাশ কতটা প্রাসঙ্গিক তা বড়রাই বিবেচনা করবেন!


সম্পর্কিত খবর

সর্বশেষ সংবাদ