বুধবার, ২৩ এপ্রিল ২০২৫ ।। ১০ বৈশাখ ১৪৩২ ।। ২৫ শাওয়াল ১৪৪৬

শিরোনাম :
কাশ্মীরের পাহেলগাঁওয়ে হামলাকারীদের সম্পর্কে যা জানা গেল গুরুতর অসুস্থ মাওলানা গাজী ইয়াকুব কাশ্মিরে হামলার পর সৌদি থেকে তড়িঘড়ি ভারতে ফিরলেন মোদি হারামাইনের ইমাম-খতিবদের সোশ্যাল মিডিয়ায় কোনো অ্যাকাউন্ট নেই সমমনা দলের সঙ্গে ইসলামী আন্দোলনের সংলাপ আজ নারী সংস্কার কমিশনের প্রস্তাবে ধর্মীয় মূল্যবোধের তোয়াক্কাই করা হয়নি মাওলানা মিজানুর রহমান আজহারী  মহানবী (সা.) সম্পর্কে কটুক্তি, ইবি কর্মকর্তাকে গণপিটুনি নববধূর সঙ্গে সাক্ষাতের সময় স্বামী যে দোয়া পড়বেন নারী বিষয়ক বিতর্কিত কমিশন বাতিলের দাবি খেলাফত মজলিসের আল্লামা মুবারকুল্লাহকে গাড়ি উপহার দিলেন নিজ গ্রামের প্রবাসীরা

রাখাইনে হস্তক্ষেপ চেয়ে জাতিসংঘে ১২ নোবেলজয়ীর চিঠি

নিউজ ডেস্ক
নিউজ ডেস্ক
শেয়ার

মিয়ানমারের রাখাইন রাজ্যে চলমান সংকট নিরসনে জাতিসংঘের জরুরি হস্তক্ষেপে চেয়ে খোলা চিঠি লিখেছেন নোবেলজয়ী ও বিশিষ্টজনরা। চিঠিতে স্বাক্ষর করেছেন ১২ নোবেলজয়ী, ১৫ বিশিষ্টজন। এঁদের মধ্যে শান্তিতে নোবেলজয়ী ও গ্রামীণ ব্যাংকের প্রতিষ্ঠাতা ড. মুহাম্মদ ইউনূস রয়েছেন। আজ বুধবার ঢাকায় ইউনূস সেন্টার থেকে চিঠিটি সংবাদ মাধ্যমে পাঠানো হয়।

চিঠিটি হুবহু তুলে দেওয়া হলো :

নিরাপত্তা পরিষদের প্রিয় সভাপতি ও সদস্যবৃন্দ

রোহিঙ্গা সংকট পর্যালোচনার উদ্দেশ্যে নিরাপত্তা পরিষদের সভা আহ্বান করার জন্য প্রথমে ধন্যবাদ জানাচ্ছি। আমরা আবার মনে করিয়ে দিতে চাই যে, মিয়ানমারের রাখাইন এলাকায় মানবীয় ট্র্যাজেডি ও মানবতার বিরুদ্ধে অপরাধ যে ভয়ংকর রূপ নিয়েছে - তার অবসানে আপনাদের জরুরি হস্তক্ষেপ প্রয়োজন। আপনাদের এই মুহূর্তের দৃঢ়সংকল্প ও সাহসী সিদ্ধান্তের ওপর মানব ইতিহাসের ভবিষ্যৎ গতিপথ অনেকটাই নির্ভর করছে।

বিভিন্ন সূত্র থেকে প্রাপ্ত তথ্য অনুযায়ী, রাখাইন রাজ্যে মিয়ানমার সেনাবাহিনীর সাম্প্রতিক আক্রমণে শত শত রোহিঙ্গা জনগণ নিহত হচ্ছে। লাখ লাখ মানুষ বাস্তুচ্যুত হচ্ছে। বহু গ্রাম সম্পূর্ণ জ্বালিয়ে দেওয়া হয়েছে, নারীদের ধর্ষণ করা হচ্ছে, বেসামরিক মানুষদের নির্বিচারে আটক করা হচ্ছে এবং শিশুদের হত্যা করা হচ্ছে। আতঙ্কের বিষয়, মানবিক সাহায্য সংস্থাগুলোকে এই এলাকায় প্রায় একবারেই প্রবেশ করতে দেওয়া হচ্ছে না, যার ফলে দারিদ্র্যপীড়িত এই এলাকায় মানবিক সংকট ভয়াবহ আকার ধারণ করছে। স্থানীয় সরকার সূত্রগুলোর মতে, গত দুই সপ্তাহে তিন লাখেরও বেশি মানুষ তাদের জীবন বাঁচাতে বাংলাদেশে প্রবেশ করেছে। মৃত্যুর মুখে নারী, পুরুষ ও শিশুদের এই ব্যাপক বাস্তুচ্যুতি ও অভিবাসন থেকে সৃষ্ট পরিস্থিতি প্রতিদিন আরো খারাপ হচ্ছে।

সহিংসতার মাত্রা বৃদ্ধি পেলে গত বছরের শেষে আমরা কয়েকজন নোবেল লরিয়েট ও বিশ্বের বিশিষ্ট নাগরিকবৃন্দ এ বিষয়ে জরুরি হস্তক্ষেপের আহ্বান জানিয়ে আপনাদের নিকট অনুরোধ জানিয়েছিলাম। আপনাদের হস্তক্ষেপ সত্ত্বেও পরিস্থিতির কোনো উন্নতি হয়নি। পরিস্থিতির ক্রমাগত অবনতির পরিপ্রেক্ষিতে নিরীহ নাগরিকদের ওপর অত্যাচার বন্ধ এবং রাখাইন এলাকায় স্থায়ী শান্তি প্রতিষ্ঠার লক্ষ্যে সুনির্দিষ্ট ও কার্যকর পদক্ষেপ নেওয়ার জন্য আমরা আবার আপনাদের কাছে অনুরোধ জানাচ্ছি।

আমরা পরিস্থিতি মোকাবিলায় জাতিসংঘ নিরাপত্তা পরিষদের সম্ভাব্য সকল হস্তক্ষেপের অনুরোধ জানাচ্ছি, যাতে নিরীহ বেসামরিক মানুষদের ওপর নির্বিচার সামরিক আক্রমণ স্থায়ীভাবে বন্ধ হয়, যার ফলে এই অসহায় মানুষগুলোকে নিজ দেশ ছেড়ে অন্যত্র পালিয়ে যেতে এবং রাষ্ট্রহীন মানুষে পরিণত হতে না হয়।

মিয়ানমার সরকার যে যুক্তিতে রোহিঙ্গাদের নাগরিকত্ব অস্বীকার করছে, তা একেবারেই আজগুবি। ১৯৪৮ সালে ব্রিটিশ শাসন থেকে বার্মা স্বাধীন হওয়ার পর এবং পরবর্তী বিভিন্ন সরকারের সময়কালে বার্মা তার সীমানাভুক্ত রোহিঙ্গাসহ সকল জাতিগোষ্ঠীকে পূর্ণ নাগরিক বলে স্বীকার করে নেয় এবং সংসদে তাদের প্রতিনিধিত্বও দেয়।

এটা আশ্চর্যজনক যে, ১৯৮০-র দশকে সে দেশের সামরিক শাসকরা হঠাৎ করেই আবিষ্কার করে বসে যে, রোহিঙ্গারা বার্মিজ নয়। এরপর তারা রোহিঙ্গাদের নাগরিকত্ব কেড়ে নেয় এবং তাদেরকে সে দেশ থেকে বিতাড়িত করার জন্য বিভিন্ন সামরিক ও রাজনৈতিক কৌশল গ্রহণ করে। শুরু হয় জাতিগত ও ধর্মীয় নিধনের উদ্দেশ্যে রোহিঙ্গাদের ওপর সুপরিকল্পিত নির্যাতন।

জাতিসংঘ মহাসচিব যথার্থই বলেছেন যে, “রোহিঙ্গাদের দীর্ঘদিনের ক্ষোভ ও অমীমাংসিত দুর্দশা আঞ্চলিক অস্থিতিশীলতার একটি অনস্বীকার্য উপাদানে পরিণত হয়েছে। মিয়ানমারের শাসকদের অবশ্যই সহিংসতার এই দুষ্ট চক্র বন্ধ করার দৃঢ়প্রতিজ্ঞ সিদ্ধান্ত নিতে হবে এবং নিপীড়িত সবার নিরাপত্তা ও সহায়তা নিশ্চিত করতে হবে।”

আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের চাপের মুখে মিয়ানমার সরকার ২০১৬ সালে যে “রাখাইন অ্যাডভাইজরি কমিশন” গঠন করেছিল তার সুপারিশগুলো বাস্তবায়নে মিয়ানমার সরকারকে উদ্বুদ্ধ করতে আপনারা যেন জরুরি পদক্ষেপ গ্রহণ করেন - সেজন্য আমরা আবার আপনাদের অনুরোধ জানাচ্ছি। কফি আনানের সভাপতিত্বে গঠিত এ কমিশন - যার অধিকাংশ সদস্যই ছিলেন মিয়ানমারের নাগরিক-রোহিঙ্গাদের নাগরিকত্ব প্রদান, অবাধ চলাচলের সুযোগ, আইনের চোখে সমান অধিকার, রোহিঙ্গাদের স্থানীয় প্রতিনিধিত্ব নিশ্চিত করা যার অভাবে স্থানীয় মুসলিমরা তাদের অধিকার থেকে বঞ্চিত হচ্ছে, এবং নিজ ভূমিতে ফিরে আসা মানুষদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে জাতিসংঘের সহায়তা নিশ্চিত করার সুপারিশ করেছিল। মিয়ানমার নিরাপত্তা বাহিনীর ওপর জঙ্গিদের আক্রমণ এই আশঙ্কাকেই সত্য প্রমাণিত করল। স্থায়ী শান্তির জন্য গঠনমূলক ব্যবস্থা নেওয়া না হলে পরিস্থিতির আরো অবনতি ঘটবে, যা পার্শ্ববর্তী দেশগুলোর নিরাপত্তার জন্যও হুমকি হয়ে দাঁড়াবে।

কমিশনের সুপারিশগুলো বাস্তবায়নের লক্ষ্যে আমরা নিম্নস্বাক্ষরকারীরা নিম্নলিখিত প্রস্তুতিমূলক পদক্ষেপগুলো সুপারিশ করছি :

১. আনান কমিশনের সদস্যদের নিয়ে অবিলম্বে একটি ‘বাস্তবায়ন কমিটি’ গঠন করা, যার কাজ হবে কমিশনের সুপারিশগুলোর যথাযথ বাস্তবায়ন তত্ত্বাবধান করা।
২. দেশটি থেকে শরণার্থীর প্রবাহ বন্ধ করতে অবিলম্বে পদক্ষেপ গ্রহণ।
৩. আন্তর্জাতিক পর্যবেক্ষকদের নিয়মিতভাবে পীড়িত এলাকাগুলো পরিদর্শন করতে আমন্ত্রণ জানানো।
৪. যেসব শরণার্থী এরই মধ্যে দেশ ত্যাগ করেছে, তাদের ফিরিয়ে নিয়ে যাওয়ার ব্যবস্থা করা।
৫. ফিরে যাওয়া শরণার্থীদের পুনর্বাসনের জন্য জাতিসংঘের অর্থায়ন ও তত্ত্বাবধানে মিয়ানমারে ট্রানজিট ক্যাম্প স্থাপন।
৬. বাস্তবায়ন কমিটির কর্তৃত্বে আনান কমিশনের প্রতিবেদনের সুপারিশ মোতাবেক রোহিঙ্গাদের নাগরিকত্ব প্রদান।
৭. রোহিঙ্গাদের রাজনৈতিক স্বাধীনতা ও অবাধে চলাফেরার স্বাধীনতা নিশ্চিত করা।

রোহিঙ্গাদের বিরুদ্ধে এই ক্রমাগত সহিংসতা বন্ধ করতে জাতিসংঘ ও আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের কর্মপন্থায় সাহসী পরিবর্তনের প্রয়োজন আছে বলে আমরা মনে করি। মিয়ানমার সরকারকে জানিয়ে দেওয়া দরকার যে, সে দেশের জন্য আন্তর্জাতিক বাণিজ্যিক সম্পর্ক ও অর্থায়ন রোহিঙ্গাদের প্রতি মিয়ানমার সরকারের নীতিতে গুরুত্বপূর্ণ ও ইতিবাচক পরিবর্তনের ওপর নির্ভরশীল। অপপ্রচার, ঘৃণা ও সহিংসার উসকানি বিশেষ করে রোহিঙ্গাদের বিরুদ্ধে রাষ্ট্র পরিচালিত সহিংসতা অবশ্যই বন্ধ করতে হবে, বৈষম্যমূলক বিভিন্ন নীতি ও আইন বাতিল করতে হবে এবং কফি আনান কমিশনের সুপারিশগুলো অবিলম্বে বাস্তবায়ন করতে হবে।

বিশ্ববাসী জাতি সংঘ নিরাপত্তা পরিষদ এই অঞ্চলে স্থায়ী শান্তি প্রতিষ্ঠা ও মানবিক সমস্যা সমাধানে তার ভূমিকা পালন করেছে - এটা দেখার অপেক্ষায় রয়েছে।

আপনাদেরই বিশ্বস্ত,
প্রফেসর মুহাম্মদ ইউনূস,
নোবেল শান্তি পুরস্কার ২০০৬ জয়ী

মেইরিড মাগুইর,
নোবেল শান্তি পুরস্কার ১৯৭৬ জয়ী

বেটি উইলিয়ামস,
নোবেল শান্তি পুরস্কার ১৯৭৬ জয়ী

আর্চবিশপ ডেসমন্ড টুটু,
নোবেল শান্তি পুরস্কার ১৯৮৪ জয়ী

অসকার আরিয়াস সানচেজ,
নোবেল শান্তি পুরস্কার ১৯৮৭ জয়ী

জোডি উইলিয়ামস,
নোবেল শান্তি পুরস্কার ১৯৯৭ জয়ী

শিরিন এবাদি,
নোবেল শান্তি পুরস্কার ২০০৩ জয়ী

লেইমাহ বোয়ি,
নোবেল শান্তি পুরস্কার ২০১১ জয়ী

তাওয়াক্কল কারমান,
নোবেল শান্তি পুরস্কার ২০১১ জয়ী

মালালা ইউসুফজাই,
নোবেল শান্তি পুরস্কার ২০১৪ জয়ী

স্যার রিচার্ড জে রবার্টস,
চিকিৎসাশাস্ত্রে ১৯৯৩ সালে নোবেল পুরস্কার জয়ী

এলিজাবেথ ব্ল্যাকবার্ন,
চিকিৎসাশাস্ত্রে ২০০৯ সালে নোবেল পুরস্কার জয়ী

সাইয়েদ হামিদ আলবার,
মালয়েশিয়ার সাবেক পররাষ্ট্রমন্ত্রী

এমা বোনিনো,
ইতালির সাবেক পররাষ্ট্রমন্ত্রী

স্যার রিচার্ড ব্র্যানসন,
ব্যবসায়ী নেতা ও সমাজসেবী

গ্রো হারলেম ব্রান্ড্টল্যান্ড
নরওয়ের প্রাক্তন প্রধানমন্ত্রী

মো. ইব্রাহীম,
উদ্যোক্তা ও সমাজসেবী

কেরি কেনেডি,
মানবাধিকার কর্মী

আলা মুরাবিত,
লিবীয় নারী অধিকার প্রবক্তা, এসডিজি সমর্থক

নারায়ণ মূর্তি,
ব্যবসায়ী নেতা

কাসিত পিরোমিয়া,
থাইল্যান্ডের সাবেক পররাষ্ট্রমন্ত্রী

সুরিন পিটসুয়ান,
আসিয়ানের সাবেক মহাসচিব

পল পোলম্যান,
ব্যবসায়ী নেতা, এসডিজি সমর্থক

ম্যারি রবিনসন,
আয়ারল্যান্ডের সাবেক প্রেসিডেন্ট

জেফরে ডি সাচ,
পরিচালক, জাতি সংঘ সাসটেইনেবল ডেভেলপমেন্ট সলিউশন্স নেটওয়ার্ক

ফরেস্ট হুইটেকার,
অভিনেতা, এসডিজি সমর্থক

জোকেন জাইট্জ,
ব্যবসায়ী নেতা ও সমাজসেবী

সূত্র  : এনটিভি


সম্পর্কিত খবর



সর্বশেষ সংবাদ