শুক্রবার, ২৬ এপ্রিল ২০২৪ ।। ১৩ বৈশাখ ১৪৩১ ।। ১৭ শাওয়াল ১৪৪৫

শিরোনাম :
ফরিদপুরে দুই সহোদর হত্যা: ৩ মে ঢাকাসহ সারা দেশে ইসলামী আন্দোলনের বিক্ষোভ তীব্র গরমে আলোকিত মানিকছড়ি জনকল্যাণ সংস্থার প্রশংসনীয় উদ্যোগ ফরিদপুরের দুই শহীদ পরিবারের পাশে হেফাজত নেতৃবৃন্দ নির্বাচনে প্রার্থী হওয়ায় বিএনপির ৭৫ নেতা বহিষ্কার ছাদ থেকে পড়ে মাদরাসাছাত্রীর মৃত্যু টানা তাপপ্রবাহে ভাঙল ৭৬ বছরের রেকর্ড তাপপ্রবাহ থেকে সুরক্ষায় রেলওয়ে কর্মকর্তাদের ৫ নির্দেশনা ‘বাংলাদেশ ও থাইল্যান্ডের মধ্যে সহযোগিতা জোরদারের সুযোগ রয়েছে’  মন্দিরে হামলাকারীদের বিরুদ্ধে তদন্তভিত্তিক বিচারের দাবি ইসলামী আন্দোলনের পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রীর বক্তব্য থেকে বিএনপির শিক্ষা নেওয়া উচিত: কাদের

বইমেলায় আসছে রাকিব আল হাসানের দূরত্বমা

নিউজ ডেস্ক
নিউজ ডেস্ক
শেয়ার

যিয়াদ বিন সাইদ: দূরত্বমা। সাজু দা'র সুবর্ণকমল প্রচ্ছদে প্রেমিকার ম্লানমুখ দেখে আমাদের বইয়ের পাতা ওল্টাতে হলো। এবার খুলে দেখবো কেমন নক্ষত্রের বসবাস এখানে। কেমন করে জ্বলজ্বল করছে ধ্রুপদী তারকারা। পৃষ্ঠা ওল্টাতে গিয়ে শুরুতেই আপনাকে একটু স্থির হয়ে দাঁড়াতে হবে।

মানুষের সর্বদিক থেকে গল্পেরা কীভাবে মানুষকে আঁকড়ে রেখেছে তা নিয়ে ভাবতে হবে। গল্পকে আপনি তাড়িয়ে বেড়ালেও গল্প আপনার পিছু পিছু চলবে। ক্রমাগত। নিরলস। সমগ্র মুখে তরুণত্বের ছায়ায় আবৃত এ রাকিব আল হাসান অঙ্কুরেই গল্প কিংবা গল্পের মাহাত্ম্যকথা আপনার হৃদয়ে সুনিপুণ ভাবে মেলে ধরতে সক্ষম হবে।

তরুণ রাকিব আল হাসানের ৭২ পৃষ্ঠার এ বইটিতে রয়েছে বিশটিরও বেশি গল্প। এবং প্রতিটি গল্পের রয়েছে হৃদয়ে আনন্দ দেয়া সুন্দর সুন্দর শিরোনাম। প্রতিটি গল্প আমি গভীর মনোযোগ দিয়ে পড়তে চেষ্টা করেছি। অচেনা এ রাকিব আল হাসানকে চিনতে চেয়েই পরম নিবিষ্টমনে গল্পগুলো আমি পড়েছি।

মূলত দূরত্বমা বইটি মানুষের জীবনে অঙ্গাঙ্গীভাবে জড়িয়ে থাকা 'প্রেম' নিয়ে লেখা হয়েছে। গল্পগুলোর মূল উপজীব্য বিষয়ই হচ্ছে প্রেম। এবং প্রতিটি প্রেম ভিন্ন ভিন্ন আঙ্গিকে। ভিন্ন ভিন্ন সুরে। বেশিরভাগ আগে না দেখা। নতুন কিছু পাবার সুখ আমাকে যেমনি আনন্দ দিয়েছে ঠিক আপনাকেও আনন্দ দেবে নিশ্চয়।

বাস্তবিক জীবনে পৃথিবীর অধিকাংশ প্রেমিক অথবা প্রেমিকা; দ্বিধাগ্রস্ত হয়ে থাকে। হৃদয়ের অব্যক্ত কালাম মুখ ফুটে বলতে পারেনা। দেখা যায় না বলাই রয়ে যায় শেষ অব্ধি। হৃদয়ে জ্বলন সৃষ্টি করবার মত এ বিষয়টিই রাকিব আল হাসানের 'দূরত্বমা'র প্রথম গল্পে আমি পষ্ট দেখতে পেয়েছি। আমি নিজের জীবনের সঙ্গে মিলিয়ে দেখতে চেয়েছি। ভাবতে চেষ্টা করেছি। হ্যাঁ হ্যাঁ।

আমাদের জীবনটা ঠিক এমনই। প্রেমেজর্জর এ গল্পটি পড়বার পর আমি আরও আগ্রহী হলাম। আরও। প্রচণ্ড ব্যগ্রতার সাথে পৃষ্ঠা উল্টিয়ে গেলাম। ক্রমাগত।

একটু এগুলেই আরও আকর্ষণ সৃষ্টি হলো আমার। হসপিটালে মানুষের ব্যস্ত সময়। হুড়োহুড়ি। এরই মধ্যে কারো কারো কখনওবা জেগে উঠতে পারে পুরোনো প্রেম। ওই যে চেম্বারে বসে থাকা লামিয়া। খ্যাতির মাকাল ধরে শীর্ষে পৌঁছে যাওয়া এ চিকিৎসক হয়তোবা কখনো লেখক রাকিব আল হাসানকে মোহিত করেছিলো।

প্রেমের শরাব গিলে দীর্ঘ বিচ্ছেদের পর আবার তাকে কাছে পেয়েও কেমন ভীতসন্ত্রস্ত হৃদয়। হৃদয়ে রিনরিন করে বাজতে থাকা এ প্রেমসংগীত আমাকে আনন্দই দিয়েছে।

প্রেম যে মানুষের হৃদয়কে কতটা ব্যগ্র করতে পারে এবং কতটা উতলা করতে পারে এরই বাস্তব এক রূপের দেখা পেলাম 'দূরত্বমা'র তৃতীয় গল্পে। একশ্রেণীর লোককে বলা হয় প্রেমিক পুরুষ। এরা নিজেকে উজাড় করে দেয়। হারিয়ে গেলে প্রেমিকা; তবুও সে অক্লান্ত। প্রেমিকার নাম জপতে থাকে। এমনকি মৃত্যু পর্যন্ত। এমনই এক দৃশ্যের বর্ণনা রাকিব আমাদেরকে বারেবারে দিয়েছেন।

প্রেম মানুষকে ভণিতার দিকে ঠেলে। মিথ্যে করে কতকিছু বলতে শেখায়। যেমন বলতে শেখায়, শিং মাছের ঝোল হবে? এগুলো সবই প্রেমের গভীরতা থেকে। প্রেমবান মোহ থেকে।

প্রেমকে কেন্দ্র করে মানুষ কুমারযাপন শুরু করে। আবার কারো কারো ক্ষেত্র পরিবর্তন হয়ে অন্য জীবনে গিয়েও পুরোনো প্রেমকে মনে পড়তে থাকে। দূরত্বমার 'কী যে এক দীর্ঘ রাত'এ রাকিব আমাদের তা-ই বুঝিয়েছে। মিলার বিয়ে হয়ে গেলেও তার মন পড়ে থাকে তানভীরের দেয়া সে ডায়েরী তে। যেন থোকায়থোকায় জোনাক জ্বলে। যেনবা এ বিয়েপ্রথা নিঃশেষ হয়ে যাবার কামনা মিলা করে বারবার।

দূরত্বমা'য় আছে 'রিভিউ' শিরোনামে একটি ঝকঝকে গল্প। আমি রাকিব আল হাসানের বই নিয়ে আলাপ করতে সময় আমি অবাক হয়ে ভাবলাম, আমার মন সত্যিই খুব আনন্দ পাচ্ছে। আমি রিভিউ লিখছি। হৈম এবং শীতল রিভিউ লিখে চুটিয়ে প্রেম করছে। যাপনে কী সুন্দর জীবন। আহা আহা! রাকিবে আমি আরও মোহিত হয়ে পড়লাম যে কারণে; এ গল্পে হৈম এবং শীতল, দুটি নামই আমার প্রচণ্ড রকম ভালো লেগেছে।

ঢাকা, একাকীত্ব এবং নিঃসঙ্গতার শহর। এটা বাস্তবোচিত নিরেট সত্য দৃশ্যপট অবলম্বনেই লেখা এক গল্প বলে মনে হয়েছে আমার। হঠাৎ করেই মানুষের জীবনে নেমে আসতে পারে সংকট। ভয়াবহ বিপর্যয়। পূর্বের গল্পগুলোতে প্রেম প্রেম আবহে হৃদয়কে ভালো লাগা দিলেও এখানে এসে আমার হৃদয়ে সৃষ্টি হয়েছে বিচূর্ণন।

আননোন নম্বর থেকে আসা আজনাবীর সামান্য বাতচিত মানুষকে প্রেমের শরাব গিলতে বাধ্য করে। যেমনি বাধ্য করেছেন রাকিব আল হাসান। তার দূরত্বমার 'জিরো ওয়ান সেভেন এবং একটি হৃদয় হারানোর মত ঘটনা'য়। কিন্তু এখানেও আছে চরম আকর্ষণ। হৃদয় হারিয়ে গেছে ঠিকই। কিন্তু আমাদের মনে আকর্ষিত অবগাহনে কেউ কেউ হয়তো জেগে আছেন।

দূরত্বমায় অনেকগুলো গল্প। প্রেমেজর্জর প্রতিটি গল্পেই আছে ভিন্ন ভিন্ন সুর। সবগুলোই ভালো লাগবার মত। হৃদয়কে মোহিত করবার মত। হাসি-কান্নার দোলাচলে লেখক রাকিব আল হাসান নির্মাণ করতে পেরেছেন এক দারুন গ্রন্থ। বিস্ময়ের প্রাচুর্য ঠেলে আমি হয়তোবা সবগুলোর আলোচনা করতে পারবো না। কিন্তু অদ্ভুত অভিনিবেশে হৃদয়ে বাজতেই থাকবে এসব গল্প।

আর সবচাইতে আকর্ষণ যেখানে, সেটা হলো শেষে। মূলত দূরত্বমা। যেখানে রাকিব আল হাসান নিজের এক চিত্র এঁকেছেন প্রেমকে কেন্দ্র করে। নিজের জীবনের সঙ্গেও যে প্রেম ওতপ্রোত ভাবে মিশে আছে 'মেঘবালিকা'র রিক্তহস্ত ধরে, তার সুন্দর বর্ণনাই দিয়েছেন সেখানে।

তাই বলি পৃথিবীর প্রেমিক পুরুষ! প্রেমকে হৃদয়স্থ করতে 'দূরত্বমা'য় আপনাকে ডুবতে হবে। রাকিব আল হাসানের ঐশ্বরিক এ কর্মের অনুধাবন আপনাকে করতেই হবে। সুখী হোক জীবন।

বইয়ের নাম: দূরত্বমা
লেখক: রাকিব আল হাসান
প্রকাশক: বর্ষাদুপুর

রঙিন মখমল দিন এবং কিছু রসকষহীন অনুভূতি


সম্পর্কিত খবর


সর্বশেষ সংবাদ