শনিবার, ২০ এপ্রিল ২০২৪ ।। ৬ বৈশাখ ১৪৩১ ।। ১১ শাওয়াল ১৪৪৫


মিয়ানমারের রাষ্ট্রদূতকে বহিষ্কারে পাক জামায়াতের আল্টিমেটাম

নিউজ ডেস্ক
নিউজ ডেস্ক
শেয়ার

আওয়ার ইসলাম: ইসলামাবাদ থেকে মিয়ানমারের রাষ্ট্রদূতকে বহিষ্কারের জন্য আল্টিমেটাম দিয়েছে পাকিস্তান জামায়াতে ইসলামী প্রধান সিরাজুল হক। রোববার এক জনসমাবেশে এ ঘোষণা দেন তিনি।

তিনি বলেন, ইসলামাবাদ থেকে দ্রুত মিয়ানমারের রাষ্ট্রদূতকে বহিষ্কার করা না হলে রাজধানীতে অবস্থান ধর্মঘট করবে পাকিস্তান জামায়াত।

এ ছাড়া, মিয়ানমারের রোহিঙ্গা মুসলমানদের জঙ্গি এবং উগ্রবাদী হিসেবে পশ্চিমা কোনো কোনো দেশের তুলে ধরার প্রবণতাও কঠোর ভাষায় সমালোচনা করেন তিনি।

তিনি বলেন, মিয়ানমার ও ফিলিস্তিনের চলমান গণহত্যার বিষয়ে পশ্চিমা দেশগুলো চোখ বন্ধ করে রেখেছে। পাশাপাশি জাতিসংঘের ভূমিকারও সমালোচনা করেন তিনি।

তিনি বলেন, জাতিসংঘের স্বরূপ উন্মোচিত হয়েছে এবং কাদের প্রতি তাদের সত্যিকার দরদ রয়েছে তাও জানা হয়ে গেছে।

মিয়ানমারের রাষ্ট্রদূতকে পাকিস্তানে থাকতে দিলে আগামী সপ্তাহ থেকে জামায়াত প্রাদেশিক পর্যায়ে অবস্থান ধর্মঘটে যাবে বলে ঘোষণা করেন তিনি।

তিনি বলেন, রাজধানী ইসলামাবাদেও অবস্থান ধর্মঘট করা হবে। এ ছাড়া, রোহিঙ্গা সংকটে বিশ্বের মুসলিম দেশগুলোর ভূমিকারও সমালোচনা করেন তিনি। বাস্তুহারা রোহিঙ্গাদের আশ্রয় দেয়ার জন্য বাংলাদেশের মানুষের প্রতি আহ্বান জানান পাকিস্তান জামায়াতের নেতা।

এক রোহিঙ্গা কিশোরের গল্প
ফারুক ফেরদৌস

বারো বছর বয়সী জসিম তের দিন আগে মায়ানমারের রাখাইন স্টেট থেকে পালিয়েছে। সেখানে একটি স্কুলে পড়তো সে। তার পছন্দের বিষয় ছিলো ইংরেজি। সে ভাবতো, ইংরেজি শিখে সে পৃথিবীর অনেক মানুষের সাথে যোগাযোগ করতে পারবে। তাদের ওপর চলা নির্যাতন নিপীড়নের কথা মানুষকে জানাতে পারবে। সে একজন শিক্ষক হওয়ার স্বপ্ন দেখতো।

কাতার ভিত্তিক টিভি চ্যানেল আল জাজিরাকে জসিম বলেছে, সৈন্যরা যখন আমাদের গ্রামে এলো, আমরা দৌড়ে পালালাম। লুকিয়ে থাকলাম। আমি অনেক সৈন্য দেখেছি। শত শত সৈন্য। তারা আমাদের দিকে গুলি ছুড়ছিলো। বাড়ি ঘরে আগুন লাগিয়ে দিচ্ছিলো।

পুরো গ্রাম পুড়িয়ে নির্বিচার হত্যাযজ্ঞ চালিয়ে মিয়ানমারের সেনাবাহিনী চলে গেলো। জসিমরা হাঁটা ধরলো বাংলাদেশের দিকে। তেরো দিন হেঁটেছে তারা। মাঝে মাঝে থেমেছে। বিশ্রাম নিয়েছে। বড় বড় পাহাড় আর ছোট ছোট অনেক নদী পার হয়ে বাংলাদেশে আসতে হয়েছে তাদের।

জসিম সাংবাদিকদের বলেছে, এটা খুব কঠিন একটা সফর ছিলো। সারাক্ষণ আমরা ভয়ে ভয়ে ছিলাম। কখন কোনো দিক থেকে হানাদাররা আক্রমণ করে। বাংলাদেশে ঢোকার মুখে আমাদের খুব সতর্ক থাকতে হয়েছে। কারণ হানাদার বাহিনী সেখানে ছোটো ছোটো বোমা পুতে রেখেছে। পা পড়লেই সেগুলো বিস্ফোরিত হয়।

বারো বছর বয়সী এই কিশোর হয়তো জানে না সেই বোমাগুলোকে ভূমি মাইন বলে। মায়ানমারের বর্বর সেনাবাহিনী বাংলাদেশ ঢোকার মুখে জায়গায় জায়গায় ভূমি মাইন পেতে রেখেছে। তাদের অত্যাচারে দেশ ছেড়ে পালিয়েও রোহিঙ্গারা যেনো নিরাপদ থাকতে না পারে। গুলি করে আগুন দিয়ে যাদের তারা মারতে পারেনি, সীমান্তে এসে তারা যেনো মাইন বিস্ফোরিত হয়ে মারা পড়ে।

জসিম বাড়ি থেকে কিছুই আনতে পারে নি। চোখের সামনে নিজের বাড়ি ঘর পুড়ে যেতে দেখেছে সে। তার পুরো গ্রাম পুড়ে গেছে। সেখানে এখন আর কিছুই নেই। তার সব কিছুই হারিয়ে গেছে। জসিমের মা তার সাথে আছে।

তার বাবা রয়ে গেছে রাখাইন স্টেটে। হয়তো অনেক রোহিঙ্গার মতো নিজের ভিটে মাটিতে থেকেই শেষ নিঃশ্বাস পর্যন্ত হানাদারদের সাথে লড়াই করার শপথ নিয়েছে সে। বারো বছরের জসিম এতো কিছু জানে না। সে জানে তার বাবা কিছু দিনের মধ্যেই তাদের কাছে চলে আসবে।

চট্টগ্রামের উচি প্রাংক রিফিউজি ক্যাম্পের কাদামাটিতে শুয়ে জসিম স্বপ্ন দেখে, তার বাবা আসবে। তাদের ফিরিয়ে নিয়ে যাবে তাদের গ্রামে। সে আবার স্কুলে যাবে। তাদের সেই গ্রাম, কয়লা হয়ে যাওয়া বাড়ি ঘর আগের মতই সবুজ ও সজীব।

তবে সে জানেন না এটা কি শুধুই স্বপ্ন নাকি বাস্তব হয়ে ফিরে আসবে একদিন।


সম্পর্কিত খবর


সর্বশেষ সংবাদ