বৃহস্পতিবার, ২৮ মার্চ ২০২৪ ।। ১৪ চৈত্র ১৪৩০ ।। ১৮ রমজান ১৪৪৫


মাননীয় প্রধানমন্ত্রী! রোহিঙ্গাদের ক্ষুধার্ত রেখে আপনি খেতে পারেন না

নিউজ ডেস্ক
নিউজ ডেস্ক
শেয়ার

এইচ এম মাহমুদ হাসান সিরাজী
প্রিন্সিপাল, জামিয়া ওসমান ইবনে আফফান রা.

মাননীয় প্রধানমন্ত্রী! স্বজন হারানোর ব্যথা আপনার চেয়ে বেশি আর কে উপলব্ধি করতে পারবে?
এতিম হওয়ার দুঃখ আপনার চেয়ে বেশি আর কে বুঝতে পারবে?

আপনিতো অনেক দুঃখ-কষ্টের মাঝেও কঠিন পরিস্থিতির মোকাবালা করতে পারেন। প্রচণ্ড ঝড়েও নৌকার বৈঠা শক্ত হাতে ধরার অভিজ্ঞতা আপনার রয়েছে। বাঘের থাবা থেকেও গোস্তের টুকরা ছিনিয়ে আনার দুঃসাহস আপনার রয়েছে।

একমাত্র আপনিই পেরেছেন বিশ্বের প্রভাবশালী-পরাশক্তি রাষ্ট্রগুলোকে বৃদ্ধাঙ্গুলী প্রদর্শন করতে। বিশ্বের প্রভাবশালী ব্যক্তিদের মাঝেও আপনি অন্যতম স্থানে রয়েছেন।

রোহিঙ্গা ইস্যুতে আপনাকে আরো সাহসী ভূমিকায় এগিয়ে আসতে হবে। আপনার ধ্বমনিতে শেখ মজিবের রক্ত প্রবাহিত। সুতরাং আপনাকে আপনার বাবার মত ৪৭ এর দাঙ্গার সময়কার ভূমিকায় আসতে হবে।

অবলা নারীদের চিৎকার কিন্তু আপানার বাবাও সহ্য করতে পারতেন না। আপনার নিশ্চয় মনে আছে বা আপনি ভাল করে জানেন, ৪৭ এর দাঙ্গার পর আপনার বাবা আর তার বন্ধু ইয়াকুব নামের ফটোগ্রাফার মহাত্নাজীর সাথে দেখা করে কী উপহার দিয়ে ছিলেন?

মুসলমান মেয়েদের স্তনকাটা ছবি, মুসলমান শিশুদের মাথাকাটা লাশের ছবি, মুসলমানদের পুরে যাওয়া বস্তি, ভেঙ্গে দেওয়া মসজিদসহ তৎকালীন ক্ষতিগ্রস্ত মুসলমান চিত্রগুলো কত চমৎকার করে তিনি মহাত্নাজীর সামনে পেশ করেছিলেন সে কথা কিন্তু আপনি আমাদের চেয়ে বেশি জানেন।

ফলে মহাত্নাজীর অন্তরে কিন্তু এর একটা ভাল প্রভাবও পড়েছিল।

আজ রোহিঙ্গাদের সাথে কি হচ্ছে না বলুন! বিশ্বদরবারে দেখাতে কতজন স্তনকাটা মুসলমান মেয়ের ছবি লাগবে! মাথাছাড়া কতটা শিশুর লাশ প্রয়োজন? কতটা পুরিয়ে দেওয়া জালিয়ে দেওয়া মসজিদ-মাদরাসার ছবি চাই? আরাকানে ওসব ভুরি ভুরি।

এ ব্যাপারে গুটিকয়েক মুনাফিক মার্কা মুসলমান নেতা ছাড়া বাকি দেড়শ কোটি মুসলমানের দোয়া-দয়া আপনার মাথার উপর থাকবে। হাতেগুনা শূন্য পার্সেন্ট ধর্মবিদ্বেষী ছাড়া বাকি সাতশ কোটি আদম সন্তানের সমর্থন ও ভালবাসা আপনি পাবেন।

প্লীজ আপনাকেই এগিয়ে আসতে হবে। এ রাজধানী থেকেও কিন্তু রোহিঙ্গাদের পোড়া রক্তের ঘ্রান নাকে আসছে। তাদের গগণবিদারী চিৎকারের আওয়াজ কানে আসছে।

তাদের আহাজারিতে এদেশের আকাশ বাতাশ ভারী হয়ে আসছে। এরা আপনার প্রতিবেশী। এদের ক্ষুধার্ত রেখে আপনি আপনার মুখে অন্য দিতে পারেন না। এদের বিবস্ত্র রেখে আপনি আপনাকে আবৃত করতে পারেন না। এরা আপনার শাসিত এদেশকে নিরাপদ আশ্রয়স্থল মনে করে। এরা এদেশের জনগনকে আপন মনে করে।

সুতরাং আপনি এদের ঘাড় ধাক্কা দিয়ে বের করে দিতে পারেন না।

আপনি ওদের নিয়ে আরো গভীরভাবে ভাবুন। ওদের সাহায্যে এগিয়ে আসুন। ওদের জন্য স্থায়ী ব্যবস্থা করুন। ওরা একদিন ভালো প্রতিদানই দেবে।

এদেশে আশ্রয় নেওয়া কর্মঠদের ওয়ার্কপার্মিট বা কাজের অনুমোদন দিয়ে বেঁচে থাকার রাস্তা করে দিন। আর যুবকদের বড় একটা দলকে সশস্ত্র ট্রেনিং দিয়ে তাদের ভিটেমাটি স্বাধীন করার সুযোগ করে দিন। আর আপনি প্রতিবেশী রাষ্ট্রের প্রভাবশালী নেত্রী হিসাবে তাদের জন্য আন্তর্জাতিক স্বীকৃতির ব্যবস্থা করুন।
এখানে কুটনৈতিক খেলাটাও আপনাকেই খেলতে হবে।

রোহিঙ্গা ইস্যুতে যদি আপনি সঠিক নেতৃত্ব দিতে না পারেন তাহলে কিন্তু আমাদের সবাইকে এর কড়া মাশুল দিতে হবে।

এখানে শকুনে ঘাটি করার সুযোগ পেয়ে যাবে। তখন কিন্তু পরিস্থিতি আরো অশান্ত হয়ে উঠবে।

কূপের মুখ ছোট থাকতেই তাকে আটকে দেন নতুবা বাঁধ ভাঙ্গয় জোয়ার সামাল দেওয়া আপনার জন্য কঠিন হয়ে পড়বে।

প্রধানমন্ত্রী’র কাছে এক মাদরাসা শিক্ষার্থীর চিঠি


সম্পর্কিত খবর


সর্বশেষ সংবাদ