বৃহস্পতিবার, ২৫ এপ্রিল ২০২৪ ।। ১২ বৈশাখ ১৪৩১ ।। ১৬ শাওয়াল ১৪৪৫


প্রশ্নবাণে সুন্দরী প্রতিযোগিতা; সন্মান রক্ষায় নারীরাই জ্বলে উঠুক আগে

নিউজ ডেস্ক
নিউজ ডেস্ক
শেয়ার

এ এস এম মাহমুদ হাসান
গণমাধ্যম কর্মী

নারীর শৈল্পিকতা ও সৌন্দর্য কিসে? সেটি বিতর্কিত বিষয় নয়। বরং অজ্ঞতা ও নিজ স্বার্থ সিদ্ধির এ দুনিয়ায় নারী সৌন্দর্যের ব্যাখ্যা নিতে পারে বিভিন্ন কল্পিত রূপ।

বাংলাদেশে শুরু হওয়া বিশ্ব সুন্দরী প্রতিযোগিতা যাচাইপর্ব শেষ হল দু’দিন আগে। অবাধে কাম উত্তেজক নারীদেহ প্রদর্শনের সর্বশেষ ফাইনাল পর্বের বিবাহিত-অবিবাহিত শর্ত নিয়েই বিতর্ক ও হৈ চৈ। কিন্তু সুন্দরী প্রতিযোগিতার আঁড়ালে অসভ্যতা চর্চা ও নারী লিপ্সার স্বাদ জাগিয়ে তোলা নিয়ে তেমন কারো মাথাব্যথা নেই। আমরা কি তাহলে পাশ্চাত্যে ওপেন মাইন্ডের নারী ভোগী হয়ে যাচ্ছি?

একজন নারী যখন নারী লোভী পুরুষের কাছে ভোগ্যপণ্যে রূপ নেয়, তখন নারীর ভেতরের রূপ দেখতে মরিয়া হয়ে ওঠে পুরুষ। তখন মূখ্য হয়ে ওঠে নারীর দেহ। আবার এ নারীই যখন সাংসারিক দায়ভার মেটাতে অতি দায়িত্বশীলতার পরিচয় দেন। তখন সেই নারী হয়ে ওঠেন সংসারের মুকুট। শ্রেষ্ঠ নারী। তখন প্রশ্ন উঠতেই পারে, তাহলে নারীর সৌন্দর্য কিসে? সৌন্দর্যতার ব্যাখ্যা কী?

যখন বিশ্ব সুন্দরী প্রতিযোগিতায় অবিবাহিত হওয়ার শর্ত জুড়ে দেওয়া হয়। তখন বিবাহিত নারীরা প্রশ্ন করতেই পারেন, ধর্ষিতা, পতিতা ও স্বেচ্ছাভোগী নারীরা কেন বিশ্ব সুন্দরী হতে পারবে না? ওরা কি নারী নয়? ওরা কি পুরুষ কিংবা ফেলনা বস্তুই পরিণত হয়েছেন?

কাম উত্তেজনা নিয়ে যখন ধর্ষক নারীস্বাদ মেটায়। তখন যারা পুরুষের কুচরিত্র নিয়ে হৈচৈ করে। কাম উত্তেজনা নির্ভর শো অবাধে আয়োজন ও প্রচার করছে তারাই। যখন নারীর রূপ-সৌন্দর্যের নির্ভরতা, মৌলিকত্ব ও দলিল দাঁড় করাই স্বল্প বসনাকে কেন্দ্র করে । কাম উত্তেজক অঙ্গভঙ্গি দিয়ে। তখন বিবাহিত-অবিবাহিত ভেদাভেদ কেন রাখা হয়?

কথিত সুন্দরী প্রতিযোগিতায় স্বল্প বসনার কাম অঙ্গ ভঙ্গি অদৃশ্য পুরুষকে উত্তেজিত করতে পারলেও বাধসাধে সমাজ স্বীকৃত বন্ধন।

বিবাহিত নারীর সমাজ স্বীকৃত বন্ধনের করণে নারীর সৌন্দর্য খুব সহজেই অন্য কামুক পুরুষের তেমন কাজে আসে না বলে অবিবাহিত হওয়ার শর্ত জুড়ে দেওয়া হয়েছে? নারীর সন্মান লুণ্ঠনের এই অথর্ব সুন্দরী প্রতিযোগিতার আর কিইবা অর্থ থাকতে পারে?

একজন নারী তার অমায়িক ব্যবহার আর বুদ্ধিবৃত্তিক গুণ দিয়ে পুরো পরিবারকে মুগ্ধ করে তোলার পরও যখন শ্রেষ্ঠ নারী হতে পারেন না। একজন নারী যখন জীবনের ঝুঁকি নিয়ে তার মাতৃত্বের গৌরবে নবাগত সন্তান লালন পালন করে মানবজগতে ভূমিকা রাখেন। একজন নারী যখন তার সংসারে প্রিয় সঙ্গীর সহযোগী হয়ে পরিবারের হাল ধরেন। তখন সে নারী বিশ্ব সুন্দরী হওয়ার যোগ্যতাই রাখছেন না। তাহলে বিশ্ব সুন্দরী নোংরা খেলার আয়োজকদের কাছে আমাদের প্রশ্ন করতেই হয়, নারীর রূপের শ্রেষ্ঠত্বের আসন নির্ণয় হয় কিসে এবং কোন উদ্দেশ্যে?

নারীর ইজ্জত কোটি কোটি মানুষের চোখের সামনে লুণ্ঠন করে, শিশু-কিশোরদের মগজে নারী দেহের ঝংকার তুলে, নারী লিপ্সু কামুক এক একজন ধর্ষক তৈরির এ সুন্দরী খেলা নারীকে অপমানের চূড়ান্ত পর্যায় নয় কি?

ইসলাম নারীকে দিয়েছে শ্রেষ্ঠত্বের সন্মান। বানিয়েছে ঘরের ফুলদানি। সমাসীন করেছে মাথার মুকুটের আসনে। পুরুষ জগতের ক্লেশ অবসাদ নিবারণে নারীকে দিয়েছে ঐশি শক্তি। বানিয়েছে পুরুষের অর্ধাঙ্গীনী। নারীর পদতলে বিছিয়েছে পরম শান্তির জান্নাত। নারীকে দিয়েছে সমাজের তুলনাহীন গৌরব।

আজ সেই নারীর ইজ্জত-সম্ভ্রম নিয়ে খেলছে একদল পিশাচ লম্পটেরা।

নারীকে পুরুষের শুধুই ভোগ্যপণ্যে রূপান্তরে দিলকাশ বিজ্ঞাপণে বিশ্ব সুন্দরীর এ কদার্য মহড়া বন্ধ হোক।

নারীরাই এ নগ্ন খেলার প্রতিবাদের সূচনা করুক। মায়ের মমতার প্রতি শ্রদ্ধা দেখাতে, মায়ের তুলনাহীন সন্মান টেকাতে নারীরাই জ্বলে উঠুক আগে। বয়কট করুক নির্লজ্জ, অসভ্য নারীভোগী বেহায়া কুপুরুষদের। বন্ধ হোক সুন্দরী প্রতিযোগিতা নামক নারীকে ভোগ্য পন্য করে তোলার বাজার।


সম্পর্কিত খবর


সর্বশেষ সংবাদ