শুক্রবার, ১৯ এপ্রিল ২০২৪ ।। ৬ বৈশাখ ১৪৩১ ।। ১০ শাওয়াল ১৪৪৫


‘থানবি রহ. এর হাতে বাইয়াত হওয়া আমার বোন আতিকাই বর্তমানে জীবিত আছেন’

নিউজ ডেস্ক
নিউজ ডেস্ক
শেয়ার

[জামিয়া দারুল উলুম করাচির মুখপাত্র ‘ماہنامہ البلاغ মাহনামা আল-বালাগ’ এ ধারাবাহিকভাবে প্রকাশিত বিশ্বনন্দিত আলেম, স্কলার আল্লামা তাকি উসমানির আত্মজীবনী আওয়ার ইসলামে ধারাবাহিকভাবে প্রকাশ হচ্ছে আলহামদুলিল্লাহ।

এ বিষয়ে আল্লামা তাকি উসমানি আনুষ্ঠানকিভাবে আওয়ার ইসলামকে ভাষান্তর করে প্রকাশের অনুমতি দিয়েছেন। গত ২ জানুয়ারি জামিয়া দারুল উলুম করাচির তাখাসসুস ফিল ইফতার শিক্ষার্থী, আওয়ার ইসলাম টোয়েন্টিফোর ডটকমের শুভাকাঙ্ক্ষি উমর ফারুক ইবরাহীমীর মাধ্যমে আল্লামা তাকি উসমানি ও পত্রিকা কর্তৃপক্ষের কাছে আত্মজীবনী ‘ইয়াদে’ অনুবাদের অনুমতি চাওয়া হলে তারা খুশি মনে রাজি হন এবং আওয়ার ইসলামকে ধন্যবাদ জানান বাংলাভাষায় ইসলামের প্রচার ও প্রসারের জন্য।

আল্লামা তাকি উসমানির নতুন ধারাবাহিক আত্মজীবনী “یادیں ইয়াদেঁ ” মাহনামা আল-বালাগে সফর ১৪৩৯ হিজরি, নভেম্বর ২০১৭ ইংরেজি মাস থেকে। আওয়ার ইসলামে লেখাটি প্রতি শনিবার ও বুধবার প্রকাশ হবে ইনশাল্লাহ। আজ ছাপা হলো ৬ষ্ট কিস্তি। অনুবাদ করেছেন মাওলানা  উমর ফারুক ইবরাহীমী।]

পূর্ব প্রকাশের পর: দ্বিতীয় বোন মুহতারামা আতিকা খাতুন। মাশাআল্লাহ! তিনি অত্যন্ত ইবাদতগুজার এবং সুবিন্যস্ত, পরিপাটি জীবনযাপনের অধিকারিণী একজন রমণী। তিনি হাকিমুল উম্মত হজরত আশরাফ আলী থানবি রহ. এর কাছে বাইয়াতের সৌভাগ্যও অর্জন করেছেন।

আজ (২৩ ফেব্রুয়ারি ২০১৭, ২৫ জুমাদাল উলা ১৪৩৭) আমার জানামতে বর্তমান পৃথিবীতে তিনি ছাড়া দ্বিতীয় আরেকজন জীবিত নেই, যিনি সরাসরি হাকিমুল উম্মত হজরত আশরাফ আলী থানবি রহ. থেকে বাইয়াতের সৌভাগ্য অর্জন করেছেন।

হজরত আব্বাজান মুফতি মুহাম্মদ শফি রহ. এর মা’মুল ছিলো, তিনি প্রতি রমজানে স্বপরিবারে হজরত হাকিমুল উম্মত থানবি রহ. এর খেদমতে (থানাভবন) হাজির হতেন।এবং তার সোহবতে সময় লাগাতেন।

সে মানসে অধিকাংশ সময় খোদ হজরত থানবি রহ.এর বাড়ির উপরের তলায় একটি কামরায় অবস্থান করতেন। উপরের সেই কামরাটির নকশা এভাবে ছিলো- হজরত থানবির রহ. কামরার সামনে উঠোন ছিলো। উঠোনের ঠিক শেষ প্রান্তে সিঁড়ি ছিলো উপরের কামরায় যাবার জন্য।

বাথরুম যেহেতু পুরো বাড়িতে একটিই ছিলো তাই হযরত থানবি রহ. ব্যবস্থাপনা এভাবে করেছিলেন যে, উঠোনের একটি নির্দিষ্ট স্থানে ল্যাম্প ঝুলিয়ে রাখতেন। ল্যাম্পটি নির্দিষ্ট স্থানে মজুদ থাকার অর্থ ছিলো, বাথরুম এখন উপরের কামরায় অবস্থানরতদের জন্য খালি আছে এবং সেখানে পর্দারও পূর্ণ ব্যবস্থাপনা থাকতো। ল্যাম্পটি নির্দিষ্ট স্থানে না থাকলে বুঝে নিতে হতো, এখন টয়লেটে কেউ আছেন।

আমার এই বোন (আতিকা) শুনিয়েছেন, ‘উপরের কামরায় থাকাকালীন সময়ে আব্বাজান অত্যন্ত আদব ও ইহতিরামের সাথে থাকতেন এবং আমাদের সবসময় বিন্দুমাত্রও শোরগোল করতে নিষেধ করতেন। বলতেন, কোনভাবেই যেন আমরা হজরতের কষ্টের কারণ বনে না যাই’।

আমি তখন ছোট্ট ছিলাম। তখনো পর্দার বয়স হয়নি। একদিন আব্বাজান আমাকে ডেকে বললেন- যাও! হজরতকে গিয়ে বলো- ‘আপনি আমাকে বাইয়াত করে নিন’। প্রথমে আমি এটিকে নিছক মজা মনে করেছিলাম। ভাবছিলাম এমন ছোটবাচ্চাদের আবার কিভাবে বাইয়াত করে?

আব্বাজান দ্বিতীয়বার যখন বললেন, তখন আমি তাঁকে জিজ্ঞেস করে বসলাম, ‘ছোট্ট বাচ্চারাও কী বাইয়াত হয়?’ আব্বা বললেন, জি হ্যা, বাইয়াত হতে পারে।

তারপর আমি পিরানি সাহেবার (হজরত থানবি পত্নী) কাছে গিয়ে আরজ করলাম, আমি হজরতের কাছে বাইয়াত হতে চাই। পিরানি সাহেবা হজরতকে বললেন, এই বাচ্চা বাইয়াত হতে চায়।

হজরত আমাকে ডেকে জিজ্ঞেস করলেন, ‘বাইয়াতকে পুতুলখেলা মনে করবে না তো?’ আমি না সূচক জবাব দিলাম। হজরত থানবি রহ. একটি কাপড়ের এক প্রান্ত আমার হাতে দিয়ে অন্য প্রান্ত নিজের হাতে রাখলেন এবং আমাকে বাইয়াত করে নিলেন।

এভাবেই আমার এই বোন হজরত থানবি রহ. এর হাতে শৈশবকালে বাইয়াতের সৌভাগ্য অর্জন করেন।

পুনশ্চ: এখানে একটি বিষয় বিশেষভাবে উল্লেখ্য, বাইআতের আসল মাকসাদ তো প্রাপ্তবয়স্ক হওয়ার পরই হাসিল হয়, কিন্তু সিলসিলায় দাখিল হবার বরকত বাল্যকালেইও হাসিল করা যায়।

আমার এই বোনের বিবাহ আমার জন্মের আগেই হয়েছিলো। বরং আমার দুনিয়ায় আসার আগে তাঁর একটি কন্যাও জন্মগ্রহণ করেছিলেন।তাঁর দ্বিতীয় কন্যা আমার প্রায় সমবয়সী। তিনি স্বামী সন্তানসহ আমাদের বাসা থেকে পশ্চিম দিকে অন্য আরেকটি বাসায় থাকতেন।

মুহতারামা নাঈমা খাতুন সাহেবার দুই মেয়ে এক ছেলে এবং মুহতারামা আতিকা খাতুন সাহেবার এক মেয়ে যদিও সম্পর্কে আমাকে মামা বলার কথা, কিন্তু আমার এই ভাগ্নে ভাগ্নিরা বয়সে আমার বড় ছিলেন এবং ফুফু উম্মাতুল হান্নান সাহেবার মক্তবে পড়াশোনায় (যার আলোচনা সামনে আসবে ইনশাআল্লাহ) এই চারজন আমার সিনিয়র ছিলেন।

যেহেতু বয়সের ফরক অতোটা বেশি ছিলো না, তাই আমাদের মামা-ভাগ্নেভাগ্নির চেয়ে বন্ধুত্বসুলভ সম্পর্কই ছিলো বেশি এবং আমার বন্ধু্ত্বের পরিধি তাদের পর্যন্তই সীমাবদ্ধ ছিলো। এদের মধ্যে ভাগ্নে ছিলো শুধু একজন।

পরবর্তীকালে যাকে মাওলানা হাকিম মুশাররফ হুসাইন বলতাম। আমার বন্ধুত্ব তাঁর সাথেই বেশি ছিলো। তিনি সবধরনের খেলাধুলোয় বেশ অগ্রগামী ছিলেন। আমি শুধুই তার সঙ্গ দিতাম। চলবে ইনশাআল্লাহ...

আগের পর্বগুলো পড়তে ক্লিক করুন এখানে


সম্পর্কিত খবর


সর্বশেষ সংবাদ