শনিবার, ২০ এপ্রিল ২০২৪ ।। ৭ বৈশাখ ১৪৩১ ।। ১১ শাওয়াল ১৪৪৫


রসিক নির্বাচন ২১ ডিসেম্বর; হাতপাখা প্রার্থী বাবু’র প্রস্তুতি কতটুকু?

নিউজ ডেস্ক
নিউজ ডেস্ক
শেয়ার

আতাউর রহমান খসরু
আওয়ার ইসলাম

বেশ মুহূর্তের প্রচারণায় ব্যস্ত সময় পার করছেন রংপুর সিটি করপোরেশন নির্বাচনের প্রার্থীরা। হাতে আছে মাত্র চব্বিশ ঘণ্টা। আজ রাত ৮টার মধ্যে শেষ করতে হবে প্রচার-প্রচারণার কাজ।

সবকিছু ঠিক থাকলে আগামী ২১ ডিসেম্বর অনুষ্ঠিত হবে রংপুর সিটি করপোরেশন নির্বাচন।

এবারের নির্বাচনে রংপুর সিটি কর্পোরেশন (রসিক) নির্বাচনে মেয়র পদে একজন নারীসহ ১২ জন প্রার্থী মনোনয়নপত্র দাখিল করেন। ১১টি সংরক্ষিত নারী কাউন্সিলর পদে ৬৭জন এবং ৩৩টি সাধারণ কাউন্সিলর পদে ২২৬জন প্রার্থী মনোনয়নপত্র দাখিল করেন।

মনোনয়ন প্রত্যাহারের শেষ দিন রোববার সাধারণ কাউন্সিলর পদে ১০জন মনোনয়ন প্রত্যাহার করলেও মেয়র ও সংরক্ষিত কাউন্সিলর পদের কোনো প্রার্থী তাদের মনোনয়ন প্রত্যাহার করেননি।

মনোনয়ন বাতিল, আপিল নিষ্পত্তি ও প্রত্যাহার শেষে সর্বশেষ মেয়র পদে ৭ জন এবং সাধারণ কাউন্সিলর পদে ২১১জন এবং সংরক্ষিত কাউন্সিলর পদে ৬৫টি জন প্রতিদ্বন্দ্বিতা করবেন।

৭ জন মেয়র পদপ্রার্থীর মধ্যে এটিএম গোলাম মোস্তফা বাবুই কেবল ইসলামি দলের প্রার্থী হয়ে নির্বাচন করছেন। তিনি ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশের পক্ষ থেকে হাতপাখা প্রতীকে নির্বাচন করছেন।

শেষ মুহূর্তের প্রস্তুতি জানতে ফোন করতেই অপরপ্রান্ত থেকে ভেসে আসছিলো স্লোগানের শব্দ। হাতপাখা প্রতীকের পক্ষে ভোট যাচ্ছেন কর্মীরা। কথার ফাঁকে ফাঁকে বার বার সালাম দিচ্ছেন এবং অমনোযোগী হচ্ছেন তিনি। বোঝাই যাচ্ছিলো প্রচণ্ড রকম ব্যস্ততার আছেন।

জানতে চেয়েছিলাম এবারের প্রস্তুতি কোন পর্যায়ে রয়েছে? ‘আল হামদুলিল্লাহ! আমাদের প্রচার-প্রচারণা ও প্রস্তুতি এখন শেষ পর্যায়ে। নির্বাচন কমিশনের নির্দেশনা অনুযায়ী আগামীকাল আমরা আগামীকাল আনুষ্ঠানিক প্রচারণার কাজ শেষ করবো।’

গতবারের তুলনায় এবার কতোটা অগ্রগতির আশা করছেন? গোলাম মোস্তফা বাবু প্রত্যয়ের সঙ্গে বলেন, ‘সুষ্ঠু ও অবাধ নির্বাচন হলে ইনশাআল্লাহ আমরা বিজয়ী হবো।’

তিনি জানান, নির্বাচনের অনেক আগ থেকেই গণসংযোগে নেমেছেন। গতবারের ভুলত্রুটি সংশোধন করে জোরালো প্রচারণা চালিয়েছেন। এছাড়াও তফসিল ঘোষণার পর রংপুর শহরে ইসলামী আন্দোলনের প্রায় ৩ হাজার কর্মী তার পক্ষে কাজ করছেন।

জনগণের সাড়াও আশাতীত ভালো। জনগণ আপনার কোন দিকটি পছন্দ করছে? উত্তরে গোলাম মোস্তফা বাবু বলেন, ‘জনগণ অতীতে অন্যান্য দলের রাজনীতি ও তার কুফল দেখেছে। সামনে তারা আর এসব দেখতে চায় না। আর আমাদের সবচেয়ে শান্তি-সমৃদ্ধির নগর করতে যা যা প্রয়োজন তা আমার ও আমার দলের কর্মীদের মধ্যে রয়েছে।’

আরেকটু বিশ্লেষণ করে তিনি আবারও বলেন, ‘জনগণ সন্ত্রাস চায় না। আমরা সন্ত্রাসী নই। জনগণ ঘুষ-দুর্নীতি চায় না, আমরা তাতে জড়িত নই। জনগণ মাদকের হাত থেকে বাঁচতে চায়, আমার কোনো কর্মী মাদকসেবী নয়। এই আমাদের জীবনে সমাজের শান্তির উপকরণ রয়েছে এটাই জনগণকে আশ্বস্ত করছে।

তার পক্ষে অক্লান্ত পরিশ্রম করায় রংপুর শহরের ইসলামী আন্দোলনের নেতা-কর্মীদের ধন্যবাদ দেন এবং ফলাফল ঘোষণার পূর্ব পর্যন্ত আইন মেনে মাঠে থাকার অনুরোধ করেন। তবে কেন্দ্রীয় নেতাদের প্রতি খানিকটা দুঃখ প্রকাশ করে তিনি বলেন, ‘কেন্দ্রীয় নেতৃবৃন্দ যদি আরও সক্রিয় হতেন, প্রচারণায় অংশ নিতেন তবে কর্মীরা অনুপ্রাণিত হতো।’

সার্বিক সহযোগিতার জন্য তিনি আইনশৃংখলা রক্ষাকারী বাহিনীকেও ধন্যবাদ দেন। সাথে সাথে বড় ৩ দলের (আওয়ামী লীগ, বিএনপি ও জাতীয় পার্টির) নেতাকর্মীরা নির্বাচনী আচরণ-বিধি ভঙ্গ করছেন অভিযোগ করে তাদের ব্যাপারে কঠোর হওয়ার আহবান জানান।

তিনি বলেন, বড় ৩ দলের নেতা-কর্মীরা নির্বাচনী আইন ভঙ্গ করছেন। অথচ প্রশাসন দেখেও না দেখার ভান করছে।

এ সময় ইসলামী আন্দোলনের এ প্রার্থী  মিডিয়ার অসহযোগিতার কথাও তুলে ধরেন। তিনি বলেন, ‘আমি গত নির্বাচনে সম্মানজনক ভোট পেয়েছিলাম। এবারও আমার পক্ষে গণজোয়ার দেখা দিয়েছে। কিন্তু মিডিয়া আমাকে সেভাবে সহযোগিতা করছে না। অথচ জামানত হারানো অনেক প্রার্থীর প্রচারণায় মিডিয়া বড় সুযোগ করে দিচ্ছে।’

তার ধারণা ইসলামী দলের প্রার্থী হওয়ায় তিনি মিডিয়ায় বৈষম্যের শিকার হচ্ছেন। জনসমর্থন বিবেচনায় তাকে মিডিয়ায় আরও সুযোগ দেয়া এবং ফলোআপ করা উচিৎ ছিলো।

তবে সার্বিক বিবেচনায় সুষ্ঠু নির্বাচনের ব্যাপারে এখনো আশাবাদী এ নেতা। তিনি বলেন, ‘বর্তমান সরকারের কালচার অনুযায়ী সুষ্ঠু নির্বাচনের ব্যাপারে আশঙ্কা থেকেই যায়। তবুও একজন প্রার্থী হিসেবে অবাধ, সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ নির্বাচনের প্রত্যাশা অবশ্যই করি।’

সুষ্ঠু নির্বাচনের দাবিতে আবারও সেনা মোতায়নের দাবি জানিয়ে বলেন, ‘সেনা মোতায়ন ব্যতীত লেভেল প্লেইং ফিল্ড করা কঠিন হবে। আমি আবারও সেনা মোতায়নের দাবি জানাচ্ছি।’

তিনি শেষ মুহূর্তে ভোটারদের কাছে সুযোগ চেয়ে বলেন, আপনারা আমাকে মেয়র নির্বাচিত করে জনসেবার সুযোগ দিলে আমি রংপুর শহরকে একটি আধুনিক ও নিরাপদ শহর হিসেবে গড়ে তুলবো।

উল্লেখ্য, এটিএম গোলাম মোস্তফা রংপুর শহরেই জন্মগ্রহণ করেছেন। সেখানেই বেড়ে উঠেছেন তিনি। রংপুর কারমাইকেল কলেজ থেকে রাষ্ট্র বিজ্ঞানে মাস্টার্স করেছেন। কিছুদিন শিক্ষকতা করার পর এখন তিনি একজন ব্যবসায়ী এবং২০০৪ সাল থেকে ইসলামী আন্দোলনের সাথে সম্পৃক্ত হন।

ইসলামী আন্দোলনের পক্ষে তিনি রংপুর সিটি করপোরেশন নির্বাচনে অংশগ্রহণ করেন এবং ১৬ হাজার ভোট পেয়ে পঞ্চম স্থান অধিকার করেন।

এবার নির্বাচনে ভোটার রয়েছে ৩ লাখ ৮৮ হাজার ৪২১ জন। এর মধ্যে পুরুষ ১ লাখ ৯৬ হাজার ৬৫৯ এবং নারী ১ লাখ ৯১ হাজার ৭৬২ জন। ১৯৬টি ভোটকেন্দ্রের ১ হাজার ১৭৭টি কক্ষে ভোটগ্রহণ করা হবে।

‘আমার জীবনে কুরআনের প্রভাব কল্পনার চেয়েও বেশি’


সম্পর্কিত খবর


সর্বশেষ সংবাদ