বৃহস্পতিবার, ২৮ মার্চ ২০২৪ ।। ১৪ চৈত্র ১৪৩০ ।। ১৮ রমজান ১৪৪৫


তেঁতুল তত্ত্ব থেকে মোবাইলিজম!! মারহাবা!

নিউজ ডেস্ক
নিউজ ডেস্ক
শেয়ার

তারেকুল ইসলাম
লেখক

আল্লামা আহমদ শফী হুজুর তাঁর বক্তব্যে ‘মোবাইলিজম’ শব্দটা ব্যবহার করেছিলেন। এই শব্দটা মিডিয়ায় আসেনি। হুজুর এরকম একটি শব্দ ইউজ করেছেন, এতে উপস্থিত অনেক নেতৃবৃন্দ অবাক হয়ে গিয়েছিলেন।

আমার মনে হয়, মোবাইলের প্রতি সবার বর্তমান এডিকশন বা নেশাগ্রস্ততাকে বুঝাতে তিনি তার বক্তব্যে এই টার্মটা আক্ষরিকভাবে ব্যবহার করেছিলেন।

খেয়াল রাখুন, এখানে ইংরেজি পরিভাষা Mobilism-কে বুঝানো হচ্ছে না। যাই হোক, এ কয়েক বছরে অধিকাংশ মানুষ দিনদিন মোবাইলের প্রতি বেশ আসক্ত হয়ে পড়েছেন (being something of an addiction)।

এর ফলে মানুষের নানা ধরনের মানসিক ও শারীরিক সমস্যাও সৃষ্টি হচ্ছে। আর বিশেষত বাচ্চা, কিশোর ও যুবকরা বেশি আসক্ত হয়ে পড়েছে মোবাইলের প্রতি। ফেইসবুক, হোয়াটস অ্যাপ, ভাইবার, ইমো ইত্যাদি অ্যাপস দ্বারা যেন তাদের সময় ও জীবনটা আটকা পড়ে গেছে।

মা-বাবারা ইতোমধ্যে আশঙ্কায় পড়েছেন তাদের ছেলেমেয়েদের এই অবস্থা দেখে। ‘চোখ গেলো চোখ গেলো’, ‘পড়াশোনা লাটে উঠছে’, ‘অলস হয়ে গেছে’—এসব আশঙ্কামূলক বাক্য এখন তাদের মুখে হরহামেশা শোনা যাচ্ছে।

বয়োবৃদ্ধ আহমদ শফী হুজুর মোবাইল ফোনের বর্তমান টেকনোলজিকাল অগ্রগতি ও আপডেট ভার্সন সম্পর্কে অবগত না হওয়ারই কথা; কিন্তু মোবাইলের কুফল ও পরিণতি সম্পর্কে তিনি অবগত আছেন, কারণ তিনি একটি বৃহৎ মাদরাসার পরিচালনার দায়িত্বে আছেন।

মোবাইলে আসক্ত কিশোর-তরুণদের বর্তমান দুরবস্থা নিশ্চয়ই তার নজর এড়ায়নি। আর তিনি মোবাইল বলতে সাম্প্রতিককালের আপডেট ভার্সন স্মার্টফোন ও এনড্রয়েডকেই নির্দেশ করেছেন।

ফেসবুকে আসক্ত এখন সবাই। এই আসক্তির ফলে সবচে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে বাচ্চারা এবং শিক্ষার্থীরা। এটা কেউ অস্বীকার করতে পারেন? ফেইসবুকে আসক্তি মানে মোবাইলেও আসক্তি।

অ্যাপলের জনক স্টিভ জবসকে জিজ্ঞেস করা হয়েছিল, আপনার সন্তানদের কাছে নতুন ডিভাইস ‘আইপ্যাড’ কেমন লেগেছে বা তারা সেটা পছন্দ করেছে কিনা। তখন তিনি জবাবে বলেছিলেন, “তারা সেটা এখনো ব্যবহার করেনি। আমাদের সন্তানরা বাসায় টেকনোলজি কতটুকু ব্যবহার করবে না-করবে, তা আমরা নিয়ন্ত্রণ করি।”

(The Reason Steve Jobs Didn’t Let His Children Use An IPAD, February 24, 2016, INDEPENDENT.UK)

আল্লামা আহমদ শফীর কথাও সেটা। সন্তানরা বা শিক্ষার্থীরা মোবাইল থেকে দূরে থাকবে, অর্থাৎ প্রয়োজনের বাইরে দূরে থাকবে। এখানে দূরে থাকা বলতে আসক্তি বা নেশা থেকে দূরে থাকার কথা বলছেন তিনি। যেন বাচ্চারা বা সন্তানরা মোবাইলে সময় নষ্ট না করে।

এতটুকু বোঝার ক্ষমতা নিশ্চয়ই সেক্যুলারদের থাকার কথা। আর শাহবাগীদের চুলকানি তো অলওয়েজ থাকবেই। তারা বিতর্ক তুলবেই।

এমনকি শফী হুজুর এটাও পরামর্শ দিয়েছেন, প্রত্যেকটি পরিবার প্রয়োজনের অতিরিক্ত মোবাইল যেন না কিনে। বাচ্চাদের মোবাইল না দিতে কিংবা মোবাইল থেকে তাদের দূরে রাখতেও বলেছেন তিনি।

হুজুর আসলেই চমৎকার বলেছেন। হুজুরের কথার সাথে আমি মিল খুঁজে পাই মাইক্রোসফটের প্রতিষ্ঠাতা বিশ্বের শীর্ষ ধনী বিল গেটসের স্ত্রী মেলিন্ডা গেটস-এর দেওয়া পরামর্শের সাথে। তিনি নিজেও মাইক্রোসফটের একজন সায়েন্টিস্ট।

তিনি ওয়াশিংটন পোস্টে কিছুদিন আগে একটা আর্টিকেল লিখেছিলেন। বাচ্চাদের মিডিয়া কনজাম্পশনের ক্ষেত্রে বাবা-মায়েদের তিনি পরিকল্পনা করার পরামর্শ দিয়েছেন। এছাড়া তিনি লিখেছেন:

“Parents should decide for themselves what works for their family, but I probably would have waited longer before putting a computer in my children’s pockets. Phones and apps aren’t good or bad by themselves, but for adolescents who don’t yet have the emotional tools to navigate life’s complications and confusions, they can exacerbate the difficulties of growing up: learning how to be kind, coping with feelings of exclusion, taking advantage of freedom while exercising self-control.”

অর্থাৎ, বাবা-মায়েদের নিজেদেরই ঠিক করা উচিত কী-কী বিষয় তাদের পরিবারের জন্য ভালো হবে, কিন্তু আমার বাচ্চাদের পকেটে একটা কম্পিউটার দেওয়ার আগে হয়ত আমি আরো কিছুদিন অপেক্ষা করতে পারতাম।

মোবাইল এবং অ্যাপস নিজে ভালো বা খারাপ এমনটা নয়; কিন্তু যারা কিশোর, তাদের বেড়ে ওঠার ক্ষেত্রে সৃষ্ট বিভিন্ন সমস্যাসমূহকে বরং প্রকট করে তোলে মোবাইল এবং অ্যাপস।

যেমন: কীভাবে নম্র ও দয়ালু হতে হবে সেটা শেখা, প্রত্যাখ্যানের আঘাত মেনে নেয়া, আত্মনিয়ন্ত্রণ বা আত্মসংযম চর্চার সময় স্বাধীনতার সুযোগ নেয়া— এসব ক্ষেত্রে মোবাইল ও অ্যাপস সমস্যা আরো বাড়িয়ে তোলে। (Washington Post, August 24, 2017)

এটা তো সত্য, মোবাইল যেমন একজন ইহুদির আবিষ্কার, তেমনি ফেসবুকও একজন ইহুদির আবিষ্কার। হুজুর তো ভুল বলেন নাই। আর ইহুদিরাই যে বিশ্বের বেশিরভাগ প্রভাবশালী মিডিয়া নিয়ন্ত্রণ করে, এটা তো সবার জানা।

ইহুদির তৈরি ফেইসবুক থেকে কাশ্মীর, ফিলিস্তিন ও মায়ানমারে মুসলমানদের ওপর নির্যাতনের ছবি, ভিডিওসহ রেকর্ডগুলো ফেইসবুক কর্তৃপক্ষ সরিয়ে দিচ্ছে বলে ব্যাপক অভিযোগ উঠেছে বিশ্ব মিডিয়ায়।

মুসলমানদের অত্যাচার ও ধ্বংস করার সব উপায় বের করেছে ইহুদি জায়োনিস্টরা। শফী হুজুর বিন্দুমাত্র বাড়িয়ে বলেন নাই। অবুঝ নাদান পাবলিকেরা হাউকাউ করতে থাকুক। শফী হুজুরের তেঁতুল তত্ত্ব থেকে মোবাইলিজম তত্ত্ব— অসাধারণ!!

শানে রেসালত সম্মেলনে আল্লামা আহমদ শফীর উজ্জীবনী বয়ান


সম্পর্কিত খবর


সর্বশেষ সংবাদ