শনিবার, ২০ এপ্রিল ২০২৪ ।। ৭ বৈশাখ ১৪৩১ ।। ১১ শাওয়াল ১৪৪৫


‘দাওয়াতুল হকের ইজতেমায় শরিক হওয়া সৌভাগ্যের বিষয়’

নিউজ ডেস্ক
নিউজ ডেস্ক
শেয়ার

হাওলাদার জহিরুল ইসলাম
ইজতেমা ময়দান থেকে

স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল বলেছেন, দাওয়াতুল হকের ইজতেমায় শরিক হওয়া আমার জন্য সৌভাগ্যের বিষয়৷ এতো উলামায়ে কেরামকে একসঙ্গে অন্য কোথাও পাওয়া মুশকিল৷ এখানে তো শুধু দেশের আলেমই নন বরং বিদেশ থেকে বড় বড় কয়েকজন আলেম আগমণ করেছেন৷ পবিত্র মক্কা থেকে শায়খ নাসের বিল্লাহ এসেছেন৷ ভারতের দারুল উলুম দেওবন্দ থেকে দুইজন বিখ্যাত মুহাদ্দিস এসেছেন৷ এটা আসলেই খুশির বিষয়৷

মাওলানা মাহমুদুল হাসান এ দেশের একজন মান্যবর আলেম৷ তাকে আলেমরা যেমন শ্রদ্ধা করেন আমরাও তেমন শ্রদ্ধা করি৷ আমারা অনেক জটিল বিষয়ের সমাধান হুজুর থেকে পেয়ে থাকি৷ মাওলানা মাহমুদুল হাসান সাহেব বাংলাদেশের উলামাদের মাঝে শান্তির প্রতীক৷

শনিবার (২ ডিসেম্বর) জামিয়া ইসলামিয়া দারুল উলুম মাদানিয়া যাত্রাবাড়ীতে অনুষ্ঠিত দাওয়াতুল হকের ২৩ তম মারকাজি ইজতেমায় শরিক হয়ে তিনি এসব কথা বলেন।

আলেম ওলামা ও কওমি স্বীকৃতি নিয়ে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, আমাদের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা লাখ লাখ কওমি সন্তানদের সুন্দর ভবিষ্যত নিয়ে ভেবেছেন৷ কওমী শিক্ষার্থীরাও যাতে রাষ্ট্রীয় সুযোগ সুবিধা পায় এবং আরো বেশি দেশ জাতির কল্যাণে কাজ করতে পারে সে লক্ষ্যেই তিনি আল্লামা শফি হুজুরকে নিয়ে কওমী সনদের স্বীকৃতি দিয়েছেন৷

সরকার কখনো ইসলাম তথা কুরআন সুন্নাহ বিরোধী কোনো আইন করবে না বলেও জানান তিনি।

স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আরও বলেন, সরকার উলামায়ে কেরামের পরামর্শকে গুরুত্ব দিতে যথেষ্ট যত্নবান৷ তাবলিগের চলমান সংকট নিরসনে সরকার কোনো হস্তক্ষেপ করতে চায় না৷ সে জন্য আমরা বলেছি, এর সঠিক সমাধান উলামায়ে কেরাম পরামর্শ করেই বের করবেন৷ আর সে লক্ষ্যে আমরা দেওবন্দ থেকে সিদ্ধান্ত আনার কথা বলেছি৷ দেওবন্দ থেকেই আমরা সমাধান চাই৷

মসজিদ মাদরাসা এগুলো আল্লাহর স্থাপনা৷ কেউ চাইলেই মাদরাসা মসজিদ প্রতিষ্ঠা করতে পারে না৷ আল্লারহ যাকে দীনের খেদমতের জন্য কবুল করেন তিনিই এ কাজ করতে পারেন৷ আবার কেউ ইচ্ছে করলেই মসজিদ মাদরাসা ভাঙতে পারে না৷

উলামায়ে কেরামের কাছে বিশেষ আবেদন, আপনারা ইসলাম, মানবতা ও শান্তির বার্তা দেশময় ছড়িয়ে দিন৷ ইসলামের বদনাম করা ও ইসলামকে ধ্বংস করার জন্য শত্রুরা মরিয়া হয়ে কাজ করছে৷ আজ পুরো বিশ্বের মুসলমান ষড়যন্ত্রের শিকার৷

ওদের ভাষ্য হলো, মুসলিম মানেই হলো সন্ত্রাস! বাংলাদেশের উলামায়ে কেরাম যদি সোচ্চার ভূমিকা রাখেনে তাহলে শত্রুর সকল ষড়যন্ত্রই ব্যর্থ হবে৷ আমাদের কাছে প্রমাণিত হয়েছে, বাংলাদেশের উলামা বা মাদরাসার কেউ জঙ্গীবাদ ও সন্ত্রাসবাদের সঙ্গে জড়িত নয়৷

তিনি বলেন, আমাদের দেশে আইএস বলতে কিছু নেই৷ বিচ্ছিন্ন ঘটনায় আইএসের নামে যে দায় স্বীকার করা হয় তা সম্পূর্ণই বানোয়াট, প্রতারণা৷ শত্রুরা ভুয়া ওয়েবসাইট খুলে সেখান থেকে বিভ্রান্তি ছড়ায়৷ দায় স্বীকার করে৷ খোঁজ নিয়ে দেখা যায় সেগুলোর কোনো বাস্তবতা নেই৷ আমরা দৃঢ়ভাবে বলতে পারি মুসলমান কখনো সন্ত্রাসী বা জঙ্গী হতে পারে না৷

সন্ত্রাস মোকাবেলায় উলামায়ে কেরাম যথেষ্ট সমর্থন দিয়েছেন৷ দেশে সব ধরনের সন্ত্রাস ও মাদকের বিরুদ্ধে উলামায়ে কেরামের অব্যহত সমর্থন চাই৷ আমরা রাসুল সা. এর আদর্শ ধারণ করি এবং বেশি বেশি সুন্নতের প্রচার করি তবেই শান্তির সুবাতাস বইবে৷

আমাদের সরকার যথেষ্ট উদার ও মানবতায় বিশ্বাসী৷ আমরা যখন দেখলাম নাফ নদীর ওপারে লাখ লাখ মুসলিমের জীবন বিপন্ন৷ তাদেরকে হত্যা করা হচ্ছে, ঘরবাড়ি গ্রামের পর গ্রাম জালিয়ে দেয়া হচ্ছে তখন আমাদের নেত্রী বললেন রোহিঙ্গা মুসলিমদের জন্য সীমান্ত খুলে দাও৷

আমারা মানবতার পাশে দাঁড়াতে চাই৷ এই কারণে আজ বিশ্বের বুকে বাংলাদেশ একটি বিশেষ মর্যাদায় উন্নীত হয়েছে৷ দেশের ভাব মর্যাদা উজ্জল হয়েছে৷ রোহঙ্গাদের সাহায্যে সরকার যথা সম্ভব চেষ্টা করছে৷ এ দেশের আলেম সমাজও রোহিঙ্গা শরণার্থীদের সেবায় বিশেষ ভূমিকা পালন করেছেন৷

যথাযথ প্রক্রিয়ার মাধ্যমে রোহিঙ্গাদের নিজ দেশে ফিরিয়ে দেয়ার চেষ্টা চলছে৷ আমি নিজে মিয়ানর সফর করে তাদের নাগরিকদের ফিরিয়ে নিতে আহ্বান করেছি৷ আমাদের পররাষ্ট্রমন্ত্রী কাজ করছেন৷ সরকারও কূটনৈতিকভাবে আলাপ আলোচনা করে যাচ্ছে৷ বাস্তবতা হলো, রোহিঙ্গাদের কারণে আমাদের বন উজাজ় হচ্ছে, অর্থনৈত্ক প্রভাব পড়ছে, দেশ বিপন্ন হচ্ছে৷ তাই যতো দ্রুত সম্ভব তাদেরকে নিজ দেশে ফিরিয়ে দেয়ার চেষ্টা করা হচ্ছে৷

বাংলাদেশের মুসলমাদের মতো এতো ধর্মপ্রাণ মুসলমান পৃথিবীর অন্য কোথাও নেই৷ আপনারা ইসলাম দেশ ও মানবতার সেবায় কাজ করুন৷ ইনশাআল্লাহ, বিশ্বের মানচিত্রে বাংলাদেশ একটি উজ্জ্বল মুসলিম দেশ হিসেবে পরিচিতি পাবে৷

উল্লেখ্য, শনিবার সকালে মজলিসে দাওয়াতুল হক বাংলাদেশের আমির মহিউস সুন্নাহ আল্লামা মাহমূদুল হাসানের বয়ানের মাধ্যমে শুরু হয় ২৩ তম কেন্দ্রীয় ইজতেমা। এতে শীর্ষস্থানীয় উলামায়ে কেরাম ও হারদুয়ী হজরতের খোলাফাগণ বয়ান করেন।

রাত ১০ টায় দেশ ও মানুষের কল্যাণে দোয়ার মাধ্যমে শেষ হয় দিনব্যাপী ইজতেমা।

Image may contain: text


সম্পর্কিত খবর


সর্বশেষ সংবাদ