শনিবার, ২৩ নভেম্বর ২০২৪ ।। ৭ অগ্রহায়ণ ১৪৩১ ।। ২১ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

শিরোনাম :
কাল যাত্রাবাড়ী মাদরাসায় মজলিসে দাওয়াতুল হকের ইজতেমা শেখ হাসিনা ভারতে বসে দেশের বিরুদ্ধে চক্রান্ত করছেন: মজলিস মহাসচিব ডেঙ্গুতে এক সপ্তাহে ৩১ জনের মৃত্যু, আক্রান্ত ৬২৩০ মসজিদে নববীর আদলে হবে আন্দরকিল্লা শাহী জামে মসজিদ: ধর্ম উপদেষ্টা খাগড়াছড়ি প্রেস ক্লাবের সাধারণ সভা অনুষ্ঠিত নতুন নির্বাচন কমিশনকে বিগত কমিশন থেকে শিক্ষা নিতে হবে: মুফতী ফয়জুল করীম লালপুরে যুবলীগ নেতার বিরুদ্ধে জমি দখল ও বাড়ি ভাংচুরের অভিযোগ জনতার চেয়ারম্যান সৈয়দ তালহাকে সুনামগঞ্জ ৩ আসনে জমিয়তের প্রার্থী ঘোষণা কুরআন-হাদিসের ভিত্তিতেই হতে হবে সংস্কার: বায়তুল মোকাররমের খতিব ইসলামী সঙ্গীত সম্রাট আইনুদ্দীন আল আজাদ রহ.-এর বাবার ইন্তেকাল

‘হুজুর, আবার কীয়ের ইশটুডেন্ট’

নিউজ ডেস্ক
নিউজ ডেস্ক
শেয়ার

মীর হুযাইফা আল মামদূহ
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়

পাঞ্জাবি-পাজামা-টুপি, আর মুখে দাঁড়ি হলেই আমাদের ভাবনারা একটা গতি পেয়ে যায়, এ হলো "হুজুর"।

আর হুজুর মানেই পাড়াগাঁয়ের মসজিদের ইমাম, নামাজ পড়ায়, মানুষের বাড়িতে বাড়িতে দাওয়াত খেয়ে বেড়ায়, এই তো।

জানে না কিচ্ছু । কোন জ্ঞান গরিমা নাই, কুয়োর মধ্যে থাকে।

রাজাকার, দেশ বিরোধী। জঙ্গি। ধর্মে উন্মত্ত।

এরা কেবল ধর্ম-কম্ম নিয়েই থাকবে। বাদবাকি আর যা কিছু আছে, তাঁর সব অন্যদের জন্যে।

এই ব্যাপারটা ঠিক ছেলেবেলা থেকেই দেখে আসছি।

বাসের হেল্পার , “এই হুজুর, ভাড়াটা দেন”। "স্টুডেন্ট" বলতে চাইলে, “হুজুর, আবার কীয়ের ইশটুডেন্ট”।

এ তো গেল বাসের হেল্পার। তারপর আমি ক্রমশ সমাজের উপরের দিকে উঠব, ঠিক একই বক্তব্য পাব। ঘুরেফিরে।

আমি একটা জাতীয় দৈনিকের ফিচারে লিখি, বিভাগীয় সম্পাদক আমাকে দেখেই বলেছিলেন, “আপনাকে দেখেই ভয় পেয়ে গেছিলাম”।

হু, ভয়ের পরে জয়, তারপর আমি দিব্যি ফিচার করে যাচ্ছি ভাইয়ের পাতায়।

একটা অনলাইন নিউজ পোর্টালে কাজ করতাম, তাঁদের হয়ে এক মস্ত বাম নেত্রীর সাক্ষাৎকার নেব। আমার কথা বলে তারপর সম্পাদক বললেন, “আপা, ও একটু জুব্বা জাব্বা পরা, ভয় পায়েন না”। তারপর অবশ্য একটু লাজুক হয়ে আমাকে বললেন, “মানুষের ধারনা তো পালটায়নি, কী করবো, বলো!”

ক্লাসে, আমার মত করে কিছু করতে চাইলেই সহপাঠীরা প্রথমেই মনে করিয়ে দেয়, “এই তুই না হুজুর!”। এদের প্রায় প্রত্যেকেই আমার নাম ভুলে গিয়েছে। তাঁদের কাছে আমার নাম; হুজুর। আমার পিতৃপ্রদত্ত নামে আর ওরা ডাকে না আমাকে।

একবার জগন্নাথ হলে আমার এক বন্ধু, ওরও আমার মতই পোশাক, ঢুকতে গেলে দারোয়ান বাধা দিচ্ছিল, আর সবাই দিব্যি ঢুকছে তখন। ওকেই বাধা দিয়েছে, "হুজুর" বলে।

বইমেলায় আমি আর আমার দুই বন্ধু ঢুকছিলাম, পুলিশটা আমাকে দেখিয়ে বলল, “এই হুজুরটারে ভাল কইরা চেক কর”। আমার বন্ধুরা সেইবেলা পুলিশের দিকে তেড়ে গিয়েছিল, আমি অভ্যস্ত বলে মুচকি হাসছিলাম।

আমার প্রতিটা কাজেই আমাকে প্রথমেই একটা ক্যাটাগরিতে ফেলে দেওয়া হয়, আমার যোগ্যতা বিচারের আগেই। "হুজুর"।

বেশ অনেক আগে একদিন, কেন্দ্রীয় গ্রন্থাগার চত্বরে ঢুকলাম, কী একটা অনুষ্ঠান হচ্ছিল। বেশ ৪/৫ জন পুলিশ আমাকে ঘিরে ধরে পরিচয় জানতে চাইল, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় বলাতে তাঁদের আশাভঙ্গ হতে দেখেছি, নতুবা হয়ত ধরেও নিয়ে যেত। কেবল এই পোশাক বলেই।

এই পাঞ্জাবি, পাজামা এসব আমার নিজস্বতা। এ দেশে এটা ধর্মীয় পোশাকের মর্যাদা পেলেও ধর্মের কোনো নিজস্ব পোশাক বলে দেওয়া নেই। তবু সবাই ধরেই নিয়েছে এটাকে "ধর্ম" বলে। আর যদি ধর্ম হয়ও বা, তাতেও তো আপনি কাউকে তাকে মাপার আগেই বিচার করে ফেলতে পারেন না!

সাংবাদিকতায় পড়ি। টিভি সাংবাদিকতা করতেই চাইবো। আমার সেখানেও হয়ত বাদ পড়ে যেতে হবে, "হুজুর" বলে।

আমি জানি না।

মজার ব্যাপার হলো, আমাকে জাজ করবার পরও আমি যাদের সাথে মিশেছি কিংবা যারা আমার সাথে, সবাই নিজের ধারণাকে পালটেছে। আমাতে মুগ্ধতা এসেছে কমবেশি।

আপনিও, বিচার করা বাদ দিয়ে মিশেন এসব টুপি পাঞ্জাবিওয়ালার সাথে। ধারণা বদলাবেই। আপনি-ই তো পরিবর্তন। আপনাতেই তো পরিবর্তন।


সম্পর্কিত খবর


সর্বশেষ সংবাদ