বৃহস্পতিবার, ২৮ মার্চ ২০২৪ ।। ১৪ চৈত্র ১৪৩০ ।। ১৮ রমজান ১৪৪৫


মেয়ে জামাইদের নির্যাতনে মানবেতর জীবনযাপন করছে পাবনার ব্যাংক কর্মকর্তা

নিউজ ডেস্ক
নিউজ ডেস্ক
শেয়ার

আওয়ার ইসলাম: পাবনার এক অবসরপ্রাপ্ত ব্যাংক কর্মকর্তা চার মেয়ে ও জামাইদের দ্বারা নির্যাতনের শিকার হয়ে মানবেতর দিন কাটাচ্ছে।

তার জীবদ্দশায় মেয়েদের নামে নিজ নামীয় বসতবাড়ি ও পৈত্রিক বাড়িসহ ফসলী জমি দলিল করে দিলে এখন বাকী সম্পত্তি যা আছে তাও নিয়ে তাকে নি:স্ব করে বসত বাড়ি থেকে বিতাড়িত করে বৃদ্ধাশ্রমে পাঠানোর ষড়যত্র করছে। এমনকি তার লাইসেন্স করা একটি ২.২ বোর রাইফেল হস্তগত করে ফেরত দিতে অস্বীকার করছে মেয়ে ও জামাইরা।

শুধু তাই নয় সম্পত্তি পাওয়ার জন্য মেয়ে ও জামাইরা তাকে নানাভাবে চাপ প্রয়োগ, ভয়ভীতি প্রদর্শন ও প্রাণনাশের হুমকিসহ মিথ্যা অপবাদ দিয়ে ফাঁসানোর অপচেষ্টা চালাচ্ছে। নিরুপায় ব্যাংক কর্মকর্তা ন্যায় বিচার পাওয়ার আশায় আইনের আশ্রয় গ্রহণের কথা উল্লেখ করে সাংবাদিকদের কাছে এসব অভিযোগ করেন।

পাবনা থানায় তার দায়ের করা জিডি ও মৌখিক বিবরণে জানা গেছে, পাবনা শহরের রাধানগর পি.আই রোডস্থ মৃত- মকিম উদ্দিন খানের ছেলে জনতা ব্যাংকের ব্যবস্থাপক (অব:) আলহাজ্ব মোঃ ছোরওয়ার হোসেন ওরফে সারওয়ার (৭৩) ২০০১ সালে জনতা ব্যাংক লিঃ পাবনা হতে অবসর গ্রহণ করেন।

তিনি পাঁচ কন্যার জনক। তার স্ত্রী মাহমুদা বেগম সরকারি এডওয়ার্ড কলেজে শরীরচর্চা শিক্ষিকা পদে কর্মরত থেকে অবসর গ্রহণের পর অসুস্থতার কারণে ২০১৫ সালের ৭মার্চ ইন্তেকাল করেন। তখন থেকে তিনি একা হয়ে যান।

তার পাঁচ কন্যা শিক্ষিতা এবং সবাই বিবাহিতা। তারা ঢাকা ও দেশের বাইরে স্বামীর সাথে সংসার করেন। জামাইদের মধ্যে একজন সেনাবাহিনীর মেজর ছিলেন, একজন ইঞ্জিনিয়ার, একজন ডাক্তার এবং বাকীরা দেশের বাইরে থাকেন।

স্ত্রী মারা গেলে ছোরওয়ার হোসেন রাধানগর পি.আই রোডের বাড়িতে নিঃস্বঙ্গ অবস্থায় দিন কাটান। অসুস্থ্য হলে তাকে দেখার কেউ নেই। জামাই মেয়ের আভিযত্যের মধ্যে ভালো সেবা যত্ন পাওয়া তার পক্ষে সম্ভব নয়। তাই ছোরওয়ার হোসেন শেষ জীবনে নিজের বসত বাড়িতে একটু স্বস্থিতে শান্তিতে সেবা পাওয়ার আশায় গত ৬-৮-২০১৭ ইং একজন বিধবা ভদ্র ও শিক্ষিতা মেয়েকে দ্বিতীয় বিবাহ করেন।

বিবাহের খবর পেয়ে মেয়েরা তার বাড়িতে এসে দ্বিতীয় স্ত্রীকে তালাক দিতে পিতার উপর শুরু করে চাপ ও মানসিক নির্যাতন। মেয়েদের একটাই দাবী সৎ মাকে মেনে নেবে না তারা। কিন্তু পিতা মেয়েদের এসব দাবী না মেনে বৃদ্ধ বয়সে কে তাকে সেবা করবে যুক্তি দিয়ে সৎ মাকে মেনে নিতে মেয়ে ও জামাইদের অনুরোধ করেন।

কিন্তু কোনভাই মেয়েরা পিতার দ্বিতীয় স্ত্রীকে মানতে নারাজ। এ ভাবে মেয়ে-জামাই প্রায়ই পাবনার বাড়িতে এসে পিতার ওপর চরমভাবে মানসিক চাপ, বাড়ি থেকে বের করে দেওয়ার হুমকি, প্রাণনাশের ভয়ভীতি প্রদর্শন করতে থাকে।

মেয়েদের এরূপ নির্যাতনের মাত্রা যখন বেড়ে যায় তখন ওই ব্যাংক কর্মকর্তা প্রথমে ৪-১০-১৭ ইং লুনা শারমীন সারওয়ার, শুচি তমালিকা সারওয়ার, সোনিয়া সারওয়ার, শুভ্রা তাজনুভা সারওয়ারসহ ৪ মেয়ের বিরুদ্ধে জীবন রক্ষার্থে পাবনা থানায় লিখিত জিডি করতে যান।

পাবনা থানার ওসি তার মুখে ঘটনা সম্পর্কে জেনে তার বাড়িতে একদল পুলিশকে তদন্তে পাঠন এবং জিডি নথিভূক্ত না করে পারিবারিক ভাবে তাদের সমস্যা নিরসনের পরামর্শ দেন। সেই সাথে তার মেয়ে-জামাইদের একই পরামর্শ দেন থানার কর্মকর্তা। কিন্ত তাতেও কোন ফল হয়নি।

মেয়েদের অব্যাহত মানসিক নিযার্তন সহ্য করতে না পেরে গত ১৮-১০-১৭ ইং ছারওয়ার হোসেন শারমীন সারওয়ার, শুচি তমালিকা সারওয়ার, শুভ্রা তাজনুভা সারওয়ারসহ তিন মেয়ের বিরুদ্ধে মাসসিক নির্যাতন ও হুমকির অভিযোগ করে নিরাপত্তা চেয়ে জিডি দায়ের করলে থানা কর্তৃপক্ষ জিডি নথিভূক্ত করেন। যার জিডি নং- ৯৮৬/১৭।

এ ব্যাপারে ব্যাংক কর্মকর্তা ছোরওয়র হোসেন সাংবাদিকদের বলেন, আমার বসত বাড়ি ও আবাদি জমি যা ছিল স্ত্রী মারা যাওয়ার আগে পুত্র সন্তান না থাকায় মেয়েরা কৌশলে দলিল করে নিয়েছে। মেয়ের ব্যাংক হিসাবে রাখা আমার নগদ টাকা না জানিয়ে তুলে নিয়েছে।

৫-৬ মাস পূর্বে অসুস্থ্য হলে ঢাকায় গিয়ে প্রথমে পপুলার হাসপাতালে ও পরে সিএমএইচ এ চিকিৎসাধীন অবস্থায় নিজ নামীয় লাইসেন্স করা (২.২ বোর) একটি রাইফেল ৩য় মেয়ে শুচি তমালিকার ঢাকাস্থ বাড়িতে রাখি। যার লাইসেন্স নম্বর-৩৫০৬/৮৪ এবং রাইফেল নম্বর- ১২৩০৫০(চেক)।

তিনি নিজে ঢাকায় গিয়ে অনুরোধ করে কয়েকবার চাওয়া সত্বেও রাইফেলটি ফেরৎ দিতে অস্বিকার করে মেয়ে ও জামাই। তিনি বলেন, আমার নিজ নামীয় লাইসেন্স করা রাইফেল জোরপূর্বক কোন সন্তান রাখতে পারেনা।

তিনি আরও বলেন, গত ১৭ নভেম্বর তিন মেয়ে লুনা শারমীন, শুভ্রা তাজনুভা, সোনিয়া, জামাই আব্দুস সালাম, নূরুল ইসলাম জুয়েল, ডা.মুনির হাসান, শাহ আব্দুল ওয়াদুদসহ তিন মেয়ে চার জামাই রাধানগর পিআই রোডের বাড়িতে আসে।

তারা কোন কথা না বলে পরদিন পাবনা থানায় গিয়ে আমার বিরুদ্ধে কাল্পণিক অভিযোগ দায়ের করার চেষ্টা করে এবং জামাই ওয়াদুদ নিজেকে একজন সেনাবাহিনীর মেজর পরিচয় দিয়ে এক এস.আই কে ম্যানেজ তার মাধ্যমে আমাকে থানায় ডেকে এনে মেয়েদের বিরুদ্ধে দায়ের করা জিডি প্রত্যাহারের প্রস্তাব দেয় এবং চাপ সৃষ্টি করে।

তাদের এ প্রস্তাবে রাজি না হলে ২১ নভেম্বর মেয়ে ও জামাইরা বাড়ির আলমারী থেকে সমস্ত জমির দলিল ও মূল্যবান জিনিষপত্র নিয়ে বাড়ি থেকে বের হয়। বাড়ি থেকে বের হওয়ার সময় তারা আমার কাঁধে বন্দুক আর হাতে ঝোলা তুলে দেওয়ার কথা বলতে বলতে যায়।

পাশের বাড়ির লোকজন তাদের এসব কথা শুনে আমাকে যানায়। তিনি বলেন আমি শেষ বয়সে একটু শান্তিতে বেঁচে থাকতে চাই কিন্ত মেয়ে ও জামাইরা থাকতে দিচ্ছে না। তিনি মানবাধিকার সংগঠনকে তার পাশে দাঁড়াতে এগিয়ে আসার আহবান জানান।

ডেইলি পাবনা


সম্পর্কিত খবর


সর্বশেষ সংবাদ