বৃহস্পতিবার, ২৫ এপ্রিল ২০২৪ ।। ১২ বৈশাখ ১৪৩১ ।। ১৬ শাওয়াল ১৪৪৫


মিয়ানমারের সঙ্গে সব ধরনের সম্পর্ক ছিন্নের আহবান বিশটিরও বেশি সংগঠনের

নিউজ ডেস্ক
নিউজ ডেস্ক
শেয়ার

মুহাম্মাদ শোয়াইব : তুরস্কের ইস্তাম্বুল শহরে এক সাংবাদিক সম্মেলনে মিয়ানমারের সঙ্গে কূটনৈতিক ও অর্থনৈতিক সব ধরনের সম্পর্ক ছিন্ন করার আহবান জানিয়েছে ‘রবিততু উলামায়িল মুসলিমীন’, ‘জমইয়্যাতু আরকা’,  ‘আল ইনসানিয়্যাহ’সহ বিশটির বেশি ইসলামি সংগঠন।

গতকাল বৃহস্পতিবার (০৭ সেপ্টেম্বর) তুরস্কের ইস্তাম্বুল শহরে অনুষ্ঠিত সাংবাদিক সম্মেলনে যোগদান করেন বিশ্বের বিভিন্ন দেশের ওলামায়ে কেরাম। মিশর, ফিলিস্তিন, সিরিয়া, সুদান, ইরাক, লেবানন, মরোক্কোসহ আরও অনেক দেশ। পাশাপাশি তুরস্কে সক্রিয় বেশ কিছু ইসলামি সংগঠন। তারা মুসলমানদের ওপর মিয়ানমারের উগ্র বৌদ্ধ সেনাবাহিনীর পৈশাচিক আক্রমণ ও গণহত্যার তীব্র নিন্দা ও মিয়ানমারের ওপর কূটনৈতিক ও অর্থনৈতিক অবরোধ আরোপের আহ্বান জানান।

সংগঠনের শীর্ষ নেতাদের অংশগ্রহণে এই সম্মেলনে মিয়ানমারের প্রতি আন্তর্জাতিক চাপ প্রয়োগ করারও দাবি জানানো হয়।

নেতারা বলেন, রোহিঙ্গাদের জন্য ‘ইনসান ভাকফি’র সঙ্গে আমরা সবাই মানবিক সহায়তা অংশ গ্রহণ করব।

‘রবিততু উলামায়িল মুসলিমীন’ এর মহাসচিব শেখ মুহাম্মাদ বলেন, বিশটিরও অধিক বিভিন্ন ইসলামি ও মানবিক সংগঠন রোহিঙ্গা মুসলমানদের বাঁচানোর জন্য সব ধরনের ব্যবস্থা গ্রহণ করার দাবি জানান। পাশাপাশি মানবাধিকার রক্ষার জন্য আন্তর্জাতিক মানবাধিকার সংগঠন, তথ্য সরবরাহের জন্য মিডিয়া ও মানবিক সাহায্যের জন্য বিভিন্ন সাহায্য সংস্থাকে রোহিঙ্গা অধ্যুষিত অঞ্চলে প্রবেশের অনুমতি দান করার আহবান জানান।

নেতারা বলেন, রোহিঙ্গা মুসলমানদের সাহায্যের জন্য এগিয়ে আসা, তাদের সব ধরনের অধিকার ফিরিয়ে দেওয়ার জন্য কাজ করা সবার ঈমানি দায়িত্ব। বিশেষত ইসলামি বিশ্বের জন্য এটা খুবই জরুরি।

তারা আরও বলেন, আমরা তুর্কি সরকারের কূটনৈতিক প্রচেষ্টাকে স্বাগত জানাই। প্রেসিডেন্ট এরদোগানের ভূমিকা খুবই প্রশংসনীয়। তিনি ইদের ছুটির সময় এই সঙ্কট নিয়ে বিভিন্ন মুসলিম দেশের নেতাদের সাথে টেলিফোনে কথা বলেছেন। এমনকি জাতিসংঘ মহাসচিবের সঙ্গেও কথা বলেছেন তিনি। এরদোগান বলেছেন, এ মাসের শেষে জাতিসংঘ সাধারণ পরিষদের সভায় তিনি রোহিঙ্গা ইস্যুটি তুলবেন।

তাছাড়া তিনি গত মঙ্গলবার মিয়ানমারের সবচেয়ে ক্ষমতাবান রাজনৈতিক নেত্রী অং সান সূচিকে ফোন করেছিলেন। তার সঙ্গে রোহিঙ্গা সমস্যার সমাধান নিয়ে আলোচনা করেছেন।

ফোনালাপে এরদোগান অতিরিক্তি বাহিনী ব্যবহার না করার এবং বেসামরিক নাগরিকদের ক্ষতি না করার প্রতি জোর দিয়েছেন। ফোনালাপে মি এরদোগান মিস সুচির কাছে রোহিঙ্গা মুসলিমদের ‘মানবাধিকার লঙ্ঘন’ নিয়ে উদ্বেগ এবং নিন্দা জানিয়েছেন।তিনি মিস সুচিকে বলেন- রোহিঙ্গা সঙ্কট পুরো মুসলিম বিশ্বের জন্য গভীর উদ্বেগ তৈরি করেছে।

তিনি বলেন, “নিরপরাধ মানুষের ওপর সন্ত্রাসীর তৎপরতার নিন্দা করছে তুরস্ক। মিয়ানমারে যে মানবিক সঙ্কট তৈরি হয়েছে সেটি উদ্বেগ এবং ক্ষোভের বিষয়।”

তুরস্কের সরকারি বার্তা সংস্থা আনাদলু জানিয়েছে, রোহিঙ্গা পরিস্থিতি সরেজমিনে দেখতে এবং কথা বলতে প্রেসিডেন্ট এরদোগান তার পররাষ্ট্রমন্ত্রী মেভলুত চাভুসোগলুকে বাংলাদেশের পাঠিয়েছেন। একই সঙ্গে রোহিঙ্গাদের অবস্থা স্বচোক্ষে দেখার জন্য একটি প্রাইভেট বিমানে করে ঢাকায় এসেছেন এরদোগানের স্ত্রী ও তুর্কি ফার্স্ট লেডি এমিনে এরদোগান।

সম্মেলনে নেতারা আরও বলেন, এসব মাজলুম মুসলমানকে এভাবে রেখে দিলে দুনিয়া ও আখেরাতে আল্লাহর গজবের কারণ হতে পারে। বিশ্বনেতারা যদি এই ভয়ংকর গণহত্যা বন্ধ করতে না পারে তাহলে এটাই প্রমাণিত হবে, তারাও এতে শরিক রয়েছে। সব ইসলামি সাহায্য সংস্থা, এসোসিয়েশন অফ দ্য ইসলামিক ওয়ার্ল্ডসহ বিশ্বের সব ইসলামি সংস্থা, সংগঠন, আইন ও গণমাধ্যম সংগঠনসমূহের উচিত এসব দুর্বলদের সহযোগিতায় নিজেদের সর্বশক্তি ব্যয় করা।

আজকের জুমায় বিশ্বের সব দেশের খতিবদেরকে জুমার খুতবায় মিয়ানমার সম্পর্কে মানুষকে সর্তক করার এবং মানবিক বিপর্যয়ের কথা তুলে ধরার আহবান জানানো হয়েছে। সাথে সাথে প্রতিটি দেশে এই গণহত্যার প্রতিবাদে মিছিল মিটিং ও বিক্ষোভ আয়োজন করারও আহবান জানানো হয়েছে।

এই সম্মেলনে বিশটিরও অধিক ইসলামি সংগঠন মিয়ানমারকে কূটনৈতিক ও অর্থনৈতিক অবরোধ আরোপ করার জন্য বিশ্ব নেতাদেরকে আহবান জানান। এসব সংগঠনের অন্যতম হলো, ‘রবিততু উলামায়িল মুসলিমীন’, ‘আল ইত্তেহাদুল আলামী লি উলামায়িল মুসলিমীন’, ‘রবিততু উলামায়ি আসিয়া’, ‘রবিততু উলামায়ি আফরিকা’, পাকিস্তানের ‘জমিয়তে ইত্তেহাদুল উলামা’, ‘আল হারাকাতুল ইসলামিয়া লিল মুহামাত’, সিরিয়ার ‘মাজলিসু শুরা আহলিশ শাম’, ‘হাইআতু উলামায়িল মুসলিমীন’ ও ‘রবিততু দুআতিল কুওয়িত’।

সূত্র : আল মুজতামা

 

 


সম্পর্কিত খবর