শুক্রবার, ১৯ এপ্রিল ২০২৪ ।। ৬ বৈশাখ ১৪৩১ ।। ১০ শাওয়াল ১৪৪৫


দেশব্যাপি অধিক মাহফিলের তুলনায় হেদায়েত নেই; কথার ভিত্তি কতটুকু?

নিউজ ডেস্ক
নিউজ ডেস্ক
শেয়ার

মুফতি শামীম মজুমদার
প্রতিষ্ঠাতা পরিচালক, মারকাযুস সাহাবা ইসলামিক রিসার্চ সেন্টার, ঢাকা

শীত-বসন্তকালীন সময়ে প্রতি বছর দেশের শহর,পাড়া,গ্রাম,মহল্লাতে শুরু হয় বার্ষিক বা মৌসুমী ওয়াজ মাহফিল।

এতে সমাজের বৃহৎশ্রেনী যুক্ত থাকলেও উদ্দেশ্যপ্রবণ একশ্রেনীর মানুষের মন্তব্য হল নিন্মরুপ-

'মাহফিল হচ্ছে ঠিক, কিন্ত হিদায়াতের সংখ্যা জিরো। 'অর্থাৎ- তাদের দাবী এসব মাহফিলে মুসলিম সমাজের কোন উপকার সাধিত হচ্ছে না।

এ ব্যাপারে প্রথমেই বলতে হয়, হিদায়াতের চাবিকাঠি একমাত্র আল্লাহর হাতে।মানুষের হিদায়াত সম্পর্কে মহান আল্লাহ তায়ালা নবীজি সা. কে উদ্দেশ্য করে সুরা গাশিয়ার ২১ ও ২২ নং আয়াতে ইরশাদ করেছেন-
‘আপনি উপদেশ দিন, আপনিতো উপদেশ দাতা মাত্র।আপনি তাদের দারোগা বা শাসক নন’।

হিদায়াতের সংখ্যা জিরো এমন বাজে মন্তব্য যিনি  করছেন, আপনার বয়স যদি পঁচিশের গন্ডি পেরিয়ে থাকে, তাহলে আপনার কাছে প্রশ্ন-

একটু ভাবুনতো গত ১০ থেকে ১৫ বছর আগে শীত বা বসন্তকালিন সময়ে দেশের গ্রাম-গঞ্জের কি অবস্থা ছিলো? তখন কি এ পরিমাণ মাহফিল অনুষ্ঠিত হতো? জানি বলতে বাধ্য হবেন- ‘নিশ্চয় হতো না’।

কারন আপনার বুঝার মত জ্ঞান যদি তখন হয়ে থাকে তবে নিশ্চয় আপনি দেখেছেন, একালের যুবসমাজ যে মাঠে এলাকার ইমাম সাহেবদের নেতৃত্বে মাহফিলের আয়োজন করে চলেছে।

সেকালের যুবকদের অনেকে এ মাঠগুলোতেই শীত-বসন্ত এলে হাডুডু,কাবাডি,ফুটবল, অথবা মাসব্যাপী গোটারাত হাইসাউন্ড লাগিয়ে যাত্রাগান বা মৌসুমী মেলার আয়োজন বসাতো। যেখানে থাকতো অশ্লীলতা ও বেহায়া নারীর উদ্যোম নাচের ছড়াছড়ি।

[caption id="" align="alignnone" width="960"]চিত্রে থাকতে পারে: 11 জন ব্যক্তি, ব্যক্তিগণ দাড়িয়ে রয়েছেন যুবকদের উদ্যোগে আয়োজিত মাহফিলে যুবকদের সাথে লেখক[/caption]

কিন্ত তারা তাদের সেসকল পূর্বপুরুষদের মত বিপদগামী না হয়ে, স্কুল কলেজ ভার্সিটিতে পড়েও সমাজে আজ কুরআনের আইন প্রতিষ্ঠার এন্তেজাম আয়োজনে নিজেদেরকে নিবেদিত করে চলেছেন। এটা হেদায়েতের আলো নয় কি?

বেশ উপভোগ করি, পুলকিত হই, পুরো বছরে আর কোন সময় না হলেও গ্রামের মাহফিলকে উপলক্ষ্য করে এদের গ্রাম গুলোতে উৎসাহ উদ্দীপণাময় আমেজ পরিলক্ষিত হতে দেখলে । মাদরাসা,স্কুল, কলেজ ও ভার্সিটি পডুয়াদেরকে একই কাতারে আবদ্ধ হতে দেখে মনে হয়, শহীদ তিতু,বখতিয়ারের উত্তরসুরীরা এবার জেগে উঠতে শুরু করেছে। ইসলামী বিপ্লবের মাইল ফলক বোধহয় আর বেশী দুরে নেই।

এ ধারনার জোরালো প্রমাণ মিলে তখন, যখন দেখি শার্টপ্যান্ট পরিহিত হওয়া সত্ত্বেও মাহফিল কমিটির মেহনতি যুবকগুলোর চোখে মুখে ইসলামী সমাজ বিপ্লবের রক্তিম চাহনি।

আর যখন বিনয়াবনতমনে সালাম মুসাফার মাধ্যমে ওলামায়ে কেরামদের প্রাণভরে সম্মান করে চলে।

হে সমালোচক,
বলুন- এ সংস্কৃতি কি আপনার সহ্য হয়না? যদি হয়, তবে মাহফিল বেশি, হেদায়েত কম, এধরনের কু-মন্তব্য কেন করে বেড়াচ্ছেন ফেসবুকের চিপাগলিতে?

জানি এখন হয়তো বলবেন, আমার আপত্তি বক্তাদের হাদিয়া নিয়ে।‘কেন বক্তারা এতো হাদিয়া নিবে?'

আচ্ছা ভাই-
বক্তা দাওয়াত করে আয়োজক, হাদিয়াটাও দেয় আয়োজক, তাতে আপনার সমস্যাটা কি? এখানে আপনার সমস্যা কেবলই হিংসা নয় কি?

ব্যবসায়ী,বাজারী,মার্কেটি,চাঁদাবাজ,ধান্দাবাজ, গলাবাজ,কসাই- এত্তসব আপত্তিকর বাজে ভাষা কেন আপনি ব্যবহার করছেন একজন আলেম বক্তার শানে?

হ্যাঁ, বক্তা যদি কোন বাজে আচরণ করেন, সে বিষয়ে আয়োজকরা সিদ্ধান্ত নিবেন।প্রয়োজনে তারা তাকে বয়কট করবেন।

কিন্ত আপনি কেন হিংসায়,রাগে বা ক্ষোভে গুদ্দা ফেটে মরবেন? কেন ফেসবুকে অযাচিত সব মন্তব্য ছুঁড়ে মারবেন পাইকারী হারে দেশের সব বক্তা সমাজের দিকে।কারন সব বক্তাতো আর একই দোষে দোষি নন।

বক্তার খুলুসিয়াত, লিল্লাহিয়াতে কোন ঘাটতি থাকলে ইসলামের নির্দেশনা হল; - তাকে ব্যক্তিগত পন্থায় সচেতন করবেন।কিন্ত নিশ্চয় ইসলাম আপনাকে এবিষয়ে ইজারা দেয়নি যে, আপনি তাঁর দোষত্রুটি ফেসবুকের মত প্রকাশ্য স্পটে বলে বেড়াবেন।

বরং নবীজি সা: ইরশাদ করেন - ‘যে ব্যক্তি দুনিয়াতে মানুষের দোষ গোপন রাখিবে, কেয়ামতের দিন আল্লাহ তায়ালাও তাঁর দোষ গোপন রাখিবেন’।

গত একমাসে বক্তা সমস্যা নিয়ে যারা পোস্ট করেছেন, আশ্চর্য হয়েছি তাদের অনেকের ভাষাগত শব্দচয়ন দেখে।অবাক হয়েছি সেসব ভদ্রলোকদের প্রোফাইল ঘুরে এসে

অবাককান্ড!  তিনারা যেন ফেসবুকে এসেছেন পরনিন্দার টেন্ডার নিয়ে।

অথচ সংশ্লিষ্টদের পোষাক পরিচ্ছেদ জানান দিচ্ছে।তিনারাও হয়তো পড়ে এসেছেন সেই নুরাণী শ্রেনীতে।

মানবতার বন্ধু মুহাম্মাদুর রাসুলুল্লাহ সা. এর সুস্পষ্ট ঘোষনা- ‘খাঁটি মুসলমান ঐ ব্যক্তি,যার মুখ ও হাত হতে অপর মুসলমান নিরাপদে থাকে’।

মহান আল্লাহ আমাদেরকে হেফাজত করুন। আমিন।

লেখকের ফেসবুক টােইমরাইন থেকে

এসএস/


সম্পর্কিত খবর