শুক্রবার, ১৯ এপ্রিল ২০২৪ ।। ৬ বৈশাখ ১৪৩১ ।। ১০ শাওয়াল ১৪৪৫


গরিবের সুন্দরী বউ!

নিউজ ডেস্ক
নিউজ ডেস্ক
শেয়ার

সাকিব মুসতানসির
আলেম ও বস্ত্র প্রোকৌশলী

ঘনবসতিপূর্ণ সবুজ একটা রাষ্ট্র বাংলাদেশ। বিশ্বের দুর্নীতিপরায়ণ রাষ্ট্র সমূহের তালিকায় প্রায়ই উপরের দিকে থাকে এর নাম। বিশ্বে বসবাসের অযোগ্য শহরের তালিকাতেও বাংলাদেশের রাজধানীর নাম থাকে।

অর্থনৈতিক কাঠামো সম্পূর্ণ রূপে পরনির্ভর!  পৃথিবীর বোকাটে রাষ্ট্রগুলোর মত নিজের দেশের জলস্থল, প্রকৃতি পরিবেশ ধ্বংস করে মিল ইন্ডাস্ট্রি করে পেটের জোগান জুগিয়ে চলছে পেশাজীবীদের সবচেয়ে বড় একটা অংশ। যদিও লাভের গুড় সবটাই নিয়ে যাচ্ছে বিদেশী বেনিয়ারা। অর্থনৈতিক বৈষম্য ভয়াবহ আকার ধারণ করছে ক্রমশ। বেকার সমস্যা বাড়ছে জ্যামিতিক হারে অথচ কর্মসংস্থানের নতুন নতুন ব্যবস্থাপনা হচ্ছেনা বললেই চলে। শিক্ষিত যুব সমাজ হাতাশাগ্রস্ত হয়ে একসময় নেশায় জড়াচ্ছে। সন্ত্রাস তরুণদের কাছে ক্রেজে পরিণত হচ্ছে। ক্রমশ বাড়ছে হানাহানি খুন জখম। অপরাধীদের মাঝে বিস্তার করছে আশ্চর্য নির্লিপ্ততা!

রাজনৈতিক সহবস্থান ও গণতন্ত্র চর্চার অভাব ক্রমশ প্রতিষ্ঠা করছে স্থায়ী হিংসা ও ঘৃণার বীজ। রাজনীতির মাঠ দখল করে আছে স্বার্থপর, তেলবাজ, বুদ্ধিহীন, নতজানু সব লোকজন। দেশের প্রতি যাঁদের ভালোবাসা নিতান্তই সামান্য। অসম ক্ষমতার অমিমাংসিত লড়াই বাড়ছে তো বাড়ছেই!! এতো অসামঞ্জস্যতা ও অপ্রাপ্তির পরও এই দেশের সাধারণ জনগণ দিনশেষ বড় করে স্বাস ছেড়ে বলে 'বেশ ভালো আছি! কারণ এদেশের ঘাস এখনো সবুজ। এখনো ঘাসের ডগায় শিশিরজল মুক্তোর মতো ঝলমল করে।

এদেশে এখনো বসন্ত এলে কোকিল গায়, ধানশালিক ঘরে ফিরে। এখনো কৃষক ফসলের ডালা বিছাতে গায়ের ঘামে মাটিতে জল সিঞ্চন করে। বিশ্বের সবচেয়ে বড় ম্যানগ্রোভ আছে এদেশেই। আছে ১৪৪ বর্গকিলোমিটার বিস্তৃত পৃথিবীর দীর্ঘতম সমুদ্রবন্দর। আছে পাহাড় বৃক্ষ আর সমুদ্রের মিলনে অদ্ভুত সুন্দর ও ক্ষমতাবান অভয়ারণ্য। আছে নদনদী খালবিল। আছে সবচেয়ে মূল্যবান জ্বালানি সম্পদ প্রাকৃতিক গ্যাস ও একগাদা সস্তা কর্মীবাহিনী।

গরিবের ঘরে সুন্দরী বউ থাকলে যা হয়! কাছের দূরের সকলেরই চোখ লেগে থাকে। অযাচিত সুহৃদ ও অহেতুক শত্রুরও অভাব থাকেনা। পাড়ার বখাটে ছেলেপিলে সারাদিনই বাড়ির সামনে ভিড় করে আর আপাতনূয়ে পরা বৃদ্ধও কথা শুনাতে ছাড়ে না!!

বিশ্বের এককোণে পড়ে থাকা সাগর পারের এই ছোট্ট রাষ্ট্রটার প্রতি বিশ্বের ক্ষমতাধর রাষ্টগুলোর বিস্ময় চোখ আর কার্যকলাপ বরাবরই চোখে পড়ার মতো। শুধু আজ নয়, অতীতেও একাধিকবার বিদেশি দস্যু কখনো বেনিয়ার বেশে কখনো বন্ধুর বেশে কখনো জোর করে এদেশে লুটতরাজ চালিয়ে নিজেদের দেশকে করেছে সম্পদে আর প্রাচুর্যে প্রতিষ্ঠিত। দখল শোষণ নিপীড়ন চালিছে অনবরত।

কখনো পূর্তগিজ নাও ভিড়েছে আমাদের ঘাটে, কখনো ফরাসিরা নাও ভিড়িয়েছে। বৃটিশ বেনিয়ারা ২০০ শত বছর শুষে চুষে ছোবড়া বানিয়ে রেখে পালিয়েছে তাও মাত্র ৭০ বছর আগে! আমার গরিব দেশের প্রাকৃতিক সম্পদই কাল হয়েছে আমাদের জন্য। বিশ্বের বখাটে রাষ্ট্রগুলোর চোখ আর তাঁদের পারস্পরিক লড়াইয়ের ক্ষেত্রে পরিণত হয়েছে বা হতে যাচ্ছে বলা যায়।

বিশ্ব রাজনীতির নতুন মেরুকরণ ও আধুনিক স্ট্রাকচারে আগেরমতো সৈন্য সামন্ত নিয়ে দেশ দখল করার নিয়ম রহিত হয়েছে আগেই। এখন সবাই সৈন্য পালে নিজের অধিকারে থাকা অংশটুকুর নিরাপত্তা নিশ্চিত করার জন্য। তাই বলে দেশের উপর প্রভাব বিস্তার করে নিজের পছন্দমত রাষ্ট্র চালক নিয়োগ করা আর নানান বৈধ উপায়ে দেশের সম্পদ লুটের প্রকৃয়া থেমে থাকেনি। নতুন মুড়কে নতুকে ঢঙ্গে নিজেকে আপডেট করে নিয়েছে মাত্র পুরাতন আর নতুন বিশ্ব মুড়ল সম্প্রদায়।

পার্বত্য তিন জেলা, সিলেটের পাহাড়ি এলাকা, সুন্দরবন ও বিশাল সমুদ্র সৈকত নিয়ে দীর্ঘদিন ধরে নানান পরীক্ষা নিরিক্ষা প্ল্যান প্রোগ্রাম চালাচ্ছে বিশ্বের মোড়ল সম্প্রদায়। আমাদের নিকট প্রতিবেশী, দূর প্রতিবেশী কেও এই প্রকৃয়ার বাইরে নয়। সবার শকুন দৃষ্টির ভেতরেই আছে ।

বিশেষ করে পার্বত্য তিন জেলাকে ঘিরে বিভিন্ন সময় বিভিন্ন চক্রান্তের জাল বোনা হয়েছে। বাঙ্গালি পাহাড়ি দাঙ্গা লাগানো হয়েছে । গড়ে তুলা হয়েছে একদল স্বাধীনতাকামীও! যারা এই এলাকাকে বাংলাদেশ থেকে স্বাধীন করতে চায়!! ক্ষুদ্র একটা অংশ ও ক্ষুদ্র জনবল নিয়ে ভয়াবহ এই সাহস করতে যে পেছনে বড় কোন শক্তির সমর্থন লাগে তা বুঝতে বিশেষজ্ঞ হওয়া লাগে না। সেই শক্তিটার প্রভাব এতোটাই বেশি যে,পার্বত্য বিদ্রোহ আমরা দমন বা নির্মুল করতে অক্ষম; আমরা বাধ্য হয়ে শান্তি চুক্তি করে পরিস্থিতি শামল দিয়েছি!!!

পার্বত্য তিন জেলা সাথে আরাকান মিলিয়ে ইসরায়েলের মত একটা স্থায়ী বিষফোঁড়া প্রতিষ্ঠার সম্ভাবনার গোপন ফরমোলার সম্ভাবনা নিয়ে রাষ্ট্রবিদরা অনেক আগে থেকে জাতিকে সতর্কবার্তা দিয়ে যাচ্ছেন। আজকের রোহিঙ্গা নির্যাতন উচ্ছেদকে বিচ্ছিন্ন কোন ঘটনা মনে করার কারণ নেই। সুনিদৃষ্ট একটা পরিকল্পনার অংশ হিসেবেই নিপীড়ন অভিযান শুরু হয়েছে বলে বিশেষজ্ঞরা মনে করছেন। এই এলাকাকে অস্থিতিশীল করে তুলতেই মূলত বলি দেয়া হচ্ছে সাধারণ মুসলমানদের।

মিয়ানমার জান্তা সরকার কট্টর চিন সমর্থক। চিনের সরাসরি সমর্থন ও সাহায্য নিয়েই আমেরিকার মতো সুপার পাওয়ারের সাথে টক্কর দিয়ে বহাল তবিয়তে টিকে আছে। আমেরিকা প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষ সমর্থণ দিয়েও গণতান্ত্রিক নেত্রী সূচিকে ক্ষমতার কেন্দ্রে নিতে পারেনি। চিনের সাথে সরাসরি লড়াই এড়াতে পূর্ণ শক্তিও বিনিয়োগ করতে পারছে না ফলে নোবেল দিয়ে, জাতিসংঘের সমর্থন ও নিজেদের সুহৃদ বড় রাষ্ট্রগুলোকে কাজে লাগিয়ে দীর্ঘদিনের চেষ্টায় সূচিকে ক্ষমতার সামান্য ভাগীদার বানাতে পেরেছে মাত্র। যার ফলে আমরা দেখতে পাচ্ছি বিশ্বের তাবৎ চাপ উপেক্ষা করেই মিয়ানমার তাঁদের আগ্রাসন চালাচ্ছে নির্বিগ্নে কেননা রোহিঙ্গাদের রক্ষায় জাতিসংঘ কখনই শান্তিরক্ষী পাঠাতে পারবে না।

অমেরিকা চীনের সাথে এখনই সরাসরি লড়াই বাঁধাতে আগ্রহী নয় বরং ভারত ও বাংলাদেশকে হাতে রেখে মিয়ানমারের উপর চাপ প্রয়োগের চেষ্টা চালাবে।

আগামী আধুনিক বিশ্বের নতুন দুই সুপার পাওয়ার ভারত ও চীনের উপর নজদারি করতে আমেরিকার এই অঞ্চলে একটা ঘাটি বসানো খুবই প্রয়োজন তবে তারজন্য কৌশলে ভারত ও বাংলাদেশকে দিয়েই কাজ সারতে আগ্রহী। ঠিক একই কারণে পরষ্পরের উপর নজরদারী করতে ভারত ও চীনেরও এই এলাকায় একটা ঘাটির প্রয়োজন যে কারণে প্রত্যেকেই চিন্তা ভাবনা করে চাল দিচ্ছে । ভারতের হাতে আছে আমেরিকার সমর্থন আর বাংলাদেশ। মাঝখানে বলি হচ্ছে রাখাইন বাঙ্গালী মুসলমানরা।

ভারত-চীন-আমেরিকা এই তিন সমীকরণের মাঝে হঠাত করেই এবার নতুন আরেকটা সমীকরণ যুক্ত হয়েছে তুরস্ক।এর আগে অতীতে একাধকবার রাখাইন এলাকায় গণহত্যা চালানো হলেও বিশ্বের উন্নত রাষ্ট্র বা জাতিসংঘের কোন এক্সট্রা প্রতিক্রিয়া দেখা যায় নি যা এবার ব্যাপকভাবে দেখা যাচ্ছে।

বিশেষজ্ঞরা মনে করছেন মুসলিম বিশ্বে তুরষ্ক ক্রমশ জনপ্রিয় ও সুপার পাওয়ারে পরিণত হওয়ায় হঠাত করে তুরস্কের ফার্স্ট লেডির বাংলাদেশে আগমন ও রোহিঙ্গাদের জন্য উপযুক্ত ব্যবস্থা নেয়ার প্রস্তাব নতুন দিকের উন্মোচন করেছে। ফলে সবাই নতুন করে ভাবতে বসতে বাধ্য হয়েছে। যতকিছুই হোক একটা প্রভাবশালী মুসলিম দেশের এই এলাকায় প্রভাবশালী হয়ে উঠার যেকোন সম্ভাবনা এই তিন রাষ্ট্রই নিজেদের জন্য ক্ষতিকর মনে করে ফলে বিশ্বে এঁদের প্রভাবে প্রভাবিত রাষ্ট ও সংঘগুলো সরব হয়ে উঠেছে।

এই ত্রিমুখী মেরুকরণের ফাঁদে পরে বাংলাদেশ মহা ফাঁপরে আছে সন্দেহ নেই। সামান্য একটা ভুলে চিরদিনের জন্য বাংলাদেশের স্বাধীনতা সার্বভৌমত্ব হুমকির মুখে পরে যেতে পারে! বাংলাদেশের মানুষের স্বাভাবিক সহজাত নরম মন রোহিঙ্গাদের জন্য সব দিয়ে দিতে রাজি।

মুসলিম বিশ্ব ভ্রাত্বিত্যের অনুপম নিদর্শন অতীতেও দেখিয়েছে বাংলাদেশের জনগণ আলহামদুলিল্লাহ্‌। এবার বাংলাদেশের মানুষের সামনে নতুন আরেকটা চ্যালেঞ্জ যোগ হয়েছে। রোহিঙ্গা ভাইদের উপযুক্ত খেদমতের আঞ্জাম দেয়ার পাশাপাশি এই ইস্যুকে কেন্দ্র করে যেকোন অপ্রীতিকর ঘটনার ক্ষীণ সম্ভাবনাকেও গুরুত্ব দিয়ে বিবেচনা করে মুসলিম বিশ্বের গুরুত্বপূর্ণ সদস্যদের সাথে জোর সম্পর্ক গড়ে তুলতে হবে যাতে বাংলাদেশের যেকোন বিপদে মুসলিম বিশ্বকে পাশে পাওয়া যায় পাশাপশি রোহিঙ্গা সমস্যার স্থায়ী সমাধানে মুসলিন রাষ্ট্রগুলোকে একতাবদ্ব করে করণীয় ঠিক করতে হবে তবেই তৃমুখি সংকট থেকে নিজে বাচা যেমন সম্ভব হবে তেমনি রোহিঙ্গাদের জন্য কার্যকর ভূমিকা রাখা সম্ভব হবে।


সম্পর্কিত খবর