শুক্রবার, ২৯ মার্চ ২০২৪ ।। ১৫ চৈত্র ১৪৩০ ।। ১৯ রমজান ১৪৪৫


জেরুসালেমকে ইসরাইলের রাজধানী স্বীকৃতি দেয়ায় আমেরিকায় হামলা করেন আকায়েদ!

নিউজ ডেস্ক
নিউজ ডেস্ক
শেয়ার

আওয়ার ইসলাম: নিউ ইয়র্কের ম্যানহাটানে সন্দেহভাজন বিস্ফোরণ সংঘটনকারী আকায়েদ উল্লাহ
আন্তর্জাতিক ডেস্ক : সন্ত্রাসী হামলা হিসেবে চিহ্নিত হওয়া যুক্তরাষ্ট্রের নিউ ইয়র্কের ম্যানহাটানে পোর্ট অথরিটি বাস টার্মিনালে বিস্ফোরণ ঘটানো সন্দেহভাজন ব্যক্তি একজন বাংলাদেশি।

নিউ ইয়র্ক পুলিশ বিভাগের দুটি সূত্র নিশ্চিত করেছে, সোমবার বিস্ফোরণস্থল থেকে সন্দেহভাজন হিসেবে আটক হওয়া বাংলাদেশি বংশোদ্ভূত ২৭ বছর বয়সি এই ব্যক্তির নাম আকায়েদ উল্লাহ।

দুটি সূত্রের বরাত দিয়ে সিএনএনের খবরে বলা হয়েছে, আকায়েদ উল্লাহ ব্রুকলিনের বাসিন্দা ও বাংলাদেশি বংশোদ্ভূত। সম্প্রতি তিনি তার ভাইয়ের সঙ্গে পোর্ট অথরিটির পাশে ইলেক্ট্রিকের কাজ করতেন। আইনপ্রয়োগকারী সংস্থার তথ্যমতে, ভাইয়ের সঙ্গে একই বাসায় থাকেন আকায়েদ উল্লাহ। সাত বছর ধরে যুক্তরাষ্ট্রে বসবাস করছেন তিনি।

আকায়েদ সম্পর্কে কারো কাছে কোনো তথ্য থাকলে অথবা বিস্ফোরণ সম্পর্কে কেউ কিছু জেনে থাকলে, হটলাইন ৮৮৮ এনওয়াইসি-এসএএফই-এ জানাতে আহ্বান জানিয়েছে নিউ ইয়র্ক পুলিশ।

ভাড়া করা গাড়ি চালানোর লাইসেন্সধারী ছিলেন আকায়েদ। নিউ ইয়র্ক সিটির ট্যাক্সি অ্যান্ড লিমোজিন কমিশনের (টিএলসি) পাবলিক অ্যাফেয়ার্স-বিষয়ক ডেপুটি কমিশনার অ্যালান জে ফ্রমবার্গ এক বিবৃতিতে সিএনএনকে জানিয়েছেন, ২০১২ সালের মার্চ মাস থেকে ২০১৫ সালের মার্চ মাস পর্যন্ত ভাড়ায় নেওয়া গাড়ি চালানোর জন্য টিএলসির লাইসেন্স ছিল আকায়েদের।

তিনি আরো বলেন, ২০১৫ সালের মার্চ মাসে লাইসেন্সের মেয়াদ শেষ হয় এবং আর মেয়াদ বাড়ানো হয়নি।

ফ্রমবার্গ বলেন, ‘আকায়েদকে নিউ ইয়র্ক সিটিতে হলুদ ট্যাক্সি ক্যাব চালানোর লাইসেন্স দেওয়া হয়নি। তিনি আরো বলেন, যেহেতু ট্যাক্সি বা ভাড়ায় নিয়ে চালানো গাড়ির চালকরা স্বাধীন কন্ট্রাক্টর এবং তারা চাকরিজীবী নয়, সেহেতু আমার জানার উপায় নেই, তিনি নির্দিষ্ট কোন ঠিকানা থেকে গাড়ি চালাতেন বা লাইসেন্স নিলেও আদৌ তিনি গাড়ি চালিয়েছিলেন কিনা।’

সন্দেহভাজন হামলাকারী আকায়েদ বাড়িতে তৈরি নিম্নমানের প্রযুক্তির বিস্ফোরক বস্তু (ডিভাইস) তার শরীরের সঙ্গে বেঁধে নিয়েছিলেন। নিউ ইয়র্ক পুলিশ বিভাগের প্রাক্তন কমিশনার জেমস ও’নিল মনে করেন, ইচ্ছাকৃতভাবে বিস্ফোরক বস্তু ফাটিয়েছেন তিনি।

তদন্ত সম্পর্কে অবহিত হয়েছেন- নিউ ইয়র্কের আইনপ্রয়োগকারী সংস্থার এমন একজন ও নিউ সিটি কর্তৃপক্ষের আরেকজন কর্মকর্তা বলেছেন, পুলিশের কাছে আকায়েদ স্বীকার করেছেন, তিনি যেখানে কাজ করতেন, সেখানেই এই বিস্ফোরক বস্তু তৈরি করেছেন।

পুলিশের গোয়েন্দা ও সন্ত্রাসবিরোধী শাখার ডেপুটি কমিশনার জন মিলার বলেছেন, বিস্ফোরক বস্তুটি আসলে একটি পাইপ বোমা, যা তার শরীরের সঙ্গে বিশেষভাবে বাঁধা ছিল।

হামলার সম্ভাব্য উদ্দেশ্য
আইনপ্রয়োগকারী সংস্থার একটি সূত্রের বরাত দিয়ে সিএনএন দাবি করেছে, সম্প্রতি গাজায় ইসরায়েলের অভিযানের প্রতিশোধ হিসেবে এই হামলা চালিয়ে থাকতে পারেন আকায়েদ। গাজায় ইসরায়েলের আক্রমণ নিয়ে বিষাদগ্রস্ত হয়ে পড়েন তিনি। তবে সূত্রটি নিশ্চিত করতে পারেনি, গাজায় ইসরায়েলের কোনো আক্রমণের কারণে তিনি দুশ্চিন্তায় ছিলেন।

সম্প্রতি গাজা থেকে ইসরায়েলে কিছু রকেট ছোঁড়া হলে এর জবাবে গাজায় বিমান হামলা চালায় ইসরায়েলি বাহিনী। যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প জেরুজালেমকে ইসরায়েলের রাজধানী হিসেবে স্বীকৃতি দেওয়ায় এর প্রতিক্রিয়ায় ফিলিস্তিনিরা বিক্ষোভে ফুঁসে ওঠে এবং এ নিয়ে ইসরায়েলি ও ফিলিস্তিদের মধ্যে সংঘর্ষ চলছে।

তদন্ত সম্পর্কে সরাসরি জানাশোনা আছে- আইনপ্রয়োগকারী সংস্থার এমন একজন কর্মকর্তা জানিয়েছেন, জঙ্গিগোষ্ঠী আইএসের সঙ্গে যোগসূত্র থাকার কথা স্বীকার করেছেন আকায়েদ। কর্তৃপক্ষ এখন তার পটভূমি খুঁজে দেখছে।

ব্রুকলিনে আকায়েদ ও তার পরিবার যে ভবনে থাকেন, তার পাশেই একটি আবাসিক ভবনের মালিক অ্যালান বুটরিকো। আকায়েদ বেসমেন্টে থাকেন বলে জানিয়েছেন তিনি। আকায়েদের বোন একতলায় এবং তার ভাই দোতলায় থাকেন। প্রতিবেশীরা বুটরিকোকে জানিয়েছেন, গত দুই রাতে তারা আকায়েদদের ভবন থেকে চিৎকার-চেচামেচির শব্দ শুনেছেন।

আকায়েদ এখন পুলিশের হেফাজতে রয়েছেন। তবে আহত হওয়ায় তার চিকিৎসার জন্য তাকে বেলেভ্যু হাসপাতালে রাখা হয়েছে। তার হাত ও পেটের কিছু অংশ পুড়ে গেছে।

বাংলাদেশে আকায়েদের বাড়ি
বাংলাদেশে আকায়েদের বাড়িঘর বা ঠিকানা কোথায়- সে সম্পর্কে সিএনএনের খবরে কিছু বলা হয়নি। তবে রয়টার্সের এক খবরে বলা হয়েছে, আকায়েদের বাড়ি চট্টগ্রামে। সেপ্টেম্বর মাসে শেষবার দেশে এসেছিলেন তিনি। বাংলাদেশ পুলিশের মহাপরিদর্শক (আইজি) এ কে এম শহীদুল হকের বরাত দিয়ে রয়টার্স জানিয়েছে, বাংলাদেশে তার সন্ত্রাসে জড়িত থাকার কোনো তথ্য নেই।

বাংলাদেশের প্রতিক্রিয়া
ম্যানহাটানের বাস টার্মিনালে এই হামলার নিন্দা জানিয়েছে যুক্তরাষ্ট্রে বাংলাদেশ দূতাবাস। এক বিবৃতিতে হামলাকারীর বিচার দাবি করেছে তারা।


সম্পর্কিত খবর


সর্বশেষ সংবাদ