আতাউর রহমান খসরু
বার্তা সম্পাদক
গত ১১ এপ্রিল প্রধানমন্ত্রী শেষ হাসিনা কওমি শিক্ষা সনদের মান ঘোষণা করার পর এ পর্যন্ত খানিক দূর এগিয়েছে স্বীকৃতির মান বাস্তবায়নের প্রক্রিয়া।
প্রধানমন্ত্রী সনদের মান ঘোষণার পর ১৩ এপ্রিল শিক্ষামন্ত্রণালয় সনদের মান ও তা বাস্তবায়নের জন্য ৩২ সদস্যের একটি কমিটি ঘোষণা করে। গেজেটে দারুল উলুম দেওবন্দের অষ্টমূলনীতিকে প্রাধান্য দিয়ে আইনী প্রক্রিয়া এগিয়ে নেয়ার ঘোষণা দেয়া হয়।
সেমতে সরকার স্বীকৃত আল-হাইআতুল উলয়া লিল-জামিআতিল কওমিয়া বাংলাদেশে একটি খসড়া গঠনতন্ত্র তৈরি করে। ২ অক্টোবর তা হাইআতুল উলয়ার বৈঠকে অনুমোদন লাভ করে।
গঠনতন্ত্রে লক্ষ্য ও উদ্দেশ্য শিরোনামে ৮ টি বিষয় উল্লেখ করা হয়। যার ৭ নং ধারায় বলা হয়, ‘আল-হাইআতুল উলয়াকে বিশ্ববিদ্যালয় রূপ ঘোষণার প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করা।’
কিন্তু হাইআতুল উলয়াকে বিশ্ববিদ্যালয় করার ব্যাপারে আপত্তি করেন বেফাক ব্যতীত অন্য ৫ বোর্ডের নেতৃবৃন্দ।
তাদের দাবি, বিশ্ববিদ্যালয় হলে একদিকে যেমন কওমি মাদরাসার স্বতন্ত্র বৈশিষ্ট্য নষ্ট হবে, অন্যদিকে সরকারের হস্তক্ষেপের সুযোগ বাড়বে।
এ ব্যাপারে আওয়ার ইসলামের সঙ্গে এক আলাপচারিতায় তানযীমুল মাদারিসিল কওমিয়া বাংলাদেশের চেয়ারম্যান মুফতি আরশাদ রাহমানী আওয়ার ইসলামকে বলেন, ‘বিশ্ববিদ্যালয়ের ধারণাটাই কওমি মাদরাসার সঙ্গে সাংঘর্ষিক। বিশ্ববিদ্যালয় হলে সরকার সিলেবাসসহ নানা বিষয় চাপিয়ে দেয়ার চেষ্টা করবে। সাধারণ মানুষও চায় না কওমি মাদরাসা বিশ্ববিদ্যালয় হোক।’
জাতীয় দ্বীনি মাদরাসা শিক্ষাবোর্ড বাংলাদেশ-এর মহাসচিব মুফতি মোহাম্মদ আলীও একই শঙ্কা প্রকাশ করেন।
৫ বোর্ডের দাবির প্রেক্ষিতে সংশোধিত ‘আইনী খসড়া’য় ধারাটি বাদ দেয়া হয়েছে। কিন্তু হাইআতুল উলয়ার পরিচয় বা গঠনগত প্রকৃতি কী হবে তা স্পষ্ট করা হয় নি।
১৫ নভেম্বর হাইআতুল উলয়ার ১০ সদস্যের প্রতিনিধি দল এ আইনী খসড়া চূড়ান্ত করা হয়। হাইআতুল উলয়ার ‘আইনী খসড়া’ বর্তমানে পর্যালোচনার জন্য বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরী কমিশনে দেয়া হয়েছে।
হাইআতুল উলয়ার অন্যতম সদস্য ও বাংলাদেশ কওমি মাদরাসার শিক্ষা বোর্ড বেফাকের সহ-সভাপতি মুফতি মোহাম্মদ ওয়াক্কাসের ভাষ্য মতে মৌলিক কোনো পরিবর্তন না থাকলে এ আইনী খসড়া শিক্ষামন্ত্রণালয়ে যাবে। পর্যায়ক্রমে তা মন্ত্রীসভার বৈঠক ও সংসদে উঠবে।
কিন্তু ্পরিচয়ের বিষয়টি স্পষ্ট না হওয়ার পরও তা কিভাবে চূড়ান্ত হবে এ নিয়ে বিস্ময় ও সংশয়ের সৃষ্টি হয়েছে কওমি মাদরাসার শিক্ষক-শিক্ষার্থীদের মাঝে।
জামিয়া ইসলামিয়া তেজগাঁও রেলওয়ের শায়খুল হাদিস ড. মাওলানা মোশতাক আহমদ মনে করেন, সব কিছুর পূর্বে একটি প্রতিষ্ঠানের পরিচয় ও গঠনপ্রকৃতি স্পষ্ট হওয়া দরকার।
তিনি আওয়ার ইসলামকে বলেন, ‘সর্বপ্রথম পরিচয় ও প্রকৃতি ঠিক হওয়া দরকার ছিলো। আমি আশা করছি, এ বিষয়ে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ এমন সিদ্ধান্ত নিবেন যাতে কওমি মাদরাসার বৈশিষ্ট্যও রক্ষা পায় আবার তার শিক্ষার্থীরাও উপকৃত হতে পারে।’
বিষয়টিতে স্পষ্ট হওয়ার জন্য হাইআতুল উলয়ার সদস্য ও বাংলাদেশ কওমি মাদরাসা শিক্ষাবোর্ড বেফাকের মহাসচিব মাওলানা আবদুল কুদ্দুসের সঙ্গে যোগাযোগ করলে তিনি বলেন, ‘বিষয়টি এখনো মীমাংসিত নয়। হাইআতুল উলয়া ৩২ সদস্যের মূল কমিটির বৈঠকে এ বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেয়া হবে।’
তিনি এ বিষয়ে আর কোনো মন্তব্য করতে রাজি হন নি।
হাইআতুল উলয়ার পরিচয় ও গঠন প্রকৃতি কেমন হওয়া উচিৎ তা নিয়ে এখনো মতভিন্নতা রয়েছে।
ড. মাওলানা মোশতাক আহমদ মনে করেন, ‘হাইআতুল উলয়াকে একটি এফিলিয়েটেড ক্ষমতাসম্পন্ন বিশ্ববিদ্যালয় করাই যুক্তিযুক্ত। যেমন, জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয় ও ইসলামিক আরবী বিশ্ববিদ্যালয়। এ বিশ্ববিদ্যালয়গুলো শিক্ষা কারিকুলাম তৈরি, শিক্ষার মান নিয়ন্ত্রণ, পরীক্ষা ও সনদ বিতরণ করে থাকে।’
বিশ্ববিদ্যালয় হওয়ার পক্ষে তার আরও যুক্তি হলো, ‘মাস্টার্সের যে মান আমরা চাই তা কেবল বিশ্ববিদ্যালয়ই দিতে পারে। বিশ্বব্যাপী এটাই স্বীকৃত নিয়ম। অথরিটি করলে তারা সনদ দিবে কিভাবে? অথরিটির সনদ কখনো বিশ্ববিদ্যালয়ের মানের হবে না।’
শুরু থেকেই হাইআতুল উলয়াকে বিশ্ববিদ্যালয় করার বিপক্ষে মত দিয়ে আসছেন মুফতি মোহাম্মদ আলী।
তার কাছে কারণ জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘বিশ্ববিদ্যালয় বললে যে চিত্র আমাদের সামনে আসে তা আমরা কওমি মাদরাসার উপর প্রয়োগ করতে চাই না। কওমি মাদরাসা শিক্ষক, শিক্ষার্থী ও অভিভাবকরাও চায় না। তাছাড়া বিশ্ববিদ্যালয় করার পর সরকারের পক্ষ থেকে সিলেবাস ও কারিকুলামের ব্যাপারে হস্তক্ষেপ করার সম্ভাবনা বাড়বে।’
তাহলে হাইআতুল উলয়ার গঠন প্রকৃতি কী হবে? ‘আমি মনে করি, অন্য কোনো ধরনের প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে হাইআতুল উলয়ার গঠন প্রকৃতি মিলবে না। হাইতুল উলয়ার গঠন প্রকৃতি হবে সম্পূর্ণ ভিন্ন। যা একই সঙ্গে যা মঞ্জুরী কমিশনের মতো অথরিটির কাজ করবে আবার বিশ্ববিদ্যালয়ের মতো শিক্ষা কার্যক্রম ও সনদ বিতরণ করবে।’
সরকারের হস্তক্ষেপের বিষয়টি উল্লেখ করলে, ড. মাওলানা মোশতাক আহম বলেন, ‘সরকারি যেকোনো প্রক্রিয়ায় ঢুকে গেলে তার হস্তক্ষেপ ঠেকানো কঠিন হবে। সরকার চাইলে যেকোনো কাঠামোতেই হস্তক্ষেপ করতে পারবে।’
হজরতজি ইবরাহিম দেওলার সঙ্গে মাওলানা সাদের সাক্ষাৎ, সঙ্কট নিরসনে নিজামুদ্দীনের উদ্যোগ (ভিডিও)
হাইআতুল উলয়ার কো-চেয়ারম্যান হতে পারেন আল্লামা আবদুল হালীম বোখারী