শনিবার, ২০ এপ্রিল ২০২৪ ।। ৬ বৈশাখ ১৪৩১ ।। ১১ শাওয়াল ১৪৪৫


ইসলামি দলে ভাঙ্গন: মুসা আল হাফিজ যা বললেন

নিউজ ডেস্ক
নিউজ ডেস্ক
শেয়ার

ভাঙ্গনের কবলে পড়েছে প্রাচীন ইসলামি দল জমিয়তে উলামায়ে ইসলাম। রাজনৈতিক দলে ভাঙ্গন ও গ্রুপিং নতুন কিছু নয়। কিন্তু কেন হয় এসব ভাঙন ও গ্রুপিং। নানা জনে নানারকম কারণ দাঁড়া করাচ্ছেন। কবি ও গবেষক মুসা আল হাফিজ এ নিয়ে ব্যাখ্যা দিলেন। আসুন দেখে নেই তার অভিমত কি এসব ভাঙনের পেছনে।

একজন জানতে চেয়েছেন, অমুক আর অমুকের কারণে অমুক দল ভেঙ্গে যাচ্ছে। এ সম্পর্কে আপনি কী মনে করেন?

আমি কী মনে করি, তা পুরোপুরি বলার জায়গা এটি নয়। তবে মোটা দাগে যে কথাটা বলার, তা হলো, কোনো একজন বা দু'চারজনের কারণে কোনো গতিশীল রাজনৈতিক দল ভেঙ্গে যেতে পারে না। দল কেবল ভেঙ্গে যেতে পারে দলের বৃহৎ অংশের বিভক্তির কারণে।

কিন্তু বিভক্তির কারণেও দল দু' টুকরো হতে পারে না। যে কোন বিভক্তির নিরসন সম্ভব যৌক্তিক আলোচনা ও পারস্পরিক ছাড় দেয়ার মাধ্যমে, সংবিধানের দিকে ফিরে যাওয়ার মাধ্যমে।

দল ভাঙতে পারে তখন, যখন বিভক্ত দুটি অংশ ইতিবাচক মন নিয়ে যৌক্তিক আলোচনায় প্রস্তুত নয়, ছাড় দিতে রাজি নয় এবং সংবিধানের দিকে ফিরে যেতে প্রস্তুত নয়।

তারা যে কোন মূল্যে নিজেদের প্রাপ্তিকে নিশ্চিত করতে চান। কিন্তু এ প্রাপ্তি দলকেন্দ্রিক। ফলত দলকে বাদ দিয়ে তা সম্ভব নয়। কিন্তু অন্যকে ছাড় দিয়ে বা আইনানুগ হয়েও সম্ভব নয়। অতএব দলকে ভেঙ্গে দেয়া ছাড়া তাদের আর বিকল্প থাকে না। কাজটি তারা করবেনই, আজ কিংবা কাল।

অতএব যে দলের ভেতরে ভাঙ্গনের সুর গুমরে গুমরে উচ্চারিত হবে, সে দল ভাঙবেই। বিবিধ প্রক্রিয়ায় হয়তো তাকে বিলম্বিত করা যায়, কিন্তু তার ভেতরকার শক্তি তাকে সেই জায়গায় নিয়ে যাবে বার বার।

এ জন্য দায়ী কোনো ব্যক্তি নয়, স্বয়ং দলের সিস্টেম। যার কারণে তার ভেতরটা বিভক্ত কিংবা বিভক্তির আয়োজকদের জন্য এতো উন্মুক্ত যে, তারা তাদের ইচ্ছাকে সব শৃঙ্খলা, সংবিধান ও ঐতিহ্যের ওপর জয়ী করতে পারছে।

কোনো দলে যখন দু'টি গ্রুপ হতে পারে, তখন প্রমাণিত হয় সে দলে সিস্টেম গতিশীল নয়, সংবিধান ক্রিয়াশীল নয় কিংবা আদৌ সে দল কোনো সিস্টেমকেই ধারণ করছে না। নতুবা সমস্যা মিটে যেতো অথবা এর অনমনীয় বাহকরা কাঁটা পড়তো।

কোনোটাই যখন হয় না, তখন বুঝতে হবে, এর দায় কোনো ব্যক্তির নয় বা কয়েকজন মাত্রের নয়। বরং দলের ভেতরগত গোটা বাস্তবতা ও চলমান সিস্টেমই এ জন্য দায়ী। এ সিস্টেমে সমস্যা আসতোই, অমুকের মাধ্যমে, না হয় তমুকের মাধ্যমে।

দুই
কোনো দল কাগজে- কলমে ভেঙ্গে না গিয়েও ভেঙ্গে যেতে পারে। একই দল। কিন্তু দু'টি পক্ষ রশি টানছে দু'দিকে। কেউ কাউকে মেনে নিচ্ছে না। দলের এক অঙ্গ আরেক অঙ্গকে অনবরত আঘাত করছে এ রকম পরিস্থিতি সরাসরি ভেঙ্গে যাওয়ার চেয়ে আরো বিপজ্জনক।

তিন
ভাঙ্গনাবস্থা দেখা দিয়েছে একটি দলে, এর সমাধান সাময়িক মিটমাট হয়ে যাওয়াই নয়। একটি অাদর্শিক দলে কোন গুরুতর অনুষঙ্গ বিভক্তি নিয়ে এলো, ভাঙ্গনের প্রান্তদেশে নিয়ে গেলো, সে অনুষঙ্গগুলো কী?

তা কী অাদর্শিক? সাংবিধানিক? শৃঙ্খলাসংশ্লিষ্ট? না ব্যক্তিকেন্দ্রিক? বলয়ভিত্তিক? পদ-পদবি সংশ্লিষ্ট? না আরো অধিক কোনো পাওয়া না পাওয়া বিষয়ক?

প্রশ্নটির সমাধান না হলে এবং তার যথাযত দাওয়াই যথাস্থানে প্রয়োগ না করলে এবং এ ধরনের অনুষঙ্গ সৃষ্টি হওয়ার দরোজা বন্ধ না করলে দলটি আদর্শিক, সাংবিধানিক ও নৈতিক ক্ষমতা হারাতে থাকবে। প্রাণশক্তি বলতে তার কিছুই থাকবে না। পারস্পরিক বুঝাপড়াভিত্তিক এক সমিতিতে পরিণত হবে।

মজলিস থেকে জমিয়ত : হৃদয় ভাঙার দায় কার?

কেনো জমিয়তের ভাঙ্গন রোধ করা গেলো না?


সম্পর্কিত খবর


সর্বশেষ সংবাদ