শুক্রবার, ২৯ মার্চ ২০২৪ ।। ১৫ চৈত্র ১৪৩০ ।। ১৯ রমজান ১৪৪৫


‘জমিয়তে অনিয়ম চলছে, পরিণতি কী হবে সেটা সময়ই বলে দিবে’

নিউজ ডেস্ক
নিউজ ডেস্ক
শেয়ার

আলেমদের প্রাচীন সংগঠন জমিয়তে উলামায়ে ইসলাম বাংলাদেশে চলছে অস্থিরতা। এসব নিয়ে দলের নির্বাহী সভাপতি প্রবীন রাজনীতিক মুফতি মুহাম্মদ ওয়াক্কাস ‘জমিয়ত সুরক্ষা’ নামে একটি কমিটি করেছেন।

গঠনতন্ত্র সংস্কার, নির্বাহী সভাপতির পদ বাতিল ও ভিন্ন দল থেকে নতুন কয়েকজন নেতার অন্তর্ভুক্তিকে কেন্দ্র করে চলা এ সংকট নিয়ে গত সপ্তায় আওয়ার ইসলামের সঙ্গে কথা বলেছেন দলটির মহাসচিব জামিয়া মাদানিয়া বারিধারার প্রিন্সিপাল আল্লামা নূর হোসাইন কাসেমী।

একই বিষয়ে আজ প্রকাশ হলো নির্বাহী সভাপতি সাবেক মন্ত্রী মুফতি মুহাম্মদ ওয়াক্কাসের সাক্ষাৎকার।

সাক্ষাৎকার নিয়েছেন আওয়ার ইসলামের সম্পাদক হুমায়ুন আইয়ুব।

আওয়ার ইসলাম: জমিয়তে উলামায়ে ইসলামের রাজনৈতিক দর্শনটা কি?

মুফতি মুহাম্মদ ওয়াক্কাস: হজরত শাহ ওয়ালি উল্লাহ মুহাদ্দিস দেহলভি রহ. ও শায়খুল হিন্দ রহ. এর আদর্শ, চিন্তা-চেতনা ও দর্শন। এক কথায় বলতে গেলে আহলুস সুন্নাহ ওয়াল জামাতের আকিদা-বিশ্বাসই জমিয়তের জমিয়তের রাজনৈতিক দর্শন।

আওয়ার ইসলাম: রাষ্ট্রব্যবস্থা সম্পর্কে দৃষ্টিভঙ্গি কি?

মুফতি মুহাম্মদ ওয়াক্কাস: আহলুস সুন্নাহ ওয়াল জামাতের কথা বললাম। কারণ, সব জয়গায় তো ইসলামি রাষ্ট্রের দাবি করা যায় না। যেমন, ভারত ও ইংল্যান্ড জমিয়ত। তারা তো রাষ্ট্রের কথা বলতে পারবে না।

আওয়ার ইসলাম: আপনি ২৪ বছর জমিয়তের মহাসচিব ছিলেন। এ সময়ের সাফল্য ও ব্যর্থতা বৃত্তান্ত শুনতে চাই।

মুফতি মুহাম্মদ ওয়াক্কাস: আমি প্রথমে জমিয়তে ছিলাম। পরে স্বতন্ত্র নির্বাচন করি। জমিয়তের মুরব্বিগণ পরামর্শ করে আমাকে যোগ দান করতে বলেন। তখন ১৯৯১ সালে আমি জমিয়তে যোগদানের পরপরই সারা দেশে সফর করে সংগঠনকে মজবুত করি। এরপর আরজাবাদে কাউন্সিল হয় এবং আমাকে মহাসচিবের দায়িত্ব দেয়া হয়।

জমিয়তের দায়িত্ব নেয়ার পর প্রথমেই আমি জমিয়তকে ঢেলে সাজানোর উদ্যোগ নেই। জমিয়তে ছাত্র ও যুব সংগঠন ছিলো না। আমি জাতীয় পার্টির অভিজ্ঞতা কাজে লাগিয়ে তা গঠন করি।

২০০১ নির্বাচনের আগে সারাদেশ সফর করে গণজাগরণ তৈরি করলাম। যদিও তা ইসলামী আইন বাস্তবায়ন কমিটির ব্যানারে ছিলো।

জমিয়তের জাতীয় ও আন্তর্জাতিক মহাসমাবেশের আয়োজন করেছি। ভারত ও পাকিস্তান সফর করলাম। দেশে-বিদেশে জাগরণ তৈরি হলো। বাংলাদেশ জমিয়ত আন্তর্জাতিক পর্যায়ে স্বীকৃতি লাভ করে।

আওয়ার ইসলাম: কোনো ব্যর্থতা আছে কি?

মুফতি মুহাম্মদ ওয়াক্কাস: ইচ্ছে করে কোনো ভুল করি নি। অনিচ্ছায়ও বড় কোনো ভুল হয়েছে বলে মনে করি না। আমি চেষ্টা করেছি উলামায়ে দেওবন্দের আদর্শ সমোন্নীত করার চেষ্টা করেছি।

আওয়ার ইসলাম: জমিয়তকে আপনি কী দিয়েছেন?

মুফতি মুহাম্মদ ওয়াক্কাস: আমি প্রথম বছরই পঞ্চাশ জেলায় কমিটি গঠন করেছি। সারাদেশের আকাবির উলামাকে জমিয়তের প্রতি আস্থাবান করেছি। সবাই আমার জন্য দোয়া করেছেন, সহযোগিতা করেছেন।

জাতীয় নেতৃত্বে স্থান করে নিয়েছে আমার সময়ে। শুধু চারটি জেলায় তিন পার্বত্য জেলা ও চাঁপাইনবাবগঞ্জ সফর করা হয় নি। বাকি সব জেলায় গেছি।

আওয়ার ইসলাম: চারদলীয় জোটে থাকার সময় আপনারা উলামায়ে কেরাম ও কওমি মাদরাসার জন্য কী করেছেন?

মুফতি মুহাম্মদ ওয়াক্কাস: আসলে চারজন এমপি নিয়ে জাতীয় পর্যায়ে বড় ভূমিকা রাখার সুযোগ ছিলো না। সে সময় থেকেই তো আমরা কওমি শিক্ষা সনদের স্বীকৃতির কাজ করেছি। কিন্তু সরকারের ভেতরের ও বাইরের কিছু মানুষের জন্য তার সফল সমাপ্তি হয় নি। তারা স্বীকৃতি হোক চায় নি।

রেজ্জাকুল হায়দার ও মোখলেছ সাহেব উলামায়ে কেরামের ঘাড়ে সওয়ার হয়ে শেষ পযন্ত সব নষ্ট করলো। খালেদা জিয়া সরকার যে গেজেট হলো তাও অসম্পূর্ণ। কারণ সেখানে বলা হয় করবে।

আমার মনে হয়, তারা উলামায়ে দেওবন্দকে বিভক্ত করার ষড়যন্ত্র করেছিলো। কওমি মাদরাসাকে জঙ্গি ঘাঁটি প্রমাণিত করার চেষ্টা হয়েছিলো। সেটা বন্ধ করা গেছে।

আওয়ার ইসলাম: ফতোয়ার রায়, কওমি মাদরাসার স্বীকৃতি, মালিবাগের চার শহীদের হত্যার বিচার কোনো হয় নি। এ জায়গাটা স্পষ্ট করবেন?

মুফতি মুহাম্মদ ওয়াক্কাস: বিষয়গুলো রাজনৈতিক। কিছুটা আদালতের ব্যাপার। যেগুলো আমাদের এখতিয়ারে ছিলো না। যেমন ফতোয়া বিরোধী রায়। সেটা আমাদের কী করার ছিলো?

আওয়ার ইসলাম: জোট সরকারের সময় আপনাদের এক সাথে বসতে দেখি নি।

মুফতি মুহাম্মদ ওয়াক্কাস: আমি, মুফতি আমিনী ও শাহীনূর পাশা এক সাথে ছিলাম। শহিদ সাহেব দূরে দূরে থাকতেন। সেটা তিনি ভালো বলতে পারবেন।

আওয়ার ইসলাম: জমিয়তের সাম্প্রতি অস্থিরতা সম্পর্কে আসি!
মুফতি মুহাম্মদ ওয়াক্কাস: কি অস্থিরতা? কোনো অস্থিরতা নেই। দুঃখ আছে। আমি দুঃখ নিয়ে দেখছি কি হচ্ছে।

আওয়ার ইসলাম: এখন যা হচ্ছে তার ব্যাখ্যা কি?

মুফতি মুহাম্মদ ওয়াক্কাস: হেফাজতে আন্দোলনের আগে কাসেমী সাহেবসহ কেউ কেউ বললেন, ভিন্ন প্লাটফর্ম তৈরি করে আন্দোলন করবো। আমি বললাম, আল্লামা আহমদ শফীর প্লাটফর্মই আমাদের প্লাটফর্ম। ওই পর্যন্তই আমার নিয়ন্ত্রণ ছিলো।

৬ মে অনেকে বসে থাকতে চেয়েছেন। রাত যাপনের ইচ্ছা করলো। আমি রাত যাপনের বিপক্ষে ছিলাম। তখন কিছু লেনদেন সংক্রান্ত বিষয়ও শুনলাম। এরপর আমার সেখানে থাকতে মন চায়নি।

আমার চিন্তা হলো, অরাজনৈতিক সংগঠন কেনো সরকার পরিবর্তনের দাবি করতে পারে না। আমার বিশ্বাস, এটা উলামায়ে দেওবন্দের রাজনৈতিক সম্ভাবনাকে হত্যা করার ষড়যন্ত্র ছিলো। কিন্তু কাসেমী সাহেবকে সেটা বলার পরও তিনি থেকে গেলেন।  তখন থেকে মতভিন্নতার শুরু।

আওয়ার ইসলাম: সেই ঢেউয়েই কি জমিয়তের অস্থিরতা?

মুফতি মুহাম্মদ ওয়াক্কাস: সেটা বলতে পারবো না। তবে এরপর আমি জেলে চলে যাই। জেলে যাওয়ার পর গঠনতন্ত্র পরিবর্তন করা হলো। অথচ এ গঠনতন্ত্র ভারত, পাকিস্তান ও বাংলাদেশের প্রেক্ষাপট বিবেচনা করে বহু কাঠখড়ি পুড়িয়ে করা হয়। তারা আমাকে না জানিয়েই দলের গঠনতন্ত্র পরিবর্তন করলো।

নতুন যারা আসলো তাদের কথা আমাকে জানানো হলো না। গঠনতন্ত্রে সুযোগ না থাকার পরও তাদের পদায়ন করা হলো। আমি জেল থেকে বের হওয়ার পর আরজাবাদে আমেলার মিটিং ছিলো। আমি সে মিটিং তাদের পদায়নের প্রতিবাদ করি।

এরপর কাউন্সিল হবে। কাউন্সিল প্রস্তুতি কমিটি গঠন করা হবে। সেখানেও কোনো পরামর্শ ছাড়াই ইউসুফীকে রাখা হলো। কাউন্সিলের কার্ড করা হলো। সেখানেও আমার সাইন নেই। কাসেমী সাহেব ও সভাপতির সাইন।

নির্বাহী সভাপতি নিয়েই দলে এত অস্থিরতা। অথচ দলে এর আগে নির্বাহী সভাপতি ছিলেন শামসুদ্দিন কাসেমী। এরপর আশরাফ আলী বিশ্বানাথী এবং মুহিউদ্দীন খান। মোস্তফা আজাদ সাহেবও ছিলেন। এবার নির্বাহী সভাপতি করার পর ভিন্নতা দেখা দিল।

নির্বাচন নিয়ে প্রেসিডেন্টের সঙ্গে সাক্ষাতে যাওয়ার সময় ওদের টার্গেট ছিলো হবিগঞ্জী সাহেবকে দলপতি করবেন। কিন্তু নির্বাহী হিসেবে আমাকে প্রেসিডেন্টের বাম পাশে চেয়ার দিয়েছে। আমার সঙ্গে কথা বলছেন রাষ্ট্রপতি।

রাষ্ট্রপতির সঙ্গে আগ থেকেই আমার পরিচয়। আমি যখন ১৯৮৬ সালে এমপি তখন তিনিও এমপি। নির্বাহী সভাপতির মূল্যায়ন হয়ে গেলো। এটা তাদের মনোঃপুত হয় নি। তখন থেকে নির্বাহী সভাপতি পদ বাতিলের চিন্তা।

গঠনতন্ত্র সংশোধনের বিষয়ে আমেলার বৈঠক হয়। সেখানে আমিসহ কয়েকজন সদস্য বাড়ানো হয়। গঠনতন্ত্র হিসেবে সে কমিটিতে নির্বাহী সভাপতি থাকবেন তিনিই তার সভাপতিত্ব করবেন। কিন্তু জহিরুল হক ভূইয়া সভাপতিত্ব করেন।

আমাকে একদিন বলার পর আমি বলি এ মিটিং আপনি ডাকছেন কেনো?  আমি ডাকবো। গঠনতন্ত্র একবার সংশোধন করা হলো কিন্তু কাউন্সিলে পাশ হলো না। কমিটির সদস্য বাড়িয়ে আবার সংশোধন করা হলো।

আমি বললাম, আমাদের কাউন্সিলের অনেক বাকি। আমরা ধীরে সুস্থে এগুলো করবো। কিন্তু আর কোনো মিটিং না করেই তারা তারা মিলে পরিবর্তন করে আমেলায় পাশ করলো।

আমি সদর সাহেব (শায়খ আবদুল মুমীন) ও কাসেমি সাহেবকে বললাম এটা আমেলায়ও পাশ কইরেন। কারণ একটা গঠনতন্ত্রের অনেক টেকনিক্যাল দিক থাকে। কিন্তু ওনারা পাশ করে নিলেন। আমিসহ অনেকে ভেটো দিলেন কাজ হলো না।

কাউন্সিলে আমাদের ভাইটাল কর্মীকে বাদ দেয়া হলো। শায়খে কোড়িয়ার ছেলে, শায়খে বাঘার ছেলে, মৌলভি বাজারের মাওলানা মনসুর সাহেব, মাহমুদ ফায়েক আরও অনেকজন বাদ গেলেন। আরও অনেকে বাদ গেলেন।  এমন সব মানুষদের নিয়ে কমিটি হলো যাদের আমরা ঠিক মতো চিনিও না।

আওয়ার ইসলাম: আপনার ভাষ্য মতে, মহাসচিব থাকাবস্থায় আপনাকে দুর্বল করে দেয়া হয়। আবার নির্বাহী হওয়ার পর আপনাকে দুর্বল করে দেয়ার জন্য গঠনতন্ত্র সংশোধন করা হয়।

মুফতি মুহাম্মদ ওয়াক্কাস:  নির্বাহী সভাপতি পদ বাতিল যেদিন করা হয়, সেদিন কাসেমী সাহেব ঘোষণা দেন মুফতি সাহেব এ টার্ম নির্বাহী সভাপতি থাকবেন। মোস্তফা আজাদ সাহেবও বলেছেন।

আওয়ার ইসলাম:  যে দুই বার গঠনতন্ত্র প্রস্তুতি কমিটির মিটিং হয়েছে। একবার আপনাদের বলা হয়েছে,  কোনো সংশোধনী থাকলে তা এক মাসের ভেতর জমা দিতে ….

মুফতি মুহাম্মদ ওয়াক্কাস:  ওটা তো অবৈধ মিটিং ছিলো। নির্বাহী হিসেবে কমিটির সভাপতি আমি। আমি বৈঠক আহবান করবো। ওখানে আমার কোনো স্বাক্ষর আছে?

আওয়ার ইসলাম:  আছে, আপনি মিটিংয়ে ছিলেন।

মুফতি মুহাম্মদ ওয়াক্কাস: মিটিংয়ে ছিলাম। মিটিংয়ে থাকা এবং উপস্থিতির স্বাক্ষর এক কথা আর সাব-কমিটির সদস্য হিসেবে স্বাক্ষর দেয়া আরেক কথা। ওটা আমি করি নি। আমি শুধু বৈঠকে উপস্থিতির স্বাক্ষর করেছি। কোনো আইন পাশের নয়।

আওয়ার ইসলাম: ওই মিটিংয়েই তো গঠনতন্ত্র পাশ হয় …?

মুফতি মুহাম্মদ ওয়াক্কাস: পাশ হয় কিন্তু আমি তার প্রতিবাদ করি। বলি, এটা পাশ না করতে। আমি আহবায়ক। আমি মিটিং আহবান করি নি। সেই মিটিং বৈধ হয় কি করে।

আওয়ার ইসলাম: আপনি উপস্থিত থাকার পরও বৈঠক অবৈধ?

মুফতি মুহাম্মদ ওয়াক্কাস:  কারণ আমি তো সাব-কমিটির আহবায়ক হিসেবে মিটিং আহবান করি নি। বরং আমি বলেছি, আপনারা গঠনতন্ত্র সংশোধনী পাশ করবেন না।

[এরপর তিনি ডকুমেন্টস দেখান। যেখানে তাকে বিভিন্ন সময় বিভিন্ন নামে সম্বোধন করা হয়েছে।]

তিনি বার্ষিক কাউন্সিল আহবান করলেন। আমি বললাম, গঠনতন্ত্র উত্থাপন করবেন না। তিনি করলেন, আমি তাতে গেলাম না। মাত্র বারো জেলার নেতা কর্মী আসে কাউন্সিলে।

কাসেমী সাহেব আগে বললেন, মুফতি সাহেব ৩ বছর নির্বাহী সভাপতি থাকবেন। আবার কাউন্সিলে গঠনতন্ত্র পাশ করলেন। বললেন, নির্বাহী সভাপতি পদ বাদ।

আওয়ার ইসলাম:  তাহলে কি বলা যায়, সাংবিধানিক অধিকার (পদ-পদবি) না পাওয়ার জন্যই …?

মুফতি মুহাম্মদ ওয়াক্কাস:  পদ-পদবি না। আমরা কখনো আমাদের মুরব্বিদের ওভারটেক করি নি। আমার মনে হয়, কেউ হাদিসের ইমাম হয়ে ফিকহি ইমামের পদ দখল করতে চান তাহলে সেটা ভুল।

আওয়ার ইসলাম: আপনি জমিয়ত সুরক্ষা কমিটি কেনো করেছেন?

মুফতি মুহাম্মদ ওয়াক্কাস: কর্মীদের দলের অবস্থা সম্পর্কে জানাতে এবং সদর সাহেবের কাছে যাওয়ার জন্য।

আওয়ার ইসলাম: গঠনতন্ত্রের কোন ধারা অনুযায়ী আপনি সুরক্ষা কমিটি করলেন?

মুফতি মুহাম্মদ ওয়াক্কাস: গঠনতন্ত্র কোনো বিষয় না। এ কমিটি করা হয়েছে অনিয়ম রোধ করার জন্য। আমরা অনিয়ম ঠেকাতে সদর সাহেবের কাছে যাচ্ছি। দলের বর্তমান অবস্থা সব কর্মীর জানার অধিকার আছে। সে অধিকারের ভিত্তিতে এ সুরক্ষা কমিটি করা হয়েছে।

আওয়ার ইসলাম: আপনি তো এখনো নির্বাহী সভাপতি আছেন। সভাপতির কাছে যাওয়ার জন্য আলাদা কোনো সুরক্ষা কমিটির প্রয়োজন আছে কী?

মুফতি মুহাম্মদ ওয়াক্কাস: আছে। আমাদের কর্মীদের জানার অধিকার আছে দলে কী হচ্ছে। এ কমিটি সারা দেশে সফর করবে। আমি নিজেই সফর করবো। আমাদের কর্মীদের জানাবো কি ঘটছে।

প্রত্যেক জেলায় যরা দীর্ঘদিন যাবৎ জমিয়তের কাজ করেছেন তাদের সবাইকে জানাবো। সদর সাহেব (সভাপতি) যদি বিষয়ের সমাধান করেন; আমরা আশা করি তিনি সমাধান করবেন।

এ সফর এজন্য প্রয়োজন যেনো অপপ্রচার রোধ করা যায়। বিভিন্ন মহল কতো প্রকার অপপ্রচার করে। আমার কাছ থেকে শোনার পূর্বে আপনি অনেক কথা শুনে থাকবেন। কিন্তু আমার মনে হয় না, এ কাজ কেউ সুস্থ মস্তিষ্ক নিয়ে করতে পারে। সাংবিধানিকভাবেও এগুলো করার সুযোগ নেই।

আওয়ার ইসলাম: সভাপতির কাছে দাবি জানিয়েছেন, সাধারণ সম্পাদক ও সাংগঠনিক সম্পাদকের অব্যহতির দাবি করেছেন। যদি তারা পদত্যাগ না করেন তাহলে কী করবেন?

মুফতি মুহাম্মদ ওয়াক্কাস:  এ বিষয়ে এখনই কিছু বলা যাবে না। সভাপতি আমাদের মুরব্বি। তার কাছে আমরা দাবি নিয়ে যেতেই পারি। আমাদের তো আর জায়গা নেই।

আওয়ার ইসলাম: সভাপতির সিদ্ধান্ত…

মুফতি মুহাম্মদ ওয়াক্কাস: উনি আগে একটা সিদ্ধান্ত দিক। উনার সিদ্ধান্ত আমরা বিভিন্ন অঞ্চলের কর্মীদের জানাবো।

আওয়ার ইসলাম:  সভাপতির সিদ্ধান্ত আপনার মানবেন কি না?

মুফতি মুহাম্মদ ওয়াক্কাস: এ পর্যন্ত যা কিছু হয়েছে তা শোনে। একটু সময় দেন। নির্বাচন কমিশনে যাওয়া লাগবে। চিঠি আসছে মহাসচিবের নামে। চিঠি রিসিভ করে রেজাউল করিম। এ চিঠি নিয়ে আমি, রেজাউল করিম ও মহিউদ্দিন সদর সাহেবের কাছে গেলাম। বললাম, আপনি সভাপতি আপনি তালিকা ঠিক করে দেন। কারা কারা যাবে।

তিনি বললেন, আপনারা পরামর্শ করে ঠিক করেন। বক্তব্য? বক্তব্য ঠিক করেন। মহিউদ্দীন ইকরাম ও শেখ মতিন এদের নাম অন্তর্ভূক্ত হওয়া প্রয়োজন। তিনি বললেন, কাসেমী সাহেবকে আমাদের কথা বলবেন। আমি বললাম হুজুর বলেছেন এদের নাম অন্তর্ভূক্ত করার জন্য। ওখানে যেয়ে দেখলাম তালিকা এসব লোক নেই।

আমি যে সদর সাহেবের কাছে গেলাম। আমি নির্বাহী সভাপতি আছি। সদর সাহেবও বলেন মুফতি সাহেব নির্বাহী সভাপতি আছেন। বারোজন লোকের নাম আসছে তালিকায়। সদর সাহেব দুটো লোকের নাম দেয়ার কথা বলেছেন শেষ পর্যন্ত দেখি তাদের নাম নেই। সদর সাহেবের কাছ থেকে এই রেজাল্ট পেলাম।

আওয়ার ইসলাম: ইসির চিঠি আসলো মহাসচিবের নামে। সে চিঠি আপনি হোল্ড করলেন কেনো?

মুফতি মুহাম্মদ ওয়াক্কাস:  নির্বাহী সভাপতি হিসেবে তা রাখার ও দেখার অধিকার নেই?

আওয়ার ইসলাম: অবশ্যই আছে। তবে চিঠি যেহেতু মহাসচিবের নামে এসেছে … সেটা সভাপতি পর্যন্ত টেনে নিয়ে যাওয়া …?

মুফতি মুহাম্মদ ওয়াক্কাস: আমার অধিকার নেই? অবশ্যই আছে। আমি নিয়ে গেছি কারণ আমি জানি এ লোকগুলোর জায়গা হবে না। এ খেলা হয়েছে অতীতে। আমি তো আমার বড়র কাছে গেছি। সভাপতির কাছে গেছি। বাইরের কারো কাছে তো যাই নি।

আওয়ার ইসলাম: মহাসচিবের কাছে গেলে কি সুন্দর হতো না?

মুফতি মুহাম্মদ ওয়াক্কাস: সভাপতি যেটা বললেন তাই তো মানলো না। আপনি দেখছেনটা কি!

আওয়ার ইসলাম: রেজুলেশনে আপনার ২৪ বছরের মহাসচিবকালের হিসেবের ব্যাপারে লেখা হয়েছে, দায়মুক্তি দেয়া হলো!

মুফতি মুহাম্মদ ওয়াক্কাস: এটা ঠিক হয় নি। কারণ, আমাদের সময়ে নিয়মিত কোনো চাঁদা আসতো না। আমি ব্যক্তিগতভাবে যোগাযোগ করে ভাড়াটা পরিশোধ করতাম। আমি উল্লেখ করতে চাই নি চাঁদাটা কোথায় থেকে আসতো। ইংল্যান্ডে আমাদের এক ভাই আছেন। তিনি মাঝে মাঝে ভাড়া বাবদ টাকা দিতেন। আমি বিষয়টি উল্লেখ করতে চাই নি।

আওয়ার ইসলাম: ২৪ বছর কোনো আয়-ব্যয় ছিলো না?

মুফতি মুহাম্মদ ওয়াক্কাস: ক্যাশিয়ার ছিলেন কারী আবদুল খালেক সাহেব। তার কাছে টাকা আসতো। আমার কাছে কোনো টাকাই জমা হয় নি। আমি চেয়ে-চিন্তে অফিস ভাড়া যোগার করতাম। বাকিটা নিজের গাটের টাকা খরচ করতাম। আমাদের কাছে কোনো জমা নেই। সর্বশেষ ইলেকশনের আগে বিশ-ত্রিশ হাজার টাকা জমা হয়েছিলো। সেটার হিসেব আমার কাছে।

আওয়ার ইসলাম: আপনি তো নির্বাচনের প্রস্তুতি নিচ্ছেন?

মুফতি মুহাম্মদ ওয়াক্কাস:  একথা আমি এখন পর্যন্ত কাউকে বলি নি।

আওয়ার ইসলাম: মানসিকভাবে প্রস্তুত?

মুফতি মুহাম্মদ ওয়াক্কাস: কিভাবে বলবো? পরিবেশ হলে দেখা যাবে। মানসিক প্রস্তুতি আমি ততো তাড়াতাড়ি নেই না। বৃষ্টি না হতেই ছাতা ধরা লোক আমি না। ইলেকশন ঘোষণা, জোটের সিদ্ধান্ত হবে তারপর দেখা যাবে। এলাকায় আমার জোটের লোকজন প্রস্তুত আছে। আমার আগাম কিছু বলার দরকার নেই।

আওয়ার ইসলাম:  গুঞ্জন শোনা যাচ্ছে জমিয়ত ভেঙ্গে আপনারা কয়েকটি ইসলামি দল মিলে আওয়ামী লীগের সাথে নির্বাচনে যাচ্ছেন!?

মুফতি মুহাম্মদ ওয়াক্কাস: এগুলো শয়তানের ছোয়ালরা বলে বেড়াচ্ছে। এ জাতীয় কোনো বিষয়ে কোনো কথা হয় নি। হাদিসে আছে না শয়তানের কথা।

আওয়ার ইসলাম: আপনার দাবি মানা না হলে জমিয়তে অস্থিরতা দেখা দেবে। সেটা তো ভাঙ্গসেও রূপ নিতে পারে?

মুফতি মুহাম্মদ ওয়াক্কাস:  আমি যদি ধীরে না চলতাম তাহলে ইসির সংলাপের দিনই আলাদা হয়ে যেতাম।

আওয়ার ইসলাম: সুযোগ ছিলো?

মুফতি মুহাম্মদ ওয়াক্কাস: এখনো আছে। মুফতি ওয়াক্কাস যে কর্মী তৈরি করেছে। এখনো মাঠে নামলে দেখা যাবে কতো ধানে কতো চাল।

আওয়ার ইসলাম: জমিয়ত ভাঙ্গা বা নতুন সংগঠন করার ইচ্ছে…?

মুফতি মুহাম্মদ ওয়াক্কাস: আমার মাথায় এখনো কিছু নেই। সদর সাহেব আমাদের টার্গেট। সারা দেশে কাজ করবে সুরক্ষা কমিটি। তারা মানুষকে সচেতন করবে। এরপর কি হবে, না হবে সেটা সময় বলে দিবে।

আওয়ার ইসলাম: আপনার বিরুদ্ধে অভিযোগ শুনি কর্মী নিয়ে চলতে পারেন না। রাগারাগি করেন।

মুফতি মুহাম্মদ ওয়াক্কাস:  তাহলে মানুষ আমার কাছে কেনো আসে? আমার পাশে থাকে কেনো? ভোটাররা ভোট দেয় কেনো? মুফতি আবদুর রহমান সাহেব আসলেন। আমি সিলেটে গিয়েছি।

আঙ্গুরার নাজেম সাহেবের কাছে। তার কামরায়। আমি বলেছি, আপনি ব্যবস্থা করেন। আমার, কাসেমী সাহেব ও মোস্তফা আজাদ সাহেবের পরামর্শে জমিয়ত চলবে। আমি কি খারাপ কথা বলেছি?

আওয়ার ইসলাম: আপনাদের তো এক হওয়ার সুযোগ আছে। এক হচ্ছেন না কেনো?

মুফতি মুহাম্মদ ওয়াক্কাস: ওনাদের জিজ্ঞেস করেন। উনি কি কখনো ডেকেছেন?

আওয়ার ইসলাম: ওনারা তো দাবি করেন কোনো দূরত্ব নেই?

মুফতি মুহাম্মদ ওয়াক্কাস: কাগজে কলমে তামাশা দেখালাম না? আমি জেলে থাকতে উনারা গঠনতন্ত্র পাল্টে ফেলবেন। আমাকে একবার এ সভাপতি, আবার অন্য সভাপতি! এটা কি মাদরাসা?

আওয়ার ইসলাম: সারাদেশের নেতাকর্মীদের প্রতি আপনার নির্দেশনা কি?

মুফতি মুহাম্মদ ওয়াক্কাস: তাদের কাছে যা ঘটছে তা তুলে ধরা হবে। এরপর সদর সাহেবের কাছ থেকে কী ফল আসে তাও তাদের জানানো হবে। তারা সব বুঝে সিদ্ধান্ত নিবে।

‘জমিয়ত সঠিক নিয়মেই চলছে; দলীয় ফোরাম ছাড়া কোনো সিদ্ধান্ত গৃহিত হবে না’


সম্পর্কিত খবর


সর্বশেষ সংবাদ