বৃহস্পতিবার, ২৮ নভেম্বর ২০২৪ ।। ১৩ অগ্রহায়ণ ১৪৩১ ।। ২৬ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

শিরোনাম :
প্রাইমারি স্কুলে আলেম ধর্মীয় শিক্ষক বাধ্যতামূলক করতে হবে: মাওলানা ইসলামাবাদী বগুড়ায় ছাত্র আন্দোলনে আহত ও শহীদদের স্মরণে স্মরণসভা শেরপুরে ছাত্র-জনতার গণঅভ্যুত্থানে আহত ও শহিদদের স্মরণে স্মরণসভা শেরপুরে শেখ হাসিনাসহ ৫৯ জনের নামে মামলা কাল বাদ জুমা বায়তুল মোকাররমে হেফাজতে ইসলামের বিক্ষোভ প্রধান উপদেষ্টার সঙ্গে বৈঠক শেষে যা বললেন জামায়াত আমীর হজ নিবন্ধনের সময় বাড়ল ১৫ দিন রাষ্ট্রদ্রোহী সংগঠন চলতে দেয়া হবে না: মাওলানা আহমদ আলী কাসেমী ২২৫০০ কোটি নতুন টাকা ছাপিয়ে ৬ ব্যাংককে দিল বাংলাদেশ ব্যাংক দারুন্নাজাতের প্রাক্তন ছাত্র শিহাবউদ্দীনের আল আজহার থেকে এমফিল ডিগ্রি অর্জন

মাদ্রাসার পাঠ্যবই থেকে বাদ দেওয়া হচ্ছে জিহাদ অধ্যায়

নিউজ ডেস্ক
নিউজ ডেস্ক
শেয়ার

মানিক মিয়াজি: বাংলাদেশ মাদ্রাসা শিক্ষাবোর্ডের নতুন পাঠ্যবইয়ে জিহাদ শিক্ষা বিষয়ক কোনও অধ্যায় থাকছে না। গত চার দশকে এ বিষয়ে এটাই প্রথম উদ্যোগ।

আলিয়া বোর্ডের পাঠ্যবই থেকে জিহাদ সম্পর্কিত সব অধ্যায় বাদ দেওয়া হচ্ছে। ২০১৮ সালে এসব বই বিতরণ করা হবে শিক্ষার্থীদের মধ্যে।

বাংলাদেশ মাদ্রাসা শিক্ষা বোর্ডের একটি সূত্র জানিয়েছে, মাদ্রাসা শিক্ষা ব্যবস্থা নিয়ে বিতর্ক থাকায় পাঠ্যবই থেকে জিহাদ অধ্যায় বাদ দেওয়ার নির্দেশনা দিয়েছে সরকার। মাদ্রাসার পাঠ্যবইগুলোতে, ‘জিহাদ’ বলতে ইসলামের শত্রুদের বিরুদ্ধে সংগ্রাম বা যুদ্ধকে বোঝানো হয়েছে।

একটি সূত্র জানায়— জঙ্গি প্রতিরোধ বিষয়ক জাতীয় কমিটির ধারণা, মাদ্রাসার পাঠ্যবইয়ের কয়েকটি অধ্যায় শিক্ষার্থীদেরকে জঙ্গি কাজে সম্পৃক্ত হতে উদ্বুব্ধ করে। এর পরিপ্রেক্ষিতে চলতি বছরের ২৪ এপ্রিল মাদ্রাসা বোর্ডে একটি চিঠি দেয় স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়।

চিঠিতে মাদ্রাসার পাঠ্যবই থেকে জিহাদ শিক্ষা বিষয়ক সব অধ্যায় সরিয়ে ফেলার নির্দেশনা দেওয়া হয়। একইসঙ্গে কোরআন, হাদিস, সংবিধান ও জাতীয় বিষয়ে সাংঘর্ষিক সব বিষয় ও নিবন্ধ বাদ দিতে বলা হয়েছে।

যদিও জঙ্গিবাদকে উৎসাহিত করা হচ্ছে এমন অভিযোগ অস্বীকার করেছেন মাদ্রাসা শিক্ষা বোর্ডের প্রকাশনা বিভাগের নিয়ন্ত্রক মো. শাহজাহান।

তিনি বলেন, ‘আমরা শুনেছি স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তারা এ ধরনের অভিযোগ করেছেন। যাই হোক, যেসব বই নিয়ে প্রাথমিক মূল্যায়ন করা হচ্ছে সেগুলো মাদ্রাসা বোর্ডের নয়, বিভিন্ন বেসরকারি প্রতিষ্ঠান এসব জাল বই প্রকাশ করেছে। যদি কোনও প্রতিষ্ঠান মাদ্রাসা শিক্ষার্থীদের জন্য বোর্ডের অনুমোদন না নিয়ে গাইডবই প্রকাশ করে তাহলে তার দায় তাদের, আমাদের নয়।’

এদিকে মাদ্রাসার পাঠ্যবই পুনঃমূল্যায়নের জন্য আটটি রিভিউ কমিটি ও একটি সুপারভাইজরি কমিটি গঠনের নির্দেশ এসেছে।

গত ২৮ সেপ্টেম্বর শিক্ষা মন্ত্রণালয় থেকে সহকারী সচিব মো. খালেক মিয়া স্বাক্ষরিত এই আদেশ জারি করা হয়। প্রথম শ্রেণি থেকে পঞ্চম শ্রেণি পর্যন্ত ১৫টি বই পুনঃমূল্যায়নের দায়িত্ব পেয়েছে কমিটিগুলো। এছাড়া ষষ্ঠ শ্রেণি থেকে নবম শ্রেণি পর্যন্ত ২০টি পাঠ্যবই পর্যালোচনা করতে হবে তাদেরকে।

কমিটিগুলো আট ধরনের কাজ পেয়েছে। এর মধ্যে রয়েছে— আল কোরআন ও হাদিসের সঙ্গে সাংঘর্ষিক বিষয়গুলো সংশোধন কিংবা পুনঃমূল্যায়ন, জঙ্গিবাদে উদ্বুদ্ধ করে এমন বিষয় অথবা কোনও দল বা গোষ্ঠীর বিশ্বাসের সঙ্গে সাংঘর্ষিক অধ্যায় বাদ দেওয়া।

এছাড়া শিক্ষার্থীদের মূল্যায়নের চর্চার উন্নয়নে সংশ্লিষ্ট তথ্য, তত্ত্ব, আইডিয়া হালনাগাদের মাধ্যমে পাঠবইয়ের আধুনিকায়নে সহায়তা করবে কমিটিগুলো।

এ প্রসঙ্গে মাদ্রাসা শিক্ষা বোর্ডের চেয়ারম্যান একেএম সাইফ উল্লাহ বলেন, ‘জঙ্গি প্রতিরোধ বিষয়ক জাতীয় কমিটির সুপারিশ অনুযায়ী কোরআন-হাদিস, আরবী ও ফিকাহ’র ওপর পাঠ্যবইগুলো গভীরভাবে মূল্যায়ন করছি। যেসব অধ্যায়ে বিতর্কিত বিষয় রয়েছে, বিশেষ করে জঙ্গিবাদকে উৎসাহিত করা হয় এমন বিষয় শনাক্ত করে বাদ দেওয়া হবে।’

জাতীয় শিক্ষা নীতি ২০১০-এর কারিকুলাম অনুযায়ী, মূল্যায়নের পর আটটি কমিটি শিগগিরই সুপারভাইজরি কমিটির কাছে মাদ্রাসার পাঠ্যবইগুলোর চূড়ান্ত সংস্করণের একটি প্রতিবেদন জমা দেবে।

মাদ্রাসার পাঠ্যবই রিভিউ কমিটির এক সদস্য নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেন, ‘অষ্টম শ্রেণির ‘আল-আকাঈদ-উল-ফিকাহ’ নামের একটি পাঠ্যবইয়ে কয়েকটি বিতর্কিত অনুচ্ছেদ আছে। এছাড়া নামাজ, যাকাত, রোজা, হালাল রিজিক ও হজ বিষয়ে জিহাদের প্রকৃতি সম্পর্কে বিস্তারিত বলা আছে।

অভিযোগ রয়েছে, মাদ্রাসার পাঠ্যবইয়ের বিভিন্ন অধ্যায়ে ধর্মবিশ্বাসীদের মনে জিহাদের বীজ বুনে দেওয়া হচ্ছে। এর সঙ্গে ব্যক্তিগত জীবন, পরিবার, সমাজ, রাষ্ট্র, অর্থনীতি ও সংস্কৃতি জড়িত।

এসব বইয়ে উল্লেখ আছে— একজন ব্যক্তি মুখাবয়ব, কলম, ভূখণ্ড ও জীবিকার মাধ্যমে জিহাদের সঙ্গে যুক্ত। এছাড়া এসব বইয়ে কিতাল (সশস্ত্র সংগ্রাম) সম্পর্কেও আলোচনা করা হয়েছে।

যদিও বইগুলোতে উল্লেখ করা হয়েছে সন্ত্রাসবাদ, জঙ্গিবাদ, বোমা বিস্ফোরণ, খুন ও ভাঙচুর সৃষ্টিকর্তার চোখে বেআইনি কাজ।

নোয়াখালীর একটি আলিয়া মাদ্রাসার অধ্যক্ষ আব্দুল্লাহ ইউসুফ বলেন, ‘জিহাদ ও জঙ্গি কার্যক্রম সম্পূর্ণ ভিন্ন ধারণা। তাই শিক্ষার্থীদের যেন এই দুটি মতাদর্শের মধ্যে পার্থক্য করতে পারে, সরকারকে এমন একটি পরিষ্কার বার্তা দিতে হবে।’

হেফাজত-ই-ইসলামের সাধারণ সম্পাদক জুনাইদ বাবুনগরী বলেছেন, ‘মাদ্রাসা শিক্ষার পাঠ্যবই পুনঃমূল্যায়নের উদ্যোগ নিয়েছে সরকার। তবে আমি এর কোনও প্রয়োজনীয়তা আছে বলে মনে করি না। জিহাদ মানেই জঙ্গি কার্যক্রম নয়। তাছাড়া মাদ্রাসার সব শিক্ষার্থী ও শিক্ষকরা জঙ্গি কার্যক্রমে সম্পৃক্ত নয়।’

মাদ্রাসা শিক্ষা বোর্ডের চেয়ারম্যানের মতে, জিহাদ সম্পর্কিত সবকিছু বাদ দেওয়া হলেও ইবাদত তথা প্রার্থনা বিষযক আলোচনা ঠিকই থাকছে নতুন পাঠ্যবইয়ে। এছাড়া পাঠ্যবইয়ে আর কোনও বড় পরিবর্তন আসবে না।

মাদ্রাসা কারিকুলামে আছে মোট ৩৫টি পাঠ্যবই। এর মধ্যে গুরুত্বপূর্ণ বিষয়গুলো হলো ইংরেজি, গণিত, বাংলাদেশ ও বিশ্ব ইতিহাস, স্বাস্থ্য, গার্হস্থ্য বিজ্ঞান, রাসায়ন, জীব বিজ্ঞান, অর্থনীতি।

আলিয়া মাদ্রাসা শিক্ষা বোর্ড হিসেবেও পরিচিতি বাংলাদেশ মাদ্রাসা শিক্ষাবোর্ড। আলিয়াসহ বাংলাদেশে তিন ধরনের মাদ্রাসা শিক্ষা ব্যবস্থা চালু রয়েছে। অন্য দুটি হলো— কওমি ও হিফজ।

জানা গেছে, ১৯৭৯ সালে মাদ্রাসা শিক্ষা বোর্ড প্রতিষ্ঠার পর অষ্টম থেকে ডিগ্রি শ্রেণির পাঠ্যবইতে সংযুক্ত করা হয় জিহাদ অধ্যায়।

সূত্র: বাংলা ট্রিবিউন


সম্পর্কিত খবর


সর্বশেষ সংবাদ