মঙ্গলবার, ১৬ এপ্রিল ২০২৪ ।। ৩ বৈশাখ ১৪৩১ ।। ৭ শাওয়াল ১৪৪৫

শিরোনাম :
হিজবুল্লাহর হামলায় ৪ ইসরায়েলি সেনা আহত রাজধানীর আল্লামা শামসুল হক রহ. মাদরাসায় ভর্তি শুরু আগামীকাল ফরিদপুরে বাসের সঙ্গে পিকআপ ভ্যানের ধাক্কা, নিহত ১৪ ইরানের সঙ্গে ‘পূর্ণমাত্রার যুদ্ধ’ চায় না ইসরায়েল: জাতিসংঘের সাবেক রাষ্ট্রদূত দেশের বিশেষ কওমি মাদরাসাগুলোর ভর্তি কখন থেকে জেনে নিন আলোকিত মানিকছড়ি জনকল্যাণ সংস্থার ঈদ পুনর্মিলনী সম্পন্ন বেতুয়া হাশেমিয়া দারুস সুন্নাহ মাদরাসার উদ্বোধন অচিরেই মুসলিম বিশ্ব ফিলিস্তিনের মুক্তি উদযাপন করবে ঢাকায় আগত নতুন ছাত্রদের উদ্দেশ্যে বিশেষ পরামর্শ মিসরে অবস্থানরত গা’যযাবাসী পরিবার ও শিক্ষার্থীদের সাথে বাংলাদেশীদের ঈদ উদযাপন

‘জ্ঞানের জন্য নয়, চাকুরীর জন্য কতকিছু মুখস্থ করি’

নিউজ ডেস্ক
নিউজ ডেস্ক
শেয়ার

আজমুল আজিজ :  দৃশ্যটি এশিয়া মহাদেশেরই একটি দেশের। সে দেশে রোডের পাশের ড্রেনে মাছ চাষ হয়। আন্তর্জাতিক খেলায় নিজ দেশ বাজেভাবে হারলেও লাথি মেরে কেউ স্টেডিয়ামের চেয়ার ভাঙ্গে না। সে দেশের প্রাইমারী লেভেলের ছাত্র-ছাত্রীদের হোমওয়ার্ক থাকে রোবট বানানো।

আমাদের দেশে রোডের পাশের ড্রেনে মাছ চাষ তো দূরের কথা, ঢাকার ঐতিহ্য বুড়িগঙ্গা নদীই মাছ চাষের জন্য অনুপযোগী। আমাদের গায়ে বীরের রক্ত টগবগ করে;সুতরাং দেশ হারলে স্টেডিয়ামের দু-চারটা চেয়ার আমরা ভাংতেই পারি। সম্ভব হলে সাকিব তামিমকে স্টেডিয়ামে বসেই খেলা শিখিয়ে আসি আমরা।

প্রাইমারী লেভেলে আমরা হোমওয়ার্ক হিসেবে পেয়েছি হাতের লেখা সুন্দর করার দায়িত্ব। এস.এস.সি, এইস.এস.সিতে ভাগ্য খুব ভাল হলে বাড়ির কাজ হিসেবে পেয়েছি বোতলের দৈর্ঘ্য ,প্রস্ত বের করার দায়িত্ব বোতলের দৈর্ঘ্য, প্রস্থ মাপতে মাপতে হয়ত একদিন আমাদের মধ্যেই কেউ বোতলের আয়তন বের করা শিখবে।কিন্তু বিল গেটস,স্টিভ জবস,মার্ক জাকারবার্গের মতো কাউকে তৈরী করতে হলে  তো সেই মানের ভিত্তি চাই।

আমাদের প্রজন্মের সবচেয়ে বড় অপ্রাপ্তি ঠিক এই জায়গাতে। আমাদের ভাল কোন ভিত্তি নেই,
দিকনির্দেশনা নেই।আমরা বুয়েটে পড়ে হচ্ছি পুলিশ অফিসার, মানবিকে পড়ে হচ্ছি ব্যাংক অফিসার।পাঠ্য বিষয় এবং জবের মধ্যে যেখানে থাকছে বিস্তর ফারাক।

আমরা ঠিক জানি না কিসের জন্য আমরা হাসিমুখে দেশের উন্নয়নে কাজ করতে প্রস্তুত।আমরা জানি না রাতের পর রাত, আমরা কেন পড়ার টেবিলে কাটাই।

গ্রাফ থেকে মান বের করি বা এ্যাসাইনমেন্ট তৈরী করি। আমরা ঠিক জানিনা কেন আমরা বৈমানিক হতে চাই, ইঞ্জিনিয়ার হতে চাই, ডাক্তার হতে চাই। আমরা জানিনা এই বিশাল পৃথিবীতে আমাদের অবস্থানটা ঠিক কোথায়, জানি না ঠিক কিসের জন্য আগামীদিন আমরা ঘুম থেকে উঠব।

আমরা চাকুরীর পরীক্ষার জন্য মুখস্ত করি জাপানের মুদ্রার নাম কি? অথচ জানার দরকার ছিল জাপান কেন আজ পৃথিবী সেরা। আমরা মুখস্থ করি বাঘের ডাককে কি বলে ?যেখানে জানার দরকার ছিল সুন্দরবনের বাঘ রক্ষায় আমাদের করনীয় কী?

ইংরেজী সাহিত্যে পড়াশুনা শেষ করেও আমরা বাংলা সাহিত্যের সন্ধি মুখস্ত করতে গিয়ে মুখস্ত করি পাগল+আমি=পাগলামী।

বাংলা সাহিত্যের নিগূঢ়তম রহস্য গুলো নখদর্পণে থাকার পরেও মাস্টার্স শেষ করে আমরা মুখস্ত করি ইংলিশের পার্টস অফ স্পিস।

আমরা মুখস্ত করি কোন রাজার শ্যালকের নাম কি, ঘোড়ার ডাকের প্রবর্তক কে? চাদ কোন দেশের উপনিবেশ ছিল?

জাতীয় অতিপ্রয়োজনীয় জ্ঞান!!একটা চাকরীর আশায় আমরা কত কিছুই না মুখস্ত করি।

সত্যিকারের জ্ঞানচর্চা এবং অধিকাংশ অফিসাররা যদি সৎ থাকত দেশ তাহলে আরো ভাল অবস্থানে থাকত।

উন্নত জাতি হিসেবে আত্মপ্রকাশ করার আমাদের অনেক কিছুই ছিল। আমাদের পাট ছিল, ধান ছিল, ইলিশ ছিল, চিংড়ি ছিল, গার্মেন্টস ছিল, রেমিট্যান্স ছিল, পদ্মা-যমুনা ছিল,চিটাগাং পোর্ট ছিল, সুজলা-সুফলা উর্বর জমি ছিল,সুন্দরবন ছিল, কক্সবাজার ছিল। অভাব শুধু সৎ মানুষের।আমরা পড়ে আছি সেই মান্ধাতার আমলে। যার কারনেই আমাদের অর্থনীতির চাকা সোজা হয়ে দাঁড়াতে পারছে না।

আজ আমাদের দরকার ছিল সুন্দর একটি দেশ গড়ার স্পিরিট। যেই স্পিরিটটা দেশ গড়তে আমাদেরকে সামনে বাড়াত। আমরা হতাম পৃথিবীর অন্যতম একটি সেরা জাতি। আমাদের দেশ হতো পৃথিবীর অন্যতম অর্থনৈতিক সমৃদ্ধির দেশ।

তখন আমরা শুধু রাস্তার পাশের ড্রেনেই না ,বুড়িগঙ্গায় আবার মাছকে ফিরিয়ে আনতাম। বাংলাদেশ হারলেও স্টেডিয়াম পরিস্কার করে বাসায় ফিরে পোস্ট দিতাম মাশরাফি ভাই ব্যাপার না, সামনের ম্যাচে ধরে দিবানে।

সেই স্পিরিটা প্রাইমারী হাইস্কুলের বাচ্চাদের মাঝেও ছড়িয়ে যেত। তখন তাদের হোমওয়ার্ক থাকত বাসা থেকে নতুন কিছু সৃষ্টি করে আনার।

দেশের উন্নয়নে সেই স্পিরিটের দরকার ছিল, যেই স্পিরিট নিয়ে ভুজেসিক নিক হাত পা বিহীন মানব হয়েও পৃথিবী সেরা। যেই স্পিরিট নিয়ে নেলসন মেন্ডেলা নিজেকে নিয়ে স্বপ্ন দেখত বিশ্বসেরা হওয়ার।আমাদের দরকার ছিল সেই স্পিরিটটা।

ঠিক জানি না মরার আগে বড় কিছুর অংশ হয়ে মরতে পারব কিনা, তবে সকলের কাছে দাবী করতেই পারি আমরা সবাই যেন বড় কিছুর অংশ হয়েই পৃথিবী ত্যাগ করার স্বপ্ন দেখি। সেই স্পিরিটটা তখন অবশ্যই দেশের মধ্যে ছড়িয়ে পড়বে।

দেশ তখন অবশ্যই এগিয়ে যাবে...
সময়ের প্রতিক্ষায় অপেক্ষারত...

লেখক :  আজমুল আজিজ, শিক্ষার্থী, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়।

Change is You ফেসবুক পেজ থেকে নেওয়া ।


সম্পর্কিত খবর


সর্বশেষ সংবাদ