ওয়ালি খান রাজু: আজ ২৩ জুলাই, স্বাধীন বাংলাদেশের প্রথম প্রধানমন্ত্রী তাজউদ্দীন আহমদ এর ৯২ তম জন্মদিন।
বাংলাদেশের ইতিহাসে একজন সৎ ও মেধাবী রাজনীতিবিদ হিসেবে যাদের নাম স্মরণীয় তাদের মাঝে অন্যতম ছিলেন জননেতা তাজউদ্দীন আহমদ।
১৯২৫ সালের ২৩ জুলাই গাজীপুর জেলার অন্তর্গত কাপাসিয়ার দরদরিয়া গ্রামে জন্মগ্রহণ করেন। তার বাবা মৌলভী মোঃ ইয়াসিন খান এবং মায়ের নাম মেহেরুননেসা খান।
বাংলাদেশের প্রথম এই প্রধানমন্ত্রী ছিলেন একজন হাফেজে কুরআন। শৈশবে বাবা ইয়াসীন খানের কাছে কুরআন শিক্ষার হাতেখড়ি হয় জননেতা তাজউদ্দীন আহমদের।
তাজউদ্দীন আহমদের শিক্ষাজীবন শুরু হয় গ্রামের মক্তবে, এরপর বাড়ি থেকে দুই কিলোমিটার দূরে ভুলেশ্বর প্রাথমিক বিদ্যালয়ে। তৃতীয় শ্রেণিতে উঠে তিনি ভর্তি হন দরদরিয়া থেকে আট কিলোমিটার দূরের কাপাসিয়া মাইনর ইংরেজি স্কুলে। তারপর তিনি গাজীপুরের কালিগঞ্জের সেন্ট নিকোলাস ইনস্টিটিউশনে ভর্তি হন। সর্বশেষ স্কুল জীবন ঢাকার সেন্ট গ্রেগরীজ হাইস্কুলে শেষ হয়।
তাজউদ্দীন আহমদ ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে অর্থনীতিতে স্নাতক (সম্মান) ডিগ্রি লাভ করেন। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়াশুনাকালে ফজলুল হক মুসলিম হলের ছাত্র ছিলেন।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থাকাকালীন সময় থেকেই তিনি ছাত্র রাজনীতিতে অংশ নেন, মুসলিম লীগের সক্রিয় সদস্য হিসেবে তার রাজনৈতিক জীবন শুরু হয়।
১৯৪৮ সাল থেকে শুরু হওয়া বাংলা ভাষা প্রতিষ্ঠার আন্দোলনেও তাজউদ্দীন আহমেদ ছিলেন সক্রিয় নেতা, পরবর্তীতে তিনি আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক হিসেবে দায়িত্ব পালন করে পশ্চিম পাকিস্তানি শাসকবর্গের বিরুদ্ধে সোচ্চার ভূমিকা পালন করেন।
এরপর স্বাধীনতা সংগ্রাম শুরু হলে বংগবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের অনুপস্থিতিতে তাজউদ্দীন আহমদই দিশাহীন জাতিকে মুক্তিযুদ্ধে নেতৃত্ব দেন। পরবর্তীতে মেহেরপুর এর বৈদ্যনাথতলায় অস্থায়ী সরকারের প্রথম প্রধানমন্ত্রী হিসেবে তাজউদ্দীন আহমেদ শপথ গ্রহণ করেন শপথ অনুষ্ঠানে ভাষণ দেন তাজউদ্দীন আহমদ।
ভাষণের শেষে দেশি-বিদেশি সাংবাদিকদের নানা প্রশ্নের জবাবও দেন প্রধানমন্ত্রী তাজউদ্দীন আহমদ। এক বিদেশি সাংবাদিকের প্রশ্নের জবাবে প্রধানমন্ত্রী বলেন, আজ থেকে এই এলাকার নাম ‘মুজিবনগর’।
বাংলাদেশের প্রথম প্রধানমন্ত্রী ও স্বাধীনতা সংগ্রামের অন্যতম নেতা ১৯৭১ সালে বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধের সময় অস্থায়ী বাংলাদেশ সরকারের প্রধানমন্ত্রীর দায়িত্ব সাফল্যের সাথে পালন করেন।
স্বাধীনতা পরবর্তী ১৯৭২ সালের ১২ জানুয়ারি বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান প্রধানমন্ত্রী হিসেবে দায়িত্ব ভার গ্রহণ করেন। তারপর বঙ্গবন্ধুর নেতৃত্বে যে মন্ত্রিসভা গঠিত হয় সেই মন্ত্রিসভায় অর্থ ও পরিকল্পনা মন্ত্রণালয়ের মন্ত্রী হিসেবে দায়িত্ব পালন শুরু করেন তাজউদ্দীন আহমদ। বাংলাদেশের সংবিধান রচনায় তিনি প্রজ্ঞার পরিচয় দেন।দেশের অর্থনৈতিক উন্নয়নের বিকাশ সাধনে তিনি অসামান্য ভূমিকা পালন করেন।
১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্ট বিপথপগামী ঘাতকদের হাতে সপরিবারে নির্মমভাবে নিহত হন বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান। একই দিন সকালে তাজউদ্দীন আহমদকে গৃহবন্দি করা হয় এবং পরে ঢাকা কেন্দ্রীয় কারাগারে নিয়ে যাওয়া হয়।
১৯৭৫ সালের ৩ নভেম্বরে জেলখানায় স্বাধীনতা বিরোধী অপশক্তির হাতে ঘাতক দলের গুলিতে বন্দি অবস্থায় ও কারাগারের সব নিয়ম ভঙ্গ করে নিষ্ঠুরভাবে হত্যা করা হয় তাজউদ্দীন আহমদকে।
জননেতা তাজউদ্দীন এর ৯২ তম জন্মবার্ষিকীতে তার বিদেহী আত্নার মাগফিরাত কামনা রইল।
তথ্য সূত্র: ইউকিপিডিয়া ও শারমিন আহমদ ‘র লেখা ‘তাজ উদ্দিন আহমদ, নেতা ও পিতা’
এটিও পড়ুন: বাবার ইচ্ছায় কুরআনের হাফেজ হন তাজউদ্দীন আহমদ