হাওলাদার জহিরুল ইসলাম
ইজতেমা ময়দান থেকে
স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল বলেছেন, দাওয়াতুল হকের ইজতেমায় শরিক হওয়া আমার জন্য সৌভাগ্যের বিষয়৷ এতো উলামায়ে কেরামকে একসঙ্গে অন্য কোথাও পাওয়া মুশকিল৷ এখানে তো শুধু দেশের আলেমই নন বরং বিদেশ থেকে বড় বড় কয়েকজন আলেম আগমণ করেছেন৷ পবিত্র মক্কা থেকে শায়খ নাসের বিল্লাহ এসেছেন৷ ভারতের দারুল উলুম দেওবন্দ থেকে দুইজন বিখ্যাত মুহাদ্দিস এসেছেন৷ এটা আসলেই খুশির বিষয়৷
মাওলানা মাহমুদুল হাসান এ দেশের একজন মান্যবর আলেম৷ তাকে আলেমরা যেমন শ্রদ্ধা করেন আমরাও তেমন শ্রদ্ধা করি৷ আমারা অনেক জটিল বিষয়ের সমাধান হুজুর থেকে পেয়ে থাকি৷ মাওলানা মাহমুদুল হাসান সাহেব বাংলাদেশের উলামাদের মাঝে শান্তির প্রতীক৷
শনিবার (২ ডিসেম্বর) জামিয়া ইসলামিয়া দারুল উলুম মাদানিয়া যাত্রাবাড়ীতে অনুষ্ঠিত দাওয়াতুল হকের ২৩ তম মারকাজি ইজতেমায় শরিক হয়ে তিনি এসব কথা বলেন।
আলেম ওলামা ও কওমি স্বীকৃতি নিয়ে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, আমাদের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা লাখ লাখ কওমি সন্তানদের সুন্দর ভবিষ্যত নিয়ে ভেবেছেন৷ কওমী শিক্ষার্থীরাও যাতে রাষ্ট্রীয় সুযোগ সুবিধা পায় এবং আরো বেশি দেশ জাতির কল্যাণে কাজ করতে পারে সে লক্ষ্যেই তিনি আল্লামা শফি হুজুরকে নিয়ে কওমী সনদের স্বীকৃতি দিয়েছেন৷
সরকার কখনো ইসলাম তথা কুরআন সুন্নাহ বিরোধী কোনো আইন করবে না বলেও জানান তিনি।
স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আরও বলেন, সরকার উলামায়ে কেরামের পরামর্শকে গুরুত্ব দিতে যথেষ্ট যত্নবান৷ তাবলিগের চলমান সংকট নিরসনে সরকার কোনো হস্তক্ষেপ করতে চায় না৷ সে জন্য আমরা বলেছি, এর সঠিক সমাধান উলামায়ে কেরাম পরামর্শ করেই বের করবেন৷ আর সে লক্ষ্যে আমরা দেওবন্দ থেকে সিদ্ধান্ত আনার কথা বলেছি৷ দেওবন্দ থেকেই আমরা সমাধান চাই৷
মসজিদ মাদরাসা এগুলো আল্লাহর স্থাপনা৷ কেউ চাইলেই মাদরাসা মসজিদ প্রতিষ্ঠা করতে পারে না৷ আল্লারহ যাকে দীনের খেদমতের জন্য কবুল করেন তিনিই এ কাজ করতে পারেন৷ আবার কেউ ইচ্ছে করলেই মসজিদ মাদরাসা ভাঙতে পারে না৷
উলামায়ে কেরামের কাছে বিশেষ আবেদন, আপনারা ইসলাম, মানবতা ও শান্তির বার্তা দেশময় ছড়িয়ে দিন৷ ইসলামের বদনাম করা ও ইসলামকে ধ্বংস করার জন্য শত্রুরা মরিয়া হয়ে কাজ করছে৷ আজ পুরো বিশ্বের মুসলমান ষড়যন্ত্রের শিকার৷
ওদের ভাষ্য হলো, মুসলিম মানেই হলো সন্ত্রাস! বাংলাদেশের উলামায়ে কেরাম যদি সোচ্চার ভূমিকা রাখেনে তাহলে শত্রুর সকল ষড়যন্ত্রই ব্যর্থ হবে৷ আমাদের কাছে প্রমাণিত হয়েছে, বাংলাদেশের উলামা বা মাদরাসার কেউ জঙ্গীবাদ ও সন্ত্রাসবাদের সঙ্গে জড়িত নয়৷
তিনি বলেন, আমাদের দেশে আইএস বলতে কিছু নেই৷ বিচ্ছিন্ন ঘটনায় আইএসের নামে যে দায় স্বীকার করা হয় তা সম্পূর্ণই বানোয়াট, প্রতারণা৷ শত্রুরা ভুয়া ওয়েবসাইট খুলে সেখান থেকে বিভ্রান্তি ছড়ায়৷ দায় স্বীকার করে৷ খোঁজ নিয়ে দেখা যায় সেগুলোর কোনো বাস্তবতা নেই৷ আমরা দৃঢ়ভাবে বলতে পারি মুসলমান কখনো সন্ত্রাসী বা জঙ্গী হতে পারে না৷
সন্ত্রাস মোকাবেলায় উলামায়ে কেরাম যথেষ্ট সমর্থন দিয়েছেন৷ দেশে সব ধরনের সন্ত্রাস ও মাদকের বিরুদ্ধে উলামায়ে কেরামের অব্যহত সমর্থন চাই৷ আমরা রাসুল সা. এর আদর্শ ধারণ করি এবং বেশি বেশি সুন্নতের প্রচার করি তবেই শান্তির সুবাতাস বইবে৷
আমাদের সরকার যথেষ্ট উদার ও মানবতায় বিশ্বাসী৷ আমরা যখন দেখলাম নাফ নদীর ওপারে লাখ লাখ মুসলিমের জীবন বিপন্ন৷ তাদেরকে হত্যা করা হচ্ছে, ঘরবাড়ি গ্রামের পর গ্রাম জালিয়ে দেয়া হচ্ছে তখন আমাদের নেত্রী বললেন রোহিঙ্গা মুসলিমদের জন্য সীমান্ত খুলে দাও৷
আমারা মানবতার পাশে দাঁড়াতে চাই৷ এই কারণে আজ বিশ্বের বুকে বাংলাদেশ একটি বিশেষ মর্যাদায় উন্নীত হয়েছে৷ দেশের ভাব মর্যাদা উজ্জল হয়েছে৷ রোহঙ্গাদের সাহায্যে সরকার যথা সম্ভব চেষ্টা করছে৷ এ দেশের আলেম সমাজও রোহিঙ্গা শরণার্থীদের সেবায় বিশেষ ভূমিকা পালন করেছেন৷
যথাযথ প্রক্রিয়ার মাধ্যমে রোহিঙ্গাদের নিজ দেশে ফিরিয়ে দেয়ার চেষ্টা চলছে৷ আমি নিজে মিয়ানর সফর করে তাদের নাগরিকদের ফিরিয়ে নিতে আহ্বান করেছি৷ আমাদের পররাষ্ট্রমন্ত্রী কাজ করছেন৷ সরকারও কূটনৈতিকভাবে আলাপ আলোচনা করে যাচ্ছে৷ বাস্তবতা হলো, রোহিঙ্গাদের কারণে আমাদের বন উজাজ় হচ্ছে, অর্থনৈত্ক প্রভাব পড়ছে, দেশ বিপন্ন হচ্ছে৷ তাই যতো দ্রুত সম্ভব তাদেরকে নিজ দেশে ফিরিয়ে দেয়ার চেষ্টা করা হচ্ছে৷
বাংলাদেশের মুসলমাদের মতো এতো ধর্মপ্রাণ মুসলমান পৃথিবীর অন্য কোথাও নেই৷ আপনারা ইসলাম দেশ ও মানবতার সেবায় কাজ করুন৷ ইনশাআল্লাহ, বিশ্বের মানচিত্রে বাংলাদেশ একটি উজ্জ্বল মুসলিম দেশ হিসেবে পরিচিতি পাবে৷
উল্লেখ্য, শনিবার সকালে মজলিসে দাওয়াতুল হক বাংলাদেশের আমির মহিউস সুন্নাহ আল্লামা মাহমূদুল হাসানের বয়ানের মাধ্যমে শুরু হয় ২৩ তম কেন্দ্রীয় ইজতেমা। এতে শীর্ষস্থানীয় উলামায়ে কেরাম ও হারদুয়ী হজরতের খোলাফাগণ বয়ান করেন।
রাত ১০ টায় দেশ ও মানুষের কল্যাণে দোয়ার মাধ্যমে শেষ হয় দিনব্যাপী ইজতেমা।