অ্যাডভোকেট শফিকুর রহমান
লেখক, আইনজীবী
রোহিঙ্গা সংকটের ক্রান্তিলগ্নে আন্তর্জাতিক ও স্থানীয় পর্যায়ে আলোচিত বিষয় হলো রোমান ক্যাথলিক গির্জার সার্বজনীন যাজক ও আধ্যাত্মিক নেতা এবং একই সাথে ভ্যাটিকানের রাষ্ট্রপ্রধান পোপ ফ্রান্সিস এর বাংলাদেশ ও মিয়ানমার সফর।
সার্বজনীন মানবাধিকার প্রশ্নে উত্তপ্ত রোহিঙ্গা ইস্যুতে পোপের এ সফর এ অঞ্চলে এবং বিশ্বে ভ্যাটিকান ধর্মগুরু কি বার্তা দেয় তা নিয়ে অধীর আগ্রহে অনেক আগে থেকেই সফরের দিন গণনা হচ্ছে। আর এমন পরিস্থিতিতে পোপ ফ্রান্সিস মিয়ানমার সফর শেষে এখন বাংলাদেশে।
তবে বিষ্ময়কর বিষয় হলো, মিয়ানমার সফরে রোহিঙ্গা সংকট আলোচনার অন্যতম প্রধান বিষয়বস্তু থাকলেও পোপ ফ্রান্সিস ‘রোহিঙ্গা’ শব্দটি সেখানে ব্যবহার করেননি।
আর ভ্যাটিকানের মুখপাত্র গ্রেগ বুরক পোপের ‘রোহিঙ্গা’ শব্দটি এড়িয়ে যাওয়ার কারণ হিসেবে আনুষ্ঠানিকভাবে যে ব্যাখ্যা দিয়েছেন তা হল- ‘পোপের নৈতিক অবস্থান নিষ্কলুষ, সেটা তিনি ক্ষতিগ্রস্থ হতে দেন না। কাজেই তিনি প্রকাশ্য বক্তব্যে বিতর্কিত বিষয় এড়িয়ে চলার চেষ্টা করেন।’
অথচ গত ২৬ অক্টোবর ২০১৭ দেশের একটি জাতীয় পত্রিকায় দেয়া সাক্ষাৎকারে ঢাকার ক্যাথলিক আর্চবিশপ কার্ডিনাল পেট্রিক ডি রোজারিও এর ভাষ্যমতে পোপ ফ্রান্সিস গত বছরের নভেম্বরে ‘রোহিঙ্গা’ শব্দটি ব্যবহার করে বিবৃতি দিয়েছিলেন।
যেখানে তিনি বলেছিলেন, ‘রোহিঙ্গা মুসলিমরা আমাদের ভাই ও বোন। তাঁদের হত্যার অধিকার কারও নেই। কোনো ব্যক্তিই এভাবে হত্যার শিকারে পরিণত হতে পারেন না।’
যদিও এ ‘রোহিঙ্গা’ শব্দের ব্যাপারে তখন পোপের বিবৃতি দেয়ার পরেও মিয়ানমারের বিশপ সম্মেলনী থেকে আপত্তি পোপের কাছে গিয়েছিলো, কিন্তু পোপ ‘রোহিঙ্গা’ শব্দ তার বক্তব্য থেকে অবলোপন করেননি।
রাজনৈতিক নেতারা যেমন নিজেদের ক্ষমতা আর সমর্থনের ভারসাম্য রক্ষায় মিয়ানমারের নৃশংস মানবাধিকার লংঘনের পরিস্থিতিকে নানাভাবে পাশ কাটিয়ে যেতে পারেন ঠিক তেমন করে ধর্মীয় আধ্যাত্মিক নেতারা পারেন? বা পাশ কাটিয়ে যাওয়া কি উচিত?
গ্রেগ বুরক এর ভাষ্যানুযায়ী যদি পোপ আপন নিষ্কলুষতা রক্ষায় মানবিক আবেদন ও একই সাথে মানবিক পরিচয়কে অগ্রাহ্য করেন তাহলে মানুষের বিশ্বাসের জায়গা কোথায় গিয়ে দাঁড়াবে?
ব্যক্তি পোপ ফ্রান্সিস ও রোমান ক্যাথলিক সর্বোচ্চ আধ্যাত্মিক নেতা পোপ ফ্রান্সিসকে কোনভাবেই আলাদা করে দেখার সুযোগ নেই।
বিতর্ক এড়াতে পোপ ফ্রান্সিস আজকে সত্য ও ন্যায়ের ঝান্ডা হাতে নিয়েও যদি মিয়ানমারে ‘রোহিঙ্গা’দের পরিচয় তুলে ধরতে দ্বিধান্বিত হন তাহলে মানবিক আবেদনে তা পোপের নৈতিক অবস্থানকেও কি প্রশ্নবিদ্ধ করে তোলে না?
লেখক: চেয়ারম্যান, ন্যাশনাল কংগ্রেস অব ভলান্টিয়ার এনসিভি