শনিবার, ২০ এপ্রিল ২০২৪ ।। ৭ বৈশাখ ১৪৩১ ।। ১১ শাওয়াল ১৪৪৫


ইসরাইলের কারাগারে বন্দী কে এই ফিলিস্তিনি কিশোরী?

নিউজ ডেস্ক
নিউজ ডেস্ক
শেয়ার

রকিব মুহাম্মাদ
আওয়ার ইসলাম

সম্প্রতি জেরুসালেম ইস্যুতে ইসরাইলি সেনার গালে চড় মেরে আলোচনায় উঠে আসা ১৬ বছরের ফিলিস্তিন কিশোরী আহেদ আত তামিমিকে নিয়ে তোলপাড় এখনো থামেনি। সোস্যাল মিডিয়া থেকে শুরু করে ব্রিটিশ মন্ত্রণালয় পর্যন্ত তামিমির চর্চা এখনো বহাল তবিয়তে। তামিমির গ্রেফতারের পর থেকেই সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে তীব্র প্রবিবাদ শুরু হয়। গ্রেফতারকৃত এই ফিলিস্তিন কিশোরী আহাদ তামিমির নিঃশর্ত মুক্তির দাবি জানায় ব্রিটিশ এমপিরাও।

১৬ বছর বয়সী  ফিলিস্তিনি কিশোরী আহাদ তামিমি তার এক আত্মীয়ের মাথায় রাবার বুলেটের আঘাতের পর ইসরায়েলি বাহিনী তাদের বাড়ি তছনছ করছিল। ওই সময় তামিমি ইসরায়েলি সেনাদের সামনে দাঁড়িয়ে প্রতিবাদ করেন। তামিমি চিৎকার করে সেনাদের সেখান থেকে চলে যেতে বলেন। তখন ইসরায়েলি সেনারা কোনও প্রতিক্রিয়া দেখায়নি। পুরো ঘটনাটি মোবাইলে ধারণ করা হয়। পরে তা ছড়িয়ে পড়ে।

এসময় সেই সেনারা অনেকটাই নিষ্ক্রিয় থাকে, খবরটি প্রধান প্রধান গণমাধ্যমের শিরোনাম হলে সেনাদের নীরবতার এই চিত্র ইসরাইলিদের কাছে অপমানকর বলে বিবেচিত হয়।

ইসরাইলে সেনারা দ্রুতই প্রতিক্রিয়া জানায়, আহেদ তামিমিকে গ্রেপ্তারের নির্দেশ দেয়, ডিসেম্বরের ১৯ তারিখের শুরুতে তাকে তার বাড়ি থেকে তুলে নিয়ে যাওয়া হয়। আটকাবস্থায় থাকা তামিমিকে দেখতে গেলে তার মাকেও গ্রেপ্তার করা হয়।

এ ঘটনার পর তামিমি বীর হিসেবে অভিহিত হচ্ছেন। তার ছবি নিয়েও কার্টুন এবং আরবি ও ইংরেজি ভাষায় স্বল্প দৈর্ঘ্যের ভিডিও তৈরি হয়েছে। জর্ডানের প্রিন্স আলি বিন হুসেইন পর্যন্ত এই ফিলিস্তিনি কিশোরীর প্রশংসা করে টুইটারে ছবি প্রকাশ করেছেন।

এর মধ্যে তামিমির মুক্তির দাবি জানিয়েছেন যুক্তরাজ্যের লেবার পার্টি নেতা জেরেমি করবিন। সামাজিক মাধ্যমে মুক্তির দাবিতে শুরু হয়েছে দুটি হ্যাশট্যাগ।

জেরুজালেম নিয়ে মার্কিন সিদ্ধান্তের বিষয়ে জাতিসংঘ সাধারণ পরিষদের জরুরি বৈঠকের মন্তব্যে ফিলিস্তিনি পররাষ্ট্রমন্ত্রী রিয়াদ আল মালিকি সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ভাইরাল হওয়া তিনটি ছবিকে ইসরায়েলি আগ্রাসনের বিরুদ্ধে ফিলিস্তিনি প্রতিরোধের প্রতীক হিসেবে বর্ণনা করেছেন। তার মধ্যে রয়েছে তামিমির ঝড় তোলা সেই প্রতিবাদের ছবি।

ঘটনার সূত্রপাত ইসরাইলি সেনার গালে চড় মারা থেকে হলেও তামিমি কিন্তু অনেক আগে থেকেই তার আন্দোলন শুরু করেছিল। ২০১৪ সালে ইসরাইল সৈন্যরা তার ভাইকে গ্রেপ্তার করার পর সে বেশ স্পর্ধা দেখিয়েছিল।

একারণে তখনকার তুরস্কের প্রধান মন্ত্রী (বর্তমানের প্রেসিডেন্ট) রজব তাইয়্যেব এরদোগান তামিমির সাহসিকতার অনেক প্রশংসা করেছিলেন। আর তুরস্কের ইস্তাম্বুল বাসাখেইর নগরী তাকে ‘হানজালা কারেজ এওয়ার্ড’ পুরষ্কার দিয়েছিল।

Image result for ahed tamimi erdogan

তামিমির গ্রামের নাম নাবিহ সালেহ। সেখানে ইসরাইলি অথোরিটির অধিনে চলে গেছে। হালামিশ সেটেলাদের (ইহুদী সেটেলার) ইসরাইলি অথোরিটি তাদের গ্রামের অনেকাংশ জমি দিয়ে দিয়েছে। ইহুদিদের বাড়িঘর বানিয়ে দিয়েছে সেখানে। প্রায় জন্মের পর থেকেই আহাদ দেখছে, তাদের অস্তিত্ব হাতের নাগাল থেকে বাহিরে চলে যাচ্ছে।

তামিমির মামা আইডিএফ এর গুলিতে শহিদ হয়। তার মা বিগত কছরগুলোতে তিনবার গ্রেফতার হয়েছে, সেনাদের গুলিতে জখমও হয়েছে একবার। তার বাবা দুইবার গ্রেফতার হয়েছে, ১৮ মাস ছিল শত্রুদের জেলে।

এখান থেকেই মূলত তামিমির সংগ্রামী চেতনার জন্ম। সে আজ কোনও কিছুতেই ভয় পায় না। বর্তমানে ফিলিস্তিন তরুণীদে কাছে তামিমি ‘ইয়োং ফিমেল লিডার অফ টিনেজার’ নামে পরিচিত হয়ে উঠছে। ইসরাইলি কাপুরুষদের সাথে অকুতোভয়ে লড়ে যাওয়া হিরোর নাম তামিমি। তাকে ডাকা হচ্ছে ‘ফেইস অফ দ্যা রেসিসটেন্স’। সূত্র : মেমো , দ্যা নাশন, বাংলা  ট্রিবিউন


সম্পর্কিত খবর


সর্বশেষ সংবাদ