শুক্রবার, ২৬ এপ্রিল ২০২৪ ।। ১৩ বৈশাখ ১৪৩১ ।। ১৭ শাওয়াল ১৪৪৫

শিরোনাম :
ফরিদপুরে দুই সহোদর হত্যা: ৩ মে ঢাকাসহ সারা দেশে ইসলামী আন্দোলনের বিক্ষোভ তীব্র গরমে আলোকিত মানিকছড়ি জনকল্যাণ সংস্থার প্রশংসনীয় উদ্যোগ ফরিদপুরের দুই শহীদ পরিবারের পাশে হেফাজত নেতৃবৃন্দ নির্বাচনে প্রার্থী হওয়ায় বিএনপির ৭৫ নেতা বহিষ্কার ছাদ থেকে পড়ে মাদরাসাছাত্রীর মৃত্যু টানা তাপপ্রবাহে ভাঙল ৭৬ বছরের রেকর্ড তাপপ্রবাহ থেকে সুরক্ষায় রেলওয়ে কর্মকর্তাদের ৫ নির্দেশনা ‘বাংলাদেশ ও থাইল্যান্ডের মধ্যে সহযোগিতা জোরদারের সুযোগ রয়েছে’  মন্দিরে হামলাকারীদের বিরুদ্ধে তদন্তভিত্তিক বিচারের দাবি ইসলামী আন্দোলনের পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রীর বক্তব্য থেকে বিএনপির শিক্ষা নেওয়া উচিত: কাদের

কোন পথে পাকিস্তান?

নিউজ ডেস্ক
নিউজ ডেস্ক
শেয়ার

ড. আলী আল গামদি

নওয়াজ শরিফের বিচার এবং পাকিস্তানের প্র্রধানমন্ত্রী হিসাবে অযোগ্যতার রায়ে নানা ক্ষেত্রে বিতর্ক ছড়িয়ে পড়েছে। কিছু মানুষ আছেন, যারা আদালতের ল্যান্ডমার্ক শাসনকে স্বাগত জানান। তারা মনে করে, প্র্রধানমন্ত্রীকে উচ্চ আদালতের বিচারে অযোগ্য প্র্রমাণিত করা ন্যায়বিচার ও দুর্নীতির বিরুদ্ধে লড়াইয়ে একটি গুরুত্বপূর্ণ পদক্ষেপ। যারা এই রায় নিয়ে আনন্দ প্র্রকাশ করেন, যারা তৃতীয়বারের মতো নির্বাচিত প্রধানমন্ত্রীকে ও দেশের নির্বাহী বিভাগের প্র্রধানকে পদত্যাগ করতে বাধ্য করেন, তারা মনে করেন, এটি ছিল সিঙ্গাপুরের সাবেক নেতা লি কুয়ান ইউয়ের সঙ্গে সঙ্গতিপূর্ণ।

২৩ মার্চ, ২০১৫ তারিখে পরলোকগত, সিঙ্গাপুর রাষ্ট্রের প্র্রতিষ্ঠাতা লি কুয়ান ইউ ছিলেন অনেকটা কর্তৃত্ববাদী। তারা বিশ্বাস করেন, দুর্নীতির বিরুদ্ধে সংগ্রাম কেবল সিঁড়ি পরিষ্কারের মতো। এটি উপর থেকে নিচের দিকে শুরু করতে হয়।

সর্বোচ্চ আদালতে অযোগ্য ঘোষিত হওয়ার পর প্র্রধানমন্ত্রীর পদ ছেড়ে দিতে বধ্য হন পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী নওয়াজ শরিফ। পানামা পেপারসে ফাঁস হওয়া তথ্যে জানা যায়, নওয়াজ (৬৭) ও তাঁর পরিবারের সদস্যরা বিপুল পরিমাণে অর্থ বিদেশে পাচার করেছেন। এ অভিযোগের তদন্ত করতে আদালতের নির্দেশে যৌথ তদন্ত দল (জেআইটি) গঠন করা হয়।

জেআইটির তদন্ত প্র্রতিবেদনে বলা হয়, নওয়াজ ও তাঁর পরিবারের সদস্যরা তাঁদের নামে থাকা বিপুল পরিমাণ সম্পদের উৎস জানাতে ব্যর্থ হয়েছেন। তদন্ত প্র্রতিবেদন আমলে নিয়ে আদালত নওয়াজকে প্রধানমন্ত্রী পদে অযোগ্য ঘোষণা করে রায় দেন। নওয়াজ ও তাঁর পরিবারের সদস্যদের বিরুদ্ধে ফৌজদারি তদন্ত শুরু করারও নির্দেশ দিয়েছেন আদালত।

২০১৩ সালে সাধারণ নির্বাচনে বিজয়ী হয়ে তৃতীয়বারের মতো প্র্রধানমন্ত্রী হন নওয়াজ। এর আগের দুইবারও প্র্রধানমন্ত্রী হিসেবে মেয়াদ পূর্ণ করতে পারেননি তিনি। এর মধ্যে ১৯৯৯ সালে সামরিক অভ্যুত্থানে ক্ষমতা হারান নওয়াজ। প্রথমবার ১৯৯০ থেকে ১৯৯৩ এবং দ্বিতীয়বার ১৯৯৭ থেকে ১৯৯৯ সাল পর্যন্ত ক্ষমতায় ছিলেন তিনি। ১৯৯৩ সালেও দুর্নীতির দায়ে প্রধানমন্ত্রীর পদ ছাড়তে হয় নওয়াজকে।

গত বছর পানামাভিত্তিক আইনি সেবাপ্র্রতিষ্ঠান মোসাক ফনসেকার ১ কোটি ১৫ লাখ গোপন নথি প্র্রকাশ করে। তাতে বিশ্বের বহু ক্ষমতাধর, ধনী ও প্র্রভাবশালী ব্যক্তির বিরুদ্ধে বিপুল অর্থ পাচারের অভিযোগ সামনে আসে; যা বিশ্বে পানামা পেপারস কেলেঙ্কারি নামে পরিচিত। এরই নথিতে নওয়াজ ও তাঁর চার ছেলেমেয়ের মধ্যে তিনজনের নাম আসে।

যাইহোক, অন্য একটি পক্ষ মনে করেন, এই রায়টি সন্দেহজনক, এতে স্বচ্ছতার অভাব রয়েছে। শুধু রাজনৈতিক প্র্রতিহিংসা ও প্র্রতিশোধ পূরণের জন্যই এ ধরনের রায় দেওয়া হয়েছে। এটি নওয়াজকে সরানোর দীর্ঘ প্র্রচেষ্টার ফল মাত্র। তারা মনে করেন, এই রায়ের পেছনে নওয়াজকে সরিয়ে দেয়ার ক্ষেত্রে সামরিক-বেসামরিক একটি মহল সক্রিয় ভূমিকা প্রালন করে। এ ক্ষেত্রে আদালতের কাঁধে বন্দুক রেখে কাজটি সারা হয়েছে। কারণ আদালত যে যৌথ তদন্ত দল গঠন করে তাতে পাকিস্তানের দু’টি সামরিক গোয়েন্দা সংস্থার প্রতিনিধিও ছিল।

অনেক বিশ্লেষক মনে করেন, স্বাধীন বিচার বিভাগের কারণে নয়; বরং নওয়াজের সাথে পাকিস্তানের সামরিক আমলাতন্ত্রের বিরোধের কারণে তাকে ক্ষমতা থেকে হয়তো সরে দাঁড়াতে হলো।

Image result for Pakistan panama papers nawaz sharif

নওয়াজকে পদত্যাগ করানোর ব্যাপারে পাকিস্তানের বিরোধী দলগুলোর গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা ছিল। ২০১৬ সালের অক্টোবরে মাসে বিদেশে অর্থ পাচারের অভিযোগ এনে আদালতে পিটিশন করেছিল ইমরান খানের দল পাকিস্তান তেহরিক ই ইনসাফ (পিটিআই), জামায়াতে ইসলামি পাকিস্তান ও জমহুরি ওয়াতন পার্টি। পিটিশন দায়েরের পর নওয়াজের অর্থপাচারের স্বপক্ষে আদালতে নথি জমা দেয় পিটিআই। এরপর আদালত চলতি বছরের মে মাসে একটি যৌথ তদন্ত দল গঠন করে। তদন্ত দলের প্রতিবেদনের ভিত্তিতে আদালত নওয়াজ শরিফকে প্রধানমন্ত্রীর পদের জন্য অযোগ্য ঘোষণা করে এই রায় প্রদান করে।

নওয়াজের বিরুদ্ধে ইমরান খান দীর্ঘদিন আন্দোলন করে আসছেন। তিনি ধর্মঘট করেছেন, সরকার পতনের ডাক দিয়েছেন। কিন্তু ব্যর্থ হয়েছেন। এর আগে কানাডা প্রবাসী তারিকুল কাদরি নামে একজন হঠাৎ করেই পাকিস্তানের রাজনৈতিক আকাশে মেঘের মতো আর্বিভাব হয়ে আবার হারিয়ে গেছেন। ইমরান খান কিন্তু হারাননি। তিনি লেগেই আছেন নওয়াজের বিরুদ্ধে।

মূলত ইমরান খানের দলই এখন পাকিস্তানের প্রধান বিরোধী দল। প্রকৃত বিরোধী দল নেতৃত্ব শূন্যতায় বার্ধক্যের দিন গুনছে। মোটকথা নওয়াজের পদত্যাগের পেছনে যে মহলটি সক্রিয় ভূমিকা পালন করেছেন তারা বেশ শক্তিশালী ও প্রভাবশালী। পাকিস্তানের সুপ্রিম কোর্টের একজন বিচারপতির মন্তব্য ছিল এরকম, নওয়াজ শরিফ ও তার পরিবারকে বিখ্যাত আমেরিকান চলচ্চিত্র দ্য গডফাদার ছবিতে প্রদর্শিত মাফিয়া সদস্যদের মতো দেখাচ্ছে। আমি জানি না যে, বিচারক যে মাফিয়াকে তুলনা করেছিলেন তিনি নওয়াজ শরিফের মতো তিনবার নির্বাচিত হয়েছিলেন কিনা? এটি একটি সত্য, শরিফ খুবই জনপ্রিয়। আমরা তার সঙ্গে একমত হই বা না হই।

নওয়াজ শরিফের নামটি পানামা পেপার ফাঁসে ছিল কিনা তা নিয়ে যথেষ্ট সন্দেহ রয়েছে। তবে বলা হয়, তার ছেলে ও অন্যান্য পাকিস্তানিদের নাম ছিল। মূল বিষয়টি ছিল, তার রাজনৈতিক প্রতিপক্ষের যারা ব্যালট বক্সের মাধ্যমে তাকে পরাজিত করতে অক্ষম তারাই তার বিরুদ্ধে মামলা দায়ের করেন। নির্বাচনের তফসিলের ঘোষণার পর, এই প্রতিপক্ষরাই নির্বাচনের নিন্দা জানিয়ে প্ররোচিত করে বিক্ষোভ জানিয়ে তাকে উৎখাত করার চেষ্টা করেছিলেন। কিন্তু তা করতে তারা সক্ষম হননি। অবশেষে, তারা সামরিক কর্তৃপক্ষের কাছে তাদের ক্ষমতা ব্যবহারের চেষ্টা করেছিলেন, যারা দেশের অর্ধেকেরও বেশি সময় ধরে পাকিস্তান শাসন করেছিল।

বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই সামরিক শাসন শুধু পাকিস্তানের জন্য নয় বিশ্বের যে কোনো রাষ্ট্রের জন্য দুর্ভাগ্যজনক।
ব্যাপার যাই হোক, পাকিস্তানের রাজনৈতিক পরিস্থিতি ঘোলাটে হলে ক্ষতিগ্রস্ত হবে দুটি দেশ। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র পাকিস্তানের ঘনিষ্ট বন্ধু। পাকিস্তানের ঘোলাটে পরিস্থিতি প্রভাব ফেলতে পারে আফগানিস্তানে। এতে বিপাকে পড়বে যুক্তরাষ্ট্র। অন্যদিকে পাকিস্তানের অর্থনীতির সঙ্গে চীনের সম্পর্ক বেশ গভীর। পাকিস্তানের বেশিরভাগ বিনিয়োগ চীনের। রাজনৈতিক পরিস্থিতির সঙ্গে চীনেরও স্বার্থ জড়িত। সবমিলে পাকিস্তান পরিস্থিতি বিদেশিদের হস্তক্ষেপের পর্যায়ে চলে গেলে পাকিস্তানের জন্য হবে মরণ ফাঁদ।

আল আরাবিয়া ডট নেট অবলম্বনে মুহাম্মাদ শোয়াইব


সম্পর্কিত খবর


সর্বশেষ সংবাদ