আলী আবদুল মুনতাকিম
অতিথি লেখক, আওয়ার ইসলাম
প্রাগৈতিহাসিক যুগে এশিয়া বা আফ্রিকার কোন নদীর পাড়ে বন-জংগলে উলংগ নরগোত্রের নির্দয় দলপতি গোত্রের দুর্বল সদস্য বা শিশুকে কোন বিষয়ে রাগ হলে ভোতা অস্রে জখম করত। অভিনয়ে ফুটিয়ে তোলা ডিসকভারি চেনেলের বিভিন্ন অনুষ্ঠানে এসব দেখে অাৎকে উঠতাম। মনে মনে আমি বা আমার মত দর্শক স্রোতা বলতাম কী অসভ্য মানুষ ছিল এরা।
৬/৭ হাজার বছর আগের মানুষদের এনে যদি বার্মার বর্বর বৌদ্ধ আর্মিদের আরাকান মুসলিম নির্যাতনের চিত্র দেখানো যেত তাহলে তারা এসব দেখে হয়ত জংগলের হিংস্র জানোয়ার ভেবে পালাতে চাইত।
৬০ এর দশক থেকে মহাকবি আলাওলের ঐতিহ্যবাহী আরাকান মুসলিমদের কঁচুকাটা করে আসছে বর্মী হায়েনার দল। ১৯৮০ সালে আরাকান রাজ্যে ভয়াবহ জেনোসাইড শুরু হয়। বাড়িঘর স্কুল কলেজ মসজিদ মাদরাসা জ্বালিয়ে দেয়া হয়। কোরান শরিফের পাতা দিয়ে বিড়ি বানানো হয়।
বাংলাদেশ সরকার জোর প্রতিবাদ জানায় এবং আন্তজার্তিক পরিমণ্ডলে যোগাযোগ করে বার্মার উপর চাপ প্রয়োগ করতে সক্ষম হয়। বৌদ্ধ হায়েনারা কিছুটা বিরতি দেয়। ১৯৮২ সালে তারা আরাকান মুসলিমদের নাগরিকত্ব কেড়ে নেয়। ২০১৪ সালে আবার শুরু হয় জেনোসাইড।
কিছুদিন বিরতি দিয়ে গত ২৫ অগাস্ট আবার শুরু করে জাতিগত নির্মূল অভিযান। এবারের মানুষ খুন আর ঘর-বাড়ি পোড়ানোর ভয়াবহতা দুনিয়ার ইতিহাসে আর একটিও নেই। এখনও সে ভাষা আবিষ্কার হয়নি যা দিয়ে এ বর্বরতা বুঝানো যাবে।
নির্যাতনের চিত্র আমার একটি কবিতায় বর্ণনা করেছিলাম এভাবে...
বর্বর বার্মা
বৌদ্ধ সেনারা তিনশ যুবক ধরে এনে, হাত-পা বেঁধে
উপুর করে রাখে
হাত-পা কাটে, সবার পিঠে মারছে ছুড়ি, কুকিয়ে তা
বিধছে গিয়ে বুকে।
গায়ের গোস্ত আলগা করে, চামড়া ছিঁড়ে, একই সাথে
দেয় চাপিয়ে মাটি
কাছ থেকেই যায় দেখা ওই, খাকি পড়া রক্ত চোষা
বরমি সেনার ঘাটি।
হাজার শিশু ধরে এনে, নেংটা করে, হাত-পা বেঁধে
লটকিয়ে দেয় বাঁশে
বুক চিড়ে, অঙ্গ কাটে, সেনার দলে খুন করে সব
খিলখিলিয়ে হাসে।
ওই বিকেলে মা-বোন-কিশোর-যুবতী হাজার চারেক
ভর্তি করে গাড়ি
আকাশ কাঁপা কান্নার মাঝে, হৈ-হোল্লরে নিয়ে গেল
বৌদ্ধ সেনাদের বাড়ি।
মংডু জেলার দশটি গ্রাম জ্বালিয়ে দিয়ে, দুর্ভাগাদের
তাড়িয়ে দিল সব
পোড়া মাটির সুগন্ধেতে, সেনাপতি মিন অং আর সুচি
খোশ মেজাজে নীরব।
গরু-ছাগল হাঁস-মুরগি ধান-গম সবজি, শষ্য-প্রাণী
যা ছিল ওই গ্রামে
দলে-বলে নিয়ে গেল ট্রাকে ভরে নেশারঘোরে
শুধু বিনা দামে।
একদিনের এ হিসেব দেখে বন্ধু ওগো কেন আজি
চমকে উঠো তুমি
৪০ দিনের ওই নৃশংসতায় রাখাইন প্রদেশ পোড়া মাটি
যেন বিরান ভূমি।
জাতিসংঘ বসছে বুঝি, কান বুজে বলল, সুচির বারমা
ভয়ানক বর্বর
কোথায় সউদি, ওআইসি, আর্মির ঐক্য, আরবলীগ
কিসের কর সবর!!
চিন-রাশিয়া-ভারত খুশি, বলল ডেকে ওগো সুচি শোন
কী লাগবে বল
কোমর বেঁধে, তোমার পিছে আমরা আছি মিলে-মিশে
এগিয়ে তুমি চল।
মুসলিম বিশ্ব বলদের দল ওরে পাগল শেষ তো হলি
এক হবি আর কবে?
৫০ দেশের দেড়শ কোটি, একই সাথে মুতে দিলে
ভেসে যেত সবে।
সম্পূর্ণ চিত্রের সামান্যই তুলে ধরার চেষ্টা করেছি। এখনও চলমান জেনোসাইড এর ধারণা নিতে গেলে হাজারটা ভিডিও দেখা লাগবে। আর এই ভিডিও দেখতে পারা সম্ভব নয়। দুর্বল কলিজাধারী দশর্ক মারা যাবেন।
সৌদি বাদশা সালমানপুত্র আরব বিশ্বকে কয়দিন পরপর ঝাকুনি দিচ্ছেন। ইয়েমেনকে তামা করে ফেলছেন।গোপনে ইহুদিভূমি ঈসরাঈল সফর করে আসছেন বলে জানা যায়। সিএনএন, বিবিসিকে টেক্কা দেওয়ার যোগ্যতাসম্পন্ন একটিমাত্র চ্যানেল আল-জাজিরার জন্মভূমি কাতারকে আপনাদের ক্যারিশমায় একঘরে করেছেন।
ফিলিস্তিন ইস্যুতে কথা বলায় মরহুম বাদশা ফাহাদের ছেলেকে রাজবন্দী করেছেন। আহা কত ক্ষমতা আপনার।বিখ্যাত কারী সুদাইসিকে বিতর্কীত করেছেন। ট্রাম্প টাওয়ারে উপহারের ঢেউ পাঠিয়েছেন।
বর্তমান বিশ্বের এই মুহূর্তের বর্বর রাষ্ট্র, মুসলিম নিধনে তুলনাহীন হায়েনা শকুন নরপশুদের অভয়ারণ্য মগেরমূল্লূক বার্মার বিরুদ্ধে সর্বাত্মক অ্যাকশন গ্রহণের নিমিত্তে ওআইসি, নিরাপত্তা কমিটি, আরবলীগ সবাইকে নিয়ে এখনই বসুন। প্রয়োজনে ট্রাম্পের সাথে কথা বলুন। এক মুহূর্তও দেরী নয়।
লেখক: প্রকৌশলী ও কুরআন গবেষক