রকিব মুহাম্মাদ : প্রতিবছর ৯ জিলহজ হজের দিন হাজিরা আরাফাতের ময়দানে থাকেন এবং মসজিদে হারামে মুসল্লির সংখ্যাও থাকে কম। এটাই হলো কাবার গায়ে কালো চাদর জড়িয়ে দেয়ার সময়। আজ কাবা শরিফের গায়ে পরানো হবে নতুন গিলাফ।
আরবরা কাবাকে আবৃত করে রাখা কাপড়টিকে বলে কিসওয়া আর আমরা বলি গিলাফ। হাজিরা আরাফাত থেকে ফিরে এসে কাবা শরিফের গায়ে নতুন গিলাফ দেখতে পান। নতুন গিলাফ পরানোর সময় পুরোনো গিলাফটি সরিয়ে ফেলা হয়। পুরোনো গিলাফ কেটে মুসলিম দেশের সরকারপ্রধানদের উপহার দেওয়া হয়।
কাবা শরীফকে গিলাফ আবৃত করার নিয়ম কখন বা কার উদ্যোগে শুরু হয় সে সম্পর্কে মতভেদ আছে। একটি ঐতিহাসিক সূত্র অনুযায়ী জাতির পিতা হযরত ইসমাঈল আ. ও তার পুত্র ইবরাহিম আ. যখন কাবা নির্মাণের কাজ করেন, তখন পবিত্র কাবা শরীফকে গিলাফ পরান তারা।
ভিন্ন আরেকটি বর্ণনায় আছে যে, শেষ নবী হযরত মুহাম্মদ সা. এর পূর্ব পুরুষ আদনান ইবনে আইদ পবিত্র কাবা শরীফকে প্রথম গিলাফ দিয়ে আচ্ছাদিত করেন। তবে অধিকাংশ ঐতিহাসিক বর্ণনা অনুসারে হিমিয়ারের রাজা তুব্বা আবু কবর আসাদই পবিত্র কাবা শরীফ গিলাফ আচ্ছাদনকারী প্রথম ব্যক্তি।
তুব্বা আবু কবর-এর রীতি অনুযায়ী মক্কার স্থানীয় লোকজন সুন্দর কাপড় বা গিলাফ দিয়ে পবিত্র কাবাঘর আবৃত করতে থাকে এবং তা নিয়মিত প্রথায় পরিণত হয়। বর্তমানে দামী কালো রং সিল্কের কাপড়ের তৈরি স্বর্ণ-খচিত ক্যালিগ্রাফি মোটা গিলাফ দিয়ে কাবা শরীফ ঢাকা হয়।
গতবছর গিলাফটি তৈরিতে ৭শ কেজি সিল্ক, ১২০ কেজি স্বর্ণ এবং রুপার সুতা ব্যবহার করা হয়েছে। ৪৭টি কাপড়ের টুকরা দিয়ে গিলাফটি তৈরি করা হয়েছে। প্রতিটি টুকরা ১৪ মিটার লম্বা এবং ১০১ মিটার চওড়া। গিলাফ তৈরির কাজে একটি ফ্যাক্টরির ২শ ৪০ জনের বেশি ক্যালিওগ্রাফার কাজ করেছেন। প্রতিবছর দীর্ঘ ৯ মাস ধরে গিলাফ তৈরির কাজ চলে।
আব্বাসীয় খলিফা আল আব্বাস আল মাহদি ১৬০ হিজরিতে পবিত্র হজ পালন করার সশয় পবিত্র কাবা থেকে একটি ছাড়া সবগুলো গিলাফ সরিয়ে ফেলার নির্দেশ দেন। এখনো এ ধারাই অব্যাহত রয়েছে। বাদশাহ বাইবার্স হচ্ছেন পবিত্র কাবায় গিলাফ পরিয়ে দেয়া প্রথম মিশরীয় শাসক। তারপর ইয়েমেনের বাদশা আল মুদাফ্ফার ৬৫৯ হিজরিতে কাবা শরীফে গিলাফ পরান। পরবর্তীতে মিসরের শাসকরা পর্যায়ক্রমে এ কাজ অব্যাহত রাখেন।
বাদশাহ আবদুল আজিজ আল সউদ মক্কা-মদীনার দুই পবিত্র মসজিদের দেখাশোনার দায়িত্বভার গ্রহণের পর ১৩৪৬ হিজরিতে কাবা শরীফের গিলাফ তৈরির জন্য একটি বিশেষ কারখানা স্থাপনের নির্দেশ প্রদান করেন।
একই বছর মাঝামাঝি সময়ে প্রয়োজনীয় কাপড় তৈরি করে মক্কার দক্ষ শিল্পীর মাধ্যমে তা সুন্দর নকশায় সুসজ্জিত করে কাবা শরীফ আচ্ছাদিত করা হয়। ১৩৫৭ হিজরী পর্যন্ত এই কারখানাটি গিলাফ বা কিসওয়াহ তৈরি করে আসছিল। পরবর্তীতে ১৩৮১ হিজরীতে সৌদি হজ ব্যবস্থাপনা মন্ত্রণালয়ের তত্ত্বাবধানে দক্ষ সৌদি কারিগর দ্বারা রেশমি ও সোনালি সুতা দিয়ে গিলাফ তৈরি করে কাবার গায়ে পরিধানের ব্যবস্থা করা হয়।
১৩৮২ হিজরিতে বাদশাহ ফয়সাল ইবনে আব্দুল আজিজ নতুন ডিক্রি জারির মাধ্যমে নতুন করে পবিত্র কাবার গিলাফ তৈরির কারখানা প্রতিষ্ঠার নির্দেশ দেন। খাঁটি প্রাকৃতিক রেশমি রং এর সাথে কালো রং এর কাপড় দিয়ে পবিত্র কাবার গিলাফ তৈরির ব্যবস্থা করা হয়। এর মধ্যে কুরআনের কিছু আয়াত শোভা পায়। অক্ষরগুলো সোনালি আভায় উদ্ভাসিত। যা দেখলে পর্যটক তার দৃষ্টি সরিয়ে ফেলার দু:সাহস করতে পারেনা।
কুরবানির চামড়া কালেকশনের বিকল্প ভাবছে কওমি মাদরাসাগুলো