শনিবার, ২৭ এপ্রিল ২০২৪ ।। ১৪ বৈশাখ ১৪৩১ ।। ১৮ শাওয়াল ১৪৪৫


কারাবন্দী মেয়ের প্রতি আল্লামা কারজাভির হৃদয়স্পর্ষী চিঠি

নিউজ ডেস্ক
নিউজ ডেস্ক
শেয়ার

মুজাহিদুল ইসলাম
অনুবাদক, আন্তর্জাতিক ডেস্ক

মুসলিম বিশ্বের অন্যতম শীর্ষ আলেম ও জ্ঞানতাপস শায়খ ইউসুফ আল কারজাভি বর্তমানে নির্বাসনে রয়েছেন। মিসরের ইসলামি দল ইখওয়ানুল মুসলিমিনকে সমর্থন করায় তার বিরুদ্ধে গ্রেফতারি পরোয়ানা জারি করেছে মিসরের সামরিক সরকার। জান্তা সরকারের নির্যাতন এড়াতে কাতারে আশ্রয় নিয়েছেন তিনি।

কিন্তু এখন তার উপর ক্ষোভ মেটাতে না পেরে তার পরিবারকে বেছে নিয়েছে অত্যাচারী আবদুল ফাত্তাহ সিসি। কারাবারে আটকে রেখেছে তার কন্যা উলা ও তার স্বামী হিসাম খালাফকে। কারাগারে ১০০ শত দিন অতিবাহিত হওয়া উপলক্ষে একখোলা চিঠি দেন মিসরের এ জীবন্ত কিংবদন্তী।

সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে প্রকাশিত সে চিঠিটি আওয়ার ইসলামের পাঠকদের জন্য তুলে ধরা হলে একটু সংক্ষেপিত রূপে।

আমার কন্যা উলা এর প্রতি
আমার মেয়ে! আমি প্রিয় উলা! আমার কলিজার টুকরা! আমার হৃদয়! আমার কন্যা!! তুমি আছো আমার পুরো হৃদয়জুড়ে, আমার সবটুকু ভালোবাসা, আমার সব কিছু তোমার জন্য।

আমার প্রিয় কন্যা! অত্যাচারীর কারাগারে ১০০ দিনের বেশী তুমি রয়েছো। নির্যাতিতের উপর অত্যাচারীর অত্যাচারের সময়টা বড্ড দীর্ঘই! এমনকি দিন বছর সমান! ইনশাআল্লাহ অত্যাচারের এই দিন শেষ হবে। তুমি ও তোমার স্বামী তোমার বাড়িতে, তোমার পরিবারের কাছে নিরাপদে, বিজয়ীবেশে ফিরে আসবে।

একই সাথে তুমি মা, তুমি স্ত্রী, তুমি দাদী, মুসলিম নারী, তুমি যে দেশের নাগরিক, সে দেশের দূতাবাসের তুমি কর্মকর্তা! তোমার কাজের সাথে তাদের তো কোন সম্পর্ক নেই।

তুমি তো রাজনীতি করো না, অনুমোদিত রাজনৈতিক একটা দলের রাজনীতি তোমার স্বামী করে, তা সত্ত্বেও তারা তাকে দুই বছরের বেশী আটক রেখেছে, তার বিচার করা হয়েছে। তার কোন দোষ প্রমাণিত না হওয়ার তাকে বেকসুর মুক্তি দেয়া হয়। তারপর তাকে আবার আটক করা হয়। কারণ, সে তোমার স্বামী!

সকল আইনের দৃষ্টিতে মৌলিকভাবে প্রত্যেকে নির্দোষ। প্রত্যেক অভিযুক্ত নির্দোষ, যতোক্ষণ কোন নিরপেক্ষ আদালত দ্বারা সে দোষী সাব্যস্ত না হয়। তার অধিকার আছে, আপিল করার, আপিলের পর রিভিউ করার।

আর স্বাভাবিকভাবে আপিলিয়েট ডিভিশন অভিযুক্তের পক্ষে থাকে, তাকে দোষী সাব্যস্ত না করা পর্যন্ত।
তারা তোমার সাথে কেনো এ-নির্মম আচরণ করছে? কেনো রাত-দিন পার্থক্য করা যায় না, এমন সংকীর্ণ জায়গায় তোমাকে একাকী আটকে রেখেছে?

কেন আদালতের বিচার কার্য চলাকালে পেপার-পত্রিকায় এতো ডাকঢোল? কেন পরিবারের সাথে সাক্ষাৎ, চিকিৎসাসেবা, ওষুধের মতো মৌলিক মানবাধিকার থেকে তোমাকে বঞ্চিত করা হচ্ছে?

তুমি তো না ধর্মীয়, না পার্থিব কোন রকমের অপরাধ করেছো। তুমি তো কোন সভা-সমাবেশে অংশগ্রহন করো নি, বছরের পর বছর চলে গেল, কেউ তোমাকে কিছু বলে নি। কিন্ত আজ কী হলো! যেন হঠাৎ করেই তাদের মনে পড়েছে, তুমি আমার কন্যা!

আমার মেয়ে! তোমার বাবা তো জীবনভর লেখক, কবি, দায়ি, শিক্ষক, মুফতি, ফকিহ, দ্বীন-শিক্ষক হিসেবে জীবন অতিবাহিত করেছে, তোমার কী অপরাধ? কেন তারা তোমাকে শাস্তি দিচ্ছে? কেন তারা তোমার চেহারায় তোমার বাবাকে শাস্তি দেয়?

তারা তোমার বাবার বিচার করছে। অথচ তারা তোমার বাবাকে দেখেছে আজহারের জমকালো ধর্মীয় মজলিসে, দেখেছে বড় বড় ফিককি সেমিনারের সদস্য হিসেবে, দেখেছে, বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের প্রধান হিসেবে, তারা এই অভিযোগ এনেছে, যখন তোমার বাবা ছিলেন মিসরের উচ্চতর উলামা পরিষদের সদস্য।

তারা তোমার বাবার বিচার করছে আজব অভিযোগে, সে-সময়ে পচাঁশি বছর বয়সী বৃদ্ধ জেল ভেঙ্গে কারাঅন্তরীণদের বের করে এনেছে। অথচ তোমার বাবা অভিযোগ আনার পরই তা জানতে পেরেছে।

তারা তাদের ক্ষোভ ও হিংসা একজন স্বাধীন ও নিরাপরাধ নারীর ওপর চরিতার্থ করছে। তারা তাকে আদর্শের প্রশ্নে পরাজিত করতে চায়।

তুমি তোমার বর্তমান সংকীর্ন রুম হতে অনেক উর্ধ্বে। তুমি তোমার রবের কাছে এবং তার বান্দাদের কাছে প্রিয়তম!

পৃথিবীর আনাচে-কানাচের অগণিত মুসলিম নারীপুরুষ তোমার জন্য দোয়া করছে, তারা তোমার, তোমার নির্যাতিত ভাইবোনদের আশু মুক্তি ও জালেমদের থেকে প্রতিশোধ গ্রহণের দোয়া করছে। আর দুনিয়া ও আখেরাতে এ-দোয়া বৃথা যাবে না।

আস্হা রাখ! নির্যাতিতের দোয়া অত্যাচারীর রাজত্ব ধ্বংস করে ছাড়বে। তাদের ব্যর্থ করবেই করবে। তোমার রব তাদের কর্মকাণ্ড সম্পর্কে বেখবর নন। তিনি অবশ্যই জানেন, অত্যাচারীরা কোন মুখী হবে।

শায়ক ইউসুফ কারজাভি গত মঙ্গলবার গণমাধ্যমকে জানান, ডিটেনশনে থাকা তাদের আটক মেয়ে উলার শারীরিক অবস্হায় মারাত্মক অবনতি ঘটেছে।

অন্যদিকে গত রবিবার মিসরীয় সরকার উলার আটকাদেশ আরও ১৫ দিনে বৃদ্ধি করে। উলা আদালতের সামনেই সম্বিত হারিয়ে ফেলে। কারাগরে অমানবিক আচরণের কারণে তার জীবন হুমকির মূখে মনে করছেন অনেকেই।

মিসর সরকার গত জানুয়ারিতে উলা(৫৫) ও তার স্বামী(৫৮) কে অবৈধ রাজনৈতিক দলের সাথে সম্পর্কের এবং নিরাপত্তাবাহিনী ও রাষ্টীয় প্রতিষ্ঠানের ওপর হামলার পরিকল্পনায় আটক করে। যদিও অভিযুক্তরা তা অস্বীকার করে।

সূত্র : মিডল ইস্ট মনিটর


সম্পর্কিত খবর


সর্বশেষ সংবাদ