শুক্রবার, ১৯ এপ্রিল ২০২৪ ।। ৬ বৈশাখ ১৪৩১ ।। ১০ শাওয়াল ১৪৪৫


প্রযুক্তির অপব্যবহারে আমাদের যুবসমাজ ধ্বংস হচ্ছে: আল্লামা মাহমূদুল হাসান

নিউজ ডেস্ক
নিউজ ডেস্ক
শেয়ার

আওয়ার ইসলাম: দেশ-জাতির কল্যাণ ও শান্তি কামনার মধ্য দিয়ে শেষ হলো মজলিসে দাওয়াতুল হক বাংলাদেশের ২৩ তম কেন্দ্রীয় ইজতেমা। সকাল থেকে ছিল আলেম উলামা, ধর্মপ্রাণ লাখো মানুষের উপস্থিতি।

শনিবার (২ ডিসেম্বর) রাজধানীর যাত্রাবাড়ীর জামিয়া ইসলামিয়া দারুল উলুম মাদানিয়া মাদরাসার মাঠে অনুষ্ঠিত ইজতেমা বাদ এশা মোনাজাতের মাধ্যমে শেষ হয়। বিশেষ বয়ান ও মোনাজাত পচালনা করেন মজলিসে দাওয়াতুল হক বাংলাদেশের আমির গুলশান সেন্ট্রাল মসজিদের খতিব ও যাত্রাবাড়ী মাদরাসার মুহতামিম মুহিউস সুন্নাহ আল্লামা মাহমুদুল হাসান

বয়ানে মুহিউস সুন্নাহ আল্লামা মাহমুদুল হাসান বলেন, আমলের গ্রহণযোগ্যতা সুন্নাতের ও ইখলাসের দ্বারাই নির্ধারণ হয়। আর ইখলাস সৃষ্টি হয় সুন্নাতের মাধ্যমে। আমাদের আমলী জিন্দেগিকে উন্নত করতে হলে সুন্নাতের বিকল্প কোন পথ নেই।

তিনি বলেন, প্রযুক্তির অপব্যবহারে আমাদের যুবসমাজ ধ্বংস হচ্ছে। মোবাইল ফোন ইন্টারনেট টেলিভিশন ফেসবুক দিনদিন যুবসমাজের আমল আখলাখের অবনতি ঘটাচ্ছে। সুতরাং, আমাদের সাবধান হতে হবে এবং গোনাহ থেকে বাঁচতে হবে।

তিনি রোহিঙ্গা সংকট সমাধানের জন্য সরকারকে আরো জোরদার ভূমিকা পালন করাসহ কুটনৈতিক তৎপরতা বৃদ্ধির আহ্বান জানান।

দিনব্যাপী এ ইজতেমায় অংশ নিয়ে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল বলেন, দাওয়াতুল হকের ইজতেমায় অংশ নিয়ে আমার জীবনের নতুন অধ্যায়ের সূচনা হয়েছে। এত উলামায়ে কেরামকে একসঙ্গে সাধারণ পাওয়া যায় না। ইজতেমায় বিদেশের আলেমগণও অংশ নিয়েছেন।

কওমী সনদের স্বীকৃতি বিষয়ে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, লাখ লাখ কওমি শিক্ষার্থীর উজ্জ্বল ভবিষ্যতের কথা চিন্তা করে স্বীকৃতির বিষয়টির প্রতি মাননীয় প্রধানমন্ত্রী আন্তরিক হয়েছেন। তিনি আলেমদের দেয়া ওয়াদা রক্ষা করেছেন।

কওমী শিক্ষার্থীরাও যাতে আরো বেশি দেশ জাতির কল্যাণে কাজ করতে পারে সে লক্ষ্যেই তিনি আল্লামা শফি হুজুরকে নিয়ে কওমী সনদের স্বীকৃতি দিয়েছেন। বিষয়টি নিয়ে আলেমদের সঙ্গে আলোচনা করেই চূড়ান্ত করা হবে।

তিনি বলেন, শান্তি ও মানবতার দূত হজরত মুহাম্মদ সা.। মহানবীর সুন্নতকে মানলে সমাজের শান্তি শৃঙ্খলা ফিরে আসবে। প্রকৃত মহানবীর অনুসারীরা কখনো জঙ্গিবাদ সন্ত্রাস করতে পারে না। কওমি মাদরাসায় মহানবীর সঠিক আদর্শ শিক্ষা দেয়া হয়। তাই আমি মনে করি কওমি মাদরাসা থেকে কখনোই জঙ্গি সন্ত্রাসী তৈরি হয় না।

বরং বিশেষ একটি মহল যখনই দেশে জঙ্গি উত্থানের অপচেষ্টা করেছে আলেমদের সঙ্গে নিয়ে আমরা তা প্রতিহত করতে সক্ষম হয়েছি।

দাওয়াত ও তবলীগের চলমান সঙ্কট বিষয়ে আলেম ও কাকরাইল মারকাজের শূরার সমন্বয়কে স্বাগত জানিয়ে তিনি বলেন, সরকার তাবলীগের বিষয়ে কোনো রকম হস্তক্ষেপ করতে চায় না। দারুল উলুম দেওবন্দ যে দিক নির্দেশনা দিবে সেভাবেই ব্যবস্থা নেয়া হবে। তিনি টঙ্গীর দাওয়াত ও তাবলীগের বিশ্ব ইজতেমা সুষ্ঠু সুন্দর ও শান্তিপূর্ণভাবে অনুষ্ঠিত হওয়ার আশাবাদ ব্যক্ত করেন।

ভারতের দারুল উলুম দেওবন্দের শায়খে সানী আল্লামা কমরুদ্দীন আহমদ গৌরখপুরী বলেন, উলামায়ে কেরামের মাধ্যমেই দীন টিকে থাকবে। আল্লাহ পাক নিজেই দীনের হেফাজতকারী। কিন্তু দীনের খাদেম হলো উলামায়ে কেরাম।

দারুল উলুম দেওবন্দের মুহাদ্দিস মুফতি রাশেদ আজমী বলেন, সুন্নতে নববীর মুহাব্বত ব্যতীত আল্লাহর নৈকট্য লাভ করা যায় না।

কাকরাইলের মুরুব্বি ও শূরা সদস্য মাওলানা ওমর ফারুক বলেন, দাওয়াতুল হক ও তাবলিগ ভিন্ন কোন জিনিস নয়। দুই মেহনতের উদ্দেশ্য এক। আমরা দাওয়াতুল হকের ইজতিমায় আসতে পেরে আনন্দিত ও গর্বিত।

তিনি আরও বলেন, আমাদের সবার উদ্দেশ্য দীন ইসলামকে মানুষের দোড়গোড়ায় পৌঁছে দেয়া। দীনের কাজে অনেক বাধা আসবে, সমস্যা সৃষ্টি হবে। ওলামায়ে কেরামের দায়িত্ব সমস্যা দূর করে উম্মতকে সঠিক পথে পরিচালিত করা।

সকাল থেকে শুরু হওয়া এই ইজতেমায় জামিয়াতুস সুন্নাহ শিবচরের মুহতামিম মাওলানা নেয়ামতুল্লাহ আল ফরিদীর সঞ্চালনায় আলোচনা করেন, ভারতের দারুল উলুম দেওবন্দের বুখারীর শায়েখ, আল্লামা মুফতি কমরুদ্দীন, মক্কার উম্মুল কুরা ইউনিভার্সিটির প্রফেসর আওলাদে রাসুল শেখ নাসের মক্কী, বাংলাদেশ কওমি মাদরাসা শিক্ষাবোর্ড বেফাকের সিনিয়র সহসভাপতি ও আল হাইআতুল উলয়ার কো-চেয়ারম্যান আল্লামা আশরাফ আলী।

চট্টগ্রাম জিরি মাদরাসার মুহতামিম আল্লামা শাহ মোহাম্মদ তৈয়ব, পীরে কামেল প্রফেসর হামিদুর রহমান, মদিনা বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক ডিন মাওলানা শেখ হাসান মুসা, দারুল উলুম দেওবন্দের উস্তাদ মুফতি রাশেদ আজমী, পটিয়া মাদরাসার প্রধান মুফতি শামসুদ্দীন জিয়া, মুফতি ওবায়দুল্লাহ সিদ্দিক বাজার, জামিয়া রাহমানিয়া আলী এন্ড নুরের মুহতামিম মুফতি মনসুরুল হক।

বসুন্ধরা ইসলামিক রিসার্চ সেন্টারের পরিচালক মাওলানা আরশাদ রাহমানি, শায়খ যাকারিয়া ইসলামিক রিসার্চ সেন্টারের পরিচালক মুফতি মিযানুর রহমান সাঈদ, কওমি মাদরাসা শিক্ষাবোর্ড বেফাকের ভারপ্রাপ্ত মহাসচিব মাওলানা আবদুল কুদ্দুস, জামিয়া রাহমানিয়ার প্রিন্সিপাল মাওলানা মাহফুজুল হক।

বায়তুল উলুম ঢালকানগরের মুহতামিম মুফতি জাফর আহমদ, কাওরান বাজার আম্বরশাহ জামে মসজিদের খতিব মাওলানা মাজহারুল ইসলাম, ঢালকানগরের পীর মাওলানা আবদুল মতিন, বসুন্ধরা মারাসার মুফতি সুহাইল, মতিঝিল ওয়াপদা মাদরাসার মুহতামিম মাওলানা রফিক আহমদ প্রমুখ।

ইজতেমা উপলক্ষ্যে সুন্নতের আমলি মশক, দেশ-বিদেশের আলেমদের গুরুত্বপূর্ণ বয়ান, জিকির এবং দুয়া-মোনাজাতসহ নানা কর্মসূচি পালন করা হয়েছে। মজলিসে দাওয়াতুল হক মহানবী সা. এর জীবন, আদর্শ ও সুন্নত চর্চার একটি বিশেষ কেন্দ্র। দেশব্যাপী সাধারণ মানুষদের আজান, ইকামত, নামাজ, ওজু, জানাজাসহ সুন্নতের ব্যবহারিক প্রশিক্ষণ দেয়া হয়।

ইজতেমা উপলক্ষ্যে এক বিশেষ বাণীতে জাতীয় পার্টির চেয়ারম্যান, প্রধানমন্ত্রীর বিশেষ দূত হুসেইন মুহাম্মদ এরশাদ বলেছেন, মুহাম্মদ সা. এর জীবনাদর্শ থেকে সরে যাওয়ার কারণেই আজ পৃথিবীতে অশান্তি দেখা দিয়েছে।

মুসলিম জাতি তার গৌরবোজ্জ্বল দিন হারিয়েছে। রাসুল সা. এর জীবনাদর্শের অনুসরণই বিশ্ব মানবতার মুক্তি নিশ্চিত করতে পারে। আমাদের জাতীয় জীবনের সংকটসমূহ সমাধানের পথও রাসুল সা. এর সুন্নতের অনুসরণ।


সম্পর্কিত খবর


সর্বশেষ সংবাদ