মঙ্গলবার, ১৬ এপ্রিল ২০২৪ ।। ৩ বৈশাখ ১৪৩১ ।। ৭ শাওয়াল ১৪৪৫

শিরোনাম :
রাজধানীর আল্লামা শামসুল হক রহ. মাদরাসায় ভর্তি শুরু আগামীকাল ফরিদপুরে বাসের সঙ্গে পিকআপ ভ্যানের ধাক্কা, নিহত ১৪ ইরানের সঙ্গে ‘পূর্ণমাত্রার যুদ্ধ’ চায় না ইসরায়েল: জাতিসংঘের সাবেক রাষ্ট্রদূত দেশের বিশেষ কওমি মাদরাসাগুলোর ভর্তি কখন থেকে জেনে নিন আলোকিত মানিকছড়ি জনকল্যাণ সংস্থার ঈদ পুনর্মিলনী সম্পন্ন বেতুয়া হাশেমিয়া দারুস সুন্নাহ মাদরাসার উদ্বোধন অচিরেই মুসলিম বিশ্ব ফিলিস্তিনের মুক্তি উদযাপন করবে ঢাকায় আগত নতুন ছাত্রদের উদ্দেশ্যে বিশেষ পরামর্শ মিসরে অবস্থানরত গা’যযাবাসী পরিবার ও শিক্ষার্থীদের সাথে বাংলাদেশীদের ঈদ উদযাপন উপজেলা নির্বাচনে ১৮৯১ প্রার্থীর মনোনয়নপত্র দাখিল

ষড়যন্ত্রটা গভীর ছিল! সফল হয়নি রবের করুণায়!

নিউজ ডেস্ক
নিউজ ডেস্ক
শেয়ার

মুফতি লুৎফর রহমান ফরায়েজী

বলতে ভাল লাগছে না। সময় করেও উঠতে পারছি না। কিন্তু শুভাকাঙ্ক্ষীদের লাগাতার আবেদনের কারণে অবশেষে লিখছি।

দাওয়াত ও তাবলীগ এবং চরমোনাই মুজাহিদ। সেই সাথে বাংলা মাটির শেকড়ের সাথে মিশে যাওয়া আমাদের কওমী মাদরাসা।

যারা বাংলার জনপদে জনপদে ঘুরে বেড়ান। তারা আমাদের এ তিন জামাতের আম বদনাম অন্তত চিন্তাশীল কোন খাঁটি ধার্মিক করবে না। করতে পারে না।

বললে অত্যুক্তি হবে না যে, এ জমিনে এখনো হক ও হক্কানিয়্যাত যিন্দা আছে এ তিনটি মুখলিস জামাতের বদৌলতেই। মাঠে প্রান্তরে যাদের কর্মীরা মিশে আছেন জনতার সাথে। ক্ষণে ক্ষণে ঝলসে উঠেন আপন মহিমায়। রবের দ্বীন রক্ষায় ঝাঁপিয়ে পড়েন অকুতোভয় হয়ে।

কোথাও চরমোনাই মুজাহিদদের কারণে বাতিল পালায় পিছনের দরজা দিয়ে। তো কোথাও তাবলীগী সাথীদের দৃঢ়তায় থেমে যায় বাতিলের গতিপথ। কওমী উলামার হুংকারে স্তব্ধ হয় ফিতনাবাজের উল্লাসধ্বনি।

বি বাড়িয়া জেলার কসবার ঘটনাটি স্মৃতিপটে ভাস্বর থাকবে অধমের। যেমনটি দাগ কেটেছিল নোয়াখালী গোপালপুরের ঘটনাটি।

মাহফিল আয়োজক লা মাযহাবী বন্ধুরা। প্রধান বক্তার স্থানে দেওবন্দী আলেম। বাকি তিন আলোচক লা মাযহাবী এবং মওদুদী অনুসারী। আজীব না?

এ কাজ তারা কেন করলেন? আল্লাহ ভাল জানেন। তবে অনেকের ধারণা বাস্তব প্রমাণ করে মাহফিলের আগের দিন কর্তৃপক্ষ ফোন দিয়ে জানালো "ফরায়েজী সাহেব! আপনি মাহফিলে আসবেন না, আপনি আসলে কাজী ইব্রাহিমসহ বাকি তিন বক্তার কেউ আসবে না"!

আমার দৃঢ় উচ্চারণ "আমার নাম প্রচারিত হয়েছে, এখন আমি না আসলে ছড়ানো হবে লা মাযহাবীদের ভয়ে আমি আসিনি, তাই আমি আসবোই, শত বাঁধা আসলেও আমি আসবো। বাকি বক্তা কেন আসবে না, সেটা তাদের দুর্বলতা, আমারতো কোন সমস্যা নেই তাদের আসাতে, তাদের প্রবলেম কেন?"

আপনাকে মঞ্চে উঠতে দেয়া হবে না" হুমকি দিতেই ক্ষিপ্ত স্বরে বললাম "আমি আসবো ইনশাআল্লাহ! আসার পর মঞ্চে উঠতে কে আটকে রাখে আমি দেখবো ইনশাআল্লাহ"। কেটে দিলাম ফোন।

অপর দিক থেকে স্থানীয় আলেম মাওলানা ইমরান, মাওলানা শফীক আজীজীসহ নাম মুখস্থ না থাকা উলামাগণ সোচ্চার হলেন। আমাকে যেতে হবে। এটি এখন আমাদের সবার ইজ্জতের প্রশ্ন হয়ে দাঁড়িয়েছে।

তাবলীগী সাথীরা একের পর মাশোয়ারা করে আমাকে উপস্থিত করা ও সিকিউরিটি দেবার ফিকির করতে লাগলেন।

অভূতপুর্ব সহযোগিতায় এগিয়ে এলেন চরমোনাই মুজাহিদ বাহিনী। কসবা থানা যুব আন্দোলনের সভাপতি, সাধারণ সম্পাদকসহ আম চরমোনাই কর্মীরা নিজেদের মাহফিল হিসেবে মেহনত শুরু করলেন। আল্লাহু আকবার। চরমোনাই মুজাহিদ বাহিনীর ইখলাসপূর্ণ মেহনত, যুৎসই ও কার্যকরী সুনিপূণ কর্মতৎপরতা আশা জাগায়- ইসলামী খিলাফত এমন সব মর্দে মুজাহিদ ও কর্মতৎপর লোকদের হাত ধরেই আসা সম্ভব ইনশাআল্লাহ।

আমার জন্য নির্ধারিত সময় ছিল রাত এগারটা দশ।

নরসিংদী বদুয়ারচড় ইশার পর বয়ান শেষ করেই ছুটলাম কসবার দিকে। বি বাড়িয়া শহরের রাস্তা ভয়াবহ ভাঙ্গা তাই ছুটলাম বিজয়নগর আখাউরা হয়ে কসবার দিকে। প্রচণ্ড কুয়াশায় সামনের পথ দেখা যায় না।

আল্লাহর নাম নিয়ে ভাঙ্গা রাস্তার ধকল সয়ে কুয়াশার চাদর মাড়িয়ে কসবার পথে। অবশেষে সোয়া এগারটায় পৌঁছলাম মাহফিল স্থলে।

এসেই ষড়যন্ত্র এর গন্ধ পেলাম। আমাকে মঞ্চে না উঠাতে এগারটায় কাজী ইব্রাহীমকে বসানো হয়েছে। এর মানে তার মাধ্যমেই মাহফিল শেষ করে দিবে। আমাকে আর উঠতে দিবে না। আমি বললাম" আমি মঞ্চে যাবো। আমিতো আমার সময়মত এসেছি। তাহলে কাজীকে এখন উঠানো হল কেন?"

স্থানীয় মেম্বার এলেন। জানালেন" আপনি হুজুর ঠিকমতই এসেছেন। দেরী করেছে কাজী ইব্রাহীম। সেই হিসেবে আপনার এখন বয়ান করা উচিত। কিন্তু আমাদের অনুরোধ আপনি একটু পরে উঠুন। যাতে মাহফিলে কোন হট্টগোল না হয়।

যাইহোক, অবশেষে আমরা পৌনে বারটার দিকে মঞ্চের দিকে রওয়ানা হই। কাছাকাছি যেতেই লা মাযহাবী যুবকেরা আমাদের পথ আটকে দাঁড়ায়। উঠতে দিবে না। বাঁধা টপকে এগিয়ে যাই সামনে। চারিদিকে ব্যুহ তৈরি করে আমাকে নিয়ে যাওয়া হল মঞ্চের দিকে। মঞ্চে উঠার পূর্ব মুহুর্তে আবারো বাঁধা। কিন্তু সেই বাঁধা ঠেলে আমরা উঠে গেলাম মঞ্চে।

বয়ান করছেন কাজী ইব্রাহীম। বিষয় কিয়ামতের আলামত। আমরা উঠতেই আচমকা বিষয় পরিবর্তন করে শুরু করলেন- ফিকহী মাসআলা বিষয়ে আমাদের উদার দৃষ্টি রাখতে হবে। চার মাযহাবই দলীল সমৃদ্ধ। তাদের কেউ রেল মিস করেননি। সবার উৎসই নবীর হাদীস।

কোন মাযহাবের ইমামই তার বাপের বাড়ি, নানার বাড়ি থেকে মাসআলা বলেননি, বরং নবীর হাদীস থেকেই বলেছেন। তাই কাউকে খারাপ বা যাবে না। আমার আব্বা হুসাইন আহমাদ মাদানী রহ. এর ছাত্র। তিনি বলতেন, উলামায়ে দেওবন্দ মুদাল্লাল তথা দলীলসহ কথা বলেন। আর দলীলসহ কথা মানতে কারো কোন আপত্তি থাকার কথা নয়।

ইত্যাদি কথা শুনছিলাম। আর হাসছিলাম। হায়রে কাজী সাহেব। কত রং পাল্টাতে পারেন। আমার কাছে তার লেকচার ছিল, যাতে তিনি বলছেন, "মাযহাব হল মৌলভীর মতামত"। এই বলে তিনি মাযহাবকে ঠাট্টা করেছেন। আর আজ আমাদের দেখে স্বীকার করছেন মাযহাব মৌলভীর মতামত নয় বরং নবীজীর হাদীসে বর্ণিত আমলের সংস্করণ।

Image may contain: text

তাহলে এতদিন মৌলভীর মতামত বলে কেন মানুষকে বিভ্রান্ত করে উম্মতকে বিভক্ত করলেন?
যাইহোক। অবশেষে সংক্ষেপে কিছু কথা বললাম।

পরিস্কার জানালাম, "একতার স্লোগান আমাদের মুখে মানায়, যারা আমাদের একতার প্লাটফর্ম মসজিদকে বিভেদের আখড়া বানিয়েছে, এখন ধরা খেয়ে একতার বুলি আউড়ানো তাদের মুখে শোভা পায় না।"

মাহফিল তাদের ছিল কিন্তু বক্তব্যগুলো তাদের হয়নি।
বক্তা তাদের ছিল কিন্তু বক্তব্যগুলো তাদের হয়নি।

আল্লাহরই সকল প্রশংসা। সেই সাথে উলামা তুলাবা, তাবলীগী সাথী এবং চরমোনাইয়ের মুজাহিদদের অতুলনীয় ভূমিকার জাযায়ে খায়ের রবের কাছে কামনা করছি। আল্লাহ আমাদের এক ও নেক বানিয়ে দেন। সকল বিভেদ ভুলে একতাবদ্ধ হবার তৌফিক দান করেন। আমীন।

ফেসবুক টাইমলাইন থেকে


সম্পর্কিত খবর


সর্বশেষ সংবাদ