শুক্রবার, ১৯ এপ্রিল ২০২৪ ।। ৬ বৈশাখ ১৪৩১ ।। ১০ শাওয়াল ১৪৪৫


একজন বাক প্রতিবন্ধী বৃদ্ধ ও এসআই বাপ্পির দুইদিন

নিউজ ডেস্ক
নিউজ ডেস্ক
শেয়ার

রোকন রাইয়ান
নির্বাহী সম্পাদক

পুলিশের সেবাই ধর্ম। কিন্তু এই সময়ে সেটা অধিকাংশ মানুষের কাছেই বিশ্বাসযোগ্যতা হারিয়েছে। তাই মাঝে মাঝে তারা যখন দায়িত্বের বাইরেও হারভাঙা পরিশ্রম করেন কিংবা সামাজিকতার উজ্জ্বল উদাহরণ তৈরি করেন সেটা খবরের মজাদার টুইস্ট বনে যায়।

মুগদা থানার সাব ইন্সপেক্টর অনিরুদ্ধ রায় বাপ্পি এরকম উজ্জ্বল একটি দৃষ্টান্ত তৈরি করেছেন। যা অনুপ্রেরণা যোগাবে সাধারণ মানুষ বিশেষ করে অন্য পুলিশকে।

সংবাদ পেয়ে আওয়ার ইসলাম সম্পাদক হুমায়ুন আইয়ুব কল দিলেন। সোমবার রাত তখন দশটা। বাইরে হাড়হিম শীত। হুডির উপর বাড়তি চাদর মুড়িয়ে বের হলাম। সঙ্গে সাজিদ নূর। মেইন গেট পেরিয়ে থানার ভেতরে ঢুকে দেখি এলাহি কাণ্ড। এই রাতের বেলায়ও অনেক সমস্যাগ্রস্ত মানুষ দাঁড়িয়ে। এক নারী তার সমস্যা বলতে বলতে কাদছেন।

ভিড় ঠেলে ঢুকে পড়লাম এসআই বাপ্পির রুমে। একজন চেয়ার এগিয়ে দিলেন। এসআই বাপ্পি তখন কাগজ ঘাটাঘাটিতে ব্যস্ত।

আমরা যে কারণে তার সামনে সেটি হলো তার একটি মানবিক কাজ। যা মুগদায় সাড়া ফেলে দিয়েছে। একজন বাক প্রতিবন্ধী মুরব্বিকে তিনি রাস্তায় পেয়েছিলেন। যে কোনো কথা বলতে পারে না। জানে না নাম ঠিকানাও। টানা দুইদিন অমানসিক কষ্ট করে তাকে একটি সুন্দর ঠিকানা করে দিয়েছেন।

এসআই বাপ্পির বাড়ি খুলনার দাকোপে। ২০০৫ থেকে পুলিশে আছেন। মুগদা থানায় আছেন সাত মাস ধরে।  অফিসিয়াল দায়িত্বের পাশাপাশি বাড়তি সামাজিক কাজে জড়িয়ে থাকা তার নেশা।

বাক প্রতিবন্ধি বৃদ্ধার ঘটনা জানতে চাইলে তিনি বলেন, ৬ জানুয়ারি রাতে খবর পাই মানিকনগরে একজন বৃদ্ধাকে পাওয়া গেছে যিনি কোনো কথা বলতে পারেন না এমনকি নিজের নাম ধামও জানাতে পারছেন না।

ইনস্টল করুন ইসলামী যিন্দেগী অ্যাপ

আমরা দ্রুত ছুটে যাই। বৃদ্ধাকে প্রথমেই রিসিভ করি। সেখানেই চেষ্টা করি কোনোভাবে তার পরিচয় জানার। কিন্তু ব্যর্থ হই। পরে থানায় আনি। রাতে তার জন্য ভালো খাবার আর থাকার ব্যবস্থা করি।

পরদিন বিভিন্ন মাধ্যমে যোগাযোগ করি তার কোনো পরিচয় জানা যায় কিনা। কিংবা তার কোনো ভালো ব্যবস্থা করতে পারি কিনা। কিন্তু তেমন কোনো লাভ হয়নি। বড় স্যারদের সঙ্গেও যোগাযোগ করি উপায় খোঁজার চেষ্টা করি কিন্তু কোনো উপায় বের হয় না।

শেষে ৮ জানুয়ারি মুরব্বিকে নিয়ে সিএমএম কোর্টে যান। সেখানে দিনভর খাটুনির পর সিদ্ধান্ত হয় মিরপুরের সরকারি ভবঘুরে কেন্দ্রে তার জন্য স্থায়ী ব্যবস্থা হবে।

অনিরুদ্ধ রায় বাব্বি বলেন, খুব টেনশনে ছিলাম দুই দিন। কী করবো কোথায় নিয়ে যাবে ইত্যাদি চিন্তা আমাকে ডুবিয়ে দিয়েছিল। আমার মাথায় ‍সরকারি আশ্রয় কেন্দ্রের কথা সেভাবে মনে আসেনি। কোর্টের সিদ্ধান্তের পর আমার দুই দিনের কষ্ট গায়েব হয়ে গেছে যখন জানতে পেরেছি তার একটা সুন্দর ব্যবস্থা শেষ পর্যন্ত হচ্ছে।

আমি দেরি না করে তাকে মিরপুরের ভবঘুরে আশ্রয় কেন্দ্রে দিয়ে আসি। তিনি যদি বাকি জীবন তার আত্মীয়কে নাও পান নিরাপদে সেখানে কাটিয়ে দিতে পারবেন।

কলরবের যুগপূর্তিতে ঢাকায় বর্ণাঢ্য অনুষ্ঠানের প্রস্তুতি

এসআই বাপ্পিকে জিজ্ঞেস করলাম দুইদিন এ ক্লান্তির পর এখন নিশ্চয়ই ভালো লাগছে, তিনি বললেন, না। আসলে দুইদিন মুরব্বিকে আমার কাছে রাখার পর যখন তাকে মিরপুরে ছেড়ে আসতে হলো খুব কষ্ট পেয়েছি। চোখে কান্না চলে এসেছে। কারণ তার জন্য আমার একটা মায়া জন্মে গেছিল।

কোনো অবাধ্য সন্তানদের কাণ্ড কিনা এ ঘটনা? আমি উৎসুক হয়ে জানতে চাই। বাপ্পি বলেন, হ্যাঁ আজকাল এমন সন্তানের দেখা মেলে। খুবই মর্মাহত হই সেটি ভাবলে। যে বাবা মা সন্তানকে আদর দিয়ে লালন করেন বৃদ্ধ বয়সে এ পরিস্থিতি কখনো কাম্য নয়।

তবে এটি কোনো অবাধ্য সন্তানেরই কাজ কিনা সেটি বিষয়ে কোনো নিশ্চিত হননি বাপ্পি। বলেন, এরকমটা হতে পারে আবার হতে পারে তিনি হারিয়ে গেছেন, তার সন্তানরাও খুঁজছে। এখানে কোনটিই নিশ্চিত নয়।

এসআই বাপ্পির সঙ্গে আরও অনেক কথা হয়। জিজ্ঞেস করি পুলিশ তো মানুষের সেবার জন্যই তবু পুলিশ সম্পর্কে মানুষের একটা ভীতি আছে, কারণ কী? শুনে বলেন, হ্যাঁ এটি কোনো পরিস্থিতিতে তৈরি হয়েছে। তবে আমরা চেষ্টা করছি তা দূর করতে এবং ডিএমপি দীর্ঘদিন ধরে জনবান্ধব পুলিশিং কার্যক্রমে সক্রিয়।

এসআই বাপ্পির ভবিষ্যত ইচ্ছে নিয়ে বলেন, দেশের জন্য কিছু করাই আমার লক্ষ। আর দায়িত্ব পালন করতে গিয়েই যদি আমার মৃত্যু হয় তাহলে নিজেকে ভাগ্যবান মনে করবো।

দেশ ও জনতার প্রতি তার চিন্তা ও কাজের প্রশংসা করতেই হয়। পাশাপাশি আমরা এই কামনা করে চলে আসি সব পুলিশের কর্ম যেন সাধারণ মানুষ ও অন্য পুলিশ সদস্যকে অনুপ্রাণিত করে।

‘একটি বাসযোগ্য সজীব ঢাকা উপহার দিতে চাই’


সম্পর্কিত খবর


সর্বশেষ সংবাদ