শুক্রবার, ২৯ মার্চ ২০২৪ ।। ১৫ চৈত্র ১৪৩০ ।। ১৯ রমজান ১৪৪৫


যশোরে অপহরণ ও গুমের অভিযোগে ১৬ পুলিশের বিরুদ্ধে মামলা

নিউজ ডেস্ক
নিউজ ডেস্ক
শেয়ার

আওয়ার ইসলাম :  ছেলেকে অপহরণ ও গুমের অভিযোগে এক মা যশোর কোতোয়ালি মডেল থানার সাত কর্মকর্তাসহ ১৬ পুলিশ সদস্যের বিরুদ্ধে আদালতে মামলা করেছেন।

জেলা শহরের শংকরপুর এলাকার তৌহিদুল ইসলামের স্ত্রী হীরা খাতুন আজ মঙ্গলবার মামলাটি করেছেন। আদালত অভিযোগ আমলে নিয়ে তদন্ত করে প্রতিবেদন দাখিলের জন্য পুলিশ ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশনকে (পিবিআই) নির্দেশ দিয়েছেন।

তবে পুলিশ বলছে, গ্রেপ্তার দুই তরুণকে সঙ্গে নিয়ে আসামি ধরতে যাওয়ার পর তারা পালিয়ে গেছে।

অভিযুক্তরা হলেন- যশোর কোতোয়ালি থানার এসআই এইচএম শহিদুল ইসলাম, এসআই আমির হোসেন, এসআই হাসানুর রহমান, এএসআই রাজন গাজী, এএসআই সেলিম মুন্সি, এএসআই বিপ্লব হোসেন, এএসআই সেলিম আহম্মেদ, কনস্টেবল আরিফুজ্জামান, কনস্টেবল রফিকুল ইসলাম, কনস্টেবল মো. রমজান, কনস্টেবল হাবিবুর রহমান, কনস্টেবল আবু বক্কার, কনস্টেবল মিজান শেখ, কনস্টেবল মাহমুদুর রহমান, কনস্টেবল রাজিবুল ইসলাম ও কনস্টেবল টোকন হোসেন।

অভিযোগে হীরা খাতুন বলেন, গত ৫ এপ্রিল সকাল ১০টার দিকে তাঁর একমাত্র ছেলে সাইদ ও তাঁর বন্ধু শাওন যশোর শহরের পৌর পার্কে বেড়াতে যান। দুপুর ১২টার দিকে সাব্বির হোসেন নামের এক যুবক তাঁকে (হীরা খাতুন) ফোন করে জানান, পুলিশ সাইদ ও শাওনকে পৌর পার্ক থেকে আটক করেছে।

খবর পেয়ে তিনি পৌর পার্কে যান এবং দেখতে পান পুলিশ সাইদ ও শাওনকে ধরে গাড়িতে করে নিয়ে যাচ্ছে। এ সময় তিনি দৌড়ে গাড়ির কাছে গিয়ে পুলিশের কাছে তার ছেলেকে আটক করার কারণ জানতে চান। কিন্তু পুলিশ জবাব না দিয়ে তাঁকে থানায় গিয়ে যোগাযোগ করতে বলে।

এরপর তিনি থানার সামনে গিয়ে সন্ধ্যা পর্যন্ত অপেক্ষা করেন। কিন্তু তাঁকে থানায় ঢুকতে দেওয়া হয়নি। সন্ধ্যা সাতটার দিকে দুই পুলিশ সদস্য তাঁকে ডেকে ছেলেকে ছাড়ানোর জন্য দুই লাখ টাকা ঘুষ দাবি করেন। কিন্তু তিনি টাকা দিতে না পারায় পুলিশ তাঁর ছেলেকে ছাড়েনি।

৭ এপ্রিল বাদী হীরা খাতুন পত্রিকায় প্রকাশিত খবর থেকে জানতে পারেন, তাঁর ছেলে সাইদ ও তাঁর বন্ধু শাওন পুলিশের কাছ থেকে পালিয়ে গেছে। খবর পেয়ে তিনি থানায় যান। তবে পুলিশ তাঁকে কোনো সহায়তা করেনি।

পরে আদালতে খোঁজ নিয়ে জানতে পারেন, পুলিশ এ ঘটনায় আদালতে একটা মামলা করেছে। ওই মামলায় তাঁর ছেলে ও শাওন পালিয়ে গেছেন বলে উল্লেখ করা হয়েছে। এরপর তিনি ছেলের সন্ধানে অনেকবার পুলিশের কাছে গেছেন।

বারবার পুলিশ তাঁর সঙ্গে খারাপ আচরণ করেছে। একপর্যায়ে ছেলের সন্ধান চেয়ে তিনি গত ৩০ মে যশোর প্রেসক্লাবে সংবাদ সম্মেলন করেন। এখনো তিনি তাঁর ছেলে ও ছেলের বন্ধুর খোঁজ পাননি।

অভিযোগে আরও বলা হয়, দুই লাখ টাকা ঘুষ না পেয়ে আসামিরা ক্ষিপ্ত হয়ে তাঁর ছেলে ও ছেলের বন্ধুকে পুলিশ পরিকল্পিতভাবে অপহরণের পর হত্যা এবং তাঁদের লাশ গুম করে ফেলতে পারে বলে বাদী সন্দেহ করছেন। এ জন্য তিনি ন্যায়বিচারের আশায় আদালতে মামলা করেছেন।’

এ বিষয়ে যশোরের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার সালাহউদ্দিন শিকদার বলেন, “অভিযোগটি পুরোপুরি মিথ্যা ও ভিত্তিহীন। পুলিশকে বেকায়দায় ফেলার জন্য একটি কুচক্রী মহল এ কাজটি করেছে। তারপরও আদালত যেহেতু তদন্তের নির্দেশ দিয়েছে, তদন্তে প্রকৃত ঘটনা বোঝা যাবে।”

কোতোয়ালি থানার পরিদর্শক (তদন্ত) আবুল বাশার মিয়া  বলেন, যেদিন সাইদ ও শাওনকে পুলিশ আটক করে তার আগের দিন (৪ এপ্রিল) রাতে যশোর শহরের টাউন হল মাঠে জনসমক্ষে পাপ্পা নামে এক যুবক খুন হন।

“ওই ঘটনায় দায়ের করা মামলায় মূল আসামি ছিলেন সাইদ ও শাওন। এছাড়া এরা আরও ১০/১১টি মামলার আসামি, যার মধ্যে ৫/৬টি হত্যা মামলা রয়েছে।”

তিনি বলেন, গত ৫ এপ্রিল সাইদ ও শাওনকে আটক করে পুরিশ। পরে তাদের নিয়ে পাপ্পা হত্যার অন্যান্য আসামিদের ধরতে শহরের শংকরপুরে অভিযানে যায় পুলিশ। তখন তারা পালিয়ে যান।

যশোর সিনিয়র জুডিশিয়াল ম্যাজিস্টেট আমলী আদালতের বিচারক শাহিনুর রহমান পিটিশনটি গ্রহণ করে এ ব্যাপারে তদন্ত করে প্রতিবেদন দাখিলের জন্য পিবিআইকে নির্দেশ দিয়েছেন।

অারএম


সম্পর্কিত খবর


সর্বশেষ সংবাদ