বৃহস্পতিবার, ২৫ এপ্রিল ২০২৪ ।। ১২ বৈশাখ ১৪৩১ ।। ১৬ শাওয়াল ১৪৪৫


মোবাইল ক্ষতিকর, এটা স্মরণ করানো নির্বুদ্ধিতা না বিচক্ষণতা?

নিউজ ডেস্ক
নিউজ ডেস্ক
শেয়ার

সাকিব মুসতানসির
আলেম ও বস্ত্র প্রকৌশলী

বিজ্ঞানের কোন সাম্প্রদায়িকতা নেই এসব মুখরুচক বুলি আওড়ে মাথায় নরম হাত বুলিয়ে যাওয়া পিশাচের তপ্ত নিশ্বাসের নিচে যতক্ষণ না মুসলমানের মাথা ঠেকে ততক্ষণ হুশ ফেরার সম্ভাবনা শূন্যের কোটায় বলা চলে।

একটু কি বেশি বলে ফেললাম! না আমার কথা আপনার কাছে অতি কল্পনাপ্রসূত অতীব বাড়াবাড়ি যুক্ত বাক্যালাপ মনে হচ্ছে?

সহজ প্রশ্ন করে বসতে পাড়েন! বিধর্মীদের তৈরি বিমানে হজে যাই কেন বা ফেসবুক ইউটিউব কেন ব্যবহার করি? এই প্রশ্নের জবাব খুঁজার আগে আপনার উচিত ছিল আপনার মাথায় কেন এই প্রশ্ন জাগছে তা খতিয়ে দেখা।

যে প্রযুক্তির কৈশোর তারুণ্য কেটেছে মুসলমানের ঘরে যুবা বয়সের সেই প্রযুক্তি কেন কিভাবে মুসলমানের জাত শত্রুতে পরিণত হলো! আণবিক আবিষ্কার পৃথিবীকে এগিয়ে দিয়েছে কয়েক শতাব্দী অথচ এই আণবিক প্রযুক্তি ব্যবহার করে তৈরি করা বোমার ধ্বংস ক্ষমতা কতটুকু তা দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের দিকে তাকালে যুদ্ধের প্রায় শত বছর পরেও গা শিউরে উঠে।

নোবেল পাওয়ার জন্য আমাদের নেতা নেতৃদের লম্ফঝম্প চোখে পড়ার মতো অথচ এর পেছনে রয়েছে বিজ্ঞানের এক মহা অভিশাপের গল্প। পৃথিবীতে ডিনামাইট থেকে বেশি ধ্বংসযজ্ঞ অন্য কোন প্রযুক্তি ব্যবহার করে হয় নি।

বিমান দিয়ে হজে গমন সহজতর হয়েছে বলেই আনন্দে আঁটখানা হওয়ার কিছু নেই । এই বিমান দিয়ে আফগানিস্তান, কাশ্মীর, ইরাক, সিরিয়া, বসনিয়া, ফিলিস্তিনে লক্ষ লক্ষ টন বোমা নিক্ষেপ করে মিলিয়ন মিলিয়ন মুসলমান হত্য করা হয়েছে। হত্যা করা হয়েছে বৃদ্ধ, যুবক তরুণ কে। রেহাই পায়নি নারী শিশু এমনকি মায়ের পেটে থাকা মুসলমানের সন্তানও! বাড়িঘর মসজিদ মাদরাসা রাস্তাঘাট হাসপাতাল কিছুই রেহাই পায়নি বিজ্ঞানের হাত থেকে।

বিজ্ঞান আমাদের জন্য যতটা গড়েছে ঠিক ততটাই ধ্বংস করেছে। আমুসলিমের হাতে বিজ্ঞান বাঁদরের হাতে কোরাল থাকার মতো যার ব্যাবহার ঘুড়িয়ে ফিরিয়ে ইসলাম ও মুসলমানদের বিরুদ্ধে হচ্ছে। এই বাস্তবতা যতদিন মুসলমানের ঘরের সন্তানরা অনুধাবন করতে না পারবে ততদিন মুসলমানদের কপাল থেকে গোলামির নিশানা মুছবে না।

পৃথিবীতে মুসলমানরা বসবাস করছে সবচেয়ে নাযুক অবস্থায়। সংখ্যার দ্বিতীয় বৃহত্তম হওয়ার পরও প্রতিটি প্রান্তেই বিভিন্ন ধর্মাবলম্বী ও জাতিগোষ্ঠী দ্বারা নিপীড়িত নিষ্পেষিত হচ্ছে। ইউরোপ, আফ্রিকা, অস্ট্রেলিয়া, আমেরিকা কোন মহাদেশে নির্যাতিত হচ্ছে না?

বৌদ্ধ, হিন্দু, খৃস্টান, ইহুদি কোন ধর্মের লোক মুসলমান হত্যার লীলাখেলায় শামিল হয়নি? ইসলামের সাথে তাদের এই শত্রুতার পেছনে একটা কারণকেই চিহ্নিত করা যায় তা হচ্ছে ইসলাম ও মুসলমানদের ইচ্ছেমত পরিবর্তন পরিমার্জন ও পরিবর্ধন করা যায় না।

সময়ের সাথে সাথে সকল ধর্মই পরিবর্তিত হয়ে নতুনরূপ পরিগ্রহ করেছে অথচ ইসলাম টিকে আছে আগের মতোই। একচুল বিকৃত হয়নি ইসলামের। যুগেযুগে যারাই ইসলামকে আধুনিকায়ন ও যুগোপযোগীকরণ করার নামে বিকৃতির চেষ্টা চালিয়েছে উলটো তারাই নিক্ষিপ্ত হয়েছে আস্তাকুড়ে।

ইসলাম ও মুসলমানদের ধ্বংস করতে, তাহজিব তামাদ্দুন মুছে দিতে পৃথিবীতে আবিষ্কৃত প্রতিটি প্রক্রিয়া যথাযথ ব্যবহার করা হয়েছে, প্রতিনিয়ত হচ্ছে শিল্প সাহিত্য মিডিয়া প্রযুক্তি সবই।

মোবাইল শুধুমাত্র নিছক একটা কথা বলার যন্ত্র নয় বর্তমানে। একটা মোবাইলে পুড়ে পৃথিবী পকেটে রেখে দেয়া যায় চাইলেই। মোবাইলের সাথে যুক্ত হয়েছে নানাবিধ ফিচার, অ্যাপস, সফটওয়ার, বেড়েছে সুযোগ সুবিধা।

যুক্ত হয়েছে অন্তর্জালিক দুনিয়ার সব কিছু। একটা মোবাইলকে একজন মানুষের জন্য এতোটাই অপরিহার্য করে দেয়া হয়েছে যে এর হাত থেকে রক্ষা পেতে ‘আমাকে স্মার্টফোন বানিয়ে দাও’ বলে শিশুদের দিয়ে করুণতর এড বানিয়ে প্রচার করে বাবা-মাকে স্মার্টফোন ব্যবহারে অনুৎসাহী করতে হয়!

আমাদের স্বাতন্ত্র টকশোর আয়োজন করতে হয় যেখানে তরুণ তরুণীদের মাত্রাতিরিক্ত মোবাইল আসক্তি নিয়ে বিজ্ঞজন মতামত দেন। মনোবিজ্ঞানীরা কর্মপন্থা ঠিক করে দেন। ডাক্তাররা চিকিৎসা দেন।

সহজে বহনযোগ্য এই ডিভাইসের সাথে ইনটারনেট কানেকশন যুক্ত হয়ে এটা পরিণত হয়েছে একটা পারমানবিক বোমা থেকেও বেশি ধ্বংসলীলা চালাতে সক্ষম একটা টাইম বোমায়। পারমাণবিক বোমা একটা নিদৃষ্ট এড়িয়ার সব কিছুকে সমূলে ধ্বংস করে দেয়।

আর স্মার্টফোন স্থানের কালের উর্ধ্বে অবস্থান করে একটা পরিবার থেকে শুরু করে সমাজ, একটা চেতনা, একটা বিশ্বাস সব কিছুকেই তছনছ করে দিতে সক্ষম। মানুষগুলো বেঁচে থাকবে কিন্তু তার চিন্তা চেতনা, শিক্ষা সংস্কৃতি সব ধ্বংস করে দিচ্ছে যার প্রমাণ প্রতিদিনই মিলছে।

অন্তর্জাল জুড়ে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা অসংখ্য অণুজীব অজান্তেই প্রবেশ করছে মুসলমানদের মগজে। আস্তে আস্তে ধ্বসিয়ে দিচ্ছে আস্থা ও বিশ্বাসের বাধ। সৃষ্টিকর্তার প্রতি আনুগত্য। মাকড়সার জালের চেয়েও ভায়বহ ও বিস্তৃত এই জাল কেটে বেরুনোর কোন উপায় নেই। কোন একটা ফাঁদ জড়িয়ে নিবেই আপনাকে।

আপনার ধ্যনধারণাকে কিভাবে ইসলামের প্রতিপক্ষ বানিয়ে দিবে, সংস্কারক বানিয়ে দিবে তা আপনি অনুভব করতে সক্ষম নন। স্লো-পয়জনের মত মগজকে আস্তে আস্তে গ্রাস করে নিবে এই জগত। কখনো নিছক খেলার সুরতে, কখনো আপনাকে আঘাত করবে ভুল তথ্য ও তত্বের মাধ্যমে!

ইসলাম মুসলমানদের নিয়ে হাজার হাজার প্রবন্ধ নিবন্ধ রয়েছে যা পড়লে একজন সাধারণ মুসলমান এটাকে ইসলামকে নিয়ে লেখা মনে করে বিভ্রান্ত হবে অথচ বিজ্ঞ একজন মানুষই ধরতে পারবে লেখাটা সম্পুর্ণ ইসলামের ধ্যানধারণার বিপরীত! রয়েছে স্থিরচিত্র, অডিও ভিডিও এর এক বিশাল দুনিয়া যা প্রতিনিয়ত শুধু ইসলামকেই আঘাত করে নির্মিত হচ্ছে।

এর সাথে যুক্ত হয়েছে একজন সচেতন মানুষ কখনই তার সন্তানকে চলন্ত ট্রেনের সামনে দাঁড় করিয়ে দিবে না তো একজন সচেতন মুসলমান কিভাবে তার সন্তানদের ভয়াবহ এই জগতে ছেঁড়ে দিতে পারে !

মোবাইল ব্যাবহারের কিছু ক্ষতিকর দিক তুলে ধরা হলো-

(১) অমনোযোগিতা, (২) সাধারণ অসুস্থতা (৩) চোখের সমস্যা (৪) মানসিক চাপ (৫) স্নায়বিক সমস্যা
(৬) হার্টের সমস্যা (৭) শুক্রাণুর গুনগত মান ও পরিমাণ হ্রাস (৮) শ্রবণশক্তি হ্রাস পাওয়া

(৯) মস্তিষ্কের ক্যান্সার (১০) গর্ভাবস্থায় ঝুঁকি (১১) বন্ধ্যাত্ব (১২) দুর্ঘটনার প্রবণতা বাড়ায় (১৩) শরীরের অস্থি-সন্ধিগুলোর ক্ষতি (বিস্তারিত জানতে নিচের লিঙ্কগুলোতে দেখুন )

ম্যানসন করা প্রতিটা উপসর্গ নিয়ে আদালা আলোচনার দাবি রাখে।এই কারণগুলো বিশেষজ্ঞদের মতামত থেকে নেয়া তাই হালকা ভাবে নেয়ার সুযোগ নেই। এমন আরো অসংখ্য ক্ষতিকর দিক রয়েছে যা একজন দায়িত্ববান অবিভাবক এড়িয়ে যেতে পারেন না ।

একজন অপরিণত তরুণ তরুণী বা শিশু কিশোর এসব কারণে যতটা ক্ষতিগ্রস্থ হবে একজন পরিণত বয়স্ক লোকের জন্য তা অনেক কম ফলে তরুণ তরুণীদের মোবাইল থেকে দূরে থাকার পরামর্শ প্রতিজন সচেতন নাগরিক কে দিতে হবে।

শিক্ষার্থীদের মোবাইলের ব্যবহারের প্রভাব সম্পর্কে বিশিষ্ট শিক্ষাবিদ অধ্যাপক সিরাজুল ইসলাম চৌধুরী বলেন, ইদানীং ছাত্র-ছাত্রীদের মধ্যে মোবাইলের নেশা তৈরি হয়েছে। ইতিমধ্যে রাজধানীর কিছু ইংলিশ মিডিয়াম স্কুলে শিক্ষার্থীদের মোবাইল ব্যবহারে নিষেধাজ্ঞা দেওয়া হয়েছে।

মোবাইলের অপব্যবহারের কারণে ছাত্ররা ইভটিজিং, বখাটেপনাসহ বিভিন্ন অপরাধমূলক কর্মকাণ্ডে জড়িয়ে পড়ছে বলেও অভিমত দেন এ শিক্ষাবিদ। এ ইমেরিটাস অধ্যাপক আরও বলেন, মোবাইলের অপব্যবহার ব্যাধির মতো ছড়িয়ে পড়ছে ছাত্র-ছাত্রীদের মধ্যে। পড়াশোনা বাদ দিয়ে তারা গভীর রাতে ফোনালাপে ব্যস্ত থাকছে উল্লেখ করে এ ব্যাপারে সতর্ক থাকতে অভিভাবকদের অনুরোধ জানিয়েছেন।

বিবিসির একটা গবেষণা প্রতিবেদন থেকে আমরা দেখতে পাই, স্কুলে মোবাইল ফোন নিষিদ্ধ করার পর শিক্ষার্থীদের পরীক্ষার ফল ভালো হয়েছে গবেষণায় দেখা গেছে।গবেষকরা বলছেন, এর ফলে ছাত্রছাত্রীরা পড়াশোনার জন্যে বাড়তি সময় পেয়েছেন।

ইংল্যান্ডের চারটির শহরের স্কুলে জরিপ চালিয়ে লন্ডন স্কুল অফ ইকোনমিক্স এই সমীক্ষাটি প্রকাশ করেছে। ফোন নিষিদ্ধ করার আগে ও পরে অনুষ্ঠিত পরীক্ষার ফলাফল বিশ্লেষণ করে এই মন্তব্য করা হয়েছে।

এছাড়াও দেখা গেছে, যেসব স্কুলে মোবাইল ফোন নিষিদ্ধ করা হয়েছে, সেসব স্কুলের শিক্ষার্থীদের পরীক্ষার ফল অন্যান্য স্কুলের তুলনায় ৬% ভালো।

গবেষকরা বলছেন, স্বল্প আয়ের পরিবারের ছেলেমেয়েদের উন্নতি হয়েছে সবচে’ বেশি।ব্রিটেনে ৯০ শতাংশেরও বেশি কিশোর কিশোরী মোবাইল ফোন ব্যবহার করে থাকে।গবেষকরা বলছেন, নতুন নতুন স্মার্ট ফোনের অনেক সুবিধা থাকলেও এসব ফোন শিক্ষার্থীদের মনোযোগ নষ্ট করে। এতে পড়ালেখারও ক্ষতি হয়।

শুধুমাত্র মানবিক দিক বিবেচনায় যেই প্রযুক্তির অপব্যাবহার নিয়ে আজ সমগ্র পৃথিবী সরব সেখানে একজন মুসলমান কিভাবে এই প্রযুক্তিকে নিজেদের জন্য উপকারি বিবেচনা করে অপরিণত তরুণ তরুণী কিশোর কিশোরীদের হাতে তুলে দিতে পারে?

তথ্যসূত্র-

goo.gl/Nhe7SK
goo.gl/hxGW8y
goo.gl/eg8KQs
goo.gl/VEyTrZ
http://www.bd24live.com/bangla/article/36654/index.html
http://www.ittefaq.com.bd/life-style/2016/03/28/61476.html
https://www.amarblog.com/amarblogaami/posts/133479
http://www.bd-pratidin.com/last-page/2016/06/18/151816
https://www.corporatesangbad.com/newsid/65582/
http://www.bbc.com/bengali/news/2015/05/150517_mrk_mobile_phone_education_school

৯০ + বয়সে এসেও যিনি নিত্যনতুন জাতীয় সমস্যা সম্পর্কে আমাদের সচেতন করে চলেছেন


সম্পর্কিত খবর


সর্বশেষ সংবাদ