শনিবার, ২০ এপ্রিল ২০২৪ ।। ৭ বৈশাখ ১৪৩১ ।। ১১ শাওয়াল ১৪৪৫


মুসলিম উম্মাহর পুনর্জাগরণ এবং শ্রীলংকার সংখ্যালঘু মুসলিম (শেষ পর্ব)

নিউজ ডেস্ক
নিউজ ডেস্ক
শেয়ার

[আরবের আশা আমরা অনেক আগেই ছেড়ে দিয়েছি। পরিবর্তিত দৃশ্যপটে বড় প্রত্যাশা নিয়ে চোখ রাখছিলাম তুরস্কের দিকে- প্রাপ্তিটা যদিও কাঙ্খিত গতিতে হচ্ছে না, তবে হতাশায়ও বদলে যায় নি।

ইরান যেভাবে মূল মঞ্চে চলে আসছিলো কিংবা একক রাহবার হিসেবে স্বীকৃতি নিতে মরিয়া হয়ে উঠেছিলো, আমাদের বড় বিকল্প সেখানে এরদোগানের তুরস্ক। যে সংকটের মধ্য দিয়ে আজকের মুসলিম উম্মাহকে পথ চলতে হচ্ছে, এই মুহূর্তের বড় দাবি- বিক্ষিপ্ততা এবং দেশ-সমাজের সাধারণ সীমা ছাপিয়ে এক মঞ্চে সমবেত হওয়া এবং তারও আগে চিন্তার সমন্বয়।

খাদ থেকে চূড়ায় উঠে আসতে কিংবা পতনোন্মুখ হালত থেকে নেতৃত্বের আসনে সমাসীন হতে শক্তি বা সংখ্যার চেয়েও বড় প্রয়োজন শিক্ষার। কৌশলের। নৈতিকতা এবং মনোবলের। আর এসবের মূলেই আছে চিন্তার বিকাশ ও সমন্বয়।

এক্ষেত্রে বছর কয়েক আগেও প্রায় একমাত্র দেশ হিসেবে উঠে আসতো ইরানের নাম। এখন আমরা বড় করেই তুরস্কের কথা বলতে পারছি। ধীর গতিতে হলেও অনেকাংশে যা তারা কাজে প্রমাণ করে চলেছে। সামার স্কুল নামে তুরস্কের একটা প্রজেক্ট শুরু হয়েছে বছর কয়েক আগে। সারাবিশ্বের মুসলিম তরুণ গবেষকদের নিয়ে কনফারেন্স আয়োজন, নিজেদের সমস্যা-সম্ভাবনা নিয়ে আলোচনা এবং এর আলোকে সমাধান ও কৌশল প্রণয়নের পথে এগিয়ে যাওয়া- এ-ই মূলত প্রজেক্টের উদ্দেশ্য।

২০১৩ সালে সামার স্কুলের প্রথম আয়োজনের সমৃদ্ধ স্মারকটি আমার হাতে এসেছে। এই কনফারেন্সের প্রতিপাদ্য ছিলো- ‘ট্রান্সফরমেশন অব দ্য মুসলিম ওয়ার্ল্ড ইন ২১’স্ট সেঞ্চুরি’। পড়ছি। আরব বসন্ত পরবর্তী প্রথম আয়োজন হওয়ায় আশাবাদের কিছু ছড়াছড়ি আছে, গত ক’বছরে অনেক কিছু বদলেও গেছে।

পাঠের ক্ষেত্রে সেটা একদিকে যেমন কিছুটা অস্বস্তির, ভাবনা ও বর্তমান পরিস্থিতি বিচারে যথেষ্ট সহায়কও। আমাদের তরুণদের জন্য এই রচনাগুলোর পাঠ অত্যন্ত জরুরি বলে মনে করি। আর এমন চিন্তা থেকেই কিছু কিছু আলোচনা তুলে ধরার প্রয়াস নিলাম।

শ্রীলংকা আমাদের খুব কাছের এবং বিশেষত ক্রিকেটের সুবাদে বেশ পরিচিত একটি দেশ। শ্রীলংকার মুসলিমইস্যুটি কখনো তেমন আলোচনায় আসে নি। খুব কিছু আমরা জানিও না। তাই এই নিবন্ধটিকেই প্রথমে বেছে নিলাম।

লেখক শ্রীলংকান ইসলামিক ছাত্র আন্দোলনের প্রেসিডেন্ট। সরাসরি ইংলিশ থেকে লেখকের নিজস্ব গদ্যরীতি ঠিক রেখেই অনুবাদের প্রয়াস নেয়া হয়েছে। আজ থাকলো সপ্তম ও শেষ পর্ব...শাকিল আদনান।]

শ্রীলংকায় জেডিএলের পরিকল্পনার প্রকৃত বাস্তবতা
[জেডিএল- জিউস ডিফেন্স লিগ বা ইহুদি সুরক্ষা আন্দোলন]

২০০৪ সালে ফেরা যাক। সে বছর চারজন শ্রীলংকান নাগরিককে জেডিএলের পরিকল্পনার অংশ হিসেবে ইসরায়েলে স্কলারশিপ দেওয়া হলো- তাদের কুরআনের ‘ভুল ব্যাখ্যা সম্বলিত ভার্সন’ শেখানোর জন্য। এই খবরটি তারা প্রকাশ করেছে- www.answeringislam.com এ। চারজনের নাম যথাক্রমে- জায়াবিরা, পেরামুনে রালা, উৎপলা এবং অপরজনের নাম জানা যায় নি।

ইসরায়েলে তাদের মগজধোলাই করা হয়েছে এবং শ্রীলংকায় মুসলিমবিরোধী অপপ্রচারের মিশনে নিয়োগ করা হয়েছে। তাদের কার্যক্রমের কয়েকটা ধাপ নিচে তুলে ধরা হলো।

(আমাদের দেশে অনলাইনে বেশ কজন ‘নাস্তিক’ ইসলামের পণ্ডিত দেখা যায়, ইসলামের প্রত্যেকটা স্পর্শকাতর ইস্যুর অপব্যাখ্যা বিশেষ বিশেষ সময়ে তারা উৎপাদন ও প্রচার করেন। তাদের ইসলামি জ্ঞানের বহর দেখে অবাক হতে হয়। অনুমান করতে পারেন- তারা কারা? কোত্থেকে এই মহাজ্ঞান অর্জন করলো?... অনুবাদক)।

প্রধম ধাপ (তাদের উদ্ধৃতি অনুযায়ীই তুলে ধরছি)
*অনলাইনে ইসলামবিরোধী টিম তৈরি
প্রথম ধাপ ইতোমধ্যে তারা সাফল্যের সাথেই শেষ করেছে। ইসলামবিরোধী ওয়েব সাইট, সোশ্যাল মিডিয়ায় ইসলামবিরোধী গ্রুপ তৈরি করে অপপ্রচার শুরু করেছে। অনেকগুলোর মধ্য থেকে কিছু সাইট ও পেজের এড্রেস এখানে তুলে দিচ্ছি।

http://peramunerala.wordpress.com
http://anniisa.wordpress.com
http://musalmanuwa.wordpress.com
http://sites.google.com/site/islamyanukumakda/lecher

আর একই সাথে তারা শ্রীলংকায় সিংহলি ভাষায় গুগল বা উইকিপিডিয়ার যে কোনো ইসলামিক পরিভাষা বা তথ্য আপডেটের সুযোগও কুক্ষিগত করে বসে আছে। তাদের হাত হয়েই তথ্য আপডেট হচ্ছে, সুতরাং বিকৃতি বা অপব্যাখ্যার মাত্রাও তো বাড়ছে।

এটা শুধু শ্রীলংকায় বা সিংহলি ভাষাতেই নয়, ইসলামের তথ্য-পরিভাষা অনলাইনে আপডেটের এই চর্চাটা যে কোনো দেশের স্থানীয় ভাষায় ওরাই বেশিরভাগ নিয়ন্ত্রণ করছে। মুসলিম উম্মাহর জন্য এটা বিরাট একটা প্রবলেম হয়ে দেখা দিচ্ছে।

দ্বিতীয় ধাপ

*অনলাইন টিমগুলোকে এক কাতরে নিয়ে আসা
ইসলামবিরোধী থিমকে টার্গেটে রেখে এবং ফ্রি ইন্টারনেট সুবিধা সৃষ্টি করে অনলাইনে ওরা জড়ো করছে সাংবাদিক, ইউনিভার্সিটির প্রফেসর-ছাত্র, ডাক্তার এবং বিশেষত বৌদ্ধ সন্নাসীদের।

তাদের বেশিরভাগই নিজেদের শিখে আসা ভুল ব্যাখ্যা সম্বলিত ইসলামী শিক্ষাটা বারবার করে তুলে ধরছে চমৎকার সব ভিডিওয়ের মাধ্যমে। খুবই পরিকল্পিত ও গোছানো এই ভিডিও সিরিজ। উপরোল্লেখিত সাইটগুলোতেও কিছু ভিডিও পাওয়া যাবে।

সম্প্রতি পয়াদায়ায় (প্রতি মাসে একবার করে আসা বিশেষ একটি বৌদ্ধ ধর্মীয় ছুটির দিন)- এ ওরা ‘বৌদ্ধ চিকিৎসক পরিষদ’ নামের একটি সংগঠনের মাধ্যমে স্থানীয় ডাক্তারদের এই ভিডিওগুলো প্রকাশ্যে দেখার আমন্ত্রণ জানিয়েছিলো। ভিডিওয়ের সূত্র-

http://dharmadveepayeiranama.blogspot.com/p/heart-breaking-sinhala-videos-of-muslim.html

তৃতীয় ধাপ

*অনলাইন গ্রপগুলোকে মাঠপর্যায়ে কাজের জন্য উদ্বুদ্ধ করা
মাঠ পর্যায়ের প্র্যাক্টিক্যাল কাজের ক্ষেত্রে ওদের প্রথম সাফল্য ছিলো অনুরাধাপুরায় ঐতিহ্যবাহী একটি মুসলিম স্থাপনা ধূলোয় মিশিয়ে দেওয়া। দেহিওয়ালা কুয়ারি রোড মসজিদ এবং নাভালা মসজিদ ইত্যাদি বন্ধ করে দেওয়া।

সংগঠিত এমন গ্রুপ থাকার পাশাপাশি ওদের রয়েছে রাজনীতিবিদ, আইনজীবী এবং বিভিন্ন স্তরের প্রশাসনিক কর্মকর্তাদের সমন্বিত শক্তিশালী একটি নেটওয়ার্ক- যারা এসব ঘটনার পেছনের ইতিহাস বদলে দিয়ে নতুন গল্প তৈরি করে তা প্রতিষ্ঠা করতেও সক্ষম। সুতরাং কাজের ক্ষেত্রে তারা চাইলেই যে কোনোরকম আইনি জটিলতা এড়াতে পারে।

শ্রীলংকায় মুসলিমবিরোধী ক্যাম্পেইনের পেছনের বাস্তবতা
দ্বীপরাষ্ট্র শ্রীলংকার অনেক জায়গায় মসজিদ এবং ঐতিহাসিকভাবে গুরুত্বপূর্ণ দরগাগুলোতে বৌদ্ধ সম্প্রদায়ের লোকজনের অনাকাঙ্ক্ষিত ও উসকানিমূলক হামলা-ভাংচুর-প্রতিবাদী মিছিলের কারণে স্থানীয় মুসলিমদের মাঝে একপ্রকার ত্রাস এবং অনিশ্চয়তা সৃষ্টি হয়েছে।

শ্রীলংকার সংখ্যাগুরু সিংহলি বৌদ্ধ সম্প্রদায়- যারা বরাবরই অহিংস ও সাম্যের নীতি ধারণ এবং সবধরনের ঘৃণাচর্চা ও সংঘাতসৃষ্টির মানসিকতা বর্জন করার মতো আদর্শ মানবিক মূল্যবোধ লালন করে আসছে, যে উন্নত মানসিকতা অন্যান্য ধর্ম ও জাতিগোষ্ঠীর সাথে যুগ যুগ ধরে তাদের শান্তিপূর্ণ সহাবস্থান নিশ্চিতের ক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ অবদান রাখছে।

শুধু তা-ই নয়- ৬২৭ খৃস্টাব্দে আরব ভূখণ্ডে যখন ইসলামের পূর্ণাঙ্গ ভার্সনের উদ্ভব ঘটলো, সে ঘটনার বিবরণও শ্রীলংকার প্রাচীন ইতিহাসে বেশ ভালোভাবেই রেকর্ড করা আছে। আরবের সাথে শ্রীলংকার যোগাযোগ ও সম্পর্ক অবশ্য আরো প্রাচীন।

ইসলামের আবির্ভাবের অনেক আগে ৩০০ খৃস্টাব্দ থেকেই আরবের আহলে কিতাব লোকজন বিশ্বাস করতেন, প্রথম মানব এবং সর্বশক্তিমান আল্লাহর প্রথম নবী হযরত আদমের আ. আগমন ঘটেছিলো এই দ্বীপদেশের পীদুরুদালাগালা নামের পাহাড়চূড়ায় এবং তিনি এই দেশে অবস্থানও করেছেন।

শ্রীলংকান মুসলিমেরা এই দেশ দখল বা উপনিবেশিক শাসন প্রতিষ্ঠার মাধ্যমে এখানে নিজেদের উপস্থিতি নিশ্চিত করেন নি। তরবারির জোরেও এ দেশে ইসলাম প্রতিষ্ঠিত হয় নি। স্বাভাবিক শান্তিপূর্ণ আগমন এবং অবস্থানের মধ্য দিয়েই তারা নিজেদের আজকের পর্যায়ে নিয়ে এসেছেন।

উল্টো আমরা দেখি- উপনিবেশিক শাসনের মাধ্যমে এ দেশে খৃস্টধর্ম পাচার করা হয়েছে। এ দেশে খৃস্টান সম্প্রদায়ের যারাই আছেন, তারা সে উপনিবেশিক শাসনেরই উত্তরাধিকার বা ফলাফল।

শ্রীলংকার মুসলিমেরা জাতীয় ঐক্য এবং শান্তিপূর্ণ সহাবস্থান নিশ্চিত করার জন্য প্রাচীন যুগ থেকেই এই দ্বীপরাষ্ট্রের রাজা ও শাসকদের প্রতি আস্থা ও আনুগত্য বজায় রেখে এসেছেন। বৃটিশ ও ইউরোপীয় উপনিবেশিক শাসনের কবল থেকে দেশের স্বাধীনতা অর্জনের সময়ও তারা সবার সাথে মিলে কাঁধে কাঁধ রেখে লড়াই করেছেন।

স্বাধীনতা উত্তর শ্রীলংকার সাম্প্রতিক ইতিহাসে দেশের নানা প্রান্তে বিভিন্ন জাতিগোষ্ঠীর স্বাধিকার আন্দোলন বা রক্তক্ষয়ী সংঘাতের বহু ঘটনা ঘটলেও মুসলিম সম্প্রদায় অতীতের মতোই জাতীয় ঐক্য, শান্তি ও স্থিতিশীলতার প্রতি নিজেদের শক্ত অবস্থান ধরে রেখেছেন। কোথাও কোনোরকম দেশবিরোধী বা ভ্রাতৃঘাতী লড়াইয়ে তাদের সম্পৃক্ততার কোনো অভিযোগ নেই।

মাতৃভূমির প্রতি ভালোবাসা এবং সকল জাতির সম্মিলিত শান্তিপূর্ণ অবস্থানের ব্যাপারে তারা ছিলেন বরাবরই আপোষহীন।

বৃহত্তর মুসলিমবিশ্বের অংশ হিসেবে শ্রীলংকার মুসলিমেরা এই বিষয়ে বরাবরই সজাগ ছিলেন যে, সাম্প্রতিক বিশ্বে ইসলামী বিশ্বাসের দ্রুত বিস্তারলাভের খবরে মুসলিমউম্মাহর শত্রুরা যারপরানই বিরক্ত। বৈশ্বিক বড় শক্তিগুলো মুসলিমবিরোধী প্রচারণার অংশ হিসেবে- ‘ইসলামিক জঙ্গিবাদ, মৌলবাদ, ইসলামিক জিহাদ, আল কায়েদা, তালেবান, আল শাবাব’ এবং এমন আরো অসংখ্য পরিভাষা ও টার্মগুলো শ্লোগান হিসেবে যতো বেশি ব্যবহার করছে, এমনকি শ্রীলংকার মতো এই ছোট্ট দেশেও; তুলনামূলকভাবে তারা সাফল্য পেয়েছে খুব সামান্যই।

জাতিগত ঘৃণা, বিদ্বেষ ও সংঘাত ছড়িয়ে দেওয়ার এই অপচর্চার ব্যাপারে শ্রীলংকার মুসলিমেরা বরাবরের মতোই নিজেদের সতর্ক অবস্থান ধরে রেখেছেন।

ভৌগোলিক অবস্থান এবং ভূরাজনৈতিক বাস্তবতায় সাম্রাজ্যবাদী পশ্চিমাবিশ্বের কাছে শ্রীলংকার কৌশলগত গুরুত্ব অনেক। কারণ শ্রীলংকার অবস্থান একদিকে যেমন ভারত সাগরের তীরে, অন্যদিকে চেইনসিস্টেমে অনেকগুলো মুসলিমদেশের সাথেও এর রয়েছে বর্ডার সংযোগ।

পশ্চিমা বিশ্ব এবং তাদের দোসরেরা তাই যে কোনো মূল্যে এ দেশে নিজেদের আগ্রহ ও প্রয়োজনীয় ব্যাপারগুলোর সুরক্ষা নিশ্চিত করতে চায়, বিশেষ করে জাতিগত সংঘাত (তামিল গেরিলাযুদ্ধ)- পরবর্তী শ্রীলংকায় চীন ও ভারতের প্রভাববৃদ্ধির প্রেক্ষাপটে।

সবরকম হিসেবেই ইসলামী বিশ্ব এখন দ্রুত বর্ধনশীল এবং সাম্রাজ্যবাদী ও ইহুদিশক্তির মিলিত ষড়যন্ত্রের বিপরীতে মুসলিমবিশ্ব সময়ের সাথে পাল্লা দিয়ে বিচারিক আসনে নিজের অবস্থান সংহত করছে। আমরা আশা করবো- আমাদের মাতৃভূমি যেহেতু মুসলিমবিশ্বের সাথে বিভিন্ন জরুরি প্রেক্ষাপটসহ বরাবরই নিরবিচ্ছিন্ন সংযোগ রেখে আসছে, সুতরাং আজকের বাস্তবতায়ও মুসলিমবিশ্বের কাছ থেকে মর্যাদাপূর্ণ একটা অবস্থান উপভোগ করবে।

আমরা আরো আশা করবো- সংখ্যাগুরু সিংহলি বৌদ্ধ সম্প্রদায় আরব মুসলিমবিশ্বের সাথে শ্রীলংকার হৃদ্যতাপূর্ণ সম্পর্ক ছিন্ন করার ঘৃণ্য ষড়যন্ত্রে লিপ্ত স্থানীয় বা বৈশ্বিক কোনো শক্তিকে কিছুতেই প্রশ্রয় দেবে না।

উপসংহার
এই নিবন্ধে বিভিন্ন দৃষ্টিকোণ থেকে মুসলিম উম্মাহর পুনর্জাগরণ এবং শ্রীলংকার সংখ্যালঘু মুসলিম ইস্যুটি বিশ্লেষণ করা হয়েছে। আন্তর্জাতিক মুসলিম উম্মাহর রয়েছে প্রচুর সম্পদ ও শক্তি, তারপরও পুরো মুসলিম উম্মাহ এখন একটি ক্রান্তিকাল অতিক্রম করছে।

কারণ, আন্তর্জাতিক পরিমণ্ডলে মুসলিমউম্মাহর কর্তৃত্ব নেই, মুসলিম দেশ এবং ইসলামী আন্দোলনগুলোর মধ্যে নেই ঐক্যও। মুসলিম জাতি বড় দুটো গ্রুপে বিভক্ত হয়ে আছে। পশ্চিমের প্রভাবে সেই দুটো গ্রুপের ভেতর তৈরি হয়ে আছে আরো অনেক গ্রুপ।

পশ্চিমাবিশ্ব বিশেষত যুক্তরাষ্ট্রের এক্ষেত্রে রয়েছে আরো বড় এজেন্ডা, মুসলিমবিশ্বে তারা বিরতিহীনভাবে অগ্রহণযোগ্য সব কাজ করে চলেছে। মুসলিম উম্মাহ আজ পতিত হয়ে আছে খুবই বাজে একটা পরিস্থিতিতে এবং তাদেরই উচিত- সবার আগে এই সমস্যা এবং এর পেছনের দর্শনটা বোঝা।

আরব বসন্ত যদি পুরো মুসলিমবিশ্বে সেক্যুলারদের পরাজিত করতে পারে তবে এটা একটা টার্নিং পয়েন্ট সৃষ্টি করতে সক্ষম হবে। (বাস্তবে সে টার্নিং পয়েন্ট সৃষ্টি হয় নি, পরিস্থিতি আরো খারাপের দিকেই গেছে- অনুবাদক।)

এখন সবার আগে আমাদের উচিত নিজেদের ব্যাপারে সৎ ও সচেতন হওয়া। নিজেদের বিশ্বনেতৃত্বের আসনে সমাসীন করার যে দায়িত্ব আমাদের ওপর বর্তেছে, আমরা তা পালন করতে পারি নি। উম্মাহকে গাইড করার ক্ষেত্রেও আমরা পুরোপুরি ব্যর্থ।

১৯২৪ সালে তুরস্কে আমরা ইসলামী খিলাফাহ হারিয়েছি, খুব শীঘ্র এই তুরস্ক থেকেই আমরা খিলাফার প্রত্যাবর্তন চাই। তুরস্কের দিক থেকে তেমন বহু নিদর্শন ইতোমধ্যে দেখাও যাচ্ছে। সুতরাং আল্লাহ চাহে তো আশাবাদী আমরা হতেই পারি।

গুরুত্বপূর্ণ তথ্যসূত্র

সংক্ষিপ্ত লেখক পরিচিতি
সিদ্দীক মুহাম্মদ সুফিয়ান। শ্রীলংকার বেরুওয়ালায় অবস্থিত জামিয়া নালিমিয়া ইসলামিয়া থেকে ইসলামী শিক্ষা সম্পন্ন করেছেন। শ্রীলংকার এই জামিয়া নালিমিয়া আন্তর্জাতিক ইসলামী ইউনিভার্সিটি ফেডারেশনের স্থানীয় শাখা। আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিষয়ে তিনি অনার্স করেছেন পেরাডেনিয়া ইউনিভার্সিটি থেকে আর মাস্টার্স কমপ্লিট করেছেন কলম্বো ইউনিভার্সিটি থেকে। বর্তমানে তিনি শ্রীলংকার ইসলামী ছাত্র আন্দোলনের প্রেসিডেন্ট হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন। পাশাপাশি দাওয়াহ এবং গবেষণামূলক লেখালেখিতেও নিয়োজিত রয়েছেন। শেষ

অনুবাদ: শাকিল আদনান
সম্পাদক- মাসিক নতুন ডাক
পরিচালক- মানাম কনজ্যুমার প্রডাক্টস

আগের সবগুলো পর্বের লিংক

মুসলিম উম্মাহর পুনর্জাগরণ এবং শ্রীলংকার সংখ্যালঘু মুসলিম (৬ষ্ঠ পর্ব)

মুসলিম উম্মাহর পুনর্জাগরণ এবং শ্রীলংকার সংখ্যালঘু মুসলিম (৫ম পর্ব)

মুসলিম উম্মাহর পুনর্জাগরণ এবং শ্রীলংকার সংখ্যালঘু মুসলিম (৪র্থ পর্ব)

মুসলিম উম্মাহর পুনর্জাগরণ এবং শ্রীলংকার সংখ্যালঘু মুসলিম (৩য় পর্ব)

মুসলিম উম্মাহর পুনর্জাগরণ এবং শ্রীলংকার সংখ্যালঘু মুসলিম (২য় পর্ব)

আভিজাত্য ও দীনি সংমিশ্রণে পথ চলছে তানজীমুল উম্মাহ


সম্পর্কিত খবর


সর্বশেষ সংবাদ