বুধবার, ২৪ এপ্রিল ২০২৪ ।। ১০ বৈশাখ ১৪৩১ ।। ১৫ শাওয়াল ১৪৪৫


এবারের ঈদযাত্রা স্বস্তিদায়ক করা খুব চ্যালেঞ্জ হবে

নিউজ ডেস্ক
নিউজ ডেস্ক
শেয়ার

আওয়ার ইসলাম : টানা ভারি বর্ষণ, বন্যায় দেশে ৩৯ জেলার এক হাজার ১৭৭ কিলোমিটার সড়ক-মহাসড়ক ব্যাপকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। জাতীয়, আঞ্চলিক ও জেলার এসব সড়কের পিচঢালাই উঠে গেছে।বন্যায় ১৮টি সড়ক পয়েন্ট ভেঙে ভেসে গেছে। আরও ২৩টি পয়েন্টে রাস্তার ওপর পানি প্রবাহিত হচ্ছে। অনেক স্থানে ১২ থেকে ১৫ ফুট এলাকা নিয়ে সৃষ্টি হয়েছে গর্তের। এসব গর্তে গাড়ি নিচের অংশের সঙ্গে রাস্তায় ঘষা লাগছে। এতে অনেক সময় গাড়ির স্প্রিংসহ যন্ত্রাংশ ভেঙে যাচ্ছে। প্রায়ই ঘটছে দুর্ঘটনা।

এছাড়া সারা দেশের বিভিন্ন স্থানে কালভার্ট ও ব্রিজ ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। কিছু কিছু কালভার্ট ও ব্রিজের নিচ থেকে মাটি সরে যাওয়ায় গাড়ি চলাচল ঝুঁকিপূর্ণ হয়ে উঠেছে। ঝুঁকিপূর্ণ সড়কে যানবাহন চলছে ধীরগতিতে। গন্তব্যে পৌঁছতে প্রতি ট্রিপে ২-৭ ঘণ্টা অতিরিক্ত সময় লাগছে। এতে জ্বালানি ব্যয় বাড়ছে। কমে গেছে ট্রিপের সংখ্যা। পরিবহন মালিকরা বলছেন ঈদের সময় যত ঘনিয়ে আসবে, রাস্তায় গাড়ির চাপও বাড়বে। অবস্থার উন্নতি না হলে ঈদে সড়ক যোগাযোগ স্থবির হয়ে পড়তে পারে বলে তারা শঙ্কা প্রকাশ করেন। এ ভয় থেকে তারা এবার ঈদের ৩৩-৫০ শতাংশ টিকিট আগাম বিক্রি করেছেন।

রোববার পর্যন্ত সড়ক ও জনপথের মাঠ পর্যায়ের কর্মকর্তাদের পাঠানো প্রতিবেদনে এ চিত্র উঠে এসেছে। যানবাহনের মালিক ও চালকদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে যাত্রী পরিবহনের বিষয়গুলো। ইট, সুরকি ও বালুর বস্তা ফেলে আপাতত সড়ক রক্ষা করা হচ্ছে বলেও জানিয়েছেন সওজের মাঠ পর্যায়ের কর্মকর্তারা। এসব সড়কে ভারি মেরামতের প্রয়োজন হবে বলে জানিয়েছেন তারা। সংশ্লিষ্ট সূত্রগুলোতে এসব তথ্য জানা গেছে।

ঈদের আগেই সড়ক গাড়ি চলাচলের উপযোগী করার ব্যাপারে আশা প্রকাশ করেন সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের। রোববার তিনি সাংবাদিকদের বলেন, যদি বৃষ্টি-বাদল না হয়, আমরা আশা করছি ঈদের আগে রাস্তাগুলো ব্যবহারযোগ্য করা যাবে। তবে বৃষ্টি-বাদল যদি অব্যাহত থাকে তবে এবারের ঈদযাত্রা স্বস্তিদায়ক করা খুব চ্যালেঞ্জ হবে।

সড়ক ও জনপথ বিভাগ দেশের ৬৪টি জেলাকে ২০টি সার্কেলে ভাগ করে কার্যক্রম পরিচালনা করে। শুধু বন্যার কারণে ২০টি সার্কেলের মধ্যে ১১টি সার্কেলের আওতাধীন ৩৯ জেলার ১ হাজার ১৭৭ কিলোমিটার রাস্তা ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। এর মধ্যে জাতীয় মহাসড়ক রয়েছে ২২৮ দশমিক ৯৭ কিলোমিটার, আঞ্চলিক সড়ক ১৮৪ দশমিক ৩৬ কিলোমিটার এবং জেলা মহাসড়ক ৭৬৩ দশমিক ৭৬ কিলোমিটার। বাকি ৯টি সার্কেলের আওতাধীন সড়কে ক্ষয়ক্ষতি পায়নি সওজ।

ক্ষয়ক্ষতির প্রতিবেদনে আরও দেখা গেছে, সবচেয়ে বেশি ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে পাবনা সার্কেলের। পাবনা, সিরাজগঞ্জ ও নাটোর জেলা মিলে গঠিত হয়ে পাবনা সার্কেল। অর্থাৎ এ তিন জেলায় ৪১২.৭ কিলোমিটার সড়ক ভেঙে গেছে। ঠাকুরগাঁও, পঞ্চগড় ও নীলফামারী জেলা নিয়ে গঠিত দিনাজপুর সার্কেলে ২৬০.৪ কিলোমিটার এবং শেরপুর ও টাঙ্গাইল জেলা নিয়ে গঠিত জামালপুর সার্কেলে ১৫৩ কিলোমিটার সড়ক ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। চাঁপাইনবাবগঞ্জ ও নওগাঁ জেলা নিয়ে গঠিত রাজশাহী সড়ক সার্কেলের আওতায় ১০৫ কিলোমিটার সড়ক ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। এছাড়া ঢাকা সার্কেলে ৪৬.৫, ময়মনসিংহ সার্কেলে ২৩.৫, ফরিদপুর সার্কেলে ১০, সিলেট সার্কেলে ৭৮.৪৯, ও বগুড়া সার্কেলে ৭২.৫ কিলোমিটার ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে।

ওয়াশ আউটসহ নানান কারণে বেশ কয়েকটি সড়কে যান চলাচলের উপযোগিতা হারিয়েছে। এসব এলাকার সড়ক যোগাযোগ ব্যবস্থা বিচ্ছিন্ন রয়েছে। সড়কগুলো হচ্ছে- নেত্রকোনা-কলমাকান্দা ধর্মপাশা-মধ্যনগর সড়ক, জামালপুরের এলেঙ্গা-ভুঞাপুর-তারাকান্দি সড়ক, জামালপুর-মাদারগঞ্জ সড়ক, কুড়িগ্রামের নাগেশ্বরী ও ভুরুঙ্গামারী সড়ক, নাগেশ্বরী থেকে লালমনিরহাট সড়ক, ভুরুঙ্গামারী-নাগেশ্বরী সড়ক ও নওগাঁ থেকে আত্রাই-নাটোর সড়ক।

এদিকে পরিবহন মালিক ও শ্রমিকদের সঙ্গে আলাপ করে জানা গেছে, বন্যার আগেই দেশের বিভিন্ন সড়ক ও মহাসড়কে ভাঙাচোরা ছিল। বিশেষ করে ঢাকায় প্রবেশ ও বের হওয়ার পথগুলোর অবস্থা খুবই খারাপ। সায়েদাবাদ ও বাবুবাজার ব্রিজের পর থেকে কেরানীগঞ্জের অংশ, টঙ্গী থেকে নরসিংদীর যাওয়ার পথ, টঙ্গী থেকে গাজীপুর, আবদুল্লাহপুর-আশুলিয়া এবং চন্দ্রা ও কোনাবাড়ী সড়কের অবস্থাও খারাপ। এ কারণে রাজধানীতে প্রবেশ ও বের হতেই কয়েক ঘণ্টা লাগছে।

পরিবহন মালিক ও শ্রমিকরা বলেন, সাম্প্রতিক অতিবৃষ্টি ও বন্যায় দেশের প্রায় সবকটি জেলায় সড়ক ও মহাসড়কগুলোতে খানাখন্দ ও বড় গর্তের সৃষ্টি হয়েছে। কোথাও কোথাও সড়কের একাংশ ধসে গেছে। দক্ষিণাঞ্চলের যাতায়াতের অন্যতম পথ শিমুলিয়া (মাওয়া)-কাঁঠালবাড়ি ও পাটুরিয়া-দৌলতদিয়া ফেরিঘাটের অবস্থা ভালো নয়। সেখানেও দীর্ঘ যানজট হচ্ছে। এসব কারণে ৬ ঘণ্টার পথ যেতে ১০ থেকে ১২ ঘণ্টা লাগছে। কখনও কখনও এর চেয়ে বেশি লাগছে। সড়কের এ অবস্থায় ঈদে গাড়ির চাপ বাড়ার সঙ্গে তা আরও ভয়াবহ রূপ নিতে পারে বলে আশঙ্কা তাদের। এ কারণে ঈদে ট্রিপ সংখ্যা এক-তৃতীয়াংশ কমিয়ে বাসের আগাম টিকিট বিক্রি করেছেন মালিকরা।

সড়কে ভোগান্তির বিষয়ে ঢাকা সড়ক পরিবহন মালিক সমিতির সভাপতি মো. আবুল কালাম গণমাধ্যমকে বলেন, রাস্তার অবস্থা এতই খারাপ যে, পথে কষ্টের ভয়ে রংপুর ও রাজশাহী বিভাগের মানুষরা যাতায়াত ৭৫ শতাংশ কমিয়ে দিয়েছেন। ভাঙাচোরার কারণে গাড়ির ইঞ্জিন, মেশিন ও বডির ক্ষতি হচ্ছে। দুর্ঘটনা হলে গাড়ির ড্যামেজ হচ্ছে। তিনি বলেন, ঢাকা থেকে বগুড়া ৫ ঘণ্টার পথ যেতে ৮-৯ ঘণ্টা লাগছে। একই হারে অন্য রুটগুলোতে অতিরিক্ত সময় ও জ্বালানি নষ্ট হচ্ছে।

একইভাবে কুড়িগ্রাম জেলার ক্ষয়ক্ষতি সম্পর্কে সে জেলার সওজের কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, এ জেলার ৮টি মহাসড়কের কয়েকটি এলাকায় ওয়াশ আউট হয়ে ১২ থেকে ১৫ ফুট গভীর খাদের সৃষ্টি হয়েছে। এর মধ্যে রংপুর-কুড়িগ্রাম জাতীয় মহাসড়কের ৩৯তম থেকে ৪২তম কিমি. অংশে বন্যার পানির প্রবল  সড়কের এক পাশের সোল্ডারসহ কিছু রাস্তা ধসে ৪-৫ ফুট গভীর খাদের সৃষ্টি হয়েছে। কুড়িগ্রাম-ভুরুঙ্গামারী সড়কের ১১ কিলোমিটার রাস্তা ৫ দিন পানিতে ডুবে থাকায় ওই অংশ নষ্ট হয়ে গেছে। জামালপুর জেলার তারাকান্দি-এলেঙ্গা-ভুঞাপুর সড়কের ২৪তম কিলোমিটারে কিছু অংশ ওয়াশ আউট হয়ে গেছে। জামালপুর-মাদারগঞ্জ সড়কের ১৮ কিলোমিটার পানিতে ডুবে গেছে। ২৩তম কিলোমিটারে ৪০ মিটার জায়গা বিচ্ছিন্ন হয়ে গেছে। একইভাবে জামালপুর-কালিবাড়ী-সরিষাবাড়ী ও বকশীগঞ্জ-সানন্দবাড়ী-চররাজিবপুর সড়কের অনেকাংশ পানিতে ডুবে গেছে এবং বিভিন্নভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। এ জেলার বাসিন্দা উবায়দুল হক বলেন, সড়কের অবস্থা এতই খারাপ যে সেখানে মাছ ও ধান চাষ করা যাবে। সুস্থ মানুষ এ রাস্তায় যাতায়াত করে অসুস্থ হয়ে পড়ছেন।

টাঙ্গাইল জেলার বিভিন্ন পয়েন্টে তিন কিলোমিটার রাস্তা পানির নিচে দেবে গেছে। নেত্রকোনা জেলার ৫টি সড়কের ১০ কিলোমিটার পানির নিচে। এসব জায়গায় গর্ত হয়েছে ও মাটি ভেঙে গেছে। নেত্রকোনা-মধ্যনগর মহাসড়কের অবস্থা বেশি খারাপ হয়ে যাওয়ায় ভারি যানবাহন চলাচল বন্ধ করে দেয়া হয়। ওই সড়কে ব্রিজ-কালভার্টও ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। জয়পুরহাট জেলার জয়পুরহাট-ক্ষেতলাল, মোকামতলা-কালাই, হিলি-কালাই ও বগুড়া-ক্ষেতলাল সড়কের অনেকাংশ পানিতে ডুবে থাকায় রাস্তার উপরিভাগ উঠে গেছে। যশোর জেলার রাজারহাট-মনিরামপুর-কেশবপুর-চুকনগর মহাসড়কের কিছু অংশ পানিতে ডুবে যাওয়ায় রাস্তা ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। ক্ষতিগ্রস্ত অন্য জেলাগুলো হচ্ছে- সিলেট, সুনামগঞ্জ, ময়মনসিংহ, টাঙ্গাইল, শেরপুর, গোপালগঞ্জ, ফরিদপুর, বগুড়া, রংপুর, জয়পুরহাট, লালমনিরহাট, নীলফামারী, পঞ্চগড়, ঠাকুরগাঁও, নওগাঁ, সিরাজগঞ্জ, পাবনা ও নাটোর।

-এজেড


সম্পর্কিত খবর


সর্বশেষ সংবাদ