মাওলানা আলী আযম
আলেম ও শিক্ষক
আল্লামা হাফেজ সুলাইমান আরমান (কাতেব) সাহেব হাটহাজারীর ঐতিহ্যবাহী মেখল গ্রামের খলিল চৌধুরী বাড়ীর এক সম্ভ্রান্ত দ্বীনদার পরিবারে ১৯২০ ইংরেজিতে জম্ম গ্রহণ করেন। তার বাবার নাম মরহুম অছি মিয়া।
তিনি প্রাথমিক দ্বীনি শিক্ষা দারুল উলুম হাটহাজারীতে সমাপ্ত করে উচ্চ শিক্ষার জন্য ভারতের উত্তরপ্রদেশে অবস্থিত দারুল উলুম দেওবন্দে ভর্তি হন এবং সেখান থেকে দাওরায়ে হাদীসের সর্বোচ্চ সনদ লাভ করেন।
পরবর্তীতে তিনি দারুল উলূম হাটহাজারীতে শিক্ষকতায় যোগদান করেন। তিনি শিক্ষকতা জীবনের পুরোটা সময় প্রায় ৬৫ বছর অত্র মাদরাসায় অতিবাহিত করেন এবং আজ দুপুরে মাদরাসাতে শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেন। ইন্নালিল্লাহি ওয়া ইন্না ইলাইহি রাজিউন।
তিনি আওলাদে রাসুল আল্লামা হোসাইন আহমদ মাদানী রহ. নিকট ইলমে হাদিসের জ্ঞান অর্জন করেন। বিশ্বস্ত সূত্রমতে তিনি আল্লামা হোসাইন আহমদ মাদানী রহঃ এর বিশেষ খলিফা ছিলেন। তবে তা তিনি কখনো প্রকাশ করেননি।
তিনি ছিলেন বহুগুণে গুণান্বিত। ছিলেন একাধারে বিদগ্ধ মাওলানা, হাফেজ, ক্বারী, টেলিগ্রাফার, আরবী, উর্দু, ফারসি ভাষা সাহিত্যিক। ছিলেন অত্যন্ত মিষ্টভাষী রসিক মানুষ।
হুজুরের সাথে কথা বলেছেন, অথচ হাসেননি এমন মানুষ খুব কমই পাওয়া যাবে। তাঁর প্রতিটি কথাতে ফুটে উঠতো পাণ্ডিত্য ও রসিকতা। তিনি তাঁর সন্তান এবং ছাত্রদের শিক্ষা দিয়েছেন কীভাবে শালীনতা বজায় রেখেও রসিকতা করা যায়। তাঁর কিছু রসিকতাপূর্ণ উক্তি ছাত্র-ভক্তদের মনে অবিস্মরণীয় হয়ে থাকবে।
তিনি সর্বদা ছিলেন প্রচার বিমুখ। আত্ম আহমিকা তাঁর মধ্যে দেখিনি কখনো। নিজেকে লুকিয়ে রেখেছিলেন সারাজীবন। সভা সমাবেশে মঞ্চে না ওঠা আর ওয়ায়েজ না হবার কারণে অত্র অঞ্চলের অনেক মানুষ তাঁকে চিনতেনই না।
তিনি নীরবে নিভৃতে সারাজীবন ইলমে দ্বীনি খেদমত আঞ্জাম দিয়ে গেছেন। তিনি ছিলেন না কোনো দলাদলিতে। মাদরাসায় নানান সময় নানান কারণে অন্যান্য অনেক শিক্ষকমণ্ডলী পক্ষে-বিপক্ষে অবস্থান নিয়ে বিতর্কে জড়ালেও কাতেব সাহেব হুজুর সবসময় ছিলেন বিতর্কের উর্ধ্বে।
ছিলেন সবার প্রিয় এবং শ্রদ্ধাভাজন। তিনি সবার সাথে সমান সু-সম্পর্ক বজায় রাখতেন। ছিলেন নির্ভেজাল সচ্চরিত্রের অধিকারী সফল পুরুষ। তাঁর ছেলেদের মধ্যেও দেখেছি সু-গভীর ভ্রাতৃত্ববোধ আর সৌহার্দ্যপূর্ণ সু-সম্পর্ক।
আল্লামা হাফেজ সুলাইমান আরমান কাতেব সাহেব রহ. ছিলেন দেশের একজন খ্যাতনামা বুজুর্গ ব্যক্তি, আদর্শ শিক্ষক, আদর্শ পিতা। তিনি ছাত্রদের উন্নত নৈতিক চরিত্র গঠনে সারা জীবন মেহনত করেছেন।
তিনি কুরআন-হাদিসের শিক্ষা বিস্তার এবং দ্বীনি খেদমতে সারা জীবন ত্যাগ-কুরবানী দিয়েছেন। তার লেখনীর নিপুণতা ইতিহাস হয়ে থাকবে। উম্মুল মাদারিসের প্রবেশপথ শাহী গেইটের অভ্যন্তর সাইটে ঠিক উপরে বড় অক্ষরে এখনো শোভা পাচ্ছে তাঁর সহস্তে লেখা تسرا لنا ظرين শব্দগুলি।
মৃত্যুকালে তার বয়স হয়েছিল ৯৭ বছর। তিনি ৮ ছেলে ৫ মেয়ে, নাতি নাতনীসহ অসংখ্য শাগরিদ, ভক্ত অনুরাগী রেখে যান। আজ থেকে তাঁর নামের শেষে লিখতে হচ্ছে "রহঃ"!
এমন মানুষ মিলবে না আর...!
হাটহাজারী মাদরাসার প্রবীণ মুহাদ্দিস মাওলানা সুলাইমান আরমানের ইন্তেকাল