বৃহস্পতিবার, ২৮ মার্চ ২০২৪ ।। ১৪ চৈত্র ১৪৩০ ।। ১৮ রমজান ১৪৪৫


ইউটিউবের সবচেয়ে বেশি দেখা ৫ তেলাওয়াত

নিউজ ডেস্ক
নিউজ ডেস্ক
শেয়ার

আতাউর রহমান খসরু: কুরআন তেলাওয়াত একটি শিল্প।  আল্লাহই বলেছেন তার কুরআনকে শিল্পমণ্ডিত করে তেলাওয়াত করতে।   শুধু পরকালেই নয়, কুরআনের শিল্পীগণ এখন পৃথিবীতেও অনেক সম্মানিত।  ভার্চুয়াল জগতে তাদের খ্যাতি দুনিয়াজোড়া।

জনপ্রিয় ভিডিও শেয়ারিং সাইট ইউটিউবেও রয়েছে কুরআনের শিল্পীদের তুমুল জনপ্রিয়তা।  শুধু গান-মুভি আর পাপের উপকরণ নয় প্রতিদিন কুরআনের তেলাওয়াত দেখেন/শুনেন শত কোটি মানুষ।

ইউটিউবে সবচেয়ে বেশি দেখা ভিডিও খুঁজে বের করা কঠিন। তবে আনুমানিক খসড়া করলে একটা তালিকা পাওয়া যায়। সে ভিত্তিতে ইউটিউবে সবচেয়ে বেশি দেখা ৫ ভিডিও ও কারিদের বৃত্তান্ত তুলে ধরা হলো।

কারি আবদুল বাসেত মিসরি

কুরআনের অমর পাখি কারি শায়খ আবদুল বাসেত বিন আবদুস সামাদ মিসরি রহ.।  আজ থেকে প্রায় তিন দশক আগে তিনি কুরআনের এক মজলিসে মৃত্যুবরণ করেন। অথচ এখনও আধুনিক যুগের কারিদের মতো সমান জনপ্রিয়। ইউটিউবে দেখা কুরআন তেলাওয়াতের শীর্ষ পযায়ে রয়েছেন তিনি।  তার একেকটি তেলাওয়া ১ লাখ থেকে ৫০ লাখ পযন্ত দেখা হয়েছে।

কারি আব্দুল বাসিত ১৯২৭ খ্রিস্টাব্দে মোতাবেক ১৩৪৬ হিজরিতে মিশরের ‘কেনা' অঞ্চলের ‘আর মানত' শহরের মরয়েজা গ্রামে জন্মগ্রহণ করেন। তার পিতার নাম আলহাজ আবদুস ছামাদ।

শৈশবে গ্রামের শায়খুল আমির পাঠশালায় কুরআনের বিশুদ্ধ তেলাওয়া শেখেন। অধ্যয়নকালেই তিনি কুরআনের বিশুদ্ধ তেলাওয়াত, ইবতেদা ওয়াক্কফ এবং শব্দ উচ্চারণস্থলে নিয়ন্ত্রণের সূক্ষ্মতায় অত্যন্ত পারঙ্গম।

তার সাধনা ও শিক্ষকদের ভালবাসা ও আত্মবিশ্বাসই তাকে কেরাতের নান্দনিকতায় পৌঁছতে অনুপ্রাণিত করে। মাত্র ১২ বছর বয়সেই তিনি সকলের নিকট পরিচিত হয়ে ওঠেন।

তিনি শায়খ মুহাম্মদ আমিরের কাছে কুরআন হিফজ করেন। শায়খ মুতকিন মুহাম্মদ সালিম হাম্মাদাহ-এর নিকট ইলমুল কিরাতের দীক্ষা নেন।  ১৯৫১ সালে তিনি মিসরের জাতীয় কেরাত প্রতিযোগিতায় অংশগ্রহণ করে দেশে বিদেশে সাড়া ফেলে দেন। ১৯৫২ সালে মিসরের বিখ্যাত ইমাম শাফেয়ি রহ. মসজিদের কারি হিসেবে নিয়োগ পান এবং ১৯৫৮ সালে এ মসজিদের ইমাম মনোনীত হন।

এরপর দেশে বিদেশে কুরআনের কারি হিসেবে বিপুল খ্যাতি অর্জন করেন। তিনি ১৯৬২ ও ১৯৮১ সালে যুক্তরাষ্ট্র সফর করেন।  কথিত আছে তার যাদুময়ী স্নিগ্ধ, জ্যোতির্ময় সুরের মূর্ছনায় পবিত্র ইসলাম ধর্মে আশ্রয় গ্রহণ করেছেন কয়েক ডজন আমেরিকান।

মরক্কোর বাদশা মুহাম্মদ আল খাশিস তাকে কায়রো ছেড়ে মরক্কোয় স্থায়ীভাবে চলে আসার আমন্ত্রণ জানিয়েছিলেন। ১৯৫৬ সালে সিরিয়া ‘বেসামুল ইসতেহকাক' পদকে ভূষিত করেন।

লেবাননের প্রেসিডেন্ট তাঁকে ‘বেসামুল আরয' পদক দিয়ে সম্মানিত করেছেন। মালয়েশিয়া সরকার ১৯৫৬ সালে রাজধানী কুয়ালালামপুরে এক বড়মসজিদ উদ্বোধনের সময় তাকে ‘বিসামে জাহবি' পদকে ভূষিত করেন।

কুরআনের অমর এ কারি ৩০ নভেম্বর ১৯৮৮ সালে মৃত্যুবরণ করেন।

১৯৯০ সালে তার মৃত্যুর পর লায়লাতুল ক্বদরের সময় মিশরীয় প্রেসিডেন্ট সুরের রাজা আব্দুল বাসিতকে ‘ইসমুশ শেখ' পদকে ভূষিত করেন।

কারি আবদুল বাসিতের এ তেলাওয়াত দেখেছেন ৫০ মিলিয়ন মানুষ।

শায়খ আবদুর রহমান আস সুদাইস

মসজিদুল হারামের অন্যতম কারি শায়খ আবদুর রহমান আস সুদাইস।  কুরআন তেলাওয়াতের একটি নতুন সুরের স্রষ্টা তিনি। দীর্ঘদিন তিনি কুরআন তেলাওয়াতকারীদের নিকট অনুসৃত।  ইউটিউবে তার একেক তেলাওয়াত পঞ্চাশ লাখেরও বেশি মানুষ দেখেছে।

শায়খ আবদুর রহমান বিন আবদুল আজিজ আস সুদাইস ১৩৮২ হিজরিতে সৌদি আরবের রিয়াদে জন্মগ্রহণ করেন। তিনি মাত্র ১২ বছর বয়সে কুরআনের হিফজ করেন এবং শায়খ মুহাম্মদ আলি হাসসানের নিকট ইলমুল কিরাত শিক্ষাগ্রহণ করেন।

১৪০৩ হিজরিতে রিয়াদ শরয়ি কলেজে ভর্তি হন এবং ১৪০৮ হিজরিতে মাস্টার্স সম্পন্ন করেন।

১৪০৪ হিজরিতে তিনি মসজিদুল হারামের ইমাম হিসেবে নিয়োগ পান। তার আগে তিনি রিয়াদের বিভিন্ন মসজিদের ইমাম ও খতিব হিসেবে দায়িত্বপালন করেন।

শায়খ আবদুর রহমান সুদাইসের এ তেলাওয়াতটি ৬৪ মিলিয়ন মানুষ।

শায়খ মাহির বিন হামদ আল মায়িকালি
বর্তমান প্রজন্মের কাছে অন্যতম জনপ্রিয় কারি শায়খ মাহির বিন হামদ আল মায়িকালি।  তার ইউটিউবে তার তেলাওয়াতের ভিউ কোটি ছাড়িয়েছে।

তিনি ৭ জানুয়ারি ১৯৬৯ সালে জন্মগ্রহণ করেন।  তিনি মদিনার টিচার্স কলেজে লেখাপড়া করেন এবং গণিতশাস্ত্রের টিচার হিসেবে গ্রাজুয়েশন সম্পন্ন করেন।  এরপর তিনি মদিনা ইসলামিক ইউনিভার্সিটি থেকে মাস্টার্স ও পিএইচডি ডিগ্রি অর্জন করেন।

তিনি উম্মুল কুরা বিশ্ববিদ্যালয়ের সহকারী অধ্যাপক হিসেব কাজ করেন।

১৪২৬ ও ১৪২৭ হিজরিতে মসজিদে নববিতে তারাবি নামাজের ইমাম হিসেবে নিয়োগ পান এবং ১৪২৮ হিজরি মসজিদুল হারামের তারাবি ও তাহাজ্জুদ নামাজের সরকারি ইমাম হিসেবে নিয়োগ পান এবং এখনও সে দায়িত্ব পালন করছেন।

শায়খ মায়িকালির এ তেলাওয়াত দেখেছেন ১০১ মিলিয়ন মানুষ।

শায়খ আহমদ বিন আলি আজমি

ইউটিউবের অন্যতম জনপ্রিয় কারি হলেন শায়খ আহমদ বিন আলি আল আজমি।  তিনি ১৯৬৮ হিজরিতে সৌদি আরবের খায়বার শহরে জন্মগ্রহণ করেন।  তার মধুর তেলাওয়তের জন্য মাত্র ১৭ বছর বয়সে তিনি ইমাম মনোনীত হন।  সর্বপ্রথম তিনি খায়বারের  মসজিদে আজ্জ বিন আবদুস সালাম-এর ইমাম হিসেবে নিয়োগ পান। দুবছর পর তিনি খায়বারের সবচেয়ে বড় জামে মসজিদের ইমাম ও খতিব হন।

তিনি ইমাম মুহাম্মদ বিন সউদ ইসলামিক বিশ্ববিদ্যালয় থেকে উচ্চতর ডিগ্রি অর্জন করেন এবং এরপর তাফসির বিষয়ে কৃতিত্বের সঙ্গে পিএইচডি ডিগ্রি লাভ করেন। পাকিস্তানের লাহোর বিশ্ববিদ্যালয় তাকে সম্মানসূচক ম্যাজিস্টার ডিগ্রি প্রদান করে।

শায়খ আহমদ বিন আলি আজমি জেদ্দার মসজিদে খাদিমুল হারামাইন মসজিদে রমজান মাসে তারাবির নামাজ পড়ান।

শায়খ আহমদের এ তেলাওয়াতটি দেখেছেন ৬৮.৮ মিলিয়ন মানুষ।

শায়খ মাশারি বিন রাশেদ আফাসি
ইসলামি বিশ্বের অন্যতম জনপ্রিয় কারি ও নাশিদ শিল্পী।  আরব বিশ্বে তার জনপ্রিয়তা অতুলনীয়।

শায়খ মাশারি বিন রাশেদ আফাসি ১৯৭৬ সালের সেপ্টেম্বর মাসে কুয়েতে জন্মগ্রহণ করেন। ‍তিনি কুয়েতেই বেড়ে উঠেন।

১৯৯৩ সালে কুরআনের হাফেজ হন এবং উমুলুম কুরআনের উপর উচ্চতর পড়ালেখো করেন।  তিনি প্রথমে কুয়েতের কেন্দ্রীয় মসজিদের তারাবির ইমাম হন এবং পরবর্তীতে ইমাম হিসেবে নিয়োগ পান।

শায়খ মাশারি একাধিক ব্যক্তির নিকট থেকে ইলমুল কেরাতের অনুমতি লাভ করেন। তাদের মধ্যে রয়েছেন শায়খ আসেম বিন আবুন নুজুদ, শায়খ আবদুর রাফে রেদওয়ান, ড. আহমদ ঈসা প্রমুখ।

তিনি মদিনা ইসলামিক ইউনিভার্সিটি থেকে উচ্চতর ডিগ্রি অর্জন করেন।

কারি হওয়ার পাশাপাশি তিনি আরব বিশ্বের একজন জনপ্রিয় নাশিদ শিল্পী। তার গাওয়া নাশিদগুলোও কয়েক মিলিয়ন করে ভিউ হয়েছে।

শায়খ মাশারির এ তেলাওয়াতটি দেখেছেন ১৪৩ মিলিয়ন মানুষ।

এটিও পড়ুন: ‘কোনো ব্যক্তির জন্য তাবলিগ করিনি, ব্যক্তির জন্য ছাড়বোও না’


সম্পর্কিত খবর


সর্বশেষ সংবাদ