বৃহস্পতিবার, ২৫ এপ্রিল ২০২৪ ।। ১২ বৈশাখ ১৪৩১ ।। ১৬ শাওয়াল ১৪৪৫


বাংলাদেশের বক্তা সমাচার

নিউজ ডেস্ক
নিউজ ডেস্ক
শেয়ার

মুফতি হাবিবুল্লাহ সিরাজী
মুহতামিম, জামিয়া কারিমিয়া দারুল উলুম ডেমরা, ঢাকা

সম্ভবত এতো বক্তা বিশ্বে আর কোন দেশে নেই। শিশু বক্তা, অন্ধ বক্তা, বামুন বক্তা, তরুণ বক্তা, অনলবর্ষী বক্তা, নবমুসলিম, বুলবুলে বাংলাদেশ, প্রখ্যাত, বিখ্যাত, বিশিষ্ট, খ্যাতিমান, আন্তর্জাতিক খ্যাতিসম্পন্ন ইত্যাদি গুণমানের পেশাদার বক্তাদের সমাহার শুধু বাংলাদেশেই।

নিশ্চয়ই এটা ইসলামের কল্যাণে অবশ্যই ভাল দিক। হ্যা, ভারত ও পাকিস্তানেও ওয়াজ মাহফিলের রেওয়াজ আছে। তবে এত বেশী নয়।

সারাদেশে পাড়ায় পাড়ায়, নগরে, বন্দরে, অন্দরে, রাজপথে, মাঝপথে, নৌপথে, বৌভাতে, বাজারে, মাজারে বিনোদন-সংষ্কৃতি আর ওরশের নামে যেভাবে পাপাচার কামাচার জৌনাচার চলছে। আরও চলছে নায়িকা, গায়িকা, গণিকা, প্রমিকা,সাধক, বাদক, নর্তক-নর্তকীদেরকে প্রচুর টাকা মূল্য দিয়ে পাপের অনুষ্ঠান।

এর দ্বারা মানুষ বেহায়াপনা, অশ্লীলতা ও পরকালবিমূখীতার দিকে ধাবিত হচ্ছে বিদ্যুৎ গতিতে। নীতিনৈতিকতার এমন সংকটময় মুহূর্তে দেশের আনাচে কানাচে প্রতিরাতে হাজারো ওয়াজ মাহফিল অবশ্য-অবশ্যই দেশের জন্য দশের জন্য নিশ্চয়ই মঙ্গলজনক।

কিন্তু, ভালো ভালো গাছের ফাঁকে ফাঁকে সব বাগানেই আগাছা পরগাছা জন্মে থাকে। ঠিক তদ্রূপই বক্তা জগতে প্রবেশ করেছে অনেক অযোগ্য অনুপযুক্ত কন্ঠবাজ। কন্ঠের সূর আর কলাকৌশলই যাদের পুঁজি। ফেজবুক ও ইউটিউব অযোগ্যদের কাজকে আরও এগিয়ে দিয়েছে। হাজার হাজার টাকা কামিয়ে নিচ্ছে প্রতি রাতে।

আমার জানা বেশ কয়েকজন এমন বক্তা রয়েছে যারা কুরআনের একটা পাতা সহী করে তিলাওয়াত করতে পারে না। 'ফায়ালা' শব্দের তাহক্বীক্ব জানে না। নিজের নামের তারকীবটাও শিখতে পারেনি। তাফসীর, হাদীস, ফিক্বহ, আক্বায়েদের কিতাব পড়া নসীবে হয়নি।

ই'রাব বিহীন আরবি ইবারত পড়ার যোগ্যতা নেই। এদের নামের পূর্বে লিখা হচ্ছে 'আন্তর্জাতিক খ্যাতিসম্পন্ন মুফাসসিরে ক্বুরআন' 'আল্লামা' 'মুফতি' 'মাওলানা' ইত্যাদি। এরা অজ্ঞতার কারনে বয়ানে এমন কথাও বলে যা বিশ্বাস করলে বক্তা ও শ্রোতা উভয় শ্রেণীই বে-ঈমান হয়ে যায়।

এমন আনপড়া বক্তাদের কারনে শ্রোতারা যদি মাহফিল মাঠ থেকে ঈমানহারা হয়ে বাড়ী আসে, বা মোবাইলে এ রকম বয়ান শুনে ঈমানহারা হয়, সে কারনে কি দেশের মুরুব্বী আলেমদের কোন দায়বদ্ধতা নেই? এ জন্যে কি আল্লাহর কাছে মুরুব্বী আলেমদের কোন জবাবদিহি করতে হবেনা?

এ ধরণের বক্তাদের আমলের অবস্থাও দূরাবস্থা। গত বছর এক আলেম আমাকে বললেন, 'অমুক বক্তা এক বছরে পাঁচটা জুমুয়া ছেড়ে দিয়েছে। ওয়াক্তিয়া নামায কত ওয়াক্ত কাযা করেছে তারতো হিসেবই নাই'। আমি বললাম, আপনি জানলেন কিভাবে? তিনি বললেনঃ 'আমি তার মাদরাসায় চাকরি করেছি। কাছ থেকে দেখেছি........'।

বে-পর্দা, ওয়াদা খেলাফ, আমানতের খেয়ানত, নারী কেলেংকারী ইত্যাদি অপরাধতো কতেকের আছেই। সেদিন মাওলানা আবদুল কাদির বললেন, 'অমুকে তার বাপের গায়েও হাত তুলেছে, বড় ভাইয়ের গায়েও হাত তুলেছে। অথচ বড়ভাই আলেম, বাবাও আমলী'।

ইন্টারনেট তাদের ভাঁওতাবাজির কাজে বেশী সাহায্য করেছে। এদের ঠকবাজী, ভন্ডামী, চুক্তি ও ধান্দাবাজী দেখে অনেক মুখলেছ ওয়ায়েজও বিভ্রান্তিতে পরে ওদের পথ অনুসরন করছে।

আমি মনে করি এজন্যে দেশের বিজ্ঞ, যোগ্য, অভিজ্ঞ, শীর্ষ আলেমদের উচিত বে-ইলম আর বে-আমল বক্তাদের ব্যাপারে এখনই কঠোর পদক্ষেপ গ্রহণ করা। নাহয় এই তক্তারা এক সময় সীমানার বাইরে চলে যাবে।

চারাগাছ উপড়ে ফেলা সহজ, বৃহৎ বৃক্ষ উপড়ে ফেলা অসম্ভব। এরাই এক সময় বক্তা হওয়ার সুবাদে ক্বউমী মাদরাসা খুলে 'মুহতামিম' হবে। অথবা মূর্খ পাবলিকরা বক্তার ভক্ত হয়ে মুহতামিমের পদে বসাবে। শয়তানী বজ্জাতি করে বুখারীর ঘন্টা মাসে একদিন লামছাম পড়িয়ে শাইখুল হাদীস পদবী ধারন করবে।

পাকা ভবনে ওঠা উদ্ভিদকে ক্ষুদ্রাবস্থায় উপড়ে না ফেললে এক সময় এ গাছের শেকড় ভবনকেই ফাটিয়ে দিবে। গজিয়ে ওঠা টাকা আর প্রচারলোভী বক্তারা এক সময় হক্বানী বুযুর্গ আলেমদেরকেও তোয়াক্কা করবেনা।

হৃদয় নিংড়ানো আমার এই লিখাটা পড়ার পর কতেকে আমাকে হয়ত হিংসুক বলবে অথবা ইলমের অহংকারী বলবে। বলুক! অসুবিধা নেই। কসম করে বলতে পারি তাদের প্রতি আমার কোন হিংসা নেই। আছে দুঃখ। আর আমার এমন কোন ইলমও নেই যা নিয়ে গৌরব করা যায়।

হক্কানী শীর্ষ আলেমদেরকে আল্লাহ উপযুক্ত পদক্ষেপ গ্রহণ করার তাউফীক দান করুক! আমিন।

লেখকের ফেসবুক টাইমলাইন থেকেে

এসএস/


সম্পর্কিত খবর