শনিবার, ২০ এপ্রিল ২০২৪ ।। ৬ বৈশাখ ১৪৩১ ।। ১১ শাওয়াল ১৪৪৫


অবশেষে গোপন সত্যটা স্বীকার করলেন তসলিমা নাসরিন

নিউজ ডেস্ক
নিউজ ডেস্ক
শেয়ার

আওয়ার ইসলাম: নির্বাসিত লেখক তসলিমা নাসরিন। ইসলাম ধর্মই যার কাচির নিচে থাকে সব সময়। নানাভাবে হেয় করেন ইসলামপন্থীদের। তবে যুক্তরাষ্ট্রের লাস ভেগাসের কনসার্টে হামলার ঘটনায় একটু মোড়টা ভিন্ন দিকে গেল।

যদিও ওই হামরার শুরুতে তিনি টুইট করে বসেছিলেন, লাস ভেগাসে হামলা হলো, কারা এ হামলা করলো, মুসলিমরা ছাড়া আর কে?

অনলাইনে প্রচুর সমালোচনা হয় ওই টুইট নিয়ে। নিউজ হয়। হয় শেয়ার কমেন্ট। যার ফলে হয়তো বাস্তবতা বুঝতে পারলেন নাসরিন। তিনিও বঞ্চিতদের সুরে বলে উঠলেন স্টিফেন প্যাডককে কেন সন্ত্রাসী বলা হচ্ছে না? সন্ত্রাসী হওয়ার জন্য  কি মুসলিম হওয়া লাগবে?

বৃহস্পতিবার দৈনিক বাংলাদেশ প্রতিদিনে এ বিষয়ে এক কলাম লেখেন তিনি। যেখানে বিষয়গুলো তুলে ধরেন। মুসলিমদের যে নানাভাবে হেয় করা হয় বুঝলেন তিনিও।

তার কলামটি পড়ুন...

ভিড়ের ওপর গাড়ি উঠিয়ে দেওয়া হয়েছে। কুপিয়ে মারা হয়েছে কাউকে।

বোমা মারা হলো কোনও বাসে বা বিল্ডিংয়ে, কোনও মার্কেটে বা মসজিদে। আমরা ধরে নিই, এটি ইসলামিক কোনও দলের কর্ম। লাস ভেগাসের কনসার্টে গুলির বৃষ্টি ঝরিয়ে যে স্টিফেন প্যাডক নামের এক লোক ৫৯ জন নিরীহ মানুষকে খুন করেছে, ৫২৭ নিরীহ মানুষকে আহত করেছে... সে লোক কিন্তু মুসলিম নয়। তার গায়ের রঙ কালো বা বাদামি নয়। তার গায়ের রঙ সাদা। ধর্ম, রাজনীতি, হিংসে, বিদ্বেষ— এসবের মধ্যেই নেই সে।

তারপরও স্টিফেন খুন করেছে অসংখ্য নিরীহ মানুষ। স্টিফেন প্যাডক কোটিপতি। রিয়েল এস্টেটের ব্যবসা আছে তার। জুয়োর নেশাও আছে। বয়স ৬৪। এক সময় হিসাবরক্ষকের চাকরি করতো। থাকতো নেভাদায়।

২৭ বছর আগে ডিভোর্স হয়েছে, খুব অল্প সময় তার বিয়ে টিকেছিল। বধূ নির্যাতনের খবর পাওয়া যায়নি। সন্তান নেই। গার্লফ্রেন্ড আছে। ফিলিপিনো গার্লফ্রেন্ড, বয়স ৬২, এক সময় ক্যাসিনোতে কাজ করতো। লাস ভেগাসের ৮০ মাইল দূরে স্টিফেনের বাড়ি। জুয়া খেলতো অনলাইনে, খেলতো লাস ভেগাসের ক্যাসিনোতে।

প্রতিবেশীরা তাকে ভালো মানুষ বলেই জানে। এক প্রতিবেশীকে বলেছিল, তার বাড়িটা যেন দেখে রাখে, বেশ কিছুদিন সে থাকবে না। তার বাবা ব্যাংক ডাকাতি করেছিল, একবার জেল থেকে পালিয়েও ছিল। ১৯৬৯ সালে এফবিআইয়ের মোস্ট ওয়ান্টেড লিস্টে ছিল তার বাবা। বাবা মারা গেছে। ভাই থাকে ফ্লোরিডায়।

এই স্টিফেন প্যাডক লাস ভেগাসের কান্ট্রি মিউজিক কনসার্টে পাশের হোটেলের ৩২ তলার জানালা থেকে ২২,০০০ লোকের ওপর অটোমেটিক রাইফেল থেকে গুলিবর্ষণ করেছে। জেনে বুঝেই করেছে, তার হোটেল রুমে রুমে ছিল ২৩টা বন্দুক। গাড়ির ভিতর হাজারেরও বেশি ছিল বুলেট। বাড়িতেও ছিল বন্দুক।

লাস ভেগাস গণহত্যা করেছে সাদা আমেরিকান। ১৯৮২ সাল থেকে যত সন্ত্রাস ঘটেছে আমেরিকায়, সাদা আমেরিকানরাই ঘটিয়েছে সবচেয়ে বেশি। শতকরা ৫৪ ভাগ। তালিকায় তারপরেই আছে কালোদের নাম। সাদারা সন্ত্রাস করলে, আমি বুঝি না, কী কারণে ওদের সন্ত্রাসী বলে ডাকা হয় না। এখনো স্টিফেন প্যাডককে কিন্তু ‘বন্দুকধারী’ বলা হচ্ছে। মনস্তত্ত্ববিদকে ডেকে জানতে চাওয়া হচ্ছে ওর মাথায় কোনও সমস্যা ছিল কি না।

মাথায় সমস্যা থাক বা না থাক, জেনে বুঝে করুক বা অজ্ঞানতায় করুক, স্টিফেন সন্ত্রাসী। বাইশ হাজার মানুষের ভিতরে ভয়াবহ আতঙ্ক সৃষ্টি করলেও একটা মানুষকে কেন আতঙ্কবাদী হিসেবে চিহ্নিত করা হচ্ছে না? তাহলে কি সন্ত্রাসী বা আতঙ্কবাদী হতে গেলে মুসলিম হতে হবে?

কী হতো যদি স্টিফেন প্যাডক মুসলিম হতো, যদি আইসিসের লোক হতো, যদি মানুষ মারার সময় ‘আল্লাহু আকবর’ বলে চিৎকার করতো? যদি এক হাতে কোরআন থাকতো তার, আরেক হাতে অটোমেটিক রাইফেল, পেছনে আইসিসের কালো পতাকা, পতাকায় সাদা অক্ষরে আরবিতে লেখা কোরআনের বাণী?

তাহলে নিশ্চয়ই ট্রাম্প টুইট করতেন, ‘আগেই বলেছিলাম আমি! বলেছিলাম না ওরা আমাদের শত্রু! সাধে কি আর নিষিদ্ধ করেছি মুসলিম দেশগুলো থেকে মানুষ আসা!’ পাগড়ি পরা শিখদের মুসলিম ভেবে গুলি করে মারতো কিছু লোক। মসজিদ থেকে বের হয়ে আসা ইমামদেরও হত্যা করা হতো। আমেরিকায় বাস করা বাদামি যে কোনও লোককেই মুসলিম মনে করে ঘৃণার চোখে দেখা হতো, কারো কারো ওপর আক্রমণ হতো।

রিপাবলিকান দল আর তার টি পার্টি জনপ্রিয় হয়ে উঠতো প্রচণ্ড। মুসলিম নাগরিকদের অনেককে সন্ত্রাসী ভেবে হেনস্তা করা হতো। আর ট্রাম্পের যুদ্ধ জাহাজ চলে যেত মধ্যপ্রাচ্যে সন্ত্রাস দমনের নামে বোমাবর্ষণ করতে, দু-একটা আইসিস বা আল কায়দার সন্ত্রাসী মরতো, আর হাজারো নিরীহ মরতো! এই চিত্রটি আমরা কল্পনা করতে পারি।

আমেরিকার এই শিথিল বন্দুক আইনের কারণে আরও কত যে সন্ত্রাসী জন্ম নেবে! অনেকে বলে বন্দুক কেনার অধিকার থাকুক মানুষের। কিন্তু কে কিনছে, কেন কিনছে, বয়স কত, মাথায় কোনও সমস্যা আছে কিনা— এসব তথ্য আরো যাচাই করা হোক।

১৯৯৬ সালে অস্ট্রেলিয়াতে পোর্ট আর্থার ম্যাসাকার ঘটেছিল, এক পাগলের গুলিতে মারা যায় ৩৫ জন নিরীহ মানুষ। ওই ঘটনার পর অস্ট্রেলিয়ায় বন্দুক আইনের বিরুদ্ধে আন্দোলন হয়। সেই আন্দোলনের ফলে যে কারো বন্দুক পিস্তল কেনার অধিকার সীমিত করে দেওয়া হয়েছে। এখন অস্ট্রেলিয়ায় গুলি করে মানুষ হত্যার হার অর্ধেক কমে গেছে, আত্মহত্যার হারও কমেছে অর্ধেক। কিন্তু আমেরিকায় তা হয়নি।

১৯৭০ সালের পর থেকে আত্মহত্যা, হত্যা, আর দুর্ঘটনায় যত মানুষ মারা গেছে, তা আমেরিকার ইতিহাসে যত যুদ্ধ হয়েছে, সেই সব যুদ্ধে যত আমেরিকান মারা গেছে, তার চেয়ে বেশি। প্রতিদিন গড়ে ৯২ জন আমেরিকান মারা যায় বন্দুকের গুলিতে, অন্যান্য উন্নত দেশে যত বাচ্চা মারা যায় গুলিতে, তার চেয়ে ১৪ গুণ বেশি মারা যায় আমেরিকায়। সংক্ষেপিত

তসলিমার টুইট নিয়ে নিউজ:  ফের ধরা পড়ল তাসলিমা নাসরিনের নগ্ন ইসলামবিদ্বেষ


সম্পর্কিত খবর


সর্বশেষ সংবাদ