বুধবার, ২৪ এপ্রিল ২০২৪ ।। ১১ বৈশাখ ১৪৩১ ।। ১৫ শাওয়াল ১৪৪৫


যা আছে খেলাফত মজলিসের ৩২ দফায়

নিউজ ডেস্ক
নিউজ ডেস্ক
শেয়ার

আওয়ার ইসলাম : আজ বাংলাদেশ নির্বাচন কমিশনের সঙ্গে পূর্ব নির্ধারিত বৈঠকে ৬ বিষয়ে ৩২ দফা দাবি তুলে ধরে খেলাফত মজলিস। একটি অবাধ, সুষ্ঠু, নিরপেক্ষ ও গ্রহনযোগ্য নির্বাচন অনুষ্ঠানের জন্যে ও নির্বাচনকালীন নিরপেক্ষ সরকার বিষয়ে খেলাফত মজলিসের পক্ষ থেকে পেশকৃত প্রস্তাবসমূহ হচ্ছে:

১. নির্বাচন কমিশনকে শক্তিশালীকরণ :
১.১. নিজস্ব পছন্দ-অপছন্দ ও দলমতের উর্ধ্বে উঠে নির্বাচন কমিশনকে নিরপেক্ষ ভূমিকা পালন করতে হবে। সকল দল ও প্রার্থীর সমানাধিকার নিশ্চিত করা। সকল ভোটার যাতে নির্বিঘেœ ভোট কেন্দ্রে গিয়ে পছন্দ মত প্রার্থীকে ভোট দিতে পারে নির্বাচন কমিশনকে তা নিশ্চিত করতে হবে। প্রদত্ত ভোট গণনা ও ফলাফল ঘোষনায় স্বচ্ছতা নিশ্চিত করা।

১.২. নির্বাচন কমিশনকে সরকারের প্রত্যক্ষ বা পরোক্ষ প্রভাবমুক্ত থাকতে হবে। নির্বাচন কমিশনের কাজের ক্ষেত্রে সরকার প্রত্যক্ষ বা পরোক্ষ কোনভাবেই হস্তক্ষেপ করতে পারবে না এমন নিশ্চয়তা থাকতে হবে এবং এর জন্য প্রয়োজনীয় আইনানুগ ব্যবস্থা থাকতে হবে। তদুপরি আর্থিকভাবেও নির্বাচন কমিশনকে স্বাধীন হতে হবে।

১.৩. নির্বাচনের তফসিল ঘোষনার পর থেকে নির্বাচনের ফলাফল ঘোষনা ও নির্বাচনের সঙ্গে সংশ্লিষ্ট যাবতীয় কার্য শেষ না হওয়া পর্যন্ত জনপ্রশাসন, স্বরাষ্ট্র মন্ত্রনালয়সহ নির্বাচনের সাথে সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয় ও বিভাগসমূহ বিশেষত: মাঠ পর্যায়ের প্রশাসনে যারা নির্বাচনী কার্যক্রম পরিচালনা করবেন তাদেরকে নির্বাচন কমিশনের অধীনে রাখতে হবে। নির্বাচন কমিশন চাইলে তাদের যে কাউকে বদলী করতে পারবেন, এমন বিধান করতে হবে।

১.৪. নির্বাচনকালীন সময়ে অন্যান্য আইন-শৃক্সক্ষলা রক্ষাকারী বাহিনীর সাথে সামরিক বাহিনী মোতায়েন করতে হবে। নির্বাচনের দায়িত্ব পালনের সময়ে সেনাবাহিনীকে ম্যাজিস্ট্রেসী ক্ষমতা প্রদান করতে হবে।

১.৫. নির্বাচন কমিশনের নিজস্ব জনবল বৃদ্ধি করা। প্রত্যেকটি নির্বাচনী আসনে ইসির নিজস্ব কর্মকর্তা থেকে দক্ষ ও নিরপেক্ষ ব্যক্তিদের রিটানিং অফিসার ও সহকারী রিটানিং অফিসার নিয়োগ করার ব্যবস্থা করা।

১.৬. সকল রাজনৈতিক দল ঐকমত্য না হওয়া পর্যন্ত জাতীয় নির্বাচনে ইভিএম বা ডিভিএম ব্যবহার করা যাবে না। তাই আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচনে ইভিএম বা ডিভিএম ব্যবহারের চিন্তা না করে নির্বাচনী কর্মকর্তা, কর্মচারীসহ নির্বাচন সংশ্লিষ্টদের ব্যাপক প্রশিক্ষনের ব্যবস্থা করা।

২. সংসদীয় আসনের সীমানা ও আরপিও :
২.১. ২০০৮ সালের পূর্বে সংসদীয় আসনসংখ্যা যেভাবে বিন্যস্ত ছিল সেভাবে পুন:নির্ধারণ করতে হবে। সেক্ষেত্রে ভৌগলিক ও প্রশাসনিক অখন্ডতা অক্ষুন্ন রাখার প্রতি গুরুত্ব দেয়া।

২.২. অবাধ ও মুক্ত রাজনৈতিক চর্চার জন্যে রাজনৈতিক দলের নিবন্ধনের শর্তাবলী শিথিল করা।

৩. নির্বাচনের পরিবেশ রক্ষা :
৩.১. নির্বাচনকে অর্থ ও পেশী শক্তির প্রভাব থেকে মুক্ত রাখতে হবে। সবার জন্যে সমান সুযোগ তথা লেভেল প্লেয়িং ফিল্ড ও নিরাপত্তা নিশ্চিত করা। কালো টাকার ব্যবহার বন্ধে কঠোর পদক্ষেপ গ্রহন করা। এর জন্য প্রয়োজনীয় নির্বাচনী আইন ও বিধি প্রণয়ন করা।

৩.২ ভোটারদের নিরাপত্তা নিশ্চিতে ও যে কোন অনাকাক্সিক্ষত পরিস্থিতি এড়াতে আইন শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সহিত সেনাবাহিনীকে সংশ্লিষ্ট করতে হবে।

৩.৩. সকল অবৈধ অস্ত্র উদ্ধার ও লাইসেন্সকৃত অস্ত্র জমা নেয়ার কার্যকর পদক্ষেপ নেয়া।

৩.৪. বিরোধী রাজনৈতিক নেতা-কর্মীদের বিরুদ্ধে দায়েরকৃত সকল মিথ্যা মামলা প্রত্যাহার করা ও নির্বাচনী তফসিল ঘোষনার পূর্বে সকল রাজবন্দীকে মুক্তি দিতে হবে।

৩.৪. নির্বিঘ্নে যাতে সবাই মনোনয়নপত্র সংগ্রহ ও জমা দিতে পারেন তা নিশ্চিত করা। একই সাথে অনলাইনেও মনোনয়ন পত্র জমাদানের সুযোগ রাখা।

৩.৫. প্রচার- প্রচারণায় সবার জন্যে সমান সুযোগ নিশ্চিত করতে হবে। কোন পক্ষ থেকে কাউকেও ভোটের প্রচার-প্রচারণায় বাঁধা দান বন্ধে কঠোর পদক্ষেপ নিতে হবে। একই সাথে মিথ্যা অভিযোগকারীদের বিরুদ্ধেও কঠোর পদক্ষেপ গ্রহন করা।

৪. সুষ্ঠু ভোট :
৪.১. ভোট দানে পেশীশক্তির প্রয়োগ ও সরকারী সুযোগ সুবিধা কাজে লাগানো সর্ম্পূণ বন্ধে কার্যকর পদক্ষেপ গ্রহন করা।

৪.২. সবাই যাতে নির্বাচনী আচরণবিধি মেনে চলে তার জন্য কার্যকর পদক্ষেপ নেয়া।

৪.৩. ভোটের আগের দিন থেকেই ভোট কেন্দ্র, ভোটের সরঞ্জাম ও ভোট গ্রহনকারী কর্মকর্তাদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে প্রতিটি কেন্দ্রে সেনাবহিনীসহ পর্যাপ্ত আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী মোতায়েন করা।

৪.৪. ভোট কেন্দ্র ও এর আশেপাশে দলীয় ক্যাডারদের মহড়া/ যৌথ মহড়া বন্ধ করার ব্যবস্থা করা।

৪.৫. নিরপেক্ষভাবে ভোটের খবর প্রচারে/ সরাসরি সম্প্রচারে মিডিয়ার উপর কোনরূপ বাঁধা সৃষ্টি করা যাবে না।

৪.৬. দেশী বিদেশী নির্বাচনী পর্যবেক্ষকদের নির্বাচন পর্যবেক্ষনে কোন রূপ বাঁধা সৃষ্টি করা যাবে না।

৪.৭. প্রতিটি ভোট কেন্দ্রের প্রবেশ পথের বাহিরে ও ভিতরে এবং সিল মারার গোপন স্থান ব্যতীত ভোট কেন্দ্রের সকল জায়গা সিসিটিভির আওতায় আনার ব্যবস্থা করা।

৪.৮. কোন পক্ষ থেকে ভোট গ্রহনকারী কর্মকর্তা-কর্মচারী ও ভোটারদের ভয়ভীতি প্রদান কোনভাবেই বরদাস্ত না করা।

৪.৯. ভোট জালিয়াতি, জাল ভোট প্রদানের বিরুদ্ধে কঠোর আইনী ব্যবস্থা গ্রহন করা।

৪.১০. ভয়ভীতি প্রদান করে বা জোরপূর্বক কোন প্রার্থীর কোন এজেন্টকে ভোট কেন্দ্র থেকে বের করে দেয়া প্রতিরোধে কার্যকর ব্যবস্থা গ্রহন করা।

৪.১১. ভোট গ্রহন সমাপ্ত হলে উপস্থিত সকল প্রার্থীর প্রতিনিধিদের সামনে ভোট গণণা করে প্রতি কেন্দ্রে ফলাফল ঘোষনা নিশ্চিত করা। ঘোষিত ফলাফলের কপি উপস্থিত সকল প্রার্থীর নির্বাচনী এজেন্টকে সরবরাহ করা।

৪.১২. প্রবাসী ভোটারদের ভোট গ্রহনের কার্যকর পদক্ষেপ গ্রহন করা।

৪.১৩. ভোট গ্রহনে নিয়োজিত কর্মকর্তা, কর্মচারী, আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্যদের আগাম ভোট গ্রহনের ব্যবস্থা করা।

৫. নির্বাচনী ব্যয় :
৫.১. নির্বাচনকে যেকোন মূল্যে কালো টাকা ও পেশী শক্তির প্রভাব মুক্ত রাখতে হবে।

৫.২. ব্যয়ের ক্ষেত্রে কোন গুরুতর অনিয়ম প্রমাণিত হলে প্রার্থীতা বাতিল এমনকি নির্বাচিত হলেও তার পদ বাতিল ঘোষনা করার ব্যবস্থা থাকতে হবে।

৬. জাতীয় নির্বাচনকালীন নিরপেক্ষ সরকার :
একটি অবাধ সুষ্ঠু ও গ্রহনযোগ্য নির্বাচনের জন্যে নির্বাচন কমিশনের যথাযথ ভূমিকার সাথে সাথে প্রতিদ্ব›দ্বীতাকারী সকল দলকেও সুষ্ঠু নির্বাচনের জন্যে অঙ্গীকারাবদ্ধ হতে হবে। সর্বোপরি নির্বাচনকালীন সরকারকে নিরপেক্ষ নির্বাচনের জন্যে হতে হবে আন্তরিক। যেহেতু অতীত অভিজ্ঞতা বলে, দলীয় সরকারের অধীনের সুষ্ঠু নির্বাচন একেবারেই দুরূহ তাই-

৬.১. নির্বাচনকালীন নিরপেক্ষ সরকারের অধীনে জাতীয় নির্বাচন অনুষ্ঠানের ব্যবস্থা করতে হবে। এ সরকার নির্বাচন কমিশনকে সার্বিকভাবে সহযোগিতা করবে। নির্বাচনকালীন সরকার নিরপেক্ষভাবে দায়িত্ব পালন করবে। নির্বাচনকালীন সময়ে সরকার শুধু সরকারের দৈনন্দিন(জড়ঁঃরহব) কার্য সম্পাদন করবে।

৬.২. সংসদ সদস্য থাকা অবস্থায় কেউ নির্বাচনে অংশগ্রহন করতে পারবেন না। তাই বিদায়ী সংসদ ভেঙ্গে দিয়ে জাতীয় নির্বাচন অনুষ্ঠান করতে হবে।

৬.৩. নির্বাচনকালীন নিরপেক্ষ সরকার গঠনের জন্যে সরকারী দল ও বিরোধী দলসমূহকে অবিলম্বে জাতীয় সংলাপ বসতে হবে।

৬.৪. সব দলের অংশগ্রহনে একটি অবাধ, সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ নির্বাচনের জন্যে নির্বাচনকালীন নিরপেক্ষ সরকার গঠনে প্রয়োজনে সংবিধানের সংশোধনী আনতে হবে।


সম্পর্কিত খবর


সর্বশেষ সংবাদ