শুক্রবার, ২৬ এপ্রিল ২০২৪ ।। ১৩ বৈশাখ ১৪৩১ ।। ১৭ শাওয়াল ১৪৪৫


কাবায় কবুল প্রতিবন্ধী

নিউজ ডেস্ক
নিউজ ডেস্ক
শেয়ার

 আলী হাসান তৈয়ব
কাবা মুশারফফা থেকে কয়েক হাত দূরে বসে আছি। তৃতীয় কাতারে। আমার ঠিক কলিজা বরাবর হাজরে আসওয়াদ। জান্নাত থেকে আসা ঐতিহাসিক পাথর। দুধের চেয়েও সাদা পাথরটি আমাদের পাপ শুষে কৃষ্ণ হয়ে গেছে। শুরু হবে ফজর নামাজের ইকামত। এখনই ইমাম সাহেব বের হবেন হাতিম থেকে। তাওয়াফ বন্ধ হয়ে গেছে। এখন কাউকে কালো পাথরের দিকে এগুতে দেয়া হচ্ছে না। মাত্রই এর রূপালী বৃত্ত আর তার চারপাশ দামি তরল পদার্থ দিয়ে পরিষ্কার করা হয়েছে। হলুদাভ লালচে মূল্যবান সুবাস মেখে দেওয়া হয়েছে। আশপাশের কাতারগুলোয় ছড়িয়ে পড়েছে সেই বেহেশতি খুশবু।হায়, এ সময়ের অনুভূতি তুলি ধরি, ভাষার সাধ্য কী।
ঠিক তখনই এক প্রতিবন্ধী উদয় হলেন কোত্থেকে। হয়তো পাকিস্তানি বা ভারতীয় হবেন। একটি হাত নেই। একটি পাও নিশ্চল। লাঠিতে ভর দিয়ে বহু কষ্টে সামনে আসার চেষ্টা করছিলেন। পেছনের মুমিন ভাইয়েরা হয়তো এগিয়ে দিয়েছেন। হাজরে আসওয়াদ থেকে এক কাতার দূরে দাঁড়িয়ে কাঁপছেন তিনি। চুমো খাওয়ার নীরব আকুতি চোখে নিয়ে তাকাচ্ছেন নিরাপত্তারক্ষীদের দিকে। তাদের দয়া হলো। কিংবা কাবার মালিক তাদের কলবে দয়া ঢেলে দিলেন।
দুজন পুলিশ এগিয়ে তাকে পাঁজাকোলা করে এগিয়ে দিলেন আল্লাহর ঘরের জান্নাতি পাথরের দিকে। আবেগে, প্রাপ্তির আনন্দের আতিশয্যে লোকটি চিৎকার করে কাঁদতে লাগলো। পাথরে মাথা ঢুকিয়ে এলোমেলো ভাষায় হাউমাউ করে কী সব চাইলো। সবাই মুগ্ধ চোখে, আবেগকম্প হৃদয়ে কাতার থেকে দেখলো প্রাপ্তির অপার্থিব এক মুহূর্ত। হৃদয়ে প্রেম থাকলে শারীরিক অক্ষমতা হতে পারে না মিলনে বাধা! মুনিবের দান বুক পেতে নিতে লাগে না বান্দার শক্তি। লাগে কেবল কবুলিয়ত আর মকবুলিয়ত।
আল্লাহর ঘরের মিসকিন অতিথি হওয়ার পর এ দশদিনে আমার দেখা শ্রেষ্ঠ দৃশ্য এটি। মাজুর লোকটির বাঁধহীন ভাষাহীন কান্নার এ ছবি কাবার দিকে চাইলেই চোখে ভাসছে। হে জড়বাদী হাস্যকর জ্ঞানগর্বীরা, তোমরা কী বুঝবে আমরা কত ধনী! তোমরা কত রিক্ত! মাবুদের গোলামিতে কী সুখ! তাঁর নাফরমানি কত কণ্টকময়। ফিরে এসো মাবুদের গোলামিতে। হে মাবুদ, আমাদের কবুল ও মকবুল করো তোমার নিষ্ঠাবান গোলাম হিসেবে। ঠাঁই দাও তোমার ঘরের ছায়ায়। তোমার রহমতের চাদরে।
-এজেড


সম্পর্কিত খবর