[জামিয়া দারুল উলুম করাচির মুখপাত্র ‘ماہنامہ البلاغ মাহনামা আল-বালাগ’ এ ধারাবাহিকভাবে প্রকাশিত বিশ্বনন্দিত আলেম, স্কলার আল্লামা তাকি উসমানির আত্মজীবনী আওয়ার ইসলামে ধারাবাহিকভাবে প্রকাশ হচ্ছে আলহামদুলিল্লাহ।
এ বিষয়ে আল্লামা তাকি উসমানি আনুষ্ঠানকিভাবে আওয়ার ইসলামকে ভাষান্তর করে প্রকাশের অনুমতি দিয়েছেন। গত ২ জানুয়ারি জামিয়া দারুল উলুম করাচির তাখাসসুস ফিল ইফতার শিক্ষার্থী, আওয়ার ইসলাম টোয়েন্টিফোর ডটকমের শুভাকাঙ্ক্ষি উমর ফারুক ইবরাহীমীর মাধ্যমে আল্লামা তাকি উসমানি ও পত্রিকা কর্তৃপক্ষের কাছে আত্মজীবনী ‘ইয়াদে’ অনুবাদের অনুমতি চাওয়া হলে তারা খুশি মনে রাজি হন এবং আওয়ার ইসলামকে ধন্যবাদ জানান বাংলাভাষায় ইসলামের প্রচার ও প্রসারের জন্য।
আল্লামা তাকি উসমানির নতুন ধারাবাহিক আত্মজীবনী “یادیں ইয়াদেঁ ” মাহনামা আল-বালাগে সফর ১৪৩৯ হিজরি, নভেম্বর ২০১৭ ইংরেজি মাস থেকে। আওয়ার ইসলামে লেখাটি প্রতি শনিবার ও বুধবার প্রকাশ হবে ইনশাল্লাহ। আজ ছাপা হলো ৫ম কিস্তি। অনুবাদ করেছেন মাওলানা উমর ফারুক ইবরাহীমী।]
পূর্ব প্রকাশের পর: আমার মুহতারামা বড় আপা মরহুমা নাঈমা খাতুন আর্থিক দীনতা সত্বেও জীবনভর আপন ব্যক্তিত্ব, আত্মমর্যাদাবোধ এবং স্বকীয়তা পূর্ণভাবে বজায় রেখে চলেছেন। নিজের অভাব, অনটন কখনোই কাউকে বুঝতে দেননি। তাঁর মত এমন আত্মমর্যাদাবোধসম্পন্ন দ্বিতীয় আরেকজন রমণী খুঁজে পাওয়া মুশকিল। তাঁর ব্যাপারে একটি ঘটনা বিশেষভাবে উল্লেখের জন্য আমার কলমের যেন তর সইছে না!
যেমনটা আমরা পূর্বে বলে এসেছি, বিবাহোত্তর জীবনে তিনি দীনহীনা রমণী ছিলেন। আর্থিক অবস্থা ছিলো খুবই করুণ। এমতাবস্থায় একবার তিনি আব্বাজানের কাছে আরজ করলেন, আপনি আমার জন্য দোয়া করে দেন, আল্লাহ যেন আমাকে হজের সৌভাগ্য নসিব করেন।
আব্বাজান বললেন, সত্যিই তোমার হজে যাওয়ার আগ্রহ আছে?
আপাজান হ্যাঁ সূচক জবাব দিলে আব্বাজান বললেন, নাহ! তোমার হজের শওক নেই।
আপাজান বললেন, আব্বা সত্যিই আমি আগ্রহী। অনেকদিন ধরে হজে যাবার জন্য মুখিয়ে আছি।
তখন আব্বাজান জিজ্ঞেস করলেন, আচ্ছা তুমি কি এ কাজের জন্য রুপি সঞ্চয় করেছো? আপাজান না সূচক জবাব দিলেন। আব্বাজান বললেন, তার মানে তোমার আগ্রহ শুধু মুখে মুখেই! বাস্তবিকপক্ষে তোমার শওক থাকলে, তুমি কিছু না কিছু অবশ্যই সঞ্চয় করতে।
আপাজান ওজর পেশ করে বললেন, প্রয়োজনীয় খরচাদি শেষে কিছু বেঁচে থাকলেই তো আমি সঞ্চয় করবো!আব্বাজান বললেন, তুমি কী এ কাজের জন্য এক আনাও বাঁচাতে অক্ষম? আপাজান বললেন, এটাতো পারবো, তবে এটা দিয়ে হজের রাহ খরচ কিভাবে সম্ভব?
আব্বাজান বললেন, বান্দা যখনই সাধ্যমতো নেক কাজের জন্য কদম উঠায়, প্রথমত আল্লাহ তাআলা অবশ্যই তাকে নুসরত করেন। দ্বিতীয়ত যদি তার নেক ইচ্ছা আলোর মুখ নাও দেখে, তবু আল্লাহ চাহে তো সে সওয়াব পেয়েই যাবে। কিন্তু কদম উঠানো ছাড়া শুধু আশা জমিয়ে রেখে তো আর কাজ হবে না।
তখন তো এ ঘটনা ঘটলো। মাঝে লম্বাসময় অতিক্রান্ত হয়ে ১৯৫৬হিজরি সনে আপাজানের ইন্তেকাল হয়।
এরপর ওয়ারিশরা যখন তাঁর রেখে যাওয়া সম্পত্তির হিসেব টানলেন, তখন সেখানে কাপড়ের ছোট্ট একটি থলের সন্ধান মিলেছিলো। যার উপরে লেখা ছিলো ‘হজ্বের জন্য জমানো রুপি।’
থলেটির ভেতরে প্রায় পঁয়ষট্টি রুপি পাওয়া গিয়েছিলো। আব্বাজান থলেটি দেখার পর অনিচ্ছায় তাঁর গণ্ডদেশ বেয়ে কয়েকফোটা অশ্রু গড়িয়ে পড়লো। তখন আব্বাজান পুরো ঘটনাটি আমাদের শুনিয়েছেন। পরবর্তীতে আব্বাজান জমানো পয়সাগুলো আপাজানের বদলা হজের কাজে ব্যয় করেছেন।
পরবর্তীকালে একবার আব্বাজান হজের সময়ে আরাফার ময়দানে অবস্থান করছিলেন। কিছু সময়ের জন্য আব্বাজানকে তন্দ্রা পেয়ে বসলো। তখন আব্বাজান স্বপ্নলোকে দেখলেন, আপাজান আরাফার জাবালে রহমত পাহাড়ে বিচরণ করছেন!
এভাবেই আল্লাহ তা’য়ালা তাঁর এই বান্দির হজ আদায় করিয়েছেন। আল্লাহ তাঁর উপর সদাসর্বদা রহমতের বারি বর্ষণ করেন। আমিন! চলবে ইনশাআল্লাহ...
আমার স্মৃতিতে আম্মাজান নাফিসা খাতুন ও আপা নাঈমা