শুক্রবার, ১৯ এপ্রিল ২০২৪ ।। ৬ বৈশাখ ১৪৩১ ।। ১০ শাওয়াল ১৪৪৫


একজন আলেমের বিরল মানবসেবা এবং শিল্পপতিদের প্রতি দুটি কথা

নিউজ ডেস্ক
নিউজ ডেস্ক
শেয়ার

মুফতি ওসমান সাদেক
বাহরাইন থেকে

ইমাম ইবনে কাছীর রহ. তাঁর বিখ্যাত গ্রন্থ আলবিদায়া ওয়ান নিহায়ায় প্রখ্যাত মুহাদ্দিস আব্দুল্লাহ ইবনুল মুবারকের একটি চমকপ্রদ কাহিনী তুলে ধরেছেন, যা আজকের যুগের শিল্পপতি হাজী সাহেবদের জন্য বিরাট শিক্ষণীয়।

একদা ইমাম ইবনুল মুবারক রহ. বিরাট এক কাফেলা নিয়ে হজের উদ্দেশে রওয়ানা হলেন। পথে দেখতে পেলেন একটি মরা পাখি। তিনি এক বালককে বললেন, সেটাকে পাশের ডাস্টবিনে ফেলে আসতে।

বালকটি সেটা ফেলার আগেই তিনি দেখলেন এক বালিকা মরা পাখিটিকে সংগ্রহ করছে। তিনি কৌতূহলি সুরে কারণ জানতে চাইলে মেয়েটি তার ও তার আপন ভাইয়ের অভাবের কথা জানিয়ে বলল, ‘আমাদের বাবা মারা গেছে এবং তার সম্পদগুলো বলপ্রয়োগে ছিনিয়ে নেয়া হয়েছে। এমতাবস্থায় আমাদের জন্য শরিয়ত তো মরা জন্তু খাওয়ার অনুমতি দিয়েছে।’

অভাবী মেয়েটির এমন হৃদয়ষ্পর্ষী কথা শুনে ইমাম ইবনুল মুবারক খাদেমকে বললেন, আমাদের থলিতে কত টাকা আছে দেখ। তারা বলল, একহাজার দিনার। তিনি বললেন, আমাদের ঘরে ফিরে যেতে কত টাকার দরকার তা রেখে বাকি টাকা ওকে দিয়ে দাও।

গরিব মেয়েটির প্রতি এই দান আমাদের এবারের হজের চেয়ে অনেক বেশি ফজিলতময়। সুবহানাল্লাহ!

এ কথা বলে তিনি আপন সাথীদের নিয়ে স্বদেশে ফিরে গেলেন।আর হজের উদ্দেশে বায়তুল্লাহর সফরকে বাতিল করে দিলেন।

হে দেশের সম্মানিত শিল্পপতি!
হে সমাজের ধনাঢ্য শ্রেণি!

একজন অসহায় মেয়ের মরা জন্তু খাওয়ার দৃশ্য দেখে ইবনুল মুবারকের মতো একজন মহান আলেম তার গোটা বহরসহ হজের মতো সফরকে বাতিল করে দিলেন এবং প্রয়োজনের অতিরিক্ত সব টাকা তাকে দিয়ে দিলেন।

তাহলে বলুন, আজকে এক দুজন নয় কত লক্ষ নির্যাতিত রোহিঙ্গা মা বোন, শিশু বৃদ্ধ না খেয়ে মরছে, কত মানুষ খাদ্য ও পানির অভাবে হাহাকার করছে। আর এখনো আপনি আমোদ প্রমোদেই আছেন আপনার ব্যবসা বাণিজ্য নিয়ে।

এখনো আপনি ডাবল ডাবল হজ -ওমরা পালন করছেন নিশ্চিন্ত মনে।

আলহামদুলিল্লাহ! ইবনুল মুনাবারকের উত্তরসূরি, মানবদরদী আলেম সমাজ এবং তাদের ভক্ত ও অনুরক্তরা আজ মজলুম রোহিঙ্গাদের পাশে দাঁড়িয়েছে মানবতার টানে। ইসলামি ভ্রাতৃত্বের বন্ধনে।

কিন্তু আপনার মতো শিল্পপতিরা এখনো বিলাসিতার রঙ্গমঞ্চে। এখনো মানবতাহীন কর্মের মেলা-মজলিশে।
আফসোস আপনার জন্য।

আফসোস আপনার কোটি টাকার ব্যাংক ব্যালেন্সের জন্য। যার ক্ষুদ্রতম অংশও মজলুম মানবতার সেবায় ব্যবহৃত হচ্ছে না।

ঘটনাটি মূল ইবারত সহ দেয়া হলঃ
ذكر ابن كثير قصة ابن المبارك في البداية والنهاية وملخصها انه لما كان في طريق الحج مات لهم طائر فامر غلمانه بالقائه في مزبلة الطريق ثم انه راى فتاة جاءت واخذ ت الطائر الميت فسالها عن شانها فاخبرته انها واخاها من الفقراء وان اباها قد قتل واخذ ماله وان الميتة تحل لهم فقال لخادمه كم معنا من المال فقال الف دينار فقال ابق منها عشرين نرجع فيها الى بيوتنا واعط الباقي لهذه الفتاة فهذا افضل من حجنا لهذا العام ثم رجع .
راجع ابن كثير الجزء العاشر ص607

আরাকানি ৬ আলেমের দুঃখগাঁথা


সম্পর্কিত খবর