শুক্রবার, ১৯ এপ্রিল ২০২৪ ।। ৬ বৈশাখ ১৪৩১ ।। ১০ শাওয়াল ১৪৪৫


‘প্রয়োজনে আবারো আমরা গাছতলায় বসে পাঠ নেব’

নিউজ ডেস্ক
নিউজ ডেস্ক
শেয়ার

আওয়ার ইসলাম: সিলেটের ওলামায়ে কেরাম বলেছেন, কওমি মাদরাসা বাংলাদেশের ইসলামি শিক্ষা-সংস্কৃতি, জীবনবোধ ও চেতনার অন্যতম রক্ষক। কওমি আলেমদের রীতি, ঐতিহ্য ও আদর্শের বাইরের যে কোনো নিয়ন্ত্রণ, স্বীকৃতি, আইন ও হস্তক্ষেপ হবে কওমির জন্য মারাত্মক ক্ষতিকর।

কওমি মিডিয়া ফোরাম ও অনলাইন মিডিয়া কওমিকণ্ঠ ডটকম উদ্যোগে সিলেট নগরীর দারুল আজহার মডেল মাদরাসা ক্যাম্পাসে বৃহস্পতিবার (১৬ নভেম্বর) ‘কওমি স্বীকৃতি, সাম্প্রতিক বাস্তবতা ও তরুণ আলেমদের ভাবনা’ শীর্ষক গোলটেবিল বৈঠকে নেতৃবৃন্দ এ কতা বলেন।

কওমী সনদ স্বীকৃতির বিভিন্ন দিক নিয়ে গোলটেবিলে পর্যালোচনা করেন বিদগ্ধ আলোচকগণ। তাদের আলোচনায় ঐতিহাসিক নানা প্রেক্ষাপট ও ভবিষ্যত সম্ভাবনার দিকগুলো উঠে আসে ৷

কওমি মিডিয়া ফোরামের সভাপতি হাফিজ মাওলানা তাজুল ইসলাম হাসানের সভাপতিত্বে ও কওমিকণ্ঠ সম্পাদক মাওলানা ইমদাদুল হক নোমানীর সঞ্চালনায় গোলটেবিল বৈঠকে আলোচক হিসেবে উপস্থিত ছিলেন আযাদ দ্বীনী এদারায়ে তা’লীম বাংলাদেশের ভারপ্রাপ্ত মহাসচিব মাওলানা আব্দুল বছীর।

ইসলামিক ফাউন্ডেশনের সিলেট বিভাগীয় উপ-পরিচালক মাওলানা শাহ নজরুল ইসলাম, জামিয়া দারুল কুরআন সিলেটের মুহাদ্দিস মাওলানা তৈয়্যিবুর রহমান চৌধুরী, লেখক-মুহাদ্দিস হাফিয মাওলানা এহতেশামুল হক ক্বাসিমী, দারুল আজহার মডেল মাদরাসার প্রিন্সিপাল মাওলানা মঞ্জুরে মাওলা, জামেয়া রেঙ্গার মুহাদ্দিস মাওলানা তালেব উদ্দীন।

জামেয়া নূরানিয়া ইসলামিয়া ভার্থখলা মাদরাসার মুহাদ্দিস মাওলানা শামছুদ্দীন মুহাম্মদ ইলিয়াস, কবি ও গবেষক মাওলানা মুসা আল হাফিজ, জামিয়া মাহমুদিয়া সুবহানীঘাট সিলেটের মুদাররিস মাওলানা আবুল হোসাইন চতুলী, কওমি মিডিয়া ফোরামের সহ-সভাপতি মাওলানা আহমদ সগীর, মাওলানা রফিকুল ইসলাম জাকারিয়া, লেখক-গবেষক মাওলানা সৈয়দ আনোয়ার আব্দুল্লাহ, মাওলানা তাহরুল হক জকিগঞ্জী।

ভাটপাড়া জামে মসজিদের ইমাম ও খতিব মাওলানা ওলীউর রহমান, দারুল আজহারের ভাইস প্রিন্সিপাল মাওলানা জাকারিয়া আল হাসান, কওমি মিডিয়া ফোরামের অর্থ সম্পাদক মাওলানা আবুল কালাম আজাদ, সিলেট রিপোর্ট সম্পাদক মাওলানা রুহুল আমীন নগরী, লেখক মাওলানা শামসীর হারুনুর রশীদ প্রমুখ।

স্বীকৃতি প্রশ্নে আমাদের মাঝে কোনো এখতেলাফ নেই : মাওলানা আব্দুল বছীর

দ্বীনী এদারায়ে তা’লীম বাংলাদেশের ভারপ্রাপ্ত মহাসচিব ও আল হাইআতুল উলইয়া লিল জামিয়াতিল কওমিয়া বাংলাদেশের অন্যতম সদস্য মাওলানা আব্দুল বছীর বলেন, কওমী সনদের স্বীকৃতি হবে সম্পূর্ণ সরকারি নিয়ন্ত্রণমুক্ত।

মাওলানা আব্দুল বছীর বলেন, ইদানীং সোস্যাল মিডিয়াসহ বিভিন্ন সংবাদমাধ্যমে কওমি সনদের স্বীকৃতি, বেফাক ও হাইআতুল উলইয়া নিয়ে বিভিন্ন ধরনের অপপ্রচার চলছে। বলা হচ্ছে- আমাদের মাঝে ঐক্য নেই। এটা ভুল। স্বীকৃতি প্রশ্নে আমাদের মাঝে কোনো এখতেলাফ নেই।

আমরা ৫ বোর্ডসহ বেফাক মিলে একতাবদ্ধ আছি। সনদপ্রাপ্তি, কমিশন গঠন, খসড়া গঠনতন্ত্র প্রণয়নসহ ইত্যাদি মৌলিক বিষয়ে শীর্ষস্থানীয় উলামায়ে কেরামের কার্যকর ঐক্যমত প্রতিষ্ঠায় সর্বাত্মক প্রচেষ্টা অব্যাহত আছে।

টেকসই উন্নতির জন্য উলামায়ে কেরামকে ঐক্যবদ্ধ থাকতে হবে : মাওলানা শাহ নজরুল ইসলাম

ইসলামিক ফাউন্ডেশনের সিলেট বিভাগীয় উপ-পরিচালক মাওলানা শাহ নজরুল ইসলাম বলেন, কওমি অঙ্গনের টেকসই উন্নতির জন্য উলামায়ে কেরামকে ঐক্যবদ্ধ হয়ে থাকতে হবে। ঐক্যবদ্ধ না হলে কখনো টেকসই উন্নতি সম্ভব নয়।

তিনি আরো বলেন, প্রধানমন্ত্রী কর্তৃক কওমি সনদের সরকারি স্বীকৃতি ঘোষণা অবশ্যই একটি আনন্দের সংবাদ ছিল। কিন্তু আমরা সে ঘোষণাকে কাজে লাগাতে পারছি কি-না, সেটাই এখন দেখার বিষয়।

মাওলানা শাহ নজরুল ইসলাম আরও বলেন, স্বীকৃতি যদি হয় নাম সর্বস্ব, শুধু কাগজে সীমাবদ্ধ, তবে এমন স্বীকৃতির আমাদের দরকার নেই। আমরা একটি কার্যকর এবং ফলপ্রসূ স্বীকৃতি চাই।

প্রয়োজনে আবারো গাছতলায় বসে আমরা পাঠ নেব : মুসা আল হাফিজ

আলেম, লেখক-গবেষক মাওলানা মুসা আল হাফিজ বলেন, যারা ইসলামকে সহ্য করতে পারে না, কওমি মাদরাসাকে দেখতে পারে না, সময়-সুযোগে নানান দোষ খুঁজে বেড়ায়, অপপ্রচার চালায়, তারাই যখন ইসলাম এবং কওমি মাদরাসা ও এর শিক্ষাব্যবস্থা নিয়ে মাথা ঘামায়, তখন স্বভাবতই প্রশ্ন জাগে- তাদের উদ্দেশ্য কী? এর পেছনে অবশ্যই কোনো কারণ আছে, কোনো কিন্তু আছে।

মুসা আল হাফিজ আরও বলেন, আমরা কওমি স্বীকৃতির বাস্তবায়ন চাই। তবে স্বকীয়তা বজায় রেখে। আর সেটা আমাদের মুরব্বি উলামায়ে কেরামের নেতৃত্বে হতে হবে এবং তা সম্ভবও।

আমরা চাই না, কওমি তার স্বকীয়তা হারিয়ে ফেলুক। তাই আমাদেরকে আল্লামা কাসেম নানুতবী রাহ.’র স্পীড নিয়ে এগোতে হবে। ডালিম গাছের নিচে শুরু হওয়া দারুল উলুম দেওবন্দের পাঠ মোহনা আজ বিশ্বময়। মাদরাসা বলতে আমরা শুধু বিল্ডিং-বালাখানা বুঝি না। প্রকৃত দ্বীনী শিক্ষা অর্জনই আমাদের টার্গেট। প্রয়োজনে আবারো গাছতলায় বসে আমরা পাঠ নেব।

তিনি আরও বলেন, স্বীকৃতির বর্তমান এই ঘোলাটে অবস্থার পেছনে দায়ী আমাদের তরুণ সমাজ; যারা বিভিন্ন সমাজি যোগাযোগমাধ্যমে সক্রিয়। কোনো ধরনের বাছবিচার ছাড়াই তারা নিজেদের অভ্যন্তরীণ বিষয়গুলো ছড়িয়ে দেয়। এই নৈরাজ্য বন্ধে তরুণ উলামায়ে কেরামকে একতাবদ্ধ হয়ে পদক্ষেপ নিতে হবে।

জামিয়া দারুল কুরআনের সিনিয়র মুহাদ্দিস, লেখক-গবেষক মাওলানা এহতেশাম ক্বাসিমী বলেন, আমরা মনে করি, কওমির স্বকীয়তা বজায় রেখে স্বীকৃতি অর্জন করলে আমাদের নূন্যতম কোনো ক্ষতি হবে না। স্বীকৃতির প্রয়োজনীয়তা অনেক, উপকারিতা বেশুমার। এতে মাদরে ইলমীর সাথে সম্পর্ক জোরদার হবে।

দক্ষিণ সুনামগঞ্জ উপজেলা পরিষদের ভাইস চেয়ারম্যান মাওলানা তৈয়্যিবুর রহমান চৌধুরী বলেন, স্বীকৃতির বর্তমান প্রক্রিয়া নিয়ে আমরা হতাশ নই, আশাবাদি। আমরা খুব করে চাই, স্বকীয়তা বজায় রেখে স্বীকৃতি বাস্তবায়ন হোক।

জামেয়া দারুল আজহার সিলেট ক্যাম্পাসের প্রিন্সিপাল মাওলানা মঞ্জুরে মাওলা বলেন, স্বীকৃতি আমাদের অর্জন করতেই হবে। এখন যদি আমরা না নেই, তারপর একদিন বাধ্য হয়েই আমাদেরকে স্বীকৃতির আওতায় আসতে হবে। তখন আর বিকল্প কোনো পথ খোলা থাকবে না।

আলেম, লেখক-সাংবাদিক মাওলানা সৈয়দ আনোয়ার আব্দুল্লাহ বলেন, প্রধানমন্ত্রী কর্তৃক স্বীকৃতি ঘোষণা কয়েক লক্ষ কওমি ছাত্র-শিক্ষককে আশান্বিত করলেও বর্তমান অবস্থা আমাদের আশাহত করছে। আমরা প্রত্যাশা করি, সব ভেদাভেদ ভুলে উলামায়ে কেরাম ঐক্যবদ্ধ হয়ে স্বীকৃতি প্রক্রিয়াকে দ্রুত কার্যকর এবং বাস্তবায়ন করবেন।

‘কওমি স্বীকৃতি, সাম্প্রতিক বাস্তবতা ও তরুণ আলেমদের ভাবনা’ শীর্ষক গোলটেবিল বৈঠকে আলোচকরা ৫টি বিষয়ের ওপর ঐক্যমত পোষণ করেন-

১. কওমি মাদরাসার নিজস্ব স্বকীয়তা অক্ষুণ্ন রেখে দারুল উলূম দেওবন্দের আদলে কওমি সনদের স্বীকৃতি প্রদানে প্রধানমন্ত্রীর ঘোষণা বাস্তবায়ন করতে দেশের শীর্ষ উলামায়ে কেরামের কার্যকর ও ফলপ্রসূ পদক্ষেপ গ্রহণ।

২. স্বীকৃতি বাস্তবায়নে দেশের সর্বস্তরের উলামায়ে কেরামের ঐক্যবদ্ধ থাকার বিকল্প নেই।

৩. স্বীকৃৃতি নিয়ে বর্তমানে যে পরিবেশ-পরিস্থিতি তৈরি হয়েছে, এটা স্বীকৃতি প্রক্রিয়া বাস্তবায়নের ক্ষেত্রে অশুভ সংকেত। এটা থেকে বাঁচার জন্য তরুণ আলেমদের সতর্ক থাকতে হবে।

৪. কওমি মাদরাসা এবং স্বীকৃতি নিয়ে যারা ভাবেন, লেখালেখি করেন, পরামর্শ-প্রস্তাব পেশ করেন, তাঁদের চিন্তা-ভাবনাগুলো গঠনমূলকভাবে সংশ্লিষ্ট মুরব্বি উলামায়ে কেরামের কাছে পেশ করা।

৫. তরুণ আলেম সমাজের যারা বিভিন্ন সমাজিক যোগাযোগমাধ্যমে সক্রিয়, তাদেরকে কওমি স্বীকৃতি ইস্যুতে ইতিবাচক ভূমিকা রাখা এবং পারস্পরিক মতপার্থক্যের বিষয়গুলো সোস্যাল মিডিয়ায় প্রচারণা থেকে বিরত থাকা।

এছাড়াও বৈঠকে উপস্থিত ছিলেন, লেখক-সাংবাদিক মাওলানা শাহিদ হাতিমী, মাওলানা লুৎফুর রহমান নোমান, মাওলানা আব্দুল হামিদ, মাওলানা সাইফ রাহমান, হাফিয মাওলানা ইলিয়াস মশহুদ প্রমুখ।

আল্লাহ ও ধর্ম নিয়ে বিশ্ববিখ্যাত দুই বিজ্ঞানীর দ্বন্দ্ব


সম্পর্কিত খবর