বৃহস্পতিবার, ২৮ মার্চ ২০২৪ ।। ১৪ চৈত্র ১৪৩০ ।। ১৮ রমজান ১৪৪৫


কেন সিরিয়া ত্যাগ করছে রুশ সেনা সদস্যরা!

নিউজ ডেস্ক
নিউজ ডেস্ক
শেয়ার

আওয়ার ইসলাম: রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিনের ঘোষণার দুদিনের মধ্যে সিরিয়া থেকে রুশ সেনাদের দেশে ফিরিয়ে নেওয়ার কাজ শুরু হয়েছে।

সিরিয়ায় সামরিক অভিযান শেষে দূরপাল্লার রুশ বোমারু বিমান টিউ-২২ এম ৩ রাশিয়া ফিরে এসেছে। সিরিয়া থেকে রুশ সেনাদের একাংশ পর্যায়ক্রমে দেশে ফিরিয়ে নেওয়া হবে—এমনটাই অবশ্য সিরিয়ায় অবস্থানকালে জানিয়েছেন রাশিয়ার নেতা।

কিন্তু যুক্তরাষ্ট্র বলছে, সিরিয়া থেকে রুশ সেনা প্রত্যাহারের বাস্তব কোনো পদক্ষেপ ওয়াশিংটন আপাতত দেখছে না।

সিরিয়াসংক্রান্ত ভ্লাদিমির পুতিনের ঘোষণা মার্চে প্রেসিডেন্ট নির্বাচন নিয়ে তাঁর গভীর পরিকল্পনারই ইঙ্গিত দিচ্ছে। এমন এক সময়ে তিনি সিরিয়া থেকে সেনা প্রত্যাহারের ঘোষণা দিলেন, যখন আজ বৃহস্পতিবার মস্কোয় বিশাল সংবাদ সম্মেলন করবেন রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট।

সেখানে প্রায় ১ হাজার ৬৪০ জন দেশি-বিদেশি সাংবাদিক থাকবেন। বাংলাদেশের সময় বেলা তিনটায় পুতিনের এই সংবাদ সম্মেলন হওয়ার কথা। এ জন্য সিরিয়ায় রুশ অভিযান নিয়ে যেকোনো প্রশ্নের উত্তর আগেই ভালোভাবে গুছিয়ে রাখার সুযোগ থাকছে রাশিয়ার নেতা।

২০০১ সাল থেকে প্রতিবছর দেশি-বিদেশি সাংবাদিকদের নিয়ে সংবাদ সম্মেলন করে আসছেন ভ্লাদিমির পুতিন। এ জন্য ডিসেম্বর মাসকে তিনি বেছে নেন। মূলত সারা বছরের প্রেসিডেন্টের কাজের পর্যালোচনা করতেই এমন আয়োজন করে থাকে ক্রেমলিন।

গত মঙ্গলবার রাশিয়ার প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয়ের বরাত দিয়ে তাস অনলাইনের খবরে বলা হয়, টিউ-২২ এম ৩ বোমারু বিমানের ক্রুরা সিরিয়া থেকে নিজেদের স্থায়ী ঘাঁটি কালুস্কায়া অঞ্চলে অবতরণ করেছেন। পথে উত্তর আসেটিয়ায় কিছু সময়ের জন্য বিরতি নেন পাইলটরা। দীর্ঘদিন সিরিয়ায় অবস্থানকালে এই বিমান থেকেই জঙ্গিগোষ্ঠী ইসলামিক স্টেটের (আইএস) অবস্থানের ওপর অভিযান চালানো হয়।

খবরে জানানো হয়, রাশিয়ার দূরপ্রাচ্যের লেফটেন্যান্ট জেনারেল সেরগেই কাবিলাশ টিউ-২২ এম ৩ বিমানের পাইলটদের স্বাগত জানান। এ সময় তিনি সাংবাদিকদের বলেন, সঠিকভাবে পেশাগত দায়িত্ব পালন, যুদ্ধবিমান প্রযুক্তির কার্যকর প্রয়োগ ও উড্ডয়নকালে নিরাপত্তা বজায় রাখার করণে সিরিয়ায় জঙ্গিবিরোধী অভিযান সফলভাবে শেষ করা গেছে।

রাশিয়ার জনপ্রিয় ইজভেস্তিয়া পত্রিকা জানায়, রুশ বিমানবাহিনীর রসদ পরিবহন বিমান আন-৭২ রাশিয়ার সারাতোভস্কি অঞ্চলের বিমানঘাঁটিতে পৌঁছেছে। রাশিয়ার আইজেট ডট রু পোর্টালে বলা হয়, এ-৫০ নামের উড়ন্ত রাডার সিরিয়া থেকে রাশিয়ায় ফেরত পাঠানো হয়েছে।

পুতিনের ঘোষণার ওই দিনই রুশ বিমানবাহিনীর বেশ কয়েকটি জঙ্গি বিমান রাশিয়া ফিরে আসে। আর কাস্পিয়ান সাগরতীরবর্তী উত্তর ককেশীয় দাগিস্তান অঞ্চলে ফিরেছে রুশ সেনা পুলিশের একটি ব্যাটালিয়ন দল।

রুশ সেনাদের সঙ্গে সিরিয়ার প্রেসিডেন্ট বাশার আল-আসাদের হাস্যোজ্জ্বল ছবি। ছবি: রয়টার্স
সিরিয়া থেকে রুশ সৈন্য সরিয়ে নেওয়ার আনুষ্ঠানিকতা গত সোমবার থেকেই শরু হয়েছে। রাশিয়ার প্রতিরক্ষামন্ত্রী সেরগেই শইগু গণমাধ্যমকে বলেন, পুতিনের নির্দেশে সিরিয়া থেকে রুশ সৈন্য সরিয়ে নেওয়ার কাজ শুরু হয়েছে।

বার্তা সংস্থা রিয়া নোভাস্তি জানায়, সিরিয়া থেকে ২৩টি যুদ্ধবিমান, ২টি হেলিকপ্টার, বিমানবাহিনীর একটি চৌকস দল, সেনা পুলিশ ও ক্যাম্প প্রকৌশলীদের ফিরিয়ে নেওয়া হবে।

অভিযানে অংশ নেওয়া অবশিষ্ট ইউনিট সিরিয়ায় স্থিতিশীল পরিস্থিতি সাফল্যের সঙ্গে বজায় রাখতে পারবে বলে রুশ প্রতিরক্ষামন্ত্রী উল্লেখ করেন। রুশ সেনাদের কবে নাগাদ পুরোপুরি দেশে ফিরিয়ে নেওয়া হবে, সে বিষয়ে কিছু জানাননি সেরগেই শইগু।

১১ ডিসেম্বর ঝটিকা সফরে সিরিয়া ঘুরে গেছেন রুশ প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন। সিরিয়ার লাতাকিয়ার খেয়ইমিম বিমানঘাঁটিতে সে দেশের প্রেসিডেন্ট বাশার আল-আসাদের সঙ্গে দেখা করেন তিনি। আর পুতিনের সিরিয়া সফরের দুই সপ্তাহ আগে রাশিয়া সফর করেন আসাদ।

সিরিয়ায় আইএসের বিরুদ্ধে সামরিক অভিযান চালাতে ২০১৫ সালে বিমানবাহিনীর একটি দল গঠন করা হয়। রুশ গণমাধ্যম জানায়, দলটির সদস্যরা এ পর্যন্ত ২৩ হাজারবার হেলিকপ্টার বা বিমান নিয়ে উড্ডয়ন করেন এবং প্রায় ৭৭ হাজারবার আইএসের লক্ষ্যবস্তুতে আঘাত হানেন।

রাশিয়া দাবি করছে, সিরিয়া অভিযানে ৩২ হাজার জঙ্গি নিহত হয়। এ অভিযানে সিরিয়ার লাতাকিয়া, পালমিরা, রাক্কা, দেইর আল-জর ও আলেপ্পো আইএসমুক্ত করেছে রাশিয়া।

সিরিয়ায় আইএসের বিরুদ্ধে সামরিক অভিযান শুরু হওয়ার পর এই প্রথম সিরিয়া গেলেন পুতিন। সেখানে রুশ সেনাদের উদ্দেশ্যে দেওয়া ভাষণে সিরিয়া অভিযানে রুশদের বিজয় অর্জন হয়েছে বলে ঘোষণা করেন তিনি। সেই সঙ্গে সিরিয়া থেকে রুশ সেনাদের একাংশ স্থায়ী ঘাঁটিতে ফিরিয়ে নেওয়ার জন্য প্রতিরক্ষামন্ত্রী ও সেনাপ্রধানকে নির্দেশ দেন।

এ সময় পুতিন বলেন, ‘যদি আইএস আবার মাথা উঁচু করে দাঁড়ায়, তাহলে এমন শক্তি নিয়ে আমরা তাদের ওপর আঘাত করব, যা তারা কখনো দেখেনি।’ রুশ বিমানঘাঁটি পরিচালনা ও তার্তুস বন্দরের জন্য সিরিয়ায় উল্লেখযোগ্যসংখ্যক রুশ সেনা অবস্থান করবে বলে জানান পুতিন।

অনেক আগে থেকেই রাশিয়া রাজনৈতিক আলোচনার মাধ্যমে শান্তিপূর্ণভাবে সিরিয়া সংকট সমাধানের আহ্বান জানিয়ে আসছে। সামরিক শক্তি প্রয়োগ করে সিরিয়ায় চলমান সংকট সমাধান করা যাবে না।

গত নভেম্বরে ভিয়েতনামের দানাং শহরে রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন ও যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের দেওয়া যৌথ বিবৃতিতেও এই কথা বলা হয়। এর ঠিক এক মাসর মধ্যেই সিরিয়া থেকে রুশ সেনা প্রত্যাহার করতে যাচ্ছে রাশিয়া।

সিরিয়া থেকে রুশ সৈন্য প্রত্যাহারের বাস্তব কোনো পদক্ষেপ এখনো দেখা যাচ্ছে না বলে দাবি করেছে যুক্তরাষ্ট্র। পেন্টাগনের মুখপাত্র অ্যাড্রিয়ান রেনকাইন রয়টার্সকে বলেন, সিরিয়া থেকে রাশিয়া নিজেদের উপস্থিতি কমিয়ে আনার ঘোষণা দেওয়ার পর থেকে এখন পর্যন্ত তেমন কোনো উল্লেখযোগ্যসংখ্যক সেনা প্রত্যাহার করা হয়নি।

রয়টার্স/এইচজে


সম্পর্কিত খবর


সর্বশেষ সংবাদ